Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

প্লেট এ খাবার টা নিয়ে খেল। তারপর কাপে চা টা ঢেলে নিয়ে জানালার সামনে দাঁড়াল । সামনে সমুদ্রের দৃশ্য দেখতে দেখতেই চায়ের তলানি টুকু শেষ করল । তারপর কিচেন এ গিয়ে ধুয়ে রাখলো কাপ প্লেট। ভাবল বাড়ি চলে যাবে । বাইরে যাওয়ার জন্য দরজা খোলার চেষ্টা করেও খুলতে পারল না । তার মানে বিশাখার বাইরে যাওয়ার ছাড়পত্র নেই । রাজা ইচ্ছা করেই দরজা লক করে রেখেছে । কাল ফোন টা যেখানে ছিল সেখানে নেই । রাজার ওপরে বিশাখার মন টা বিরক্তিতে ছেয়ে গেল ।

জানালা থেকে দেখা যাচ্ছে দূরের সাগর নগর । খুব ই মনোরম দৃশ্য । সাগর সমতল থেকে অনেক টা নিচে। আর নগর মানে লোকালয় টা বেশ উঁচুতে পাহাড়ের পদতলে । ঋষিকোন্ডা সব চেয়ে সুন্দর। এঁকে বেঁকে কোন্ডা অর্থাৎ পাহাড়ের পাশ দিয়ে সমুদ্র তটরেখা গেছে । সুছন্দার কাছে শুনেছিল রাজাদের আর একটা বাড়ি ঋষি কোন্ডায় আছে । সেটা রাজার নামেই আছে । পড়াশোনার চাপ থাকলে এখানে এসে পড়াশুনা করতো । রাজার ওপর রাগে এখন মনে হচ্ছে আরও কতো কি যে করে, কে জানে ! কাল রাতের কথা মনে হলো ,রাজা বলেছিল, ” রাজার বৌ ছাড়া আর কোন মেয়ের রাজার বাড়িতে প্রবেশ অধিকার নেই । বুঝলে?” তখনই বিশাখাকে বৌ মনে করেই ঐ কথা বলেছে রাজা । এখন বিশাখা বুঝতে পারছে রাজার অভিসন্ধির কথা ।

আকাশ যেন তার সব নীল রং টা সমুদ্রে ঢেলে দিয়েছে । এখনকার আকাশের এত স্নিগ্ধ রূপ শহরে নেই । ক্ষণিকের জন্য বিশাখার মনটা ভাল লাগায় ভরে গেল । সাদা গাড়িটা ঢালের থেকে উপরের দিকে আসছে । বিশাখা জানে ঐ গাড়িতে কে আসছে । রাগটা জল হয়ে শরীরে তরঙ্গ তুলছে । মুখোমুখি হবার ভয়েই বিশাখা শোবার ঘরে চলে গেল। বাইরের ঘরের দিকে পিছন ফিরে জানালার কাছে দাঁড়াল কারণ ওর সাথে চোখাচোখি হবার সাহস নেই । সিঁদূর পড়েনি বলে তার শাস্তির বহরটা জানা আছে । তাছাড়া ওর কাছে ধরা পড়ার ভয়টা ও কম নয় । রাজা এ ঘরে এলো । একেবারে বিশাখার মুখোমুখি দাঁড়াল। ওর গরম নিঃশ্বাস বিশাখার শরীরে ঝড় তুলছে । রাজার দু’হাত বিশাখার কাঁধ ছুঁয়ে। দৃষ্টি নিবন্ধ বিশাখার কপালে ও সিঁথীতে । দৃষ্টি ফিরল বিশাখার চোখে । সুন্দর হাসিটা মূহুর্তে পাংশে হয়ে গেল । রাজার আহত দৃষ্টিটাই এতক্ষণ দেখতে চেয়েছিল বিশাখা । চোখ ফিরিয়ে নিল বিশাখা । কিন্তু রাজার আহত দৃষ্টি দেখে বিশাখার মনটা খারাপ হয়ে গেল । কিছু না বলে রাজা পকেট থেকে একজোড়া মকর মুখ বালা বিশাখার হাতে পড়িয়ে দিল । বালার মকর মুখ দুটো হীরের সেটিং করা, চোখ দুটোয় ছোট ছোট ইন্দ্রনীল বসানো । বিশাখার হাতে বালাটা ঘুড়িয়ে ফিরিয়ে দেখল রাজা ।মুখে তৃপ্তির ছাপ । ড্রেসিংটেবল এর সিঁদূর কৌটো এনে বিশাখার সিঁথীতে সিঁদূর পড়িয়ে দিল । বিশাখার মুখখানা একটু তুলে গোল সিঁদূরের টীপ পড়িয়ে দিল । রাজার ছোঁওয়ায় বিশাখা নিজেকে বশে রাখার জন্য চোখ বুজে ফেলল । কিন্তু নিজের গালে লালের ছোঁওয়া টের পাচ্ছিল বিশাখা । রাজ ওকে টেনে নিয়ে গেল আয়নার সামনে । বলল- দেখো কি সুন্দর দেখাচ্ছে তোমায় ।

