সহাবস্থান
এখন বিকেল। ব্যালকনিতে চেয়ার পেতে বসেছিলেন দিব্যজ্যোতি। সামনে চোখ মেললেই চোখের শান্তি হয়। কোথাও কোনও বাধার প্রাচীর নেই। দক্ষিণ দিক, বোধহয় বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত একদম খোলা। নিবারণ ঢোল ঠিকই বলে। এত মিষ্টি হাওয়া তিনি কোনওদিন গায়ে মাখেননি।
শরীরটা জুত নেই। আজকাল নিয়মের ব্যতিক্রম হলেই এমন হয়। ঠিক সময়ে খাওয়া, শোওয়া, ঘুমাবার চেষ্টা চালিয়ে আচ্ছন্ন হয়ে থাকা এবং বই পড়া, জীবন বলতে এখন এই। লতিকার তাগাদায় জীবনের শেষপ্রান্তে এসে একটা মোচড় এল। শোভাবাজারে ঘিঞ্জিতে তিনি হাঁটতে পারতেন না। এখানে এত সবুজ মাঠে হাঁটতে হাওয়া লাগবে। মল্লিকবাড়ির অন্দরে হাওয়া ঢুকত কিন্তু এখানে ঈশ্বরের দাক্ষিণ্য পর্যাপ্ত। নিবারণকে দেখে তার খারাপ লাগছে না। ওর সঙ্গে কথা বলেও আরাম পাওয়া যাবে। আশেপাশের ফ্ল্যাটের মানুষ যারা আসবে তারা কেমন হয় সেইটেই ভাবনার। দিব্যজ্যোতি খুশি মনে ঘরের ভেতরটা লক্ষ করলেন মুখ ফিরিয়ে। আর অমনি বুকের ভেতরটা ছ্যাঁৎ করে উঠল। কোনও আভিজাত্য নেই, দেশলাই বাক্সের মতো দেওয়াল, শুনতেই সব মিলিয়ে অনেক স্কোয়ার ফুট কিন্তু কেমন খোপ-খোপ। আজন্ম মল্লিকবাড়ির সেই বিশাল থামওয়ালা বড়-বড় ঘরে বারো ইঞ্চি দেওয়ালের মধ্যে থেকে এসে এটিকে খেলাঘর বলে মনে হচ্ছে। খেলাঘর বটে–জীবনের সব পাট চুকিয়ে, আত্মীয়-অনাত্মীয়দের সব মুখের চেহারা দেখে এই খেলাঘর পেতেছে লতিকা তাকে নিয়ে।
অত হাওয়া লাগিও না ঠান্ডা লেগে যাবে। পেছনে এসে দাঁড়ালেন লতিকা। তারপর স্বামীর বুক গলায় একটা পাতলা চাদর জড়িয়ে দিলেন। ঠান্ডা লাগছিল না কিন্তু এতে বেশ আরাম হল। দিব্যজ্যোতির। হেসে বললেন, কলকাতা শহরে গরমকালে চাদর জড়িয়ে বসে আছি, কী কাণ্ড! শোভাবাজারে এমনটা ভাবতেও পারেনি লতিকা।লতিকা চারপাশে তাকালেন, শুধু শূন্য মাঠ আর দূরে-দূরে অর্ধসমাপ্ত কিছু বাড়ি। আকাশ এখন টকটকে হয়ে আছে; সূর্য ডুবুডুবু। লতিকা। বললেন, আঃ, এত আরাম ভগবান আমার কপালে লিখে রেখেছিলেন আমি স্বপ্নেও ভাবিনি গো।
দিব্যজ্যোতি তাকালেন স্ত্রী-র দিকে। বয়স সর্বাঙ্গে স্পষ্ট কিন্তু চুলে পাক ধরেনি, দাঁতও পড়েনি। একটু মোটা হয়ে গেছেন বটে লতিকা কিন্তু খাটতে দ্বিধা করেন না। এখন ওঁর দিকে পেছন ফিরে রেলিং-এ ভর করে পৃথিবী দেখছেন যে মহিলা তিনি তাঁর স্ত্রী। সাদা শাড়িতে রং খুঁজে পাওয়া ভার। দিব্যজ্যোতি ডাকলেন, তু!
লতিকা চমকে ফিরে তাকালেন। দিব্যজ্যোতি অবাক হলেন, কি হল, অমন করলে কেন?
লতিকা মৃদু মাথা নাড়ালেন, না, কিছু না। বলো?
কিছু তো বটেই। বলো বলতে চাও না। দিব্যজ্যোতি নিজের গলায় অভিমান শুনলেন।
লতিকা হাসলেন, কি বলছিলে বলো! বুঝেছি চা চাই।
তাহলে মন্দ হয় না। কিন্তু তোমার ঝামেলা বাড়িয়ে কী লাভ!
