Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

সমকামি – উনচল্লিসতম পর্ব

পরেরদিন সকাল সকাল সবাই হসপিটালে পৌঁছে যায় কারণ সেদিন রিনা দেবীর ডিসচার্জ হবার কথা। কৃষ্ণেন্দু সমস্ত ব্যাবস্থা করে দিয়ে বিকাশ বাবুকে বলে: কাকু নার্স আপনাদের সাথেই যাবে। আমি রাতে ফোনে সব জেনে নেবো আমাকে দেখলে উনি উত্তেজিত হয়ে পড়বে যেটা ওনার শরীরের জন্য একদম ঠিক নয়। বিকাশ বাবু কৃষ্ণেন্দুর হাত দুটি ধরে বলে: তুমি আমাকে ক্ষমা করো তুমি পাশে না থাকলে সবকিছু এতো সহজ হতো না। ও যে কোনো? কৃষ্ণেন্দু হেঁসে বলে: সবাই যে সবাইকে পছন্দ করবে তাতো হয় না। তাছাড়া আমার বিশ্বাস সব ঠিক হয়ে যাবে। আর দু একটা দিন। বিকাশ বাবু চোখ ছল ছল করে বলে: কি করে ঠিক হবে? আবার ও বাড়ি গিয়ে অনুর কথা জানতে চাইবে, আমি কি বলবো ওকে? কৃষ্ণেন্দু বলে: এতখানি ভরসা করলেন যখন আর একটু ভরসা রাখুন সব ঠিক হয়ে যাবে।

কৃষ্ণেন্দু ওদের বাড়ি রওনা করে তারপর অফিসের দিকে চলে যায়। এই ভাবে তিনটে দিন কেটে যায়। পরেরদিন সন্ধ্যে ছয়টায় ওদের অন্যন্যাকে নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার কথা। সেই মতো সমস্ত ব্যাবস্থা পাকা করা আছে। সেদিনের পর মিসেস চৌধূরীকে আজকে আরো একবার হসপিটাল চত্ত্বরে দেখা গেলো। আজ অবশ্য ওনাকে ডক্টর চৌধুরীর সাথেই আসতে দেখা যায়। ভীষণ অবসন্ন লাগছিল দেখতে। সেদিন তখনও পর্যন্ত যদিও ডক্টর অয়নকে দেখতে পাওয়া যায়নি। ওরা সোজা হসপিটালের ভীতরে ঢুকে যায়।

