Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

গাড়ির হর্ণ কানে আসতেই বিশাখা সামনে ফিরে তাকাল। স্যার গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালেন ।

সেই গাড়ির ভেতরে একজন সুদর্শন পুরুষ বসে । সেই পুরুষের দৃষ্টিটা বিশাখার দিকে ই নিবদ্ধ । বিশাখার দৃষ্টি সেদিকে ফিরতেই গাড়ি ঘুরে গেল । বুঝতে বাকি থাকল না বিশাখার যে, এই সেই অম্লান দত্ত । যার সুখ্যাতি বেশ কয়েক দিন “রুটিন ওয়ার্কের” মধ্যে পড়েছে । কিন্তু ঐ কাঁচে ঘেরা গাড়িতে দূরের চেহারাটা বিশাখাকেও যেন সেই, “ঠাকুর দাদার চশমা কোথা” র মতো খুঁজিয়ে বেড়াচ্ছে । বেল বাজতেই স্যার একেবারেই দরজায় পৌঁছলেন । বিশাখা নত হয়ে প্রণাম করল স্যার কে । স্যার হাসি মুখে বিশাখার মাথায় হাত রেখে বললেন ‘দেরি হয়ে গেল’ । এই বলে বিশাখার হাতে ট্রেন এর টিকেটটা একেরকম গুঁজেই দিয়ে দিলেন । তারপর একেবারে গট গট করে প্রথম সারিতে গিয়ে বসেন । বিশাখা ও তার নির্ধারিত জায়গাতে বসল ।

অনুষ্ঠানের শেষে বিশাখা ও ওর বান্ধবী এক সাথে হস্টেল এ ফিরে এল । রাতে বার বার করে সেই কাঁচের ঘেরাটোপের মানুষটাকে মনে পড়ে যায় । কাল বহুদিন পর বিশাখাপত্তনমে যাবার কথা ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়ল বিশাখা । সকালে জেগে দেখল প্রকৃতি আঁকুল হয়ে কেঁদে চলেছে । শেষ রাতেই টের পেয়েছে বৃষ্টির শব্দ । সামনের খাল টা প্রায় কানায় কানায় জল ভরে উঠেছে । খাল না বলে এটাকে বড় নালা ই বলা যায় । কিন্তু আজ বৃষ্টির জল ওর সব মলিনত্ব ধুয়ে মুছে ফেলেছে । ওকে যেন একটা মেঘলা রঙের চাদরের মতো মনে হচ্ছে । কেমন যেন একটা তির তিরে সর পড়া ভাব । তার ওপর পড়ছে বৃষ্টির ফোঁটা । বৃষ্টির ফোঁটা না বলে হীরের কুচি বললে বুঝি ঠিক বর্ণনা করা হয় ।

আজ বিশাখার বিশাখাপত্তনম এ যাবার দিন । চার বছর পর যাচ্ছে বিশাখাপত্তনম এ । যাবার ও ইচ্ছে ছিল না । সুছন্দার একটা চিঠি ওর সব দৃঢ়তাকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিল । বিবশ বিশাখা আবার সেই ভালবাসায় ভরা জায়গাতেই যাচ্ছে । বৃষ্টিটা যেন বিশাখার মনটাকে নাড়া দিয়ে সব পুরোন কথা টেনে আনছে । বর বার মনে পড়ছে সুছন্দার লেখা ,”বৌদি হিসাবে তোর একটা দায়িত্ব আছে”।

প্রকৃতি উদাস করা আকুলতায় কেঁদে চলেছে । খাল টাও আজ মনে হচ্ছে উপচে পড়বে । পাড়ে কৃষ্ণ চূড়ার শাখা দোল খাচ্ছে । ফেলে আসা ছোট বেলার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে ঐ পারুল, বকুল, আর শিবির গাছগুলো । খালের পাড় টা যে প্রকৃতি কি এক চাতুরী তে ভরে দিয়েছে রঙে রঙে আলিম্পন এঁকে!! কোথাও লাল, কোথাও হলুদ, আবার বকুল তলে সাদা রঙে বিছান ভূতল । অপূর্ব এক শিল্পী এই প্রকৃতি ।