চা আর ভাতের ব্যবস্থা এসেই করেছি। এ বাড়িতে আজ নতুন তোমার জীবন।
হ্যাঁ, কত বয়স হল?
বছর গুনো না। বছরের হিসেব আর ভালো লাগেনা। কি বলছিলে তখন? লতিকা পাশে এসে দাঁড়ালেন।
খুব অন্তরঙ্গ কিছু কথা বুকে ছটফট করছিল দিব্যজ্যোতির। তিনি জানেন লতিকা সেই কথাগুলোর আন্দাজ পেয়েছে। দীর্ঘদিন ভালোবেসে একসঙ্গে থাকলে মাটিও আকাশকে বুঝতে পারে। কিন্তু এখন এই মুহূর্তে কথাগুলো উচ্চারণ করলে নিজের কানেই অন্যরকম ঠেকবে বলে মনে হল তাঁর। তিনি বললেন, বলছিলাম, আমার গায়ের চাদর জড়িয়ে দিলে কিন্তু নিজে তো এই হাওয়া গায়ে মাখছ।
লতিকার চোখ ছোট হল। তারপরেই হাসি ফুটল ঠোঁটে, আমার কিছু হবে না। মেয়েদের ঠান্ডা কম লাগে। শশাভাবাজারে শীতকালে কীরকম জামা পরতাম? শরীরে এখন এত চর্বি, ঠান্ডাটা ঢুকবে কোত্থেকে? তুমি বসো, আমি চা আনছি।
লতিকা চলে গেলেন ভেতরে। দিব্যজ্যোতি মাথা নিচু করলেন। এই সময়টা মন্দ কি! দু-জনেই জানেন কথাটা বলা হল না কিন্তু অন্য কথার ভিড়ে তা ডুবিয়ে রাখাই মাঝে-মাঝে আরামদায়ক। সারাটা জীবন শুধু যেমন অন্যের জন্যে খরচ করে যাওয়া!
আর একটু বাদে উঠে দাঁড়ালেন দিব্যজ্যোতি। সত্যি শীত লাগছে এখন। হাওয়ার দাপট বাড়ছে, আকাশের গায়ে একটু কালো ছাপ। ঘরে ঢুকে আলো জ্বাললেন। নতুন বাল্বের আলোয় ঘরটা ঝকমকিয়ে উঠল। এইটে তাদের শোওয়ার ঘর। কোনওমতে একটি খাট পাতা হয়েছে। আর কিছুই সাজিয়ে রাখা হয়নি। পাশের ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে সুইচ টিপলেন–এটি দ্বিতীয় শোওয়ার ঘর। আপাতত এখানেই সমস্ত জিনিস স্তূপ করে রাখা হয়েছে। আলমারি থেকে চেয়ার, লতিকার রান্নার সব জিনিসপত্র। এগুলোও তিনি অনেক-অনেক কাল দেখে আসছেন। শোভাবাজারের বাড়িতে যাদের মানাত এখানে তাদের দেখতে অস্বস্তি হচ্ছে। এই আধুনিক ফ্ল্যাটে পুরোনো আসবাব বড় বেমানান। কিন্তু নতুন কিছু কেনার সামর্থ্য কোথায়?বাইরের ঘরের দরজায় এসে আলো জ্বাললেন। সোফাসেট। ওই টুলটা ঠাকুরমার আমলের। এখনও কীরকম চকচক করছে। হঠাৎ দিব্যজ্যোতির মনে হল, এই আধুনিক বাড়িতে তিনি বা তাঁরা কতটা মানানসই? এই গিলে করা পাঞ্জাবি, কোঁচাননা ধুতি আর সুতির চাদর? এই সময়ে সশব্দে কলিং বেল জানিয়ে দিল কেউ এসেছে। দরজা খুলতে গিয়ে সচেতন হলেন দিব্যজ্যোতি। আগন্তুক অবাঞ্ছিত কিনা তা জানবার জন্যে এখানকার দরজায় ছোট ফুটো থাকে। তাতে চোখ রেখে ভালো লাগল তাঁর, নিবারণ এসেছে। দরজা খুলে প্রসন্ন মুখে তাকালেন, এসো, নিবারণ।
সব ঠিক আছে? কোনও প্রবলেম নেই? নিবারণ হাত তুলে প্রশ্ন করল।
বাইরে দাঁড়িয়ে তো সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা যায় না। ভেতরে আসতে বলেছি।
দিব্যজ্যোতির কথায় ভেতরে ঢুকে নিবারণ বলল, একি। জানালাগুলো খোলেননি কেন? ঘরে গুমোট হবে। বলেই সে জানালার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল, দিব্যজ্যোতি বাধা দিলেন, না-না, থাক এখন, মশা ঢুকবে।
মশা? নো মশা হিয়ার। থাকলে একদম রোগা পটকা।
থাক না। তুমি বসো। আসলে খুললেও তো বন্ধ করতে হবে।
ততক্ষণে একটি জানালা খুলে ফেলেছে নিবারণ, বন্ধ করার ভয়ে খুলবেন না? ঠিক আছে, যাওয়ার সময় আমি বন্ধ করে দেব। আর দেখেছেন কি হাওয়া! কি পবিত্র!
