সমুদ্র মেখলা -7
‘অম্লান মানে জান? যা ম্লান হয় না । কিন্তু তুমি আমায় ‘–কথা শেষ হতে দেয় না বিশাখা , রাজার ঠোঁটে হাত দিয়ে রাজাকে থামিয়ে দিল । বিশাখা ভাবে রাজাকে ম্লান হতে দেবেনা বিশাখা । রাজার দৃষ্টি বিশাখার সিঁথী ,কপাল, গাল, নাক সব শেষে ঠোঁটে এসে নিবদ্ধ হল । আনন্দে ,লজ্জায় বিশাখার এক অভিনব রূপ । রাজার দৃষ্টি ফেরে আবার ঐ মেয়ের ঠোঁটের দিকে । তখন বিশাখার গালে লালের ছটা । রাজার ঘোর লাগা দৃষ্টি যেন বলছে – আমার সুন্দরী বিশাখা । লজ্জায় বিশাখা পঞ্জাবীর বোতাম খোলা লোমশ বুকে নাক ঘষে। তারপর হঠাৎই রাজাকে জড়িয়ে ধরে ওর ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁওয়ায় । বিশাখা বলে শুধু তোমাকেই চাই । বিশাখার মন বলছে- “তোমার রূপে মরুক ডুবে আমার দু’টি আঁখি তারা” । রাজার চোখে বিদ্যুতের ঝিলিক । বলে- কোথায় যেন শেষ করেছিলাম? বিশাখার হাত টা ওর নিজের গলার খাঁজে, যেখানে হাত বুলিয়ে বিশাখা রাজাকে অনুভব করত, সেখানেই বিশাখার হাত টা চলে যায় । বিশাখার চোখে জল দেখে রাজা বিশাখার গলার ঐ খাঁজে একটা চুম্বন এঁকে ওর কষ্ট ভুলিয়ে দিতে চায় । তখন রাজা বলে–এখানে নয় । তারপর বিশাখাকে পাঁজা কোলে তুলে নিয়ে সেই আগের মতো বাড়ির পেছনের সিঁড়ি দিয়ে, সকলের অলক্ষে গাড়ির ভেতরের বসায় বিশাখাকে । তার পর ড্রাইভার এর সীট এ বসে । ঠিক তেমনই ভাবে বিশাখার মাথা এলানো রাজার কাঁধে । গাড়ি চলেছে ঋষিকোন্ডার দিকে । বিশাখার রক্তে উথাল পাথাল চলছে । অনেক দিন পর এই মানুষটির পাশে বসে বিশাখা । রাজার বাঁ হাত টা বিশাখা কে ছোঁওয়ার জন্য অধীর হয়ে উঠেছে । অনেক দিন পর সমুদ্রের নীলের আমেজ, উত্তাল ঢেউ, ছেলে বেলার বালু নিয়ে খেলা , সব শেষে রাজাকে অবহেলা করার ফল ও তার খেশারত । ইগোর লড়াই চালিয়েছিল বিশাখা । রাজার প্রতি ভালবাসাটা ছিল প্রথম থেকেই । তবুও মানতে নারাজ বিশাখা । রাজার দিকে না তাকিয়েও রাজার অনুভূতিটা অনুভব করছে বিশাখা । মোহ মুগ্ধ দৃষ্টি বারবার ফিরছে বিশাখার দিকে । বিশাখা নিজেকে মনে করিয়ে দেয় ।- তুমি অনাঘ্রাতা নও ,এতদিন কঠিন আবরণে নিজেকে ঢেকে রেখেছিলে বলেই তো একা দিল্লি থাকতে পেরেছ । ‘সো স্টপ টু ব্লাশ ইয়র সেল্ফ ‘ ।
গাড়ি টা গেট এর কাছে আসতেই বিশাখা চমকিত ও হরষিত । গাড়ি দাঁড়াল গেট এর কাছে । আর্চ করা বড় গেট । দু’ পাশের পিলারে সুদৃশ্য কালো গ্লেজ টাইল ফিটিং ।তাতে আকর্ষণীয় ভাবে কারুকাজ করে লেখা ” বিশাখা ” । বিশাখার গাম্ভীর্যের মোরক টা অনায়াসে খুলে গেল । আনন্দে সলজ্জ দৃষ্টি রাজার দিকে । রাজা বুঝি এর অপেক্ষায় ছিল । তাই ডান হাত কপালে তুলে স্যালুট এর ভঙ্গিতে মাথা নিচু করলো । তারপর আবার নজর ফিরল বিশাখার দিকে । অর্থাৎ সুস্বাগতম বা ওয়েলকাম টু ইয়র হোম। আই অ্যাম অলওয়েজ অ্যাট ইয়র সার্ভিস।
দারোয়ান গেট খুলে দিতে গাড়ি ভেতরে ঢুকে গেল। ড্রাইভার এর হাতে গাড়ির চাবি দিয়ে বিশাখার কাঁধে হাত দিয়ে ঘরের দিকে এগুলো। ডোর স্টেপ এ পা দিতেই ডোর বেল বেজে উঠল । দুজনের দৃষ্টি দুজনের দিকে । রাজা দরজার পাশের একটা ছোট্ট টাইলস এ হাত দিতেই দরজা খুলে গেল । ঐ টাইলস এর নিচে আর একটা টাইলস এ চাপ দিতেই দরজা বন্ধ হয়ে গেল । এবার বিশাখার দু বাহু হাতে নিয়ে দরজা খোলার টাইলস এ হাত দিতে দরজা খুলে গেল । বিশাখা যেন ম্যাজিসিয়ানের ম্যাজিক দেখছে । ভেতরে ঢুকে বুঝল যে ভেতরে ঢোকার আর ও একটা দরজা আছে । ভেতরের দরজায় চৌকো ডোর ম্যাট পা দিলেই আধ ইঞ্চি নেমে গেল ডোর ম্যাট। সঙ্গে সঙ্গেই দরজা বন্ধ হয়ে গেল। সুন্দর মিউজিক বাজতে লাগল। “বড় আশা করে এসেছি গো কাছে ডেকে লও ।” রাজার হাসি মুখ বিশাখার দিকে ফেরানো । বিশাখা বাকরুদ্ধ ! মাথা হেলিয়ে দিল রাজার কাঁধে । এবার আরও একটা টাইলস এ চাপ দিতেই। লিফট খুলে গেল । ওপরের ঘরে পা দিতেই তাক লাগা অবস্থা বিশাখার । বিশাল হল ঘর ।লাল টাইলস এ মোড়া । ওয়ালে ম্যাচিং ওয়াল টাইলস ।