বিশাখা আয়নার দিকে তাকাল ,প্রথম নিজের দিকে। তার পর ঐ মানুষটার দিকে । তার মুগ্ধ দৃষ্টি । আয়নার সামনে থেকে সরে যেতে কানে এল রাজার কথা।

  • যত দিন বাঁচি সিঁদূর টা পরো ।

দেখতে দেখতেই বেশ কটা দিন পেরিয়ে গেল। প্রতি রাতের মতো বিশাখার অবজ্ঞার শোধ তুলে নেয় রাজা স্বামীত্ব ফলিয়ে । নিস্কৃয় হয়ে বিছানায় ঘুমের ভান করে পড়ে থাকে বিশাখা । তাতে অপমানিত রাজা ।

অনেক ক্ষণ ঘুমের ভান করে অপেক্ষা শুধুই রাজার গভীর ঘুমিয়ে পড়ার । তারপর টেলিফোন খুঁজে মা কে একটা ফোন করা । রাজার হাত টা গায়ের থেকে সন্তর্পণে সরিয়ে বিশাখা পা টিপে টিপে পাশের ঘরে গেল । বাইরের ঘরে চাঁদের আলোয় ঘর ভরে গেছে । ফোনের রিসিভার এ হাত দিতে গিয়েই ঝণঝণিয়ে কতোগুলো খুচরো পয়সা মেঝেতে ছড়িয়ে পড়ে ঘরের নিস্তব্ধতা কে খান খান করে দিল।

পেছন ফিরতেই নজরে পড়ল সেই মানুষ দাঁড়িয়ে আছে । বিশাখার শরীর টা ভয়ে অবশ হয়ে আসছে। মানুষ টার মুখে কোন শব্দ নেই । আলতো করে বিশাখাকে তুলে নিয়ে এল খাটে । বিশাখা যেন খুব দামি জিনিস । কিছুক্ষন মাথা নিচু করে বসে রইল রাজা । ওর হাব ভাব দেখে বিশাখার মনটা খারাপ হয়ে গেল। ওকে আঘাত দিতে চায়নি বিশাখা ।

হঠাৎই বিশাখার পায়ের পাতায় চুম্বন শুরু করল। বিশাখার জীবন যৌবন ঐ চুম্বনে তোলপার হয়ে গেল। পাগলের মতোই চুম্বন চলতে থাকল। পাগলের মতোই চুম্বন উর্ধ গতি হতে লাগল । তার সঙ্গে চলল ভালোবাসার প্রতিশ্রুতির কথা । গলার খাঁজে এসে একটা গোঙানীর মতো শব্দ স্তব্ধ হয়ে গেল । বিশাখা জানে ঐ শব্দ কান্নার ই নামান্তর । হঠাৎই বিছানা থেকে উঠে গেল রাজা ।

কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিল বিশাখা তা জানে না । সকালে জেগেই রাতের কথা মনে হল । হাত বুলালো গলার খাঁজ টায় । যেখানে গোঙানীটা স্তব্ধ হয়েছিল। কষ্ট হল রাজার জন্য । বিশাখার শরীর টা রাজাকে চায় অথচ মনটা প্রতিবাদ করে । রাজাকে স্বীকৃতি দিতে চায় না ।