পবিত্র! দিব্যজ্যোতি চমকে উঠলেন, শব্দটা খুব ভালো বললে হে। তুমি কি কবিতা লেখো? পবিত্র হাওয়া। বাঃ!
নিবারণ লজ্জা পেল, না-না। অশিক্ষিত মানুষ, এসব ক্ষমতা আমার কোথায়?মুখে যা আসে বলে ফেলি। বলার পরও কেউ না বলে দিলে বুঝতে পারি না কথাটা ভালো।
দিব্যজ্যোতি ভালো করে ছেলেটিকে লক্ষ্য করলেন, যে বয়স শুনেছেন, চেহারায় সেটি মালুম হয় না। তিনি অন্য প্রসঙ্গে গেলেন, আর সব ফ্ল্যাটের মানুষ কবে আসছেন?
এসে গেলেন বলে। আমরা তো তৈরি হয়ে বসে আছি। এখন ঠিক আছে, সবাই এসে গেলে একা আমায় সব ঝক্কি সামলাতে হবে। প্রাণহরিবাবু, চেনেন তো ওঁকে, ওই যে মিটিং-এর দিন যিনি আপনাদের সঙ্গে কথা বলছিলেন, আমাদের ম্যানেজার। ছি, ছি, এই দেখুন বলি কথাটা ম্যানেজার কিন্তু সঙ্গদোষে জিভে যে উচ্চারণ ঢুকেছিল তাই বেরিয়ে আসে। যা বলছিলাম, প্রাণহরিবাবু মাঝে-মাঝে আসবেন এখানে। অতএব আমার একার ঘাড়ে সব। কিন্তু কাজ দেখে পালাবার পাত্র নই আমি। নিবারণ যেন নিজের সঙ্গেই কথা বলছিলেন, ব্যাপারটা লক্ষ করলেন দিব্যজ্যোতি।
তিনি বললেন, তোমরা এই বাড়িটার নাম জব্বর দিয়েছ হে!
তা যা বলেছেন। বাঙালি থেকে চিনে সবাই আসছেন তখন বাড়ির নাম কলকাতা ভালো মানাচ্ছে। আমি এবার উঠি। উশখুশ করল নিবারণ।
উঠবে মানে? এলেই বা কেন?
এই প্রথম সন্ধে, আপনারা আছেন কেমন দেখতে ইচ্ছে করল।
খুব ভালো ইচ্ছে। বসো তো! তোমার সঙ্গে গল্প করতে আমার ভালো লাগছে।
এই সময় দু-কাপ চা হাতে লতিকা দরজায় এসে দাঁড়াতেই নিবারণ উঠে দাঁড়িয়ে হাতজোড় করল, ছি-ছি, আপনি আমার জন্যেও চা করলেন?
একজনের চা তৈরিতে যে পরিশ্রম, দুজনের কিন্তু তা ডবল হয়ে যায় না, আপনি অনেকদিন বাঁচবেন! লতিকা টেবিলে চা নামিয়ে রাখলেন।
দিব্যজ্যোতি একটু চিমটি কাটলেন, তুমি আবার কখন মনে করলে ওকে!
করেছি। উলটোদিকের সোফায় গুছিয়ে বসলেন লতিকা।
নিবারণ একদৃষ্টিতে লতিকার দিকে তাকিয়েছিল। বিব্রত মুখে লতিকা প্রশ্ন করলেন, কি দেখছেন ওরকম করে?