বিশাখার জন্ম বিশাখাপত্তনমে, যেখানে পাহাড়ের কোলে খেলা করে সাগরের ঢেউ । পুরনো কথা ভীড় করছে মনে । না ,আর নয় , তাহলে ট্রেন টা ফেল করবে বিশাখা । উঠে পড়ল ডিভান থেকে । দরকারি সব কিছুই রাখলো না এখানে ।কি জানি যদি আর না ফেরা হয় তাই । স্নান সেরে ডিপ ব্লু তাঁতের শাড়ি তাতে রুপালি জড়ির পাড় পড়ে নিল । সঙ্গে ম্যচিং ব্লাউজ ডীপ স্কোয়ার কাট গলা । শাড়িটা বেশ কায়দা করেই পড়ল । হাতের প্যাঁচে একটু একটু চূড়ো করে একটা খোঁপা বাঁধল । মনে হল এই খোঁপাটা রাজার নজর কাড়ত । সুছন্দার নির্দেশ —বাড়ির গাড়ি করে যেন বাড়ির বৌ বাড়িতে ঢোকে । মনে ভাবল – তথাস্তু দেবী”।

মন দিয়েই “সুছন্দার বৌদি ” নতুন বৌ হিসাবে সাজল বিশাখা । এ সাজ দেখে যে মুগ্ধ হয়ে চেয়ে থাকত তার কথা ও মনে হল ।আর হনে হল অল্প বয়সের নিজের জেদ টার কথা । ম্যাচিং লিপস্টিক, আই স্যাডো সবই ব্যবহার করল । এবার সেই মানুষ টার কথা মনে করে সিঁদূর পড়ল সযত্নে । এরপর মানানসই একটা নীল টিপ পড়ল । হ্যাঁ, এবার সুছন্দার মাথা উঁচু হবে । আয়নার কাছে দাঁড়িয়ে নিজেকে বলল- হ্যালো!ডক্টরেট বিশাখা দত্ত ,কার জন্য এতো সাজলে ?

হাতে একটু সময় নিয়েই বেড়িয়েছিল । কিন্তু ট্যাক্সি পেতে একটু দেরি হয়ে গেল । গাড়ি ছাড়ার ঠিক আগে এসে স্টেশন এ পৌঁছল বিশাখা । স্যার কামরা দেখিয়ে দিলেন । কুলি মাল তুলে দিল কামরায় । এয়ার কন্ডিশন কোচ তাই স্যার কে দরজায় দাঁড়াল বিশাখা স্যার কে বা-ই করতে । প্রফেসর দত্ত চিৎকার করে বললেন। – অম্লান যাচ্ছে এই ট্রেন এই ।

ট্রেন প্ল্যাটফর্ম ছাড়াতে বিশাখা নিজের জায়গাতে বসল । ভাবল-সাজটা কি একটু বেশিই হয়ে গেছে!

একজন মনে হলো বারে বারে ঐ জায়গাতেই ঘুর ঘুর করছে। মনকে অন্য দিকে ফেরানোর জন্য বিশাখা ম্যাগাজিনের পাতায় মন নিবেশ করল ।

ট্রেন টা যেন বলছে, সে আসবে । সত্যিই যদি সে আসে ? যদি আবার মুখ ফিরিয়ে নিয়ে যায় ! বিশাখা কি আগের মতো মুখ ফিরিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকবে ?

রাতের খাবার এসে গেল । ট্রেন এর খাবার বিশাখার কোন দিন ও সহ্য হয় না । কিন্তু নিয়ম রক্ষা না করলে নয় । একটু পরেই বেড রোল দিয়ে গেল । রাতের ট্রেন এ ঘুম তো নয়, শুধু রাজা আর বিশাখার মধু নিশি যাপনের স্বপ্ন । শুধু সেই ঋষিকোন্ডার দিন গুলোর স্বপ্ন দেখল ।

পর দিন প্রায় বেলা দু’ টো য় পৌঁছল বিশাখাপত্তনম।

সুছন্দার কথা রাখার জন্য অপেক্ষা করছিল বিশাখা । ঠিক পাঁচ মিনিট পর ড্রাইভার এসে পড়ল। বলল- ওদিনা গারু, কঞ্চুমু লেট্ টু হাইপোইন্দি । ভেররি সরি ।

বলেই স্যুটকেস দুটো নিয়ে চলল গাড়ির দিকে। তারপর বিশাখার জন্য গাড়ির পেছনের দরজা খুলে দিল । গাড়িতে বসেই বিশাখা ব্যাগ থেকে আয়না বার করে মুখ টা ভাল করে দেখে নিল। তারপর লিপস্টিক আর আই শ্যাডোর টাচ্ দিয়ে নিল । না ভালোই লাগছে দেখতে ।

শিশুকাল থেকে যৌবনের বিশাখাপত্তনম । একে একে পার হচ্ছে নিউকলোনী, ডোন্ডা পারথী, আসলিমেটা, আপল্যানড ,এবার চিন্না ওয়ালটেয়র- এর ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাস কে বাঁয়ে রেখে, ডান দিকে সমুদ্রের আর আকাশের রঙে একাকার । ফাঁক ফোকর দিয়ে সমুদ্র দেখা যাচ্ছে । এরই মধ্যে কখন যে এসে পড়েছে সমুদ্রের ধারে সেই ঐতিহাসিক বাড়ি তা টেরই পেল না বিশাখা । গেট এর গাড়ি দাঁড়াতে ই অনেকেই বেড়িয়ে এলো। তার মধ্যে বিশাখার মা বাবা ও আছেন । ড্রাইভার দরজা খুলে দিতেই বিশাখার বাবা ও মা তাদের মেয়েকে জড়িয়ে ধরেন । সকলের চোখে বিশাখা অপরূপা । সুছন্দা ও ছুটে এসে বিশাখাকে জড়িয়ে ধরল । সকলের কাছেই থেকে বিশাখাকে একরকম ছিনিয়ে নিয়ে গেল। একেবারেই উপরের ঘরে নিয়ে গিয়ে বলল। – যা তো, ভীড়ে থাকতে হবে না । এখানে একটু রেস্ট নেই ।

বিশাখার হাসি পায় সুছন্দার গিন্নিপনায় ।

মনে ভাবল বিশাখা,এই ভাল হল। এতো লোকের মুগ্ধ দৃষ্টিতে বিশাখার কেমন লজ্জাই হচ্ছিল । পার্স টা রেখে বসল ডিভানে । ঘরটা ভারি সুন্দর সাজিয়েছে তো!! পাশের ঘরে ঢুকতেই দেখল কে যেন বিছানায় অর্ধ শায়িত । আপনা থেকেই বিশাখার মুখ দিয়ে বেড়িয়ে গেল। – কে! ও পাশের উত্তর- অম্লান দত্ত ।

বিশাখা প্রায় খাটের কাছে চলে গেছে।

আবার বলল সে- অম্লান, তোমার স্যারের ভাই পো। অ্যান্ড ইয়র হাজব্যান্ড রাজা । অবশ্য যদি এখন ও আপত্তি না থাকে । বলেই বিশাখার দিকে সেই দুষ্টমীর হাসি ।

বিশাখার মুখ থেকে আপনা থেকেই বেড়িয়ে এল – অম্লান? পরে মনে হল সেই হাসিটার কথা , যেটা আগে অশালীন মনে হত । এখন মিষ্টি আর অনেক দামী মনে হচ্ছে । ওর হারানো ‘ মনি’ মনে হচ্ছে এখন।

রাজা যে ওর কাছে এসে দাঁড়িয়েছে বুঝতেও পারেনি বিশাখা ।ওর ই মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল। – ডক্টরেট বিশাখা দত্ত , আমার ও একটা পোষাকী নাম আছে। স্ত্রী হয়ে সেটা তুমি জান না !! জানার উৎসাহ ও তোমার ছিল না অবশ্য রাজাকে পছন্দ ই করতে না ,তাই তার পোশাকী নাম জানার ও ইন্টারেস্ট ছিল না । দু হাত দিয়ে বিশাখার মুখখানা তুলে ধরে ওর চোখের দিকে চেয়ে বলল । – অম্লান, মানে জানো ! যা ম্লান হয় না । কিন্তু তুমি আমায়- কথাটা শেষ হতে দেয় না বিশাখা।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *