Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

গাড়িটা অদৃশ্য হয়ে যেতে মনটা খারাপ হয়ে গেল বিশাখার । ঘরে ঢুকে গেল বিশাখার । ঘরে মা ও বাবা ওর সব খবর ই পেয়েছেন বোঝা গেল ,কারণ দুজনেই গম্ভীর । মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল । সব দোষ কি বিশাখার? কিন্তু কোথায় গেল সেই মানুষ টা ? আবার মনে হল কাল রাতের কথা । বিশাখা তো ওখান থেকে পালাতে চেয়েছিল । তাই কি সে চলে গেল ! তাই বুঝি অমন করে আদরে ভুলিয়ে রাখতে চেয়েছিল বিশাখাকে । বিশাখাকে নিরূত্তাপ দেখে বুঝি একেবারেই মুক্তি দিয়ে গেল । কিন্তু ঐ ভালবাসার পাশ থেকে কি নিজেকে মুক্ত করতে পারবে !

না এই মুক্তি বিশাখা চায়নি । রাজার বন্ধন ই বিশাখা চায় । বিশাখার গলার খাঁজে আপনা হতেই হাত চলে গেল । পাগল করা আদর করে বিশাখার সব জেদ ভুলিয়ে দিতে চেয়েছিল । তখন ঐ থেমে যাওয়ার কারণ টা বিশাখা বোঝে নি । ভালবাসার প্রত্যাখ্যানের, অপমানের ,নিঃস্বতার কান্না । এতদিনের জমাট বাঁধা ভালবাসার অপমান সইতে পারেনি রাজা । রাজা হয়তো ভেবেছিল ,যার জন্য রাজা জীবন দিতে ও প্রস্তুত ছিল , সেই তারকাছ থেকে পালানোর পথ খুঁজেছিল ? তাই বুঝি নিজ থেকেই সরে গেল । হয়তো বা ভেবেছিল —জোর করে বিয়ে করায় আবার যদি সমুদ্রে চলে যায় !

নিজেকে ঢাকার একটা ভাল জায়গা টয়লেট । ওখানে গিয়েই হালকা করে নেবে নিজেকে । না নিজেকে বেশি দুর্বল করবে না । রাজা জানে না কিচ্ছু জানে না । বহুদিন ধরেই রাজাকে ও ভালবাসতো । আর ঐ দস্যুপনা টা ? ওটা আরও ভালো লাগতো । নিজেকে প্রকাশিত হয়ে পড়ার ভয়েই দস্যুটার সামনে রাগের ভান করতো ।

তনয়ের সাথে রাজার ভাষায় ফস্টিনষ্টি তো শুধু রাজার ভালবাসার গভীরতার প্রমাণ পাবার জন্য ই করত । তবে গভীরতাটা জেনেছিল সেদিন, যেদিন ডোর লক করে রাজাদের বাড়িতে প্রথম বিশাখার নারীত্বের বিশেষ অভিজ্ঞতা হয়েছিল । বিশাখার শরীরের ওপর যে রাজার পুরোপুরি অধিকার , তা সেদিন ই বিশাখা বুঝেছিল । রাজা যে বিশাখার জীবনের প্রথম ও শেষ পুরুষ ।

মন থেকে রাজা কে পুরোপুরিই মেনে নিয়েছিল । তাই গনেশ ঠাকুরের ভাসানের দিন বিশাখা জলে নামতে চায়নি । ওর চোখ সর্বদা খুঁজেছিল । কিন্তু খুঁজে পায় নি । আসল সময়ে রাজাই সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়ে ,নিজের জীবনের তোয়াক্কা না করে দিয়ে লড়ে ,বিশাখাকে উত্তাল সমুদ্রের থেকে উদ্ধার করে নতুন জন্ম দিল । এই বিশাখা তো তারই ।আর কার ও কোন দিন বিশাখার ওপরে অধিকার থাকবে না । তার ই জন্য হয়তো হয়তো বিশাখা গনেশ ঠাকুরের ভাসানের দিন গহনায় সেজেছিল । মন বলছে , ফিরে এসো তুমি । আমি তোমার ই । লজ্জায় কারো কে কিছু জিজ্ঞাসা করতে পারেনি ।

তিন চার দিন পর সুছন্দা এলো ।

বিশাখাকে বলল – কি রে, তোকে কি বৌদি বলবো? নাকি তুই সিঁদুর মুছে দাদাকে অস্বীকার করবি ?