নিবারণ মাথা নাড়ল, আপনি না কি বলব সাক্ষাৎ মা দুর্গার মতো দেখতে।
হঠাৎ ঘর কাঁপিয়ে হেসে উঠলেন দিব্যজ্যোতি, লতিকার মুখে রক্ত জমল। নিবারণ তার কথায় জোর দিল, হ্যাঁ, আমি মিথ্যে বলছি না। আপনার দিকে তাকিয়েই কেমন ভক্তি-ভক্তি ভাব জাগে।
দিব্যজ্যোতির গলায় তখনও হাসির রেশ, ঠিকই বলেছ ভাই। আমার তো সারাজীবন ওই করে কেটে গেল।
লতিকা কৃত্রিম রোষ দেখালেন, থামো তো! নিবারণবাবু, আপনার সঙ্গে আমার কয়েকটা কথা আছে। আপনি না এলে আমাকেই ডাকতে যেতে হত। কিন্তু এত বড় বাড়ি একদম খালি হয়ে রয়েছে, ভয়-ভয় লাগে।
দিব্যজ্যোতি বললেন, এখন বাড়ি খালি বলে ভয় পাচ্ছ, বাড়ি ভরে গেলে আবার লোক দেখে হাঁপিয়ে উঠবে।
উঠি উঠব তবু শোভাবাজারের বাড়ির মতো ঘরকুনো হয়ে থাকতে তো হবে না। শুনুন, ওঁকে তো বলে কোনও লাভ নেই। একটা কথাও কানে ঢোকে না। আমার একজন পুরুত চাই। ভালো। পুরুত। লতিকা আবদারের গলায় জানালেন।
পুরুত মানে পুজো করবেন? এই তল্লাটে কোনও পুরোহিত আছে কিনা মনে করতে পারল না নিবারণ। প্রাণহরিবাবু ব্রাহ্মণ, উনি পুরুতগিরি করেন কিনা সেটা জানা নেই।
হ্যাঁ। গৃহপ্রবেশ করলাম অথচ একটা পুজো হল না, এটা খুব খারাপ ব্যাপার। আমি তাই বেশিরভাগ জিনিসপত্রে হাত দিইনি। পুজো করার পর গোছাব। আপনি কাল সকালেই একজন পুরুত এনে দিন। খুব বড় কিছু নয়, একটা পুজো করে নেব।
দিব্যজ্যোতি মন দিয়ে শুনছিলেন। এবার বললেন, ছাড়ো তো এসব! পুরুত নয়, আমাদের একটা ভালো কাজের লোক চাই। শোভাবাজারে যারা ছিল তারা পাড়া ছেড়ে এত দূরে আসতে চাইল না। তুমি ভাই একটি ঝি কিংবা চাকর দেখে দাও, নইলে তোমার ওই দুর্গাঠাকুরানির ফাঁই ফরমাশ খাটতে-খাটতে আমার প্রাণ জেরবার হয়ে যাবে।
লতিকা ফুঁসে উঠলেন, বাজে বোকো না। শোভাবাজারে তো পায়ের ওপর পা তুলে থাকতে। লোক আজ না-হোক কাল পেয়ে যাব কিন্তু পুরুত আমার চাই কালকেই। ভয় পেয়ো না, তোমাকে এই পুজোর ব্যাপারে কিছু করতে হবে না। এখানে কোনও ঠাকুরবাড়ি নেই?
নিবারণ মাথা নাড়ল, আপনি তো কথাটা বলে ফেলেছেন, জোগাড় করার দায়িত্ব আমার। তবে একটা কথা, মন্ত্রটা নিয়ে খুঁতখুঁতুনি করবে না।
লতিকা শিউরে উঠলেন, ওমা, সেকি কথা!
দিব্যজ্যোতি হাসলেন, বিদ্যাস্থানে ভয়ে বচ। বঙ্গগৃহিণীরা এই করেই মরল।
মরি নিজের বাড়িতেই মরব। বিয়ের পর থেকেই মান্ধাতার আমলের বাড়িতে শরিকদের সঙ্গে ঝগড়া করে কাটাতে হয়েছে। তোমার আর কী! এখন একটু হাত-পা মেলার সুযোগ পেয়েছি, হাজার হোক নিজের বাড়ি বলে কথা।
এই সময় দুম করে আলো নিভে গেল। নিবারণ বলল, এই এক জ্বালা। ঘাবড়াবেন না, জেনারেটর আছে। দেখি গিয়ে।
নিবারণ অন্ধকারেই চা এক চুমুকে শেষ করে উঠে দাঁড়াল। দিব্যজ্যোতি হাঁ-হাঁ করে উঠলেন, অন্ধকারে যাবে কী করে? লতু টর্চ আনা।
নিবারণ বললেন, কিছু ব্যস্ত হবেন না। প্যাঁচাঁদের চেয়ে খারাপ দেখি না অন্ধকারে। কলকাতায় থাকতে-থাকতে সেটাও অভ্যাস হয়ে গেছে। কাল আপনি আপনার পুরুত পেয়ে যাবেন ঠিক। সকাল-সকাল আনব।
বাড়িটা এখন ঘুটঘুঁটে অন্ধকারে ডুবে রয়েছে। নিবারণ বেরিয়ে যাওয়ার পর দরজা দিয়ে লতিকা বললেন, এখানে ভূতের মতো বসে না থেকে বারান্দায় বসবে চলো।
মোমবাতি আনোনি? দিব্যজ্যোতির উঠতে ইচ্ছে করছিল না। জানালা দিয়ে খারাপ হাওয়া আসছে না।
লতিকা বললেন, এনেছি তবে এখন খুঁজে পাব না। বলে অন্ধকারেই ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন।
কয়েক মুহূর্ত চুপচাপ বসে রইলেন দিব্যজ্যোতি। খালি বাড়িতে খুটখাট শব্দ হচ্ছে। দিব্যজ্যোতির মনে হল খালি বাড়ি বলেই এই শব্দ। কিন্তু কিছুক্ষণ বাদেই তাঁর অস্বস্তি আরম্ভ হল। যেন ঘরের মধ্যেই তিনি শব্দের উৎস খুঁজে পাচ্ছেন। দিব্যজ্যোতি নিচু গলায় ডাকলেন, লতু! শব্দটা যেন কয়েকগুণ জোরে কানে বাজল। তিনি ধীরে-ধীরে উঠতে গিয়ে হোঁচট খেলেন। ডান পায়ের বুড়ো আঙুলের নখে ব্যথা লাগল টেবিলের পায়ে ধাক্কা লাগায়।
কিন্তু দাঁড়িয়ে থাকতে সাহস হল না। শোভাবাজারে কোনওকালেও ভূতের ভয় পায়নি। ওর এক জেঠিমা তান্ত্রিকদের খুব মানতেন। বিডন স্ট্রিটে এক তান্ত্রিকের কাছে যাওয়া আসা ছিল তাঁর। তন্ত্রমতে প্রেত পাঠানো যায় কারও ক্ষতি করতে অথবা কেউ ক্ষতি করছে জানলে সেই প্রেতকে দিয়ে পাহারা দেওয়ানো যায় এসব কথা শুনে-শুনে নেশা চড়িয়ে দিয়েছেন। এখন তাঁর মনে। অন্যরকমের ভয় এল। এই বিশাল শূন্যবাড়িতে একা থাকাটাই অসম্ভব। শব্দগুলো নানারকম মানে হয়ে কানের ভেতরে ঢুকছে।
দিব্যজ্যোতি হাতড়ে-হাতড়ে বারান্দায় চলে এসে থমকে দাঁড়ালেন। লতিকা গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। দিব্যজ্যোতি ঠিক করলেন চশমার কাঁচ এবার পালটাতে হবে। যতই অন্ধকার হোক, লতিকাকে তিনি বেশ ঝাঁপসা দেখছেন যেন। বাইরে অনেক দূরে টিমটিমে আলো। আর আকাশটা এখন মেঘমুক্ত কারণ ঠাসঠাস তারারা ঝকঝক করছে। দিব্যজ্যোতি আরও একটু এগোলেন। তাঁর পায়ের শব্দ এতক্ষণে লতিকার কানে যাওয়া উচিত ছিল কিন্তু সে মুখ ফেরাচ্ছে না। মজা লাগল দিব্যজ্যোতির, মেয়েদের বয়স বাড়লেও মনের মধ্যে অভিমানের বাক্সটা ঢেকেঢুকে রাখে। সময় বুঝলেই খানিকটা খুলে দেখায়। দিব্যজ্যোতি বিকেলে যেটা বলতে গিয়ে পারেননি এই আধা অন্ধকারে যখন তারার আলোর মিশেল চারপাশে, তখন দু-হাত বাড়িয়ে লতিকাকে কাছে টানলেন। লতিকার শরীরটা এই বয়সেও নরম, অন্তত তাঁর চেয়ে নরম। কাঁধে চাপ দিয়ে ওঁকে ঘুরিয়ে মুখ লাগিয়ে লতিকার চিবুক তুলে অনেক-অনেকদিন পরে চুম্বন। করলেন তিনি। এক ঝটকায় মনে হল যৌবনের উচ্ছ্বাসের যে স্বাদ লতিকার ঠোঁটে পেতেন তার গন্ধ যেন নাকে লাগল। কিছু বলার জন্য তিনি মুখ খুলতে যেতেই লতিকা হু-হুঁ করে কেঁদে উঠলেন। তারপর দিব্যজ্যোতির বুকে মাথা রেখে সেই কান্নাটা গিলতে চেষ্টা করলেন।
কাঠ হয়ে গেলেন দিব্যজ্যোতি। কোনওমতে নিজেকে সামলে লতিকার পিঠে আলতো হাত বোলালেন। তারপর গাঢ়স্বরে বললেন, you must not, you must not!
তা এসব বছর পাঁচেক আগের কথা। সময়ের চড়া পড়ে-পড়ে এত সময় কোথাও এক ফোঁটা জল নেই বলে ধারণা জন্মেছিল দিব্যজ্যোতির কিন্তু এ স্রোত চোখের বাইরে দিয়ে বয়! চেয়ারে নড়েচড়ে বসলেন তিনি। সেই সময় লতিকা বলে উঠল, বড়খুকিদের আসতে লিখলাম।
জামাই ছুটি পায়নি। দিব্যজ্যোতি মনে করিয়ে দিলেন, বড়খুকির মেয়ের পরীক্ষা!
লতিকা জবাব দিলেন না। তাঁর কেবলই মনে হচ্ছিল ছুটি না পাওয়া, মেয়ের পরীক্ষা–এসব বাহানা। কেউ তাঁর ইচ্ছের দাম দিতে চায় না। কিন্তু আজ ওই বারান্দায় যাওয়ার পর, একা। দাঁড়িয়ে অন্ধকার দেখার পর থেকেই মনে হচ্ছিল ওর কথা। মনে হচ্ছিল কোথাও কি ভুল হয়ে গেছে? সে যেসব অন্যায় করেছে, চোরের মতো চলে গিয়ে তাঁরাও কি ওকে বুঝতে ভুল করেছেন?
ছোটবেলায় ছোটখুকি বলত, দেখো, আমি বড় হয়ে বিয়েই করব না। বিয়ে করলেই তো তোমাকে ছেড়ে চলে যেতে হবে।দুই বোনের পার্থক্য ছিল দশ বছরের। বড়খুকির বিয়ের পরে তাঁর কান্না দেখে মেয়ে বলেছিল।
এই বাড়ি নিজের। কোনও শরিক নেই, কারও কাছে কৈফিয়ত দিতে হবে না। এই সুখ তাঁর। অনেকদিনের আকাঙ্ক্ষায় ছিল। কিন্তু আজ কেন নিজেকে সুখী ভাবতে পারছেন না তিনি? হঠাৎ মুখ তুললেন লতিকা, মানুষ আর জন্তুর মধ্যে কী পার্থক্য জানো? সবাইকে নিয়ে সুখী হতে না পারলে মানুষের সুখ পূর্ণ হয় না।
কী বলতে চাইছ তুমি? দিব্যজ্যোতির বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠল।
আমি তোমার কাছে একটা ভিক্ষে চাইব?
ভিক্ষে বলছ কেন?
ছোটখুকি, ছোটখুকির কাছে একবার যেতে চাই।
কেন?
জানি না। কিন্তু না গেলে মন শান্ত হবে না।
সে যদি তোমায় অপমান করে?
আর কখনও যাব না।
না লতিকা। যাকে একবার মৃত ভেবেছ, তার সঙ্গে সম্পর্ক রাখোনি, তাকে আর টেনে এনো না। স্মৃতি হাতড়ে পিছু ফেরা ভালো নয়। তোমার বড় মেয়েও খুশি হবে না। তা ছাড়া যে লোকটা ছোটখুকিকে পয়সার লোভে মডেলিং করায়, তার সামনে গিয়ে দাঁড়াবার ইচ্ছা আমার নেই। দিব্যজ্যোতি কথাগুলো বলছেন যখন তখনই আলো ফিরে এল। শোভাবাজারে লোডশেডিং শেষ হলে অনেক গলা থেকে একসঙ্গে আনন্দধ্বনি ছিটকে উঠত, কিন্তু এখানে কেউ কোনও আওয়াজ করল না। এবং তখনই দিব্যজ্যোতির খেয়াল হল নিবারণ জেনারেটর চালু করতে গিয়েছিল।
অথচ তার কোনও ফল পাওয়া যায়নি। ব্যাপারটা নিয়ে পরে কথা বলব।
মাঝরাত্রে ঘুম ভেঙে গেল দিব্যজ্যোতির। লতিকা তাঁকে ডাকছেন।
কি বলছ? বিরক্তি মুখে, গলায়।
বাথরুমে যাব।
যাবে তো যাওগে, আমাকে ডাকার কী আছে?
কীসব শব্দ হচ্ছে চারপাশে! তুমি একটু দাঁড়াবে?
লতিকার কথা বলতে অসুবিধে হচ্ছিল। তবু সেই মুচড়ানো গলায় বললেন, কি করব, আজ ওকে ভীষণ মনে পড়ছে। আমাকে ছোটবেলায় এইরকম বারান্দাওয়ালা বাড়ির কথা বলত! দিব্যজ্যোতি বললেন, লতু! তুমিও বলেছ, সী ইজ ডেড টু আস।
লতিকা নিজেকে মুক্ত করে ধীরে-ধীরে চেয়ারে গিয়ে বসলেন। দিব্যজ্যোতি একটু অসহায় চোখে তাকালেন। তাঁর শরীরে কম্পন আসছিল। হাঁটুদুটো হঠাৎ খুব দুর্বল হয়ে পড়ল। তিনি চেয়ারে বসে কিছুক্ষণ চুপচাপ রইলেন। এবং এতদিন বাদে স্ত্রীকে চুম্বনের যে আনন্দ কিছুক্ষণ আগে। বেলুনের মতো ফুলছিল তা এখন চুপসে গেছে। ওই কান্না একটি কারণেই আসতে পারে লতিকার, তাঁরও। দুটো মানুষের সূত্র যদি এক হয় তাহলে একের অনুকরণ অন্যে টের পাবেই। তিনি কিছুতেই মুখটা মনে করতে চাইছিলেন না, তখন বারংবার সে ফিরে আসছে। উনিশ বছর। বয়সের তাঁর সবচেয়ে আদরের মেয়ে, ছোট মেয়ে, একেবারে বিয়ে করে খবর পাঠাল সে কাজটা করেছে। সামনে এসে দাঁড়িয়ে জানানোর সাহস হল না। শোভাবাজারের রক্ষণশীল বাড়ির অন্য আত্মীয়দের কথা ছেড়ে দিলেন। এই চোরের মতো কাজটার জন্যে প্রচণ্ড অপমানিত হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তার চেয়ে অনেক বেশি আহত হয়েছিলেন লতিকা। বড় মেয়ে সম্বন্ধ এনেছিল। বড়জামাই-এর অফিসে কাজ করত ছেলেটি। দিল্লিতেই বাড়ি। মেয়েজামাই লিখেছিল ছোটমেয়েকে নিয়ে লতিকা যেন দিল্লিতে কয়েকদিন কাটিয়ে আসেন। সেখানেই মেয়ে দেখবে ছেলে। সেইমতো টিকিট কাটা হয়ে গিয়েছিল আর আজই এই কাণ্ড! ছেলে ছবি আঁকে। নিজের সিগারেটের খরচ যার ছবি বিক্রির টাকায় ওঠে না সে বিয়ে করেছে দিব্যজ্যোতি মল্লিকের। মেয়েকে। লতিকা তৎক্ষণাৎ ঘোষণা করেছিলেন তিনি ধরে নেবেন ছোট মেয়ে মৃত। মুখ দর্শন। করবেন না ঠিক করেও দিব্যজ্যোতিকে অনেকদিন নিজের সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছিল। উনিশ বছর তিল তিল করে যে স্নেহ দিয়ে ওকে গড়ে তুলেছিলেন তা মুছে ফেলা মুশকিল। কথাটা জানার পর মেয়ে আর এ-মুখো হয়নি। দিব্যজ্যোতি জানেন না ফিরে এলে তিনি কি করতেন। তাঁর বিস্ময় লাগে, উনিশ বছরের অভ্যাস ভালোবাসা পরস্পরের হৃদয়ের স্পর্শ ম্লান হয়ে গেল মেয়ের কোন আকর্ষণের তাগিদে?কয়েক বছরের বা মাসের মধ্যে একটি পুরুষ কোন জাদুতে এত মূল্যবান হয়ে ওঠে? তারপর যখন কাগজের বিজ্ঞাপনে মেয়ের মোহিনী ছবি দেখতে লাগলেন, বুঝলেন মডেলিং করছে পেট ভরাতে, তখন তলানিটুকুও চলে গেল মন থেকে।
দাঁড়াব? আমি? বাথরুমের দরজায়? তুমি কি কচি খুকি? লতিকা আর কথা না বলে নেমে গেলেন বিছানা থেকে। নতুন জায়গা, দেওয়ালের গন্ধ এখনও মরেনি, ঘুম আসছিল না প্রথম রাতে। তাও যদি এল লতিকার ভূতের ভয় সেটা ভাঙিয়ে দিল। বালিশে মুখ ডুবিয়ে নিজের শরীর অনুভব করেছিলেন দিব্যজ্যোতি। হঠাৎ কানে একটা শব্দ বাজল। না, খালি বাড়ির শব্দ নয়, লতিকার হাত থেকে মগ পড়ে গেছে নিশ্চয়ই। তিনি আবার ঘুমাবার চেষ্টা করলেন। কিন্তু আর ঘুম আসছে না। দিব্যজ্যোতি চিত হয়ে শুতেই মনে হল লতিকা এখনও ফেরেননি। যতই হোক এতক্ষণ কারও বাথরুমে থাকা বাড়াবাড়ি। তিনি শুয়ে-শুয়েই ডাকলেন লতু! কেউ সাড়া দিল না। অথচ বাথরুমটা তো লাগোয়াই। দিব্যজ্যোতি উঠলেন। চশমাটা নিতে গিয়েও নিলেন না। ভেজানো দরজা, ভেতর থেকে ছিটকিনি দেওয়া নেই, দিব্যজ্যোতি আবার ডাকলেন, লতু? তোমার হয়ে গেছে?
