সমুদ্র মেখলা -2
সুছন্দা অবশ্য বিশাখার ওদের বাড়ি না আসার কারণ টা পুরোপুরি না হলেও কিছুটা অনুমান করেছিল । বিশাখা ওদের বাড়ি আসলে দাদার চেহারা ছবি যে বদলে যায় তা বুঝতে পারতো । কিন্তু বিশাখা কেন যে ওর দাদাকে পছন্দ করে না তা ওর মগজে ঢোকে না। দাদা বিশাখার সাথে তনয়কে দেখলে রেগে যেত। কিন্তু সুছন্দা জানতো তনয়ের সাথে বিশাখার সম্পর্ক টা কেমন।
রাজা ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেছে চার মাস ও হয় নি ,এরই মধ্যে স্টীল প্ল্যান্ট এ একটা চাকরি পেয়ে গেল। বিশাখার বাবা ও স্টীল প্ল্যান্ট এ উচ্চ পদে আসীন । ওর বাবার মতো না হলেও ছোট খাট চেম্বার এ বসা পদের অধিকারী হল রাজা । সকলেই খুশি ।ঠিক হল সবাই মিলে, মানে বন্ধুদের নিয়ে একটু আনন্দ করবে । তাই সুছন্দা বিশাখাকে নিতে এসেছিল ঐ আনন্দে সামিল হতে । কিন্তু বিশাখা জানতো সুছন্দার দাদার আনন্দের চাবিকাঠিটা কোথায় ! তাই ইচ্ছে করেই শরীর খারাপের অজুহাতে ওদের সাথে যাওয়াটা নাকচ করে দিয়েছ । সেদিন বিশাখার মা ও খুব রাগ করেন। বিশাখা নাকি সেধে আসা লক্ষী কে পায়ে ঠেলছে । হয়তো বা তাই ! যে কোন মেয়ে ঐ অফার পেলে নাকি ,মায়ের ভাষায় “উৎরে ” যাবে । কিন্তু বিশাখা ওকে জব্দ করতে সারা জীবন বিয়ে না করতে ও রাজী । বিশাখার নাকচ করায় ঐ দস্যুটার চেহারা- ছবি কেমন হল তা অনুমানে দেখতে পায় বিশাখা । ঐ মুখ খানা মনে করে বিশাখার নিজের মুখ খানাও রাঙা হয়ে ওঠে ।
সেদিনের পর থেকেই রাজা একেবারেই অন্য মানুষ হয়ে গেছে। বেঙ্গলি কালি বাড়িতে দেখা হলেও সেই অশালীনতার ভাব টা তো নেই ই বরং পারলে জায়গা বদল করে সরে গেছে । কখনও মুখোমুখি হলে রাজার সুগভীর দৃষ্টি বিশাখাকে চিরে চিরে ফালা ফালা করে দিত । আর তনয়ের সঙ্গে থাকলে তো কথাই নেই । তখন মনে হতো রাজার শান দেওয়া নজর যেন বিশাখাকে চিরে ফালাফালা করে দেবে । এরপর থেকে রাজা কে দেখলে ই পালাত বিশাখা । ওর ঐ দৃষ্টি সইতে পারত না ।
এরই মধ্যে সেক্সপিয়র এর সনেটের একটা নোট খুব জরুরী ছিল, তাই সুছন্দার কাছে যাওয়া দরকার। সকাল থেকেই রাজাদের বাড়ির দিকে নজর রাখছিল বিশাখা । উদ্দেশ্য রাজার অফিসে বেড়োনোর পরই বিশাখা ওদের বাড়ি যাওয়া ।
রাজাকে বেড়োতে দেখল বিশাখা । গাড়ি নেয়নি আজ হেঁটেই যাচ্ছে । বিশাখা তৈরি ই ছিল । পায়ে চট করে চটি গলিয়ে চলে গেল সুছন্দার বাড়িতে । এবার বই পত্র সব খুলে বসেছে দুই বন্ধু । নোটস তৈরি হবে এখন ।
