সমুদ্র মেখলা -10
সুছন্দা দু’কানে হাত দিয়ে বলল–ওকে বাবা। এবার থেকে বৌদি, তুমি । ঠিক আছে ? বিশাখা জড়িয়ে ধরল সুছন্দাকে। সুছন্দা ও জড়িয়ে ধরল বিশাখাকে ।
সুছন্দাকে নিয়ে পার্ক হোটেলে চলে গেল বিশাখা । তখন ও চার দিকে সাজ সাজ রব । বিরাট হল ঘরের মাঝে চার দিকে চার টা কলাগাছ মাটি জড়ো করে লাগিয়ে রেখেছে । ফুল লতা পাতা দিয়ে ভারি সুন্দর করে সাজিয়েছে ছাদনা তলা । চার দিকে চেয়ারের সারি দিয়ে সুবন্দোবস্ত করা হয়েছে যাতে অভ্যাগত রা বিয়ের অনুষ্ঠান টা ভাল করে উপভোগ করতে পারে । মালা বিউটি পারলার থেকে কনে সাজাতে এসে গেল। কনে সাজাতে সাজাতে বিকেল গড়িয়ে গেল । বেনারসী পড়ানোর পর আর সেই সুছন্দাকে চেনা যায় না ।
নিচে উলুধ্বনি শোনা গেল ঝাঁকে ঝাঁকে । বিশাখা সুছন্দা কে বলল- বর এসে গেছে ।
হৈ হৈ রব নিচে । বর যাত্রীদের মেয়েরা কেউ কেউ ওপরে উঠে এসেছে সুছন্দাকে দেখতে । বিশাখা নিচে নেমে গেল বর কে বরণ করতে । বরণডালা নিয়ে জামাই কে বরণ করল বিশাখা । ভারি সুন্দর দেখতে জামাই । এবার বিয়ে শুরু হবে ।সুছন্দাকে আনতে সুছন্দার কাছে যেতেই সুছন্দা বলল। —চলে যাও বৌদি,আর দেরি করো না । দাদার কথা মনে করে চলে যাও । বিশাখা অভ্যাগতদের সকলের সাথে কথা বলল । পরিচিত সবাই বহুদিন পর বিশাখাকে দেখে খুব খুশি।
তনয় গাড়িতে বসেই ছিল। মাথায় ঘোমটা দিয়ে বিশাখা তাড়াতাড়ি গাড়িতে উঠে পড়ল । ড্রাইভার ও বসে ছিল তাই বিশাখা বসার সাথে সাথেই গাড়ি স্টার্ট দিল । গাড়ি চলতে শুরু করল। কিছুক্ষন পর বিশাখা তনয় কে বলল। – কি ব্যাপার বল তো ? কি জন্য যাচ্ছি ও বাড়িতে ? তনয়ের মুখে মজার ভঙ্গি । বলে- চল না ।গেলেই দেখতে পাবি ।
বিশাখার ভাল লাগছে না । বিয়ে বাড়ি ফেলে আসার জন্য নিজেকে দায়ি মনে হচ্ছে । সুছন্দার কথা শুনে আসাটা ঠিক । রাজার জন্য পাঠিয়ে দিলো । রাজা কি পালিয়ে যাচ্ছে কোথাও !! হু হু করে গাড়ি চলেছে সমুদ্রের ধার দিয়ে । বিশাখার উচাটন ।কেন ?কেন ? ঋষিকোন্ডার বাড়ির কাছে এসে তাজ্জব বিশাখা । এখানেও তো বিয়ে বাড়ির বিশাল সাজানো গেট।
সাজানো দেখেই বিশাখা ধরে নিয়েছে এখানে কি হতে চলেছে । ভেতরে ঢুকে অবাক বিশাখা । এক দিকে আইসক্রিম, পানশালা, অন্য দিকে আমিষ আর একেবারে আলাদা জায়গায় নিরামিষের বুফে ডিনারের সুবন্দোবস্ত । আর দু খানা গদী মোরা আসন বর কনের জন্য পাশাপাশি রাখা আছে ।
ঘরের ভেতরে ঢুকে যেতেই একদল মেয়ে বিশাখাকে নিয়ে গেল সাজঘরে । পাক্কা একঘন্টায় সুন্দরী বিশাখাকে আরও সুন্দর করে তুলল ওরা । মায়ের দেওয়া লাল বেনারসী টাই পড়ালো বিশাখাকে । খোঁপায় ফুলের বাহার ,ফুলের মুকুট, আর গলায় গোরের মালা । কপালে চন্দনের ফোঁটা এঁকে দিল । বিশাল আয়না য় নিজেকে দেখল বিশাখা সত্যিই সুন্দর দেখাচ্ছে বিশাখা কে । বরের দেখা নেই । বিশাখা ভাবে ও বাড়িতে কি হচ্ছে এখন কে জানে!!
কনের সাজে বিয়ের পিঁড়িতে বসে সুছন্দা রাজাকে ইশাড়া য় কাছে ডাকল । রাজা কাছে যেতেই
রাজাকে বলল- দাদা, তুই ও বাড়ি চলে যা ।
রাজা- কেন?
সুছন্দা- বৌদি ওখানেই আছে ।
রাজা- এই তো এখানেই ছিল । একা কেন গেল ?
সুছন্দা- তুই যা না । একা যায় নি ,তনয়ের সাথে গেছে ।
রাজা- আমাকে না বলে ,আর ঐ বদমাশ ছোকরাটার সঙ্গে গেল । জাহান্নামে যাক ,আমি যাব না ।ওর সঙ্গে আমার সব সম্পর্ক শেষ ।
সুছন্দা- রাগ করিস না দাদা । বৌদি যেতেই চায় নি । আমি একটা বিশেষ দরকারে বৌদি কে পাঠিয়েছি । তুই গেলে বৌদি চলে আসবে ।
রাজার মাথাটা বিশাখা যেতেই চায়নি শুনে একটু ঠান্ডা হয়েছে বুঝে সুছন্দা আবার বলল। – দাদা, আজকের দিনে তুই যেন বৌদির ওপরে রাগ করিস না ।
তনয়কে গাল পাড়তে পাড়তে স্টিয়ারিং এ হাত দিল রাজা । মাথায় শয়তানের কারখানা চলছে । ফাঁকা রাস্তা তাই গাড়ি চালাতে কোন বেগ পেতে হল না । বিশাখার হয়তো কিছু ফেলে গেছে তাই ভাবতে ভাবতেই এতটা রাস্তা এসেছে রাজা । বাড়ির কাছে এসে তাজ্জব রাজা । এতো ভীড় কেন বাড়ির সামনে । বিশাখার শরীর টরির খারাপ হয় নি তো ? ভয়ে বুকটা ধক্ করে উঠল । কিন্তু বাড়ির গেট এর সাজের বাহার দেখে ধাতস্থ হল রাজা । এটা কি দেখছে ! এটাও তো একটা অনুষ্ঠানের বাড়ি মনে হচ্ছে । নিচ তলায় বিশাল সামিয়ানা খাটানো হয়েছে এখানেও ও বাড়ির মতো ছাদনা তলা সাজানো রয়েছে । ওপরের ঘরে ঢুকতেই মহিত রাজা । কনে বেশে বিশাখা । অপূর্ব লাগছে বিশাখা কে দেখতে !! এটা কি ওর বিশাখা !!
বন্ধুরা টেনে নিয়ে গেল রাজা কে । এবার বর বেশে সাজাল রাজাকে । আংটি, বোতাম, গলার চেন সবই পরা ছিল । একটু চাক চিক্য বাড়ানো হলো । রাজা কে বিশাখার পাশের চেয়ারে বসালো বন্ধুরা ।
রাজার উৎফুল্লিত মুখ বলে দিচ্ছে যে এই ব্যবস্থায় রাজা দারুণ খুশি । বারে নজর চলে যাচ্ছে বিশাখার গালের লালিমায় । তনয়ের ছবি তোলা চলছে, একেরপর এক । বিশাখার কানে আসছে বন্ধুদের হাসির মন্তব্য। সবই পুরোন দিনের কথা তুলে । বিশাখার সরম রাঙা ভাব । তনয় ছুটে এসে রাজাকে বলল। – মে আই কিস ইয়র ওয়াইফ ? সী লুকস ভেরি সেক্সি । কথাটা বিশাখার কানে যেতেই বিশাখার রাজার দিকে চোখ চলে গেল । রাজার দৃষ্টি বিশাখার থেকে ফেরে তনয়ের দিকে , মুখে প্রশ্রয়ের হাসি । হাত তোলে মারার জন্য । এ ও ছদ্মকোপ । তনয় হাসতে হাসতে দৌড়য় । বলে- বিশাখা রাজা দা আমায় মেরে ফেলবে ।
বিশাখার মুখেও প্রশ্রয়ের হাসি । রাজার দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে । রাজার নজর ও বিশাখার দিকে । কানের কাছে মুখ নিয়ে রাজা বলল। – তোমায় কিন্তু দারুণ দেখাচ্ছে ।
চোখ ফিরিয়ে নিল বিশাখা । বিশাখার গালে লালের ছটা । ঠিক তখনই ক্যামেরা ঝলকে উঠল। ছবির পর ছবি বন্দি হল নানান ভঙ্গিতে । বিশাখার দৃষ্টি সব সময়ই রাজার দিকে । হৈ হৈ করে খাওয়া সারার পর সবাই চলে গেল ।
তনয় দাঁত বার করে বলল – আমি আজ আর বাড়ি যাব না রে বিশাখা । কি বলো রাজাদা তোমাদের সঙ্গে একটু শোবার জায়গা হবে না ?
রাজা ছুটে গেল তনয়ের দিকে । তনয়ের চিৎকার- বিশাখা বাঁচা ,রাজা দা আমাকে মেরে ফেলল রে। দুষ্টমীর ভঙ্গি তে বলে বিশাখাকে । যেন সত্যিই রাজা মেরে ফেলবে । আবার তনয় বলে- তোদের ফেলে যেতে মন চাইছে না রে ।
সবাই চলে গেছে। রাজার মুখে খুশির ঝলক । দু হাতে তুলে ধরল বিশাখার মুখখানা । নজর বিশাখার পেলব ঠোঁটে । তখনই টেলিফোন টা ঝনঝন করে বেজে ঊঠল অর্ধ সমাপ্ত কাজ ফেলে রাজা রিসিভার টা তুলে নিল । ও পাশে সুছন্দার গলা ।
-কি রে দাদা ,তোর মনের সাধ মিটল তো ? কনে কে কেমন দেখলি নতুন বৌকে ?
রাজার দৃষ্টি বলছে এক হাত বিশাখাকে নেওয়ার ইচ্ছার কথা । কারণ নিশ্চয়ই বিশাখা সুছন্দাকে ওর মনের সাধের কথা বলেছিল ! নইলে সুছন্দা ঐ কথা জানলো কি করে!! তাই সুছন্দা কে রাজা বলল- “অনেক তো বৌদি কে দেখেছিস । এবার একটু স্বামীর দিকে মন দে । গুড নাইট ” বলে রিসিভার রেখে দিল ।
বিশাখার দিকে ফিরে বলল- এবার তোমার। শায়েস্তা হবে ।
বিশাখা যেন আজ অষ্টাদশী ।