কয়েক মুহূর্ত অপেক্ষা করেও সাড়া না পেয়ে দরজায় চাপ দিতেই বুক নিংড়ে আর্তনাদ ছিটকে উঠল দিব্যজ্যোতির। লতিকা বাথরুমের মেঝেতে পড়ে আছেন।
দৌড়ে কাছে যেতে গিয়ে দেওয়াল ধরে নিজেকে সামলালেন দিব্যজ্যোতি। শরীরটা যে এত বিকল হয়েছে তা আন্দাজেও ছিল না। তাঁর নিজের বুক ধড়াস-ধড়াস করছে। চোখের দৃষ্টি ঝাঁপসা হয়ে আসছে। কোনওরকমে তিনি লতিকার শরীরের সামনে উবু হয়ে বসলেন। তাঁর খুবই কষ্ট হচ্ছিল। হাত তুলে লতিকার কাঁধ ধরলেন তিনি, লতুলতু। কী হয়েছে লতু? কথা বলো লতু।
কোনও সাড়া নেই। দিব্যজ্যোতি কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। তাঁর শরীরে এখন এমন সামর্থ্য নেই যে নিচে গিয়ে হাঁকাহাঁকি করে নিবারণকে ডাকবেন। কিন্তু একজন ডাক্তার আনা। দরকার এই বোধ সক্রিয় ছিল তাঁর। নিজের সমস্ত মানসিক শক্তি জড়ো করে শক্ত হতে চাইলেন। তিনি। তারপর আঙুল নিয়ে গেলেন লতিকার নাকের সামনে। নিশ্বাস কি পড়ছে? বোঝা যাচ্ছে না। দিব্যজ্যোতির মনে হল তাঁর আঙুলের চামড়া এত মোটা হয়ে গেছে বয়স হওয়ায় যে সামান্য আলতো চাপে ঠাওর করতে পারছেন না। মুখ তুলতেই কল দেখতে পেলেন তিনি। কি মনে হতেই কলের মুখ ঈষৎ খুলতেই জল পড়তে লাগল লতিকার মাথায়। সেই জল তিনি হাতে নিয়ে বুলিয়ে দিতে লাগলেন ওঁর গলায় কপালে।
আচমকা অন্যতর ভাবনা এল। এখন লতিকা যদি এইভাবেই চোখ বন্ধ রেখে চলে যায়? ওর এই সাধের নতুন বাড়িতে লতিকা ছাড়া তিনি কেমন করে থাকবেন? শুধু বাড়ি নয়, তাঁর প্রতিদিন। অভ্যাসের সঙ্গে যখন লতিকা জড়িত তখন তিনি এর পরের দিনগুলো বাঁচবেন কী করে? বুকের ভেতরটা হু-হুঁ করে উঠল দিব্যজ্যোতির। তিনি প্রাণপণে লতিকাকে ডাকতে লাগলেন।
এই সময় চোখ মেললেন লতিকা। মাথায় তীব্র যন্ত্রণা, জলের স্পর্শ এবং কানে নিজের নাম তাঁকে বিহ্বল করে তুলল এবং তখনই তিনি স্বামীর মুখ দেখতে পেলেন। ধীরে-ধীরে উঠে বসতে চেষ্টা করলেন লতিকা। দিব্যজ্যোতি জিজ্ঞাসা করলেন বিপর্যস্ত স্বরে, কি হয়েছিল লতু, তোমার কি হয়েছিল।
ভেজা চুল, সিক্ত জামায় শীত করল লতিকার। চোখ বন্ধ করে বললেন, পড়ে গিয়েছিলাম, হঠাৎ মাথাটা–। দুটি মানুষ পরস্পরকে অবলম্বন করে কোনওক্রমে প্রচুর সময় নিয়ে খাটে ফিরে এল। লতিকা পোশাক পরিবর্তন করার শক্তি পেলেন না। সিক্তবস্ত্র মুক্ত হয়ে চাদরে শরীর মুড়ে পড়ে রইলেন একপাশে। দিব্যজ্যোতি, শক্তিহীন, চোখের সামনে অন্ধকার নিয়ে, বুকভরতি যন্ত্রণায় প্রথম পদক্ষেপ বুঝেও চাদর টেনে তাঁর পাশে শুয়ে। বালিশের নিচ থেকে কৌটো বের করে একটা সরবিট্রেট বের করে নিজের মুখে দিয়ে তারপর দ্বিতীয়টি লতিকার মুখের দিকে বাড়িয়ে দিতেই শুনলেন, কী?
সরবিট্রেট!
থাক।
দুটো মানুষের শরীরে সাদা চাদর এমনভাবে পাশাপাশি টানটান যে আচমকা দেখলে দুটি মৃতদেহ মনে হওয়া অস্বাভাবিক হত না। লতিকার হাত বেরিয়ে এসে দিব্যজ্যোতির হাত আঁকড়ে ধরল। বাথরুমের খোলা কল তখন একটানা জল ঢেলে যাচ্ছে।