মোড়ের বাঁকে পিছন ফিরতেই রাজা দেখল বিশাখা ওদের বাড়িতেই ঢুকল। রাজা ভাবল-” সো রিটার্ন ব্যাক্ টু হোম “। এদিকে দুই বন্ধুতে নোটস তৈরিতে এত মগ্ন যে, কোন দিকে খেয়াল নেই । হঠাৎই বিশাখা দেখল সুছন্দা কেমন অন্য মনস্ক। দৃষ্টি বিশাখার পিছনে । সুছন্দার দৃষ্টি অনুসরন করে দেখে , রাজা ওর ই পেছনে প্রায় গা ঘেষে দাঁড়ানো ।
উঠে দাঁড়াল বিশাখা । সুছন্দার দিকে চেয়ে বলল । – আমি আসি । রাজা বোন কে বলে। – তুই এখানেই থাক । ওর সঙ্গে আমার কথা আছে।
বলেই এক বিশাখাকে নিয়ে বাইরের ঘরে গেল । তা দেখে বিশাখা বাইরের দরজা খোলার বৃথাই চেষ্টা করে চলেছে । রাগেই রাজার দিকে তাকায় । বোঝে এটা ঐ দস্যুটার কারসাজি ।
পরক্ষণেই রাজার শক্ত মুখ টা দেখে ভয় হল। ওর নজর থেকে চোখ ফিরিয়ে নিল বিশাখা । রাজার দৃষ্টি বিশাখার তিল তিল করে বেড়ে ওঠা শরীরের দিকে । শরীরের অনু পরমানুকে আলাদা করে চোখ দিয়ে লেহন করছে । বিশাখার দৃষ্টি রাজার দৃষ্টি অনুসরণ করে। ওর শরীরে যে অংশে রাজার দৃষ্টি পড়ছে সেখানকার রক্ত যেন রিণ রিণ করে আলোড়িত হচ্ছে । আবার দৃষ্টি ফেরে ঐ চোখের দিকে । রাজা যেন বিশাখার অন্তর কে কুড়ে কুড়ে দেখতে চায় । রাজা যেন বিশাখার প্রত্যাখ্যান এর কারণ টা বিশাখার ঐ চোখের থেকেই জেনে নেবে । বিশাখার শরীরের আলোড়নের প্রভাব ওর চোখে মুখে প্রতিফলিত হয়ে পড়ে । বিশাখার মুখের পরিবর্তন রাজার চোখ এড়ায় না, তাই ওর চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠে । বিশাখা বুঝতে পারে যে সে রাজার কাছে ধরা পড়ে গেছে । তাই চেঁচিয়ে বলে। – দরজা খোল । – কথা আছে।
বিশাখা একটু আগে রাজার সৌন্দর্যের মোহে পড়া দুর্বলতা ঢাকতে ঝাঁঝের সাথে বলে। – তোমার মতো অসভ্য- বিশাখার কথা শেষ হতে পারে না। তার আগেই রাজার কঠিন বাহু বন্ধনে নিষ্পেষিত হয় বিশাখা । শাস্তি হিসাবে বিশাখার কোমল ঠোঁটের উপর ওর কঠিন ওষ্ঠের নিপীড়ন করতে থাকে । কখনও ঠোঁটের চাপ কখনও বা হাতের চাপ বাড়ে । ঠোঁটের ওপর ঠোঁট ঘষতে ঘষতেই হিসহিসিয়ে বলে রাজা । – আমি অসভ্য?তোমার মতো মেয়েকে কি ভাবে শায়েস্তা করতে হয় তা আমি দেখিয়ে দেব। বিশাখার জীবনের প্রথম পুরুষের অনুভূতি । রক্তের আলোড়ন বাড়ছে ।শরীর ঝিম ঝিম করে শিথিল হয়ে আসছে। বিশাখার গলায় গোঙানীর আওয়াজ হতেই রাজা বিশাখার ঠোঁট থেকে মুখ তুলে দেখে অন্য অজানা এক অপূর্ব সুন্দরী বিশাখাকে। রাজার শরীরের ওপর ভার ছেড়ে দিয়েছে । মুখে আকুতির গোঙানী ।হঠাৎই রাজা ই বিশাখা কে ছেড়ে দিল ।
বিশাখা হতবাক। রাজা নিঃশব্দে চলে গেছে।