আবার বলল- যাই বলিস না কেন দাদার আমার পছন্দ আছে ।

ওর প্রতিটি কথাই শ্লেশোক্তি । বিশাখার মাথা নত দেখে, কি মনে করে কাছে এল। বিশাখার থুতনিতে হাত দিয়ে বলল–জানিস, দাদা তোকে খুব ভালবাসে। দাদা বলেছিল যে, -বিশাখাকে ডুবে যেতে দেখে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম এই ভেবেই যে বাঁচলে দুজনেই বাঁচবো, না হলে ওকে জড়িয়েই তলিয়ে যাব । আবার বিশাখাকে ধরা গলায় বলল—তোর জন্য দাদা বিশাখাপত্তনম ছেড়ে চলে গেল রে। এবার বিশাখা আর পারল না সুছন্দাকে জড়িয়ে ধরল। দুজনে র চোখেই জল । বিশাখার মন বলছে , ফিরে এসো তুমি । আমি শুধু তোমাকেই চাই । রাতে বিশাখার ঘুম আসেনা । বার বার চোখে জল এসে যায় । আর গলার যেখানে রাজার সেই চাঁপা কান্নাটা হঠাৎই স্তব্ধ হয়েছিল, সে জায়গাটা হাত দিয়ে ছুঁয়ে রাজার স্পর্শ পেতে চায় । খালি মনে হয় রাজা অসীম অপমানে, অভিমানে দূরে চলে গেছে ।

এসব নিয়ে নানা রকম রটনা, কানা কানি টলাতে পারে নি বিশাখাকে । সুছন্দার সঙ্গে যাতায়াত একটু কমেছে আগের থেকে । অন্ধ্র ইউনিভার্সিটিতে রেগুলার ক্লাস করছে । এম এ ইংলিশ এ ভর্তি হয়েছে । বেশ জাঁক করেই শাঁখা ,সিঁদূর পরেই ইউনিভার্সিটির ক্লাস করছে । প্রথম প্রথম রাজার বিশাখাপত্তনম ছেড়ে চলে যাওয়া নিয়ে অনেক কানা কানি হয়েছে । কিন্তু কালের গতিতে সবাই থেমে গেছে । দেখতে দেখতে দুবছর কেটে গেল । ভাল রেজাল্ট করল বিশাখা । ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হল ইংরাজী তে ।

রাজা বিহীন বিশাখাপত্তনম এ আর থাকতে ভাল লাগল না বিশাখার । মা বুঝতেন মেয়ের মনের কথা । স্নান সেরে এসে মেয়ের ঘটা করে সিঁদূর পড়া দেখে আর মেয়ের দ্বিতীয় বার বিয়ের কথা ভাবেন নি । সাহস পাননি মেয়ে কে আবার বিয়ের কথা বলতে । চেষ্টা করতে করতে দিল্লি ইউনিভার্সিটি তে ডক্টরেট করার সুযোগ হাতে এসে গেল । মা বাবা আপত্তি করেন নি কারণ মেয়ের এখন পুরোনো কথা ভুলে থাকা দরকার । সেকথা ভেবেই বিশাখার এই ইচ্ছায় বাধ সাধলেন না ।

মায়ের বুক খালি করে বিশাখা দিল্লি চলে গেল । এই চার বছরের মধ্যে একবার ও বিশাখাপত্তনম যায়নি বিশাখা । বারে বারে ফোনে ই কথা হচ্ছিল মা বাবার সাথে । রাজার কথা কেউ তোলে নি । অবশ্যই বিশাখার গাইড প্রফেসর সুখ রঞ্জন দত্ত বিশাখাকে সব সাহায্য করবেন বলে অভয় দিয়েছিলন । মেয়ের মতো ই সাহায্য করতেন থিসিস সাবমিট করতে ।

ওদিকে সুছন্দা লিখেছে ওর বিয়ে । এ কথাও মনে করিয়ে দিয়েছে ,- বৌদি হিসাবে তোর কিন্ত বড় দায়িত্ব আছে ।

সুছন্দার বিয়ে । সুছন্দা ফোন করে যেতে বলেছে । এও মনে করিয়ে দিয়েছে ,যে বৌদি হিসাবে বিশাখার একটা দায়িত্ব আছে ।

স্যার কে ননদের কথা বলায় তিনি বলেছেন ,” কোন চিন্তা করো না আমার ভাইপো অম্লান ই সব ব্যবস্থা করে দেবে । ননদ কথাট বলে বিশাখা আত্ম প্রসাদ লাভ করেছিল । আর ও খুশি হয়েছিল বিশাখা কারণ এতো কম সময়ে টিকিট পাওয়া অসম্ভব ।

ঐ অম্লান নাম টা কাল থেকেই বিশাখা কে আচ্ছন্ন করে রেখেছে ।

পরদিন বেলা দশটায় ইউনিভার্সিটির হল এ কনভোকেশন শুরু হবে। কনভোকেশন হল এর ঠিক দরজায় ডক্টরেট সুখ রঞ্জন দত্তের অপেক্ষায় বিশাখা দাঁড়িয়ে । কাল বিশাখাপত্তনম এ যাবার দিন। ডক্টরেট সুখ রঞ্জন দত্ত, বিশাখার পি এইচ ডি র গাইড । তিনিই বিশাখার বিশাখাপত্তনম এ যাবার সব ব্যবস্থা করে দেবেন বলে অভয় দিয়েছিলন। কিন্তু বিশাখা অজানা অচেনা অম্লানের ওপরে আস্থা রাখতে পারছে না । ট্রেন এর টিকেট টা হয়েছে কিনা তা জানার জন্য ই অপেক্ষা । পিতৃতুল্য স্যার অবশ্য স্থির বিশ্বাসে তার ভাই পো অম্লানের এই সব ব্যাপারে ক্ষমতার উপর ভরসা করতে বলেছেন । কিন্তু বিশাখা অচেনা অম্লানের উপর ভরসা রাখতে পারছে না । কারণ দিন পনের আগে বিশাখার সহপাঠী মাদ্রাজে যাবার টিকিট পায় নি ।

বার বার ঘড়ি দেখছে বিশাখা । পাঁচ মিনিট আছে বেল বাজতে । হল এর দিকে নজর চালালো । মাস্টার ডিগ্রি ধারিরা বসে গেছে । সামনের তিন টে আসনের সারি ডক্টরেট ডিগ্রি ধারি দের জন্য বরাদ্দ। সেটা প্রায় ভরে গেছে । বিশাখার মনে পড়ল অন্ধ্র ইউনিভার্সিটির কনভোকেশন এর কথা । সেদিন বিশাখা মাস্টার ডিগ্রি ধারিদের আসনে বসে ছিল। সেই কনভোকেশন এ ক্রিকেট-প্লেয়ার সুনীল গাভাস্কার কে অন্ধ্র ইউনিভার্সিটির থেকে সম্মানিত ডক্টরেট উপাধি পত্র দেওয়া হল ।

গাড়ির হর্ণ কানে আসতেই চমক ফিরল বিশাখার। সামনে ফিরে তাকাল বিশাখা । স্যার গাড়ি থেকে নামলেন । গাড়ির ভেতরে বসা এক সুদর্শন পুরুষ। তাঁর দৃষ্টিটা বিশাখার দিক নিবদ্ধ । চমকে ওঠে বিশাখা । এ কে !! এই কি স্যারের ভাই পো অম্লান!!

মন বলে ওঠে- চিনি চিনি করি চিনিতে না পারি !!

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *