Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » সমুদ্র বিলাস (১৯৯০) || Humayun Ahmed » Page 5

সমুদ্র বিলাস (১৯৯০) || Humayun Ahmed

কক্সবাজার রওনা

জোবেদা খানম কল্পনাও করেন নি তাঁকে বাদ দিয়েই তারা কক্সবাজার রওনা হবে। শেষ রসা ছিল অনি। তাঁর বদ্ধমূল ধারণা ছিল অনি বিকট চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করবে। সেই অনিও কিছু বলছে না। সে তার নিজের কাপড়চোপড় গোছানো নিয়ে ব্যস্ত। তার জন্যে আলাদা একটা সুটকেস নেয়া হচ্ছে। সে খুব ব্যস্ত। দাদীর দিকে ফিরে তাকানোরও সময় নেই।

জোবেদা খানম ভেবেছিলেন শেষ মুহূর্তে হয়ত তারা মত বদলাবে। তখন যাতে ঝামেলা না হয় সে জন্যে তিনি নিজেও সব কিছু গুছিয়ে রেখেছেন। ছোট মেয়ের বাসা থেকে একটা বড় ফ্লাস্ক এনেছেন। ফ্লাস্ক ভর্তি চা থাকবে। এই বয়সে একটু পরপর চা খেলে ভালো লাগে। নতুন স্যান্ডেল বড় ছেলে কিনে দিয়েছে। একটা সুতির চাদর কিনেছেন।

এত কিছু করেও কিছু হল না। শেষ মুহূর্তে লক্ষ করলেন তাকে এখানে রেখেই সবাই রওনা হচ্ছে। তাদের ট্রেন রাত সাড়ে এগারটায় পূর্ণা নিশীথা। তারা নটার সময়ই রওনা হল।

জোবেদা খানমের বড় ছেলে একট গাড়ি নিয়ে এসেছে। সে সবাইকে স্টেশনে নামিয়ে মাকে নিজের বাসায় নিয়ে যাবে। জোবেদা খানমের এই ছেলেও তৌহিদের মতো কথাবার্তা বলে না। চুপচাপ বসে থাকে। এখনো তাই করছে। বসার ঘরে চুপচাপ বসে আছে। যেন এই পৃথিবী, এই জগৎ-সংসারের সঙ্গে তার কোনোযোগ নেই।

রিমি আর অনি জোবেদা খানমের কাছ থেকে বিদায় নিতে এল। রিমি বলল, মা আমরা রওনা হচ্ছি।

তিনি জবাব দিলেন না, হাতের তছবির মালা দ্রুত ঘুরতে লাগল।

আমাদের জন্য দোয়া করবেন, মা।

আচ্ছা।

আপনাকে নিতে পারছিনা মাশরীরের অবস্থা তত ভালোনা। লম্বা জানি। দিনের মধ্যে অনেকবার আপনাকে বাথরুমে যেতে হয়।

আচ্ছা। আচ্ছা, বুঝলাম তো।

রিমি পা ছুঁয়ে সালাম করল। অনি খুব মজা পাচ্ছে। মা তার দাদীকে সালাম করছে। এই দৃশ্য তার খুব মনে ধরেছে।

অনি দাদীকে সালাম কর।

উহুঁ। আমি করব না।

যাও, দাদীর দোয়া নিয়ে আস। মা ওকে একটু ফুঁ দিয়ে দেন।

জোবেদা খানম নাতনীকে কোলে বসিয়ে মাথায় ফুঁ দিলেন। গাঢ় স্বরে বললেন, ফ্লাস্কটা নিয়ে যাও মা। কাজে লাগবে।

মা, আপনি মনে কোনো কষ্ট নেবেন না।

না কষ্ট আর কী। বেঁচে থাকাই কষ্ট, এ ছাড়া আর কষ্ট কী?

তাহলে আমরা রওনা হই মা?

আচ্ছা-আচ্ছা। তুমি গায়ের চাদরটাও নিয়ে যাও। সমুদ্রের বাতাসে ঠাণ্ডা লাগতে পারে।

চাদর লাগবে না।

আহা নাও না।

রিমি চাদর নিল। জোবেদা খানম বললেন, স্যান্ডেল জোড়া পায়ে দিয়ে দেখ তো— লাগে কি-না। লাগতে পারে। তোমার পা ছোট।

স্যান্ডেল লাগবে না। স্যান্ডেল আছে।

আহা, নাও না! নতুন স্যান্ডেল। আমি পায়ে দেই নি।

রিমি লক্ষ করল, তার মন খারাপ হতে শুরু করেছে। এই কঠিন শুষ্ক বৃদ্ধার হৃদয়ের গহীনে স্নেহের ফল্গধারা আছে। সব সময় চোখে পড়ে না। হঠাৎ বিদ্যুৎ ঝলকের মতো ঝলসে ওঠে।

এইখানে কিছু টাকা আছে। এটা রাখ। বিদেশ জায়গা। কখন কী দরকার হয়।

ময়লা রুমালে বাঁধা ছোট্ট একটা পুঁটলি তিনি এগিয়ে দিলেন। এটা জোবেদা খানমের সারা জীবনের সঞ্চয়। ছেলেরা যখন যা দিয়েছে, তিনি জমা করে রেখেছেন। ছোট-ছোট নোটগুলো বদলিয়ে বড় নোট করেছেন।

টাকা নেয়ার ব্যাপারে রিমি কোনো আপত্তি করল না। তার টাকা খুব দরকার।

সাবধানে থাকবে মা, যে কোনো জায়গায় রওনা হবার আগে বাঁ পা আগে ফেলবে। আর মনে-মনে বলবে ইয়া মুকাদ্দিমু। মেয়েদের জন্যে বাঁ পা—পুরুষদের জন্যে ডান পা। মনে থাকে যেন।

জ্বি, মনে থাকবে।

রাতে অনিকে স্যুয়েটার গায়ে দিয়ে রাখবে। নতুন জায়গা–ফট করে বুকে ঠাণ্ডা বসে যেতে পারে।

আমরা তাহলে মা রওনা হই?

আচ্ছা রওনা হও। ফি আমানিল্লাহ, ফি আমানিল্লাহ।

ট্রেন সাড়ে এগারটায় ছাড়ার কথা ঠিক সাড়ে এগারটায়ই ছাড়ল। তৌহিদের বিস্ময়ের সীমারইল না। সে অনেকদিন ট্রেনে চড়ে না। তার ধারণা ছিল, এ দেশে ট্রেনের কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই। ওদের মর্জিমতো এক সময় ছাড়ে। এখন দেখা যাচ্ছে–ব্যাপার তা না। ট্রেনের কামরাও সুন্দর। সবার জন্যে সিট আছে। দাঁড়িয়ে যাবার কোনো ব্যাপার নেই।

দুটো মুখোমুখি সিটে তারা বসেছে। তাদের সঙ্গে তৃতীয় এক ব্যক্তি ছিলেন। তিনি বললেন, আপনারা মেয়েটাকে এই সিটে বসিয়ে দিন, আমি অন্য এক জায়গায় বসছি। আজ ভিড় কম। গাড়ি ফাঁকা যাচ্ছে।

তৌহিদ এই মানুষটির ভদ্রতাতেও মুগ্ধ হল। আজকাল ভদ্রতার ব্যাপারটা চোখে পড়ে না। বাসে মহিলারা দাঁড়িয়ে থাকেন। বসে-থাকা পুরুষ যাত্রীরা দেখেও না দেখার ভান করেন। উদাস দৃষ্টিতে তারা জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকেন।

রাতের গাডি হহ করে ছটে চলেছে। সট-সট করে স্টেশন পিছে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে। টঙ্গির মতো বড় স্টেশনেও গাড়ি থামল না, ছুটে বের হয়ে গেল।

অনি বলল, বাবা আমি কিন্তু সারারাত ঘুমুব না। জেগে থাকব।

আচ্ছা, থাকবে।

আর এই জানালার কাছের জায়গাটা আমার। এখানে কেউ বসবে না।

আচ্ছা।

তৌহিদ সিগারেট ধরাল। রিমি তাকাল, কিছু বলল না। সে ঠিক করে রেখেছে বেড়ানোর এই সময়টায় সে তৌহিদকে কিছুই বলবে না। একটা কড়া কথা বলবে না। একবারও কঠিন চোখে তাকাবে না। তারা কখনো কোথাও বের হতে পারে না। এই প্রথম বের হল। এই আনন্দ যেন নষ্ট না হয়।

রিমি।

বল।

যাত্রায় নিয়ম নাস্তি—এই জন্যেই অসময়ে সিগারেট রালাম। রাগ করছ না। তো?

রাগ করছি না এটা বললে তৌহিদ প্রশ্রয় পাবে, কাজেই প্রশ্নের জবাব না দিয়ে রিমি বলল, আমার আগে তুমি কি মার সঙ্গে দেখা করেছ?

না।

দেখা করলে না কেন?

তৌহিদ কিছু বলল না। সে দেখা করে নি কারণ তার খুব খারাপ লাগছিল। বেচারীর এত শখ ছিল।

রিমি বলল, মা আমাকে টাকা দিয়েছেন। তোমাকে বলা হয় নি।

কত টাকা?

অনেক। দুই হাজার সাত শ বিয়াল্লিশ।

বল কী!

সব চকচকে নোট। খরচ করতে মায়া লাগবে।

তৌহিদ খুশি-খুশি গলায় বলল, তাহলে রাজার হাতে থাকা যাবে–কী বল?

মার দেয়া টাকাটা তুমি তোমার মানিব্যাগে রাখবে। তোমার ইচ্ছামতে খরচ করবে।

টাকা খরচ করতে আমার ভালো লাগে না রিমি। উপার্জন করতে ভালো লাগে না, আবার খরচ করতেও ভালো লাগে না। আমি একেবারে বাবার স্বভাব পেয়েছি।

উনি কি তোমার মত চুপচাপ থাকতেন?

না, তা না। বাবার খুব হৈচৈ করা স্বভাব ছিল। তাঁর মাথার মধ্যে নানান রকম পরিকল্পনা ঘুরত। আমি যখন ক্লাস ফোরে পড়ি তখন শুনি বাবা সাইকেলে করে সারা ভারতবর্ষ ঘুরবেন। এই জন্যে তিন মাসের ছুটি নিবেন। ভালো সাইকেল কেনার জন্যে কিছুদিন খুব ঘুরলেন।

তারপর?

তারপর আর কী? একদিন পরিকল্পনা স্থগিত হয়ে গেল। আমরা হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। আমাদের ধারণা ছিল তিনি সত্যি-সত্যি বের হয়ে যাবেন এবং আর কোনট দিন ফিরে আসবেন না।

এরকম ধারণা হবার কারণ কি?

কোনোই কারণ নেই। বাবা সবসময় অচেনা জায়গায় যাবার কথা বলতেন, এই থেকে ছোটবেলাতেই আমাদের ধারণা হয়ে গেল বাবা একদিন-না-একদিন আমাদের ফেলে পালিয়ে যাবেন।

এইসব কথাতো আমাকে কখনো বল নি।

বলার মতো কিছু না। তাছাড়া এখন এই গল্প শুনতে ভালো লাগছে অন্য সময় ভালো লাগত না। সংসারের চাপে অস্থির হয়ে থাকলে কিছু ভালো লাগে না। কিছু শুনতে ইচ্ছা করে না।

বিরাট গোল একটা থালায় চায়ের কাপ সাজিয়ে একজন এসে ভরাট গলায় বলছে, চা লাগবে, চা?

তৌহিদ বলল, চা খাবে রিমি?

রিমি সন্ধ্যা মেলাবার পর কখনোচা খায় না। আজ বলল, খাব।

তৌহিদ বলল, চায়ের সঙ্গে আমি একটা সিগারেট খাই?

তৌহিদকে বিস্মিত করে রিমি বলল, খাও।

অন্য সময় এই চা ভালো লাগত না। পানসে ধরনের চা, লিকার হয় নি। চিনি দিয়ে শরবত বানিয়ে রেখেছে তবু খেতে ভালো লাগছে। চায়ের কাপে রিমি ছোট-ছোট চুমুক দিচ্ছে। প্রবল হাওয়ায় রিমির চুল উড়ছে। রিমিকে খুব সুন্দর লাগছে।

তৌহিদ বলল, বাবার খুব শখ ছিল সমুদ্র দেখার। কথায়-কথায় সমুদ্র যে কী বিশাল, কী সুন্দর এইসব বলতেন। বলার সময় তাঁর চোখ-মুখ অন্যরকম হয়ে যেত। কথার মাঝখানে সমুদ্র নিয়ে কী একটা কবিতাও বলতেন।

কি কবিতা?

মনে নেই। একটা লাইন ছিল—হে সমুদ্র, স্তব্ধচিত্তে শুনেছি গর্জন তোমার রাত্রিবেলা।

আহা! উনাকে একবার নিয়ে গেলেই হত। তোমরা পাঠালে না কেন?

আমাদের পাঠাতে হয় নিউনি নিজেই একবার রওনা হলেন। চিটাগাং পর্যন্ত গিয়ে ফিরে এলেন।

কেন?

এরকম অদ্ভুত সুন্দর একটা জিনিস তিনি একা দেখবেন, ছেলেমেয়েরা কেউ দেখবে না—এটা তাঁর ভালো লাগল না। ফিরে আসার পরপর অসুস্থ হয়ে পড়লেন। তার মাস দুএকের মধ্যে মারা গেলেন। তাঁর সমুদ্র দেখা হল না।

তৌহিদের গলার স্বরে কোনো গভীর দুঃখ প্রকাশ পেল না। সে খুব স্বাভাবিকভাবেই কথা শেষ করে অনিকে ঠিকমতো শুইয়ে দিল। বেচারীর সারারাত জাগার পরিকল্পনা ছিল, ঘুমিয়ে পড়েছে।

রিমি অনির ছোট বালিশটা নিয়ে এসেছে। এই বালিশ ছাড়া সে ঘুমুতে পারে না। সুটকেস খুলে বালিশ বের করে সে অনির মাথার নিচে দিয়ে দিল। শাশুড়ির দেয়া চাদরে গা ঢেকে দিল। হালকা গলায় বলল, ভৈরবের পুল এলে অনিকে ডেকে তুলতে হবে। বৈ যেতে কতক্ষণ লাগবে বল তো?

জানি না। অনেকদিন ট্রেনে উঠি না।

আচ্ছা, এরা কি সারারাত বাতি জ্বালিয়ে রাখবে? না ঘুমুবার জন্যে বাতি নেভাবে?

তাও তো জানি না।

ট্রেন তো কোথাও থামছে না। এটা কি কোথাও থামে না?

তৌহিদ বলল, কী জানি, ভৈরবে হয়ত থামবে। আমি আসলে কিছুই জানি না। জার্নিটা তোমার কেমন লাগছে রিমি?

ভালো।

শুধু ভালো? এর বেশি কিছু না?

খুবই ভালো।

এরকম চমৎকার জার্নি করেছ কখনো?

না।

রিমি জানালা দিয়ে মুখ বের করে অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে রইল। কারণ এই মুহূর্তে সে একটি মিথ্যা কথা বলেছে। মিথ্যা কথা বলার জন্যেই তার লজ্জা লাগছে। এরকম চমৎকার একটি ভ্রমণ সে এর আগেও একবার করেছিল। ময়মনসিংহ থেকে গিয়েছিল গৌরীপুর। কী অপূর্বই না ছিল সে ভ্ৰমণ। সারাক্ষণ মনে হচ্ছিল এই যাত্ৰা যেন শেষ না হয়। গ্রামগঞ্জ, পথ-মাঠ-ঘাট সব ছাড়িয়ে এই ট্রেন যেন চলতেই থাকে, চলতেই থাকে। কত আবেগ,কত উত্তেজনায় ভরা সেই যাত্ৰা। আনন্দে সেদিন বারবার চোখে পানি এসে যাচ্ছিল। আজও পানি আসছে। অথচ দুটি ভ্রমণ কতই না আলাদা।

ঐ চাওয়ালা আবার এসেছে। ভারি গম্ভীর গলায় বলছে, চা লাগবে, চা?

তৌহিদ বলল, চা খাবে রিমি?

খাব।

বাহ্ চমৎকার। বাইরে কী দেখছ?

কিছু না। অন্ধকার দেখছি।

বাইরে অন্ধকার নেই। চাঁদ উঠেছে। গাছপালা, গ্রাম সব অস্পষ্টভাবে চোখে আসছে। যেন স্বপ্নদৃশ্য। স্বপ্নের মতই কোমল এবং রহস্যময়। রিমির চোখ ভেজা। কামরায় গাড়ি ভরা ঘুম-রজনী নিঝুম।

তূর্ণা নিশীথা ছুটে যাচ্ছে। ইঞ্জিনচালককে আজ বোধ হয় গতির নেশায় পেয়েছে। ক্রমেই গাড়ির গতি বাড়ছে। লাইন ছেড়ে গাড়ি ছিটকে বেরিয়ে যাবে না তো!

রিমি আকাশের চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে। চাঁদটাও গাড়ির গতির সঙ্গে তাল রেখে ছুটে যাচ্ছে। ছোটবেলায় এই ব্যাপারটা রিমিকে খুব বিস্মিত করত। সে যেখানেই যায় চাঁদটা তার সঙ্গে-সঙ্গে যায় কেন? খুব ছোটবেলায় সে তার বাবার সঙ্গে নৌকায় করে মোহনগঞ্জ থেকে বারহাট্টায় যাচ্ছিল। পূর্ণিমা রাত। সে অবাক হয়ে লক্ষ করল চাঁদটাও তাদের সঙ্গে-সঙ্গে যাচ্ছে। সে বিস্মিত গলায় বলল, বাবা, চাঁদটা আমাদের সঙ্গে-সঙ্গে যাচ্ছে কেন?

রিমির বাবা বরকত সাহেব কঠিন গলায় বললেন, চুপ করে থাক। খালি কথা, খালি কথা। আর এইখানে বসে আছিস কেন? ছইয়ের ভেতরে যা। ফাজিল কোথাকার।

রিমি নৌকার ছইয়ের ভেতর চলে গিয়েছিল। সেরাতে উথালপাতাল চাঁদের আলোয় অপূর্ব দৃশ্যের সে কিছুই দেখে নি। তার শৈশব এবং কৈশোর আনন্দময় ছিল না। সেই সময়কার কোনো আনন্দময় স্মৃতি তার নেই। কেউ যদি আজ তাকে বলে, তুমি কি তোমার শৈশব ফিরে পেতে চাও? সে বলবে, না।

তুমি কি কৈশোর ফিরে পেতে চাও?

না।

প্রথম যৌবনের কিছু দিন কি তোমাকে ফিরিয়ে দেব?

না।

অতীতের এমন কিছু কি আছে যা তুমি ফিরে পেতে চাও?

হ্যাঁ, চাই।

সেটা কী তুমি বল।

না, আমি বলব না।

ট্রেনের গতি কমে এসেছে। দুবার সিটি বাজাল ট্রেন ভৈরবের ব্রিজের উপর উঠছে। খটাং-খটাং শব্দ উঠছে। রিমি ব্যাকুল হয়ে অনির ঘুম ভাঙাতে চেষ্টা করছে। সে জেগে উঠে লম্বা ব্রিজটা দেখুক। তার শৈশবে কিছু আনন্দময় স্মৃতি যোগ হোক। সে যেন পরবর্তী সময়ে কখনো না বলে আমি আমার শৈশব ফিরে পেতে চাই না। কৈশোর ফিরে পেতে চাই না।

ও অনি ওঠত। মা ওঠত। দেখভৈরবের পুল দেখা ওঠমা ওঠ। লক্ষ্মী মা। এই অনি, অনি।

অনি জেগে উঠেই কান্না-কান্না গলায় বলল, আমি দাদীমার সঙ্গে ঘুমুব। আমি তোমাদের সঙ্গে ঘুমুব না।

সে বালিশটা হাতে নিয়ে বেঞ্চ থেমে নামার চেষ্টা করছে। রিমি বলল, মা এটা ট্রেন। বাসা না। এই দেখ আমরা ভৈরবের ব্রিজ পার হচ্ছিদেখ দেখা

অনি আবারো কাঁদো-কাঁদো গলায় বলল, দাদীমার সঙ্গে ঘুমুব।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress