সমুদ্র মেখলা -8
ঘরের ভেতর টা দেখে চেনা যায় না সেই বাড়ি বলে। বিশাল হল ঘর । মেঝেটা লাল সোনালী কার্পেট এ মোড়া । দেয়ালে মানানসই টাইলস এ মোরা । হল ঘরের মাঝখান থেকে প্রায় সাত ফিট জায়গা নিয়ে ঘোরানো সিঁড়ি উঠে গেছে উপরে । সিঁড়ি টা পুরো পা ডুবে যাওয়া সবুজ ঘাসের মতো গালিচায় মোড়া । রেলিং টা মোটা মেহগনি কাঠের । মেহগনি কাঠের চমক চেয়ে দেখার মতো । সিঁড়ির আঁকে বাঁকে সুদৃশ্য ফুলের, পাতা বাহারের টাবের সমাহার । মাঝে সিঁড়ি থাকায় দু’পাশে দু’রকমের বসার সুন্দর ব্যবস্থা । অসাধারন মেল বন্ধন চারদিকে । বিশাখার তারিফের দৃষ্টিটা ঘোরে চারদিকে ।
দু’পাশে দুটো বেড রুম। ভেতরেই টয়লেট এর ব্যবস্থা । মুখে কথা নেই বিশাখার কিন্তু একেবারে ছেলেমানুষের মতো জিজ্ঞাসু দৃষ্টি বিশাখার ।
রাজার যে দৃষ্টিটা আগে অশালীন মনে হতো, সে ই দুষ্টু মিষ্টি হাসি মুখে বলে, “আমাদের নেক্সট জেনারেশনের ” । বিশাখা আরক্ত মুখটা ঘুরিয়ে নেয় । রাজা বলে চলেছে , ওনলি টু, ওয়ান মাস্ট বি ডটার। বিশাখা রাজাকে ফেলে সেই পা ডুবে যাওয়া কার্পেট এ পা দিতেই রাজা ওকে ধরে ফেলল । সিঁড়ি শেষ হতেই একটা অর্ধ চন্দ্রাকার ঘরে এসে পৌঁছল । ঘর না বলে একে জাহাজের ডেক্ বললে বুঝি ভাল বোঝান হয় । কাঁচের শার্সি দেওয়া বড় বড় জানালা । এটা ও মেহগনি ফ্রেমের । ফাইবারে চমক ফেলছে পালিশের । ঋষিকোন্ডার পুরো সমুদ্রের সাথে দুরের রামকৃষ্ণ বিচ এর জাহাজের এক ঝলক ও দেখা যাচ্ছে । সুন্দরী বিশাখাপত্তনম এর বুভুক্ষা ছিল বিশাখা । মনটা যেন ভরে গেল বিশাখার। যেন জাহাজের ডেক থেকেই সমুদ্র দেখছে । দুরের লাইট হাউজ ও দেখা যাচ্ছে । পিঠে হাতের ছোঁওয়ায় যেন নিজেকে ফিরে পেল । রাজার হাতের ছোঁওয়া ই বলে দেয় ওকে কোথায় যেতে হবে । দক্ষিণের ঘরের দরজায় দামী ব্রোকেড এর পর্দা দুলছে হাওয়ায় । রাজা বিশাখাকে সেদিকে নিল না ।
বড় সড় কিচেন এ ঢুকল ওরা । এ যেন কোন বিদেশী কিচেন । বিশাখার চোখে খুশির ঝলক । রাজা বলল—ওপেনিং হয়নি। এবার হবে । বিশাখার শরীরে রক্তের আলোড়ণ । ঐ হাত ওকে পুরনো দিনে নিয়ে যেতে চাইছে । পর্দা সরিয়ে বিশাখাকে নিয়ে ঢুকল সেই ঘরে । বিশাল বক্স খাট । ইচ্ছে হলেই মিউজিক সিস্টেম এ গান শোনা যাবে । রাতে আলো জ্বেলে বই ও পড়া যাবে । চোখে পড়ল দেওয়াল জোরা আয়না যাতে শুয়ে ও পুরো শরীরটা দেখা যায় । রাজার স্পর্শে বিশাখা ফিরে তাকাল । তখনই চোখে পড়ল দেওয়াল জুড়ে একটা বিশাল ছবি । সেই বিশেষ দিনের । রাজার ফুল ফিগারের ছবিতে মুখে চিন্তার ছাপ ও সাথে দৃঢ়তার ভাব টা পরিস্ফুট হয়েছে । ভিজে সার্ট টা গায়ে সেটে রয়েছে । জীবন্ত ছবি যেন ! চুল দিয়ে জল পড়ছে । দু হাতে বিশাখাকে পাঁজা কোলে করে ধরা আর ডান হাত বিশাখার হাঁটুর তলে আর বাঁ হাত বিশাখার ঘাড়ের তলা দিয়ে ওর হাত টা একটু ছুঁয়ে রেখেছে । রাজা চিবুক দিয়েই বিশাখার মাথাটা সাপোর্ট দেয়ার চেষ্টা করেছে । যাতে বিশাখা হেলে না যায় । সাপোর্ট দিতে গিয়ে দুটো মুখ কাছাকাছি হয়ে গেছে । বিশাখার ভিজে বে আব্রু শরীরের ছবি ও চামড়ার রং টা ও জীবন্ত । জলের ফোঁটা গুলো পেটের কাছ চকচকে দানা বেঁধে আছে । লজ্জা ঢাকার চেষ্টায় বিশাখা বলে। – এটা কোথায় পেলে ? উত্তরে রাজা বলে–ডেকান ক্রনিকেল এ বড় করে প্রথম পেজ এ ছেপেছিল । নাম দিয়েছিল- সমুদ্র কন্যা । ওখান থেকেই জোগার করে এনলার্জ করেছি । এঘরে রেখেছি । নেক্সট জেনারেশন কে জানাতে হবে না যে ওদের বাবা ওদের মাকে কত ভালবাসে? তা ছাড়া ওদের মাকে ও মনে করিয়ে দেবে তার ভালবাসার মানুষটার কথা । বিশাখা রাজার বুকে মাথা রাখল । আজ বিশাখা সব হারিয়ে পাওয়ায় মাতোয়ারা । এই মানুষটাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে বিশাখা আর দেবে না । স্নান সেরে বেড়িয়ে দেখল রাজা ক্যারিয়ার থেকে প্লেট এ খাবার তুলছে । বিশাখা আশ্চর্য হয়ে বলল। – কোথা থেকে খাবার এলো? রাজার উত্তর- দ্বারবান কে ঈশারায় বলেছিলাম । নাও গরম থাকতে থাকতেই খেয়ে নাও ।
নরম বিছানায় বহুদিন পর রাজার প্রেমের আঁকুলতা । এতদিনের না পাওয়ার শোধ যেন এক দিনেই তুলে নেবে রাজা । ছ’টা বছরের হিসেব নিকেসের পর চরম পরিতৃপ্তিতে দুজনেই ঘুমিয়ে পড়েছিল ।ফোনের রিং হচ্ছে শুনে রাজা বিশাখার মাথাটা আস্তে করে বাহু থেকে নামিয়ে দিয়ে রিসিভার তুলল।
হ্যালো!!
বিশাখাও শব্দে জেগে গেছে। বিশাখার দিকে চেয়ে বলল- নে কথা বল , দিচ্ছি । বলে রিসিভার টা বিশাখাকে দিল । রাজার দৃষ্টি বিশাখার শরীরের আনাচে কানাচে তাপ ফেলছে । বিশাখা বলল- বল, শুনছি । সুছন্দা – কি গো বৌদি, দাদা কোন ফাঁকে তোমায় নিয়ে পালালো? ছয় বছর পর তোমায় পেয়ে খুব জ্বালাতন করছে? সরি, ডিসটার্ব করে ফেললাম।
বিশাখার চোখে মুখে লালের ছোপ দেখে রিসিভার টেনে নিয়ে বলল রাজা ।- শোন, কেউ কিছু বললে বলবি বৌদি রেস্ট নিচ্ছে । আর দাদা কাজে বেড়িয়েছে । আর ডাকবি না । কথা শেষ হতে রিসিভার জায়গা মতো রেখে দিল ।
রাজাকে বোঝানো শুরু করল বিশাখা । – প্লীজ, চলো না ঐ বাড়িতে । কে কি মনে করবে । অন্য কারো কথা ছাড় , তোমার বাবা কি মনে করবেন? রাজার উত্তর- কি আবার ভাববেন?ভাববেন ছেলে এতোদিন বিশাখাকে পায়নি তাই মনের ও দেহের খিদে মেটাচ্ছে । একটু চুপ করে আবার বলে–আমার ও ইচ্ছা ছিল তোমাকে এই ভাবেই বিয়ে করার। তোমার পরণে বেনারসী, চন্দনে আঁকা মুখ দেখব । তোমাকে কিন্তু দারুণ লাগতো ! বিশাখার মনটা ভার হয়ে গেল । বলল- সব দোষ আমার । এখন চলোতো ,ফিরে এসে যত খুশি শাস্তি দিও আমায় ।
বেশ জমকালো বেশেই সাজল বিশাখা । রাজার মায়ের কিছু গয়না ও বাড়ি গিয়েই পড়ে নেবে। মস্ত গোল একটা টিপ এঁকেছে কপালে । সিঁথীর সিঁদূরের ওপরে পরলো একটা পাথর বসান টিকলি । সিঁথীটা সাদা আর কাল পাথরে জ্বল জ্বল করছে । ছোট্ট গয়না গুলো শিল্প নৈপুণ্যে ভরা। হয়তো বিশাখার সৌন্দর্য ই ওগুলোকে মহিমান্বিত করেছে । গাড়ি আবার ও বাড়ির পেছনে চলে গেল, যাতে কেউ জানতে না পারে যে ওরা বাড়ি ছিল না । এসেই বিশাখা ফোন করল সুছন্দাকে । – রাজা নিচে নামলে তুই ওপরে চলে আসিস ।
রাজা নিচে নামার আগেই সুছন্দা ওপরে এলো । রাজাকে বলল- দাদা তুই নিচে যা, ওদিকে তোমাকে দরকার । রাজা কি বুঝল কে জানে । শুধুমাত্র শাসনের ভঙ্গিতে বিশাখার দিকে তাকাল । অর্থাৎ যেন সুছন্দাকে কিছুই না বলে । রাজা চলে যেতে সুছন্দাকে বলল–রাজার খুব ইচ্ছা ছিল আমাকে কণের সাজে দেখার। আমার জন্য ই ওর সাধ মিটল না । কষ্ট হচ্ছিল ওর কথা শুনে।
সুছন্দা – চিন্তা করিস না । আমি একটা প্ল্যান করছি। পুরোপুরি না হলেও দাদার কষ্ট টা একটু দূর করার চেষ্টা করব ।