সমকামি – সাইত্রিশতম পর্ব
ওদের প্ল্যান মতো পরের দিন গুম করে দেওয়া হলো ডক্টর বিপুল মোহান্তিকে । নিয়ে যাওয়া হয় বসিরহাটে রাজুর গোপন ডেরায় যদিও ডেরা ঠিক বলা চলে না ওটা রাজুর বাড়ি ওর বাড়ির গোপন এক ঘরে যেখানে লোক তো দুরস্ত এক ফোঁটা আলোর ঝিলিক ও সেখানে পৌঁছায় না। ডাক্তারকে নিয়ে যখন ওরা ওখানে পৌঁছায় তখন ভোর চারটে বেজে পঞ্চাশ মিনিট। ডাক্তারকে নিয়ে ঢোকানো হয় সেই অন্ধকার গুম ঘরে। চোখ মুখ সব খুলে দেওয়া হয়। ঘরে একটা জিরো পাওয়ারের লাইট জ্বলছে করো মুখ সেই ভাবে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে না তারপর ওরা সবাই মাস্ক আর চশমা পড়া। সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিপ্লব আর রাজু। চোখ মুখ খুলে দেওয়ার পর ডক্টর মোহান্তি চিৎকার করে ওঠে। কে তোমরা? আমাকে এখানে এই ভাবে কেনো নিয়ে এসেছো? কি চাই তোমাদের? টাকা তাই তো টাকা চাই? কতো টাকা চাই? বলো কি হলো চুপ করে আছো কেনো? বলো!!! বিপ্লব আর রাজু একে অপরের দিকে তাঁকিয়ে হাঁসে। ডাক্তার আবার রাগে চিৎকার করে ওঠে কি হলো ওরকম আবোদার মতো হাঁসছিস কেনো? টাকা চাই না তো কি চাই তোদের? ধরে এনেছিস কেনো আমাকে? রাজু একটা অট্ট হাঁসি হেঁসে বললো তোর মেয়েকে চাই রে কুত্তা। তোকে শশুর আদর করতে নিয়ে এসেছি!!!! এই শালা শুয়োরের বাচ্চা আমার মেয়েকে চাই মানে? বুড়ো দামড়া একটা বাচ্চা মেয়েকে নিয়ে নোংরা ইঙ্গিত করছিস শালা বেজন্মা। রাজুর হাতের কাছে একটা স্টীলের গ্লাস ছিল ডাক্তারের কপাল লক্ষ্য করে ছুঁড়ে মারে সেটা। বাবা গো বলে ডাক্তার নিজের কপাল চেপে বসে পড়ে। বিপ্লব ডাক্তারের কলার ধরে টেনে তুলে বলে: শালা মাগী বাজ ডাক্তার তোকে এখানেই পুতে দেবো জীবনে আর কেউ কোনো দিন খুঁজে পাবে না। আর তোর মেয়ে বউকে নিয়ে গিয়ে সোনাগাছিতে ব্যাবসা করাবো সেই টাকায় বসে খাবো। হারামী নিজের মেয়ে বউ খুব যত্নের আর পরের মেয়ে বুঝি তোর আর তোর বসের ফুর্তির জন্য ? ওই কুত্তা অন্যন্যাকে কোথায় রেখেছিস? ডাক্তার চোখ বড় বড় করে ঢোক গিলে বলে: কে অন্যন্যা? অন্যন্যা বলে আমি কাউকে চিনি না। আমাকে ছেড়ে দে। বিপ্লবের এক চড়ে ছিটকে গিয়ে পড়ে ডাক্তার মোহান্তি। গালে হাত দিয়ে বোকার মতো তাঁকিয়ে থাকে বিপ্লবের দিকে। তারপর বার বার জিজ্ঞাসা করার পরে ও তিনি কিছু বলতে চান না। বিপ্লব রাজুকে বলে: ” ছেড়ে দাও এই শুয়োরের বাচ্চাকে ও আজকে রাত্রেই সব নিজে থেকেই বলবে। সেই ব্যাবস্থা দেখছি না করলে এর থেকে কিছুই বার করা যাবে না। চালিয়ে রাজু ভাই ওহী করতে হ্যায়। ওরা ওই ঘর থেকে বেরিয়ে দরজায় ভালো করে তালা লাগিয়ে চলে যায় সেখান থেকে।
সারাদিনে আর কারো দেখা পাওয়া যায়নি। দুপুরে একটা মুসলিম ভদ্র মহিলা এসে খাবার দিয়ে ঘরের দরজা আবার বন্ধ করে দেয়। ওই ঘরে ডাক্তারের যেনো দম আটকে আসতে থাকে ঘরে একটা জানলা পর্যন্ত নেই শুধু উপরের দিকে একটা ছোট্ট ঘুলঘুলি। যেখান থেকে ঘর পর্যন্ত আলো পৌঁছতে পৌঁছতেই শেষ হয়ে যায়। সারাদিন এক ভাবে কাটানোর পর সন্ধ্যার দিকে ডাক্তারের চোখ লেগে আসে। হঠাৎ একটা আওয়াজে ওর ঘুম ছুটে যায় ও তাঁকিয়ে দেখে ওর ছোট্ট মেয়ে তিতলি ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে আর বলছে বাপি আমাকে বাঁচাও ওরা আমাকে ধরে নিয়ে এসেছে আমি ওদের চিনি না বাপি। বাপি তোমাকে ও কি ওরা ধরে এনেছে? মেয়েকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে ডাক্তার চিৎকার করে বলে: কি ক্ষতি করেছি আমি তোমাদের। তোমরা কে? কেনো আমার ফুলের মতো ছোট্ট মেয়েটাকে তোমরা ধরে নিয়ে এলে? রাজু ডাক্তারের মুখের খুব কাছে মুখটা এগিয়ে নিয়ে গিয়ে বলে: ডক্টর সাব সব মেয়েই তার বাবার কাছে ফুলের মতোই হয়। অন্য একটা মেয়ের সর্বনাশ করার আগে একবার ও ইয়াদ থাকে না তাই না যে আপনার নিজের ঘরে ও একটা মেয়ে আছে? এই ফতেমা এই বাচ্চাটাকে লিয়ে যা এখন থেকে। ফতেমা রাজুর বাড়িতে ফাইফরমাস খাটে। রাজুর মার বয়স হয়েছে চোখে ও আজকাল বেশ কম দেখে ছেলে ছোটো তাই সবকিছু মিলিয়েই ফতেমাকে রাখা হয়েছে। আর ফতেমার ও নিজের বলতে এই পৃথিবীতে কেউ নেই। বিধবা মা মারা গেছে ফতেমার বাবা মারা যাওয়ার পর পরই। ফতেমার বাবা পেশায় রাজমিস্ত্রির কাজ করতো। একদিন কাজে গিয়ে লিফটের দড়ি ছিঁড়ে নীচে পড়ে যায়। হসপিটালে নিয়ে গেলে ডাক্তাররা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। ফতেমার বয়স তখন মোটে তিন বছর। বাবার হাত মাথার উপর থেকে চিরো দিনের জন্য উঠে যায়। তারপর থেকে কোনো রকমে টেনেটুনে চলতো ওদের সংসার। স্বামী মারা যাওয়ার পর প্রায়ই অসুস্থ থাকতেন ওর মা ও। তারপর একদিন তিনি ও মারা যান। তখন ফতেমার বয়স দশ বছর। মামা বাড়ির লোক বাধ্য হয়ে নিয়ে গেলে ও সেখানে খুব একটা সুখে ছিল না ফতেমা। তারপর মাত্র চোদ্দ বছর বয়সে তাঁকে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয় একটা ত্রিরিস বছর বয়সি ছেলের সাথে। তাতে ও কপালের কোনো পরিবর্তন হয়নি ফাতেমার। পেশায় কল মিস্ত্রী ফতেমার বর একদিন ওকে ছেড়ে অন্য গ্রামে গিয়ে অন্য একটি মহিলাকে বিয়ে করে সংসার পাতে। ফতেমা গিয়েছিল ফিরিয়ে আনতে কিন্তু তাতে লাভ কিছু হয়নি। এই ঘটনার পর ফাতেমার শশুর বাড়িতে ও ওর আর জায়গা হয়নি। কাজের খোঁজে এদিক ওদিক করতে করতে তারপর পরিচয় হয় এই রাজুর সাথে। রাজু ওকে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসে। ওকে খেতে দেয় পড়তে দেয়। ওকে নিজের বোনের মতো করেই ভালোবাসে। কোনো অবহেলা অযত্ন করে না। আর ফতেমা ও রাজুকে নিজের দাদার মতোই ভালোবাসে সন্মান করে। ফতেমা এসে তিতলিকে নিয়ে চলে যায়।
বিপ্লব একটা চেয়ার এগিয়ে দেয় ডাক্তারের দিকে বসুন বসুন হুট করে পড়ে গেলে যদি আবার স্টোক হয়ে যায়? তখন আবার লাশ গুম করার ঝামেলা। বসুন। ডাক্তার আবার আঙ্গুল তুলে চিৎকার করতে যাবে এমন সময় বিপ্লব বলে: ওই শালা শুয়োরের বাচ্চা আর একবার ফালতু কথা বলবি তোকে আর কেউ বাঁচাতে পারবে না তার আগে তোর ওই ফুলের মতো মেয়েটাকে মারবো। কি চাস তুই? মেয়ে টা মরুক? ডাক্তার আর কোনো কথা না বাড়িয়ে চুপ করে যায়। ধুপ করে চেয়ারের উপর বসে পড়ে মাথা নীচু করে আস্তে আস্তে বলে আমি সত্যি কিছু জানি না বিশ্বাস করুন আমার মেয়েটাকে ছেড়ে দিন। আমার বউ যদি জানতে পারে আমাকে আমার মেয়েকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না ওকে আর বাঁচানো যাবে না। ও এমনিতেই অনেক অসুস্থ। উল্টো দিকের চেয়ারে বসে বিপ্লব বলে: বাব্বা নিজের পরিবারের জন্য কতো চিন্তা তোর। আর একটা পরিবারকে শেষ করে দিতে একটুও কিছু মনে হচ্ছে না তাই না? তোর মতো ক্রিমিনালদের সাথে কি করতে হয় সেটা আমি খুব ভালো করে জানি। তাই যা জানিস সেটা বলে দে তা না হলে তুই তো মরবি সেটা কেউ আটকাতে পারবে না তোর ওই মেয়ে টা ও মরবে। দেখ তুই ভাব। ওরা ঘর থেকে বেরিয়ে যাবে এমন সময় ডাক্তার পিছন থেকে চিৎকার করে বলে: কি কি জানতে চান আপনারা? বিপ্লব আর রাজু একসাথে পিছনের দিকে তাঁকিয়ে বলে: অন্যন্যা কোথায়? কি করেছিস তোরা ওর সাথে? ও তোদের হসপিটালে আছে এটা আমরা জানি বাকি টা তুই বলবি।
বললে আমার মেয়েটাকে ছেড়ে দেবেন আপনারা? বিপ্লব বলে: তোর মেয়েকে ছাড়বো তোকে ও ছাড়বো কিন্তু তুই মনে রাখিস আমাদের যদি খেলাতে চাষ তাহলে কিন্তু তোর ওই মেয়ের মৃত্যুর থেকে ও খারাপ অবস্থা করে ছাড়বো। না, না আমার মেয়েটার কোনো ক্ষতি করবেন না ওর কি দোষ!!! দোষ আমি করেছি ভুল আমি করেছি। আমি সব সত্যি বলছি। সেদিন অন্যন্যাকে তুলে নিয়ে আসার পর হসপিটালের একদম শেষের দিকের ঘরে রাখা হয়। যেখানে আমি ডক্টর চৌধুরী আর কয়কজন ছাড়া বিশেষ কেউ একটা যায় না। ওকে তুলে এনে কড়া ডোজের ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে রাখা হয়েছে। একদিন থেকে দেড় দিন ছাড়া ছাড়া। বিশ্বাস করুন আমি, আমি না করেছিলাম এতো কড়া ডোজের ওষুধ এই ভাবে না দিতে। প্রাণ সংশয় হতে পারে সেই কথা ভেবে। ওরা শোনেনি। বিপ্লব প্রশ্ন করে ওরা কারা? ডক্টর চৌধুরী আর ওনার ছেলে। এমনিতে জুনিয়র চৌধুরী ওই ঘরে খুব একটা ঢোকেন না। ওদের প্ল্যান অন্যন্যাকে ওরা বিদেশে নিয়ে চলে যাবে চিকিৎসার নাম করে। যাতে ডিভোর্স কেসটা কোর্ট পর্যন্ত পৌঁছেতে না পারে। বিশ্বাস করুন এর থেকে বেশি কিছু আমি জানি না। ইনফ্যাক্ট কিসের জন্য ডিভোর্স করতে চাইছেন অন্যন্যা আমি সেটা ও জানি না। বিশ্বাস করুন আমাকে।
বিপ্লব বললো এতদিন ওদের হয়ে কাজ করেছেন। এবার আমাদের হয়ে করতে হবে। আর যদি কোনো চালাকি করার চেষ্টা ও করেন তাহলে মেয়ের মুখটা মনে করে নেবেন। আমরা আপনাকে আপনার জায়গায় ছেড়ে আসবো। কিন্তু আপনি কোনো চালাকি যাতে আমাদের সাথে করতে না পারেন তার গ্যারেনটার হিসেবে আপনার মেয়ে আমাদের কাছে জমা থাকবে। খাবার পেয়ে যাবেন রাতের সময় মতো। কি ভাবে কি করতে হবে আমরা বলে দেবো আপনাকে। এখন লক্ষ্মী সোনা হয়ে এখানেই জমা থাকুন। চলো রাজু আমরা আমাদের বাকি কাজগুলো সেরেনি।