Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

সমকামি – ছত্রিশতম পর্ব

বাড়ির সামনে এসে কৃষ্ণেন্দু বলে কাকু আমি ঠিক সাড়ে চারটে নাগাদ চলে আসবো আপনারা তৈরী থাকবেন। বিকাশ বাবু বলেন: যদি কিছু মনে না করো তাহলে তুমি এসো আমাদের সাথে বিকেলে না হয় এক সাথেই চলে যেতাম কষ্ট করে তোমাকে আবার এতটা পথ আবার আসতে হতো না। কৃষ্ণেন্দু উত্তর দেয়: না কাকু আজ না যেদিন অন্যন্যাকে সুস্থ ভাবে আপনাদের কাছে ফিরিয়ে দিতে পারবো সেদিন নিশ্চয়ই আসবো। এখন আসি  বিকেলে সময় মতো চলে আসে কৃষ্ণেন্দু। তারপর হসপিটাল থেকে সমস্ত ফর্মালিটিস করে তিয়াসা আর বিকাশ বাবুকে বলে একবার থানা থেকে ঘুরে আসি চলুন। একদম যাওয়া বন্ধ করে দিলে ওদের সন্দেহ হতে পারে। তৃণা ও ওদের সাথেই ছিল। তৃণাকে কৃষ্ণেন্দু বলে চলুন আগে আপনাকে ছেড়ে তারপর থানা হয়ে বাড়ি। তৃণা বলে: আমি যদি যেতে চাই সমস্যা হবে? না, না সমস্যা কেনো হবে চলুন কৃষ্ণেন্দু উত্তর দেয়!!! তৃণা বলে আসলে কাল থেকে অফিসে গেলে আবার কবে কি করতে পারবো আসতে পারবো কিনা তাই আর কি। যতক্ষণ পারি সাথে থাকি। আচ্ছা বেশ চলুন। থানার সামনে গিয়ে কৃষ্ণেন্দু বলে: তৃণা আপনাদের ভিতরে যাওয়ার দরকার নেই আপনি আর তিয়াসা গাড়িতেই অপেক্ষা করুন আমরা ভীতির থেকে ঘুরে আসছি। কৃষ্ণেন্দু আর বিকাশ বাবু ভিতরে গেলে যিনি ডিউটি অফিসার ছিলেন তিনি বললেন: আপনারা আবার এসেছেন? আরে দাদা আপনাদের যে কেনো বোঝাতে পারছি না যে কমিশনার সাহেব বলেছিলেন বলেই শুধু আপনাদের কেসটা নেওয়া হয়েছে নাহলে এটার কেসই হয় না। এরকম কতো কেস রোজ জমা হয় জানেন?  একটা জলজ্যান্ত মেয়ে উবে গেলো নাকি? কেউ যদি কিডন্যাপই করতো তাহলে এতদিনে ধরা পড়ত না? পুলিশের চোখকে ফাঁকি দেওয়া কি এতোই সহজ মশাই!!! আপনার মেয়ে পালিয়ে গেছে বুজলেন? বিকাশ বাবু চিৎকার করে বলে ওঠেন: মুখ সামলে কথা বলবেন অফিসার।। কৃষ্ণেন্দু বিকাশ বাবুকে থামিয়ে দিয়ে বলে: পালিয়ে গেছে নাকি তুলে নিয়ে গেছে সেটা তদন্ত সাপেক্ষ অফিসার। আগে আপনি প্রমাণ তো করুন যে পালিয়ে গেছে। আর তার জন্য ও আপনাকে আগে ইনভেস্টিকেশনটা করতে হবে তাই না? আর আপনার কথা যদি মিথ্যে প্রমাণিত হয় তাহলে আপনার বিরুদ্ধে একজন মহিলাকে বাজে উক্তি করার জন্য আপনার নামে একটা মানহানির মামলা তো করাই যাবে। শুনুন অফিসের আমিও কিন্তু একজন মিডিয়ার লোক সুতরাং কিছু পরিচিত কিন্তু আমার ও আছে এটা ভুলে যাবেন না। একজন মহিলার সম্পর্কে বাজে কথা বলার আগে নিজের কাজটা ওনেস্টলি করুন। অফিসার কৃষ্ণেন্দুকে চোখ রাঙিয়ে বলে: আপনি আমাকে আমার ডিউটি শেখাচ্ছেন? কে হয় আপনার যে এতো দরদ দেখছেন? এবার আর কৃষ্ণেন্দু নিজের রাগকে সংবরণ করতে না পেরে টেবিল চাপড়ে বলে: It’s none of your business যে উনি আর কে হয় আর কে হয় না। কিন্তু আমি আপনাকে বুঝিয়ে দিতে পারি এই মুহুর্তে আমি কে আমি কি? অন্য একজন অফিসার ছুটে এসে কৃষ্ণেন্দুকে বলে: প্লিজ স্যার উত্তেজিত হবেন না। আমি জানি এই মুহূর্তে ধৈর্য রাখতে বলাটা একটা ঠাট্টা ছাড়া কিছুই না। কিন্তু আপনারা যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন তারা সমাজের শুধু বিত্তবানদের মধ্যে একজন শুধু সেটাই না তারা যথেষ্ট প্রভাবশালী একটু অপেক্ষা করতে হবে স্যার কিন্তু আমরা নিশ্চয়ই এই কেসের যথাযত নিষ্পত্তি করবো। আমি কথা দিচ্ছি। কৃষ্ণেন্দু চুপ করে যায়। এবং বেরিয়ে যাবার সময় ওই অফিসারের  মুখের কাছে আঙ্গুল তুলে বলে: শুধু অন্যন্যার খোঁজ টা আগে পাই তারপর আমি দেখবো আপনার চাকরি কি করে থাকে। You bloody bastard। তারপর ওরা বেরিয়ে যায় থানা থেকে। ওরা বেরিয়ে যাওয়ার পর সেকেন্ড অফিসার ডিউটি অফিসারকে বলে: সবার সাথে একই রকম ট্রিটমেন্ট করতে যাবেন না স্যার। তাতে বিপদ বাড়বে। কথাটা পারলে মনে রাখবেন।

এই ভাবে নানান ঘটনায় আরো প্রায় দিন চারেক কেটে যায়। ওদিকে বিপ্লব ওই ডাক্তারের সমস্ত খবর বাড়ি থেকে হসপিটাল সব‌ জোগাড় করে ফেলে। ডাক্তারের নাম: বিপুল মোহান্তি। ডক্টর চৌধুরীর খাস লোক। সমস্ত রকম বাজে কাজের এক মাত্র সাক্ষী। বাড়িতে স্ত্রী অসুস্থ প্যারালাইজড একমাত্র মেয়ে ডক্টর চৌধুরীর অনুগ্রহে শহরের নামজাদা স্কুলে পড়াশুনা করে। বয়স আর কতো হবে? এই সাত কি আট!!! বাড়িতে স্ত্রী অসুস্থ দুবেলার নার্স রাখা আছে যারা ওনার স্ত্রীকে দেখাশুনা করে। মা, বাবা আছেন কিন্তু তারা দেশের বাড়ীতে থাকেন। প্রচুর নারী সঙ্গ আছে গুণধর ডাক্তারটির। হসপিটালের তিন জন নার্সের সাথে তিনি রসলিলা চালিয়ে যাচ্ছেন একই সাথে। তাদের মধ্যে দীপান্বিতা বলে নার্সটির সাথে খাতিরটা একটু বেশী। এছাড়াও বাইরে যে কতো মেয়ের সাথে সময় পেলেই ফুলশয্যা করে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। ও উনি হলেন স্ত্রী বিশেষজ্ঞ। অনেকবার ওনার স্বভাবগুনে ফেঁসে  যেতে যেতে ও ডক্টর চৌধুরীর দৌলতে রেহাই পেয়ে গেছেন। 

কমিশনার  একটা করে পেগ বানিয়ে একটা বিপ্লব একটা কৃষ্ণেন্দু দিকে এগিয়ে দিলেন। আর একটা নিজে নিলেন। বিপ্লব একটি ইতস্তত করে  বলে না মানে স্যার। কমিশনার  বিপ্লবকে বলে আরে খাও খাও ওতো চাপ নিতে হবে না। রাত তখন প্রায় তিনটে কমিশনারের  বাড়িতে তিনজন একসাথে বসে এই আলোচনা চলছিল। কৃষ্ণেন্দু নিজের সাজ বদলে একটা ওলা বুক করে আসে সেখানে কারণ নিজের গাড়ি ব্যাবহার করার অসুবিধা আছে। আর বিপ্লব যে ভাবে পিছন দিক থেকে আসে। কমিশনার চেয়ারে আরাম করে বসে তারপর বলে: গুণধর ডাক্তারের তাহলে তো অনেক গুণ কি বলো বিপ্লব? বিপ্লব হেঁসে  বলে: তাই তো দেখছি স্যার। কার অ্যাসিসটেন্ট সেটাও অবশ্য  দেখতে তো হবেই। কৃষ্ণেন্দু বলে: তাহলে এবার? কমিশনার একটা বিকট হাঁসি  দিয়ে বলে এবার আর কি। কিছুই না। কৃষ্ণেন্দু অবাক হয়ে জানতে চায় মানে? কমিশনার  নির্বিকার ভাবে বলে: মানে কিছুই না। কৃষ্ণেন্দু আর বিপ্লব অবাক হয়ে তাঁকিয়ে থাকে কমিশনারের দিকে। কমিশনার হাঁসি মুখে বলে ওতো অবাক হয়ে কি দেখছো? বিপ্লব তুমি ও বুজলে না মানে টা কি? বিপ্লব উত্তর দেয়: না, স্যার সত্যি বুজলাম না। কমিশনার  আবার বলে: কি বুদ্ধি নিয়ে পুলিশের  চাকরি করছো বলতো? আরে বাবা ডাক্তারের নাইট ডিউটি কবে আছে? কখন বেরোয় হসপিটাল থেকে? ওকে সেদিন গুম করে দাও। ঠিক যে ভাবে অন্যন্যাকে ওরা করলো। নিয়ে যাবে কোথায়? শোনো  বসিরহাটে আমার এক বন্ধু আছে নাম- রাজু শেখ ওই কুত্তার বাচ্চাকে ওখানেই নিয়ে তুলবে। বসিরহাটের অনেক ভিতরে ওর বাড়ি গান্ডূ ডাক্তার কিছু বুঝতে পারবে না। ওকে নিয়ে যাবার সময় ওর নাক বাদে মুখ আর চোখটা বেঁধে দেবে। ওকে তোলার সময় রাজু থাকবে তোমার সাথে। তারপর আমরা তার পরের দিন ওর মেয়েটাকে স্কুল থেকে তুলে নিয়ে ওই একই জায়গায় রাখবে। এই সব কিছুতে রাজু থাকবে তোমাকে সাহায্য করার জন্য। তারপর আমাদের বাকি কাজ ওই গান্ডুই করবে। শুয়োরের বাচ্চারা অনেক নাচিয়েছে এবার ওদের দিয়েই যদি মুজরা  না করাতে পেরেছি তাহলে এই চাকরিই ছেড়ে দেবো শালা।

এই রাজু শেখ সম্পর্কে কিছু না বললে বোঝা যাবে না যে এই রাজু শেখ কে? কি করেই বা কমিশনারের সাথে এর পরিচয় বা বন্ধুত্ব যাই বলা যাক না কেনো। এই রাজু শেখ ছিল সুন্দরবন অঞ্চলের একজন মাফিয়া পশু পাচারকারী চক্রের মাথা। সেই সময় রাজুর নামে সেই অঞ্চলে বাঘে গরুতে এক ঘাটে জল খেতো। রাজু দুর্বলতা বলতে ছিল শুধু রাজুর মা মরা ছেলে। রাজুর বউ সন্তান প্রসবের সময় মারা যায়। রাজু তারপর আর বিয়ে করেনি। রাজু ঘরে রাজু রাজুর বৃদ্ধা মা আর রাজুর ছেলে। সেই সময় কমিশনারের পোষ্টিং ছিল সুন্দরবনে। রাজু সম্পর্কে সবকিছু