স্নান সেরে বিশাখা একখানা লাল শাড়ি পড়ল, তাতে ঝলমলে পাড় । সঙ্গে মানানসই ব্লাউজ । সিঁথী গাঢ় করে রাঙালো সিঁদূর দিয়ে । কপালে একটা সুন্দর গোল টিপ পড়ল । আগের দিনের রাজার বলা সিঁদূর পড়ার কথা মনে হল । আয়নায় দেখল গালে লালের ছটা । বেলা দশটা নাগাদ রাজা ফিরে এলো । এ ঘরে একবার ও এলো না । ও ঘরেই কি সব কাগজপত্র গোছ করল। দূর থেকেই বিশাখা দেখতে পাচ্ছে । একটা সুটকেস বার করে কি সব ভরল । কিছু প্যান্ট সার্ট ও গুছিয়ে নিল । আজকের রাজার সঙ্গে কালকের রাজার আকাশ পাতাল তফাত । কোথায় যাচ্ছে ও ! বড় শ্রান্ত ক্লান্ত লাগল রাজাকে । বিশাখার ইচ্ছে হচ্ছে কোলের পরে রাজার মাথাটা চেপে রাখতে।

ঠিক তখনই রাজা শোবার ঘরে এসে দাঁড়াল । গভীর দৃষ্টি বিশাখার দিকে । কিন্তু শূন্য সে দৃষ্টি ।কাছে থেকেও বিশাখার থেকে অনেক দূরে । আবার দৃষ্টি ফিরল বিশাখার দিকে । বলল- চলো ।

বিশাখা কিছু বোঝার আগেই দেখল রাজা গাড়িতে সুটকেস রাখছে । বিশাখা বুঝতে পারছে না যে কোথায় যাচ্ছে ওরা । সঙ্গে কিছু নেবে কিনা তা বুঝতে না পেরে সিঁদূরের কৌটো টা নিয়ে নিল । দেখল রাজা দরজা লাগাবার জন্য দাঁড়িয়ে আছে। বিশাখা তাড়াতাড়ি তে পায়ে চটি গলাতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে সরাসরি রাজার বুকের উপর পড়ল । প্রথমে বিশাখার দু’কাধে হাত দিলেও পরে হাত সরিয়ে নিল রাজা । অপরাধীর মতোই বিশাখা ‘সরি’ বলে গাড়ির দিকে সরে গেল । রাজা গাড়ির কাছে এসে দরজা খুলে দিল । বিশাখার চোখ বারেবার রাজার দিকে চলে যাচ্ছে । কিন্তু রাজার দৃষ্টি অনেক দূরে । একেবারেই জন্য ও তাকালো না বিশাখার দিকে ।

সমুদ্র তটের গর্জন ছাড়া কোনও শব্দ নেই । জন হীন রাস্তা পাহাড়ের থেকে নামতে শুরু হয়েছে নিচের দিকে। বেলা প্রায় এগারোটা, সমুদ্র আকাশ মিলেমেশে একাকার । পাহাড় পেরিয়ে গাড়ি শহরে ঢুকছে । গাড়ি সোজা রাস্তায় ঢুকল । পার হল একে একে লওসন বে, এম.ভি.পি কলোনী,পেদ্দা ওয়ালটেয়র-এ। এরপর সোজা চিন্না ওয়ালটেয়র-এ বিশাখাদের বাড়ি এসে গাড়ি দাঁড়াল । রাজা নেমে দরজা খুলে দিল । বিশাখা নেমে রাজার দিকে তাকালো । তাকিয়েই আছে বিশাখা কিন্তুগাড়িতে উঠে রাজা গাড়ি স্টার্ট দিল। বিশাখা চেয়েই আছে রাজার দিকে। এই বুঝি কিছু বলবে রাজা । না গাড়ি ও রাজা চোখের আড়ালে চলে গেল।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *