সমকামি – একচল্লিশতম পর্ব
শেষ পর্বআজ আবার বাড়িতে সাজোসাজো রব। আজ অন্যন্যা আর কৃষ্ণেন্দু অনেক বাঁধা কাটিয়ে এক হতে চলেছে। তবে ওদের বিয়েটা ওই ভাবে হবে না রেজিস্ট্রির পর রিসেপশন কারণ পরের দিনই ওরা চলে যাবে হায়দ্রাবাদ। সেখানে কৃষ্ণেন্দুর অফিসের কাজ আছে ও অন্যন্যাকে সাথে নিয়ে যাবে তাই এই ব্যাবস্থা। অন্যন্যাকে আজ অসাধারণ সুন্দর লাগছে দেখতে। তৃণা সকাল সকাল এসে পড়েছে আজকে। তৃণাকে দেখে তিয়াসা বলে ওঠে: যাও দিদিয়া নিজের ঘরেই আছে। ফোনে ব্যাস্ত। তৃণা সোজা অন্যন্যার ঘরে চলে যায়। গিয়ে দেখে অন্যন্যা শুয়ে কানে ফোন।
” না মশাই আজকে আমি অনেক টায়ার্ড থাকবো ওসব আদর টাদর আমি কিছু পারবো না করতে। আমার মুড নেই”। ওহ্, টায়ার্ড থাকবে আহারে এদিকে আদরের জন্য নাকি আর অপেক্ষা করতে পারছে না। আপনি চিন্তা করবেন না ওসব শুধু বলছে আপনাকে। বলেই তৃণা হো হো করে হেঁসে ওঠে। এই আমি এখন ফোন রাখি পরে তোমাকে কল করছি। তৃণা আবার বলে: হ্যাঁ, হ্যাঁ রাখুন এখন রাতে কথা বলবেন থুরি থুরি করবেন। ফোনটা কেটেই ও তৃণার দিকে ছুটে আসে অন্যন্যা এই অসভ্য মেয়ে তোর মুখে কি কিছুই আটকায় না। অসভ্য মেয়ে।
বিকেলে একটা জাম রঙের শাড়িতে অপরূপ লাগছিল অন্যন্যাকে। কৃষ্ণেন্দু যেনো চোখ সরাতে পারছিল না। তিয়াসা আর তৃণা কৃষ্ণেন্দুর কানের কাছে গিয়ে বললো: জিজু এই ভাবে সবার সামনে তাঁকিয়ে থাকবেন না। সবাই হ্যাংলা বলবে যে। বলেই দুজনে খিলখিল করে হেসেঁ ওঠে। রিনা দেবী এসে বলে: এই মেয়ে দুটো তো মোটে ছেলেটাকে শান্তি করে বসতে দিচ্ছে না। এদের যে কি করি আমি? বিকাশ বাবু বলেন: আহা থাক না বকছো কেনো ওদের? ওরা একটু ওদের জামাই বাবুকে নিয়ে হাঁসি ঠাট্টা করবে না তো করবেটা কে শুনি? সবাই আজকে খুব খুশি। কমিশনার বিপ্লব রাজু ওরা সবাই এসেছে অন্যন্যা আর কৃষ্ণেন্দুর বিয়েতে। রেজিস্টার ও চলে এসেছে সময় মতো। রেজিস্ট্রি হয়ে যায় নির্বিঘ্নে। রাত তখন দশটা অতিথিরা সব খেয়ে চলে গেছে। কৃষ্ণেন্দু তৃণাকে যেতে দেয়নি বললো আমি পৌঁছে দেবো চিন্তা নেই। তৃণা অবশ্য বলেছিল আজকের দিনটা এইসব ঝামেলার দরকার নেই। কিন্তু সবাই বলে না এতো রাতে একা যেতে হবে না।
ওদিকে কৃষ্ণেন্দু নিজের ফ্ল্যাট একদম নতুন ভাবে সাজিয়েছে অন্যন্যার জন্য। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট এর লোক দিয়ে ফুল সজ্জার ঘরটা অসাধারন করে সাজিয়েছে ওর প্রেয়সীর জন্য। অন্যন্যা আরো একবার বাবা মার কাছ থেকে বিদায় নেয় স্বামীর ঘরের উদ্দেশ্যে। রিনা দেবী দু হাত জোড় করে ভগবানকে ডাকে ওদের ভালো থাকার জন্য। পরের দিন রাতে ওদের ফ্লাইট ওরা আবার কাল সকালেই আসবে তারপর এখান থেকেই সোজা হায়দ্রাবাদ। ওরা বাবা মায়ের আশীর্বাদ নিয়ে ওখান থেকে বের হওয়ার সময় তিয়াসা অন্যন্যাকে জড়িয়ে ধরে বলে: have a great night দিদিয়া। জিজুকে কিন্তু বেশি কষ্ট দিস না। অন্যন্যা তিয়াসার কান মুলে দিয়ে বলে: খুব পেকেছো তাই না? তিয়াসা কান ডলতে ডলতে উত্তর দেয়: কি দিদিয়া আমি এখনও পাকবো না? আর কবে? অন্যন্যা হাঁসে। তারপর ওরা বেরিয়ে যায় ওখান থেকে।
গাড়িতে উঠে ওরা রওনা হয় ওদের নতুন জীবনের উদ্দেশ্যে।তৃণাকে বাড়ি পৌঁছে ওরা চলে যাবে ওদের ফ্ল্যাটে। গাড়ি চালাতে চালাতে বার বার কৃষ্ণেন্দু অন্যন্যার দিকে তাকাচ্ছিলো দেখে পিছন থেকে তৃণা বলে: ও ডিয়ার জিজা শ্রী বউকে বাড়ি গিয়ে সারা রাত দেখবেন এখন রাস্তার দিকে তাকান। অন্যন্যা কৃষ্ণেন্দু দুজনেই লজ্জা পেয়ে যায় তৃণার কথায়। তৃণার বাড়ির সামনে এসে কৃষ্ণেন্দু বলে: তাহলে ম্যাডাম সেফলি আপনাকে পৌঁছে দিতে পেরেছি তাহলে? তৃণা হেঁসে বলে ডিয়ার জিজা শ্রী শুধু আমাকে সেফলি পৌঁছালে হবে না। আপনাদের ও পৌঁছাতে হবে। এখন তো গিয়ে অনেক কাজ আছে তাই না? কিন্তু একটা কথা আছে আমি কিন্তু এখনি মসিজী হতে চাইছি না কি বা বয়স আমার? বলে হিহি করে হাসতে থাকে তৃণা। অন্যন্যা কপট রাগ দেখিয়ে বলে: এই তৃণা এবার কিন্তু সত্যি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে খুব মার খাবি কিন্তু। থাক আমাকে এখন মারতে গিয়ে সময় নষ্ট করতে হবে না। পরে মারিস এখন সাবধানে যা। ও হো এই নে এটা তোর জন্য আমার তরফ থেকে । গাড়িতে যেতে যেতে কৃষ্ণেন্দু বার বার অন্যন্যার হাতটা যতবার ধরবার চেষ্টা করছিল ততবার অন্যন্যা আসতে করে হাতটা সরিয়ে নিচ্ছিল। অন্যন্যা জানলার দিকে তাঁকানো। কৃষ্ণেন্দু অন্যন্যার কাণ্ড দেখে হাঁসছিল। তারপর অন্যন্যাকে বললো: তুমি একটা জিনিষ জানো? অন্যন্যা অন্য দিকেই মুখ ফিরিয়ে বলল: কি? কৃষ্ণেন্দু বলে: আমার বউটাকে না লজ্জা পেলে আরো অনেক বেশি মিষ্টি লাগে দেখতে। অন্যন্যা মাথাটা নীচু করে নিল। ওরা কৃষ্ণেন্দুর ফ্ল্যাটে পৌঁছে গেল কিছুক্ষনের মধ্যেই। কৃষ্ণেন্দু বলে: আমরা আমাদের বাড়িতে এসে গেছি অনু। অন্যন্যা কৃষ্ণেন্দুর দিকে তাঁকিয়ে হাঁসে। তারপর তৃণার দেওয়া গিফট গুলো হতে করে নেমে আসে গাড়ি থেকে। লিফ্ট করে উপরে ওঠার পর কৃষ্ণেন্দু অন্যন্যাকে বলে আমার ঘরে এমন কেউ নেই যে তোমাকে বরণ করে তুলতে পারে। যে পারতো আর সব থেকে বেশি খুশি হতো সেতো দেখতেই পেলো না আমার কতো মিষ্টি একটা বউ হয়েছে। কৃষ্ণেন্দু নিজের হাত বাড়িয়ে দিয়ে অন্যন্যাকে বলে এসো তোমার ঘরে এসো।
ঘরে ঢুকে অন্যন্যা অবাক হয়ে তাঁকিয়ে থাকে। এতো সুন্দর করে কৃষ্ণেন্দু ঘরটাকে সাজিয়েছে। কৃষ্ণেন্দু অন্যন্যার আরো অনেক কাছে ঘন হয়ে দাঁড়ায়। অন্যন্যা হুট করে বলে আচ্ছা আমরা তো দেখলাম না তৃণা আমাদের কি উপহার দিলো? কৃষ্ণেন্দু বলে হুম সেটা তো ঠিক। অন্যন্যা সরে গিয়ে বলে ভুলভাল কিছুই হবে। আমার খুব টায়ার্ড লাগছে এগুলো ছেড়ে আমি একটু ফ্রেশ হবো। চলে যেতে গেলে কৃষ্ণেন্দু পিছন থেকে হাত টেনে ধরে অন্যন্যার ঘারের কাছে একটা কিস করে। শিহরিত হয় অন্যন্যা। তারপর অন্যন্যার কানের কাছে আসতে করে বলে গিফটটা দেখি তাহলে? অন্যন্যা মাথা নাড়ায়। প্যাকেট খুলে ওরা দেখলো একটা নাইট ড্রেস। সম্পূর্ণ লাল। অন্যন্যা প্যাকেটটা কৃষ্ণেন্দুর হাত থেকে নিয়ে বলে সত্যি তৃণাটার কোনো সেন্স নেই এগুলো আমি পড়ি না। রেখে দাও। এর মধ্যে তৃণার ফোন এলে কৃষ্ণেন্দু ফোন স্পিকারে ধরে বলে: বলুন শালি জি। তৃণা বলে: কি জিজা শ্রী আমার গিফ্ট পছন্দ হলো? কৃষ্ণেন্দু বলে: আমার তো খুব পছন্দ হয়েছে। কিন্তু তোমার বান্ধবী বলছে ও নাকি এগুলো পরেই না। তাহলে এবার তুমি বলো কি করবো? ওপাশ থেকে তৃণা বলে অনু তুই উত্তর না দিলে ও আমি জানি মনে মনে খুব গাল দিচ্ছিস রাত করিয়ে দেবার জন্য। আমার জিজুকে আর কষ্ট দিস না। এমনি বেচারা খুব কষ্টে আছে। বলে হিহি করে হেঁসে ওঠে তৃণা। তারপর ফোনটা কেটে দেয়। কৃষ্ণেন্দু অন্যন্যার হাতে ড্রেসটা দিয়ে বলে প্লিজ আজ তুমি এটাই পরো। এটা আমার রিকোয়েস্ট আমি ফ্রেশ হয়ে এলে তুমি যেও। এখন এই গয়নাগাটি গুলো খুলে রাখো নাহলে আদর করতে প্রবলেম হবে যে। বলেই কৃষ্ণেন্দু ফ্রেশ হতে চলে যায়। অন্যন্যা লজ্জায় রাঙা হয়ে ওঠে। তারপর অন্যন্যা ও ফ্রেশ হয়ে তৃণার দেওয়া ড্রেসটা পরে বেরিয়ে আসে। লাল ট্রান্সপারেন্ট ওই পোশাকে যেনো অন্যন্যাকে এক আলাদাই মানবী করে তোলে। শরীরের প্রত্যেকটা ভাঁজে যেনো যৌবনের ছোঁয়া। কৃষ্ণেন্দু অবাক হয়ে তাঁকিয়ে থাকে অন্যন্যার দিকে। অন্যন্যা লজ্জা পায়। দুটো শরীর সারা রাত মেতে থাকে এক আদিম রতি ক্রিয়ায়। সকালের মৃদু আলোয় অন্যন্যা নিজেকে কৃষ্ণেন্দুর বুকে অনাবৃত অবস্থায় আবিষ্কার করে লজ্জায় লাল হয়ে ওঠে। নিজেকে কৃষ্ণেন্দুর বাহু বন্ধন থেকে মুক্ত করার চেষ্টা করলে। কৃষ্ণেন্দু আবার ও নিজের সাথে মিশিয়ে নেয় অন্যন্যাকে। আবার ওরা মেতে ওঠে শরীরী খেলায়।
তখন প্রায় দশটা বাজে কৃষ্ণেন্দুর ফোন বেজে ওঠে। ফোনের শব্দে ঘুম ভাঙ্গলো ওদের। তাঁকিয়ে দেখে দশটা বেজে গেছে। তৃণা ফোন করছে। ফোনটা ধরে অন্যন্যা। হ্যালো বলতেই ওপার থেকে তৃণা বলে ওঠে। ইস্ আমি জানতাম ঘুম থেকে উঠিসনি। এইসব কাজগুলো আমাকে দিয়েই তোর বাড়ির লোকের করাতে হয়। ডিস্টার্ব করলাম তো? অন্যন্যা বলে: তোর সবসময় অসভ্যতা তাই না? ফোন রাখ। আমি রেডী হবো। এলে কিন্তু বলতেই হবে শুনবো বলে কিন্তু অফিস ছুটি করেছি। অন্যন্যা উত্তর না দিয়ে ফোন কেটে দেয়। কৃষ্ণেন্দু ওর দিকে তাঁকিয়ে হাসতে থাকে। তুমি খুব পচা এখন ওখানে গেলে ওরা আমাকে খেপাবে। খুব মজা হবে তোমার তাই না? বলে কৃষ্ণেন্দুর বুকে আলতো ঘুষি মারতে থাকে। কৃষ্ণেন্দু অন্যন্যাকে নিজের বুকে কাছে শক্ত করে টেনে ধরে। দুই গালে চুমু খেয়ে বলে আমার ক্ষেপি। আমি কোনোদিন ভাবতে ও পারিনি আমার এতো মিষ্টি একটা ক্ষেপি হবে। অন্যন্যা দু হাত দিয়ে কৃষ্ণেন্দুর গলা জড়িয়ে ধরে বলে: আমি ও তো ভাবিনি আমাকে কেউ এতো ভালোবাসবে। কিন্তু মশাই এবার আমাদের তৈরী হতে হবে। ওখানে সবাই অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। প্যাকিং করতে হবে । আমি ফ্রেশ হতে গেলাম। এর মধ্যে মালতি দি এসে বেল বাজালে অন্যন্যা বললো: ওই মালতি দি ও এসে গেছে যাও দরজাটা খুলে দাও। কৃষ্ণেন্দু দরজা খুলে দিলে মালতি দি মাথা নীচু করে হাঁসতে থাকে। কৃষ্ণেন্দু অবাক হয়ে বলে: ও কি মালতি দি তুমি অমন করে হাঁসছো কেনো আমাকে দেখে? অন্যন্যাকে ওখানে আসতে মালতি দি বললো: নাও গো বৌদিমনি তোমার এই বর টাকে ঘরে নিয়ে গিয়ে দেখাও আমি কেনো হাসতেছি। বলে মালতি রান্না ঘরে চলে গেলো। অন্যন্যা কৃষ্ণেন্দুকে বললো : তোমার সারা মুখে সিঁদুর লেগে আছে হাদারাম একটা। অন্যন্যা ফ্রেশ হয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ানো একটা হলুদ রঙের শাড়িতে ওকে কি সুন্দর যে লাগছে। মালতি অন্যন্যাকে দেখে বললো একটু কাজল লাগিয়ে দি যাতে কারো নজর না লেগে যায়। ওদিকে ওদের প্যাকিং কমপ্লিট মালতির কাজ ও রেডী। মালতি চা বানিয়ে ওদের দিয়ে বললো: তোমরা চা খাও। আমি জল খাবারটা বানিয়ে আনি। কৃষ্ণেন্দু বললো: তোমাকে কিছু বানাতে হবে না মালতি দি আমি খাবার অর্ডার করে দিয়েছি। আমরা সবাই সেটাই খাবো। আর আমরা ফিরে এসে একটা জমজমাট খাওয়া দাওয়ার ব্যাবস্থা করবো। এক সপ্তাহ পরেই আমরা ফিরে আসবো। তারপর ওরা তিনজন একসাথে খাবার খেলো। কৃষ্ণেন্দু কিছু টাকা মালতি দির হাতে দিয়ে বললো: এই টাকাটা দিয়ে ঘরে আজকে ভালো কিছু খাবার নিয়ে যেও। মালতি টাকাটা নিয়ে না চাইলে অন্যন্যা বলে: এটা নাও মালতি দি এটা আমরা ভালোবেসে তোমাকে দিচ্ছি। এরমধ্যে বার বার বাড়ি থেকে ফোন আসতে থাকলে অন্যন্যা কৃষ্ণেন্দুকে বলে এবার না বেরোলে বাড়িতে আর ঢুকতে দেবে না আমাদের। ওরা একসাথেই বেরিয়ে গেলো।