এদিকে পুলিশ ফোর্স রেডী করা হসপিটালের চারপাশ ঘিরে। কমিশনার নিজে উপস্থিত সেখানে। ডক্টর মোহান্তির কাছে লুকানো ক্যামেরায় দেখা যায় ওরা অন্যন্যাকে লিকুইড খাবার খাওয়ায়। অন্যন্যা পুরো অচৈতন্য না হলে ও একটা ঘোরের মধ্যে আছে। মিসেস চৌধুরী অন্যন্যার গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে ডক্টর চৌধুরীকে বলে: আমি তোমাদের কাছে শেষবারের মতো অনুরোধ করছি এই নোংরা কাজটা প্লিজ তোমারা করো না। ডক্টর চৌধুরী চোখ রাঙিয়ে বলে: ডক্টর মোহান্তি আপনি একটু বাইরে যান। ডক্টর মোহান্তিকে ওখানে দাঁড়িয়ে আমতা আমতা করতে দেখে ডক্টর চৌধুরী আবার বললেন: কি হলো কথা কানে গেলো না? আপনাকে বাইরে যেতে বললাম তো। আর কোনো রাস্তা না পেয়ে ডক্টর মোহান্তি নিজের ফোনটা ওখানে রেখে বাইরে বেরিয়ে আসে। কারণ ওই ফোনের পিছনে ও একটা ক্যামেরা লাগানো আছে। কিন্তু এটা দেখে বিপ্লব একটু ভয় পায় কারণ ডক্টর চৌধুরী ও অনেক ধুরন্ধর লোক যদি একবার বুঝে যায় যে ফোনের পিছনে ক্যামেরা লাগানো তাহলে তীরে এসে তরী ডুবে যাবে। যদিও ওদের কাছে এখন যথেষ্ট প্রমাণ আছে কিন্তু তবু ও। ওদিকে ডক্টর মোহান্তি ঘর থেকে বেরিয়ে এলে ডক্টর চৌধুরী মিসেস চৌধুরীর গাল দুটো জোরে টিপে ধরে বলে: আমার কাজে কোনো রকম বাঁধা দেবার চেষ্টা করলে আমি কি করতে পারি সেটা নিশ্চয়ই তোমাকে বলে দিতে হবে না। আর কয়কটা ঘণ্টা তারপর সমস্ত পুলিশ প্রশাসন যা যা আছে সব গুলে ফেললে ও কিছুই করতে পারবে না। মিসেস চৌধুরী আবার বলে: তুমি একটু বোঝার চেষ্টা করো তুমি ওর সাথে যেটা করতে যাচ্ছো সেটা পাপ তুমি ওর বাবার মতো তুমি কি করে ওর সাথে আমি আর ভাবতে পারছি না। নিজের বংশ রক্ষা করতে গিয়ে তুমি বুঝতে পারছো না তুমি কতোটা নীচে নামতে যাচ্ছো। ডক্টর চৌধুরী ধমক দিয়ে বলে: একদম চুপ। ডক্টর মোহান্তি ভীতরে আসুন। ডক্টর মোহান্তি ভীতরে গেলে ডক্টর চৌধুরী ওনাকে বলে: নিন এই ইজেকশনটা ওকে পুশ করে দিন এবার। আর এক ঘণ্টা আমাদের বেরোনোর সময় হয়ে এসেছে। ডক্টর মোহান্তি ওটা হাতে নিয়ে প্রায় আৎকে ওঠে। স্যার এই ইনজেকশনটা নেবার মতো শারীরিক পরিস্থিতি ওনার নেই। এটা দিলে ওনার প্রাণের ভয় আছে। ডক্টর চৌধুরী দাঁত খিঁচিয়ে বলে ওঠে: দু টাকার ডক্টর আমাকে ডাক্তারি শেখাচ্ছেন? যেটা বলি সেটা করুন চুপচাপ। মিসেস চৌধুরীর দিকে তাঁকিয়ে ডক্টর চৌধুরী বলে: চলো তোমাকে গাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে আসি। তোমার এখানে আর থাকার দরকার নেই। ইচ্ছে না থাকলে ও মিসেস চৌধুরী বেরিয়ে আসে হসপিটাল থেকে। কমিশনার বাকি অফিসারদের ইনস্ট্রাকশন দেয়: মিসেস চৌধুরীর গাড়িকে লক্ষ্য করতে এবং কিছুটা দূর গিয়ে মাঝ রাস্তা থেকে ড্রাইভার সমেত মিসেস চৌধূরীকে নিয়ে কোনো সেফ জাগায় সরিয়ে দিতে। আর নেক্সট ইনস্ট্রাকশনের জন্য অপেক্ষা করতে।

বিকেল ঠিক ছটা বাজে তখন। অন্যন্যাকে স্ট্রেচারে করে বের করে নিয়ে আসা হয়। সাথে ডক্টর চৌধুরী, অয়ন ডক্টর মোহান্তি ছাড়া আরও দু একজন। অন্যন্যার মুখটা চাদর দিয়ে এমন ভাবে ঢাকা যে তেমন ভাবে নজরে আসছে না। সমস্ত পুলিশ ফোর্সের সাথে কৃষ্ণেন্দু ও সেখানে উপস্থিত ছিল। কমিশনারকে কৃষ্ণেন্দু বলে আর কিসের অপেক্ষা এবার গিয়ে তো হাতে নাতে ধরলেই হয়। কমিশনার উত্তর দেয় অস্থির হোস না। ইতিমধ্যে একটা অ্যাম্বুলেন্স হসপিটালের গেটের সামনে এসে দাঁড়াতেই কমিশনারের নির্দেশ মতো পুলিশ ফোর্স ওদের ঘিরে ফেলে। সামনে থাকে কমিশনার নিজে। তারপর ডক্টর চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে বলেন: you are under arrest ডক্টর চৌধুরী। প্রথমটায় একটু হকচকিয়ে গেলে ও পরে সামলে নিয়ে বলে: আপনি জানেন আপনি কার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছেন? You have any idea? কি অপরাধে আমাকে অ্যারেস্ট করতে এসেছেন জানতে পারি? কমিশনার হেঁসে উত্তর দেয়: হ্যাঁ, নিশ্চয়ই পারেন বৈকি। অন্যন্যা দেবীকে কিডন্যাপ করে এখান থেকে সরিয়ে ফেলার চেষ্টার জন্য আপনাকে অ্যারেস্ট করা হচ্ছে। অন্যন্যা? সে তো কবেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছে। আমরা অনেকবার বোঝানোর চেষ্টা করেছি শোনেনি এখন আর আমরা ওকে নিয়ে চিন্তিত নই। আপনি রাস্তা ছাড়ুন আমাদের রুগীকে নিয়ে তাড়াতাড়ি যাওয়ার আছে। ফ্লাইট মিস হয়ে গেলে তার দায়িত্ব কে নেবে আপনি? খুব আত্মবিশ্বাসের উত্তর দেয় ডক্টর চৌধুরী। ডক্টর চৌধুরী যতক্ষণ না আমরা আপনার পেশেন্টের মুখ দেখছি ততক্ষন আপনাকে এখান থেকে যেতে তো দেওয়া যাবে না। ওনার মুখের চাদরটা সরিয়ে দিন। বিপ্লব মুখের চাদরটা সরাও। বিপ্লবকে উদ্দেশ্য করে কমিশনার বলে। পাশে দাঁড়িয়ে কৃষ্ণেন্দু । কৃষ্ণেন্দু নিজে চাদর সরিয়ে দিতে গেলে ডক্টর চৌধুরী ওর হাত চেপে ধরে বলে: কার অনুমতিতে আমার পেশেন্টের গায়ে হাত দিচ্ছেন আপনি? কৃষ্ণেন্দু কোনো কথায় কান না দিয়ে হাতটা ছড়িয়ে নিয়ে অন্যন্যার মুখের চাদরটা সরিয়ে দেয়। তারপর চিৎকার করে ওঠে অনু!! অন্যন্যাকে ধরে ঝাঁকাতে থাকে অনু ওঠো দেখো আমরা সবাই এসে গেছি তোমার আর কোনো ভয় নেই। ওঠো অনু ওঠো।

কমিশনার ডক্টর চৌধুরীর দিকে তাঁকিয়ে বলে: এবার কি বলবেন ডক্টর চৌধুরী? পাশে দাঁড়িয়ে থাকা অয়ন একটু একটু করে সরে যেতে থাকলে বিপ্লব ওর কলার টেনে ধরে বলে: তুই কোথায় যাচ্ছিস? একটা মেয়ের এই ভাবে সর্বনাশ করে তুই কি ভাবলি আমাদের থেকে পালিয়ে যাওয়া এতো সহজ? অয়ন তোতলাতে থাকে আ আ আমি মানে আমরা ওর কোনো ক্ষতি করতে চাইনি। সেদিন ও নিজেই আমাদের সাথে দেখা করতে এসে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল আম আমরা তো উল্টে ওর ট্রিটমেন্ট করলাম ও বেশী অসুস্থ হয়ে পড়ায় আমরা ভেবেছিলাম এখন ওর বাড়ীতে জানালে সবাই চিন্তা করবে ভয় পাবে তাই জন্য কিছু জানাইনি। তাছাড়া ও আমার স্ত্রী ওর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবার পুরো অধিকার আমার আছে। ওকে সুস্থ করে ওর বাড়িতে পাঠিয়ে দেবো সেটাই ভেবেছিলাম। বিপ্লব নিজের রাগ সামলাতে না পেরে ঠাস্ করে একটা চড় বসিয়ে দেয় অয়নের গালে অয়ন গাল হাত দিয়ে বলে: এটা আপনারা ঠিক করছেন না। আপনারা কিন্তু এটা প্রমাণ করতে পারবেন না যে ওকে আমরা কিডন্যাপ করে জোর করে আটকে রেখেছিলাম। আমরা কি পারবো আর কি পারবো না সেটা তোদের পরে বোঝাচ্ছি এখন চল কিছুদিন আমাদের সেবা করার একটা সুযোগ দে তোদের মতো ভগবানের। বিপ্লব একজন কনস্টেবলকে বলে: মিহির বাবু এই বাপ বেটাকে গাড়িতে তুলুন। আর এই ডক্টর মোহান্তিকে ও। সেখানে যে কয়জন নার্স এবং হসপিটাল কর্মী ছিল তাদের সবাইকে নির্দেশ দেওয়া হয় যাতে তারা কেউ এই মুহূর্তে শহর থেকে বাইরে না যায়। ওদের নিয়ে পলিশ ভ্যান রওনা দেয় থানার দিকে।

এদিকে কৃষ্ণেন্দু অন্য একটি হসপিটালে অন্যন্যার ভর্তির ব্যাবস্থা করে ফেলে। কারণ কেউ জানে না এই কয়েকদিনে ওরা কি করেছে অন্যন্যার সাথে। এখনো ও সেন্সলেস হয়ে আছে। কৃষ্ণেন্দু অন্যন্যার বাড়িতে আর তৃনাকে ফোন করে জানায় অন্যন্যাকে পাওয়া গেছে এবং ওকে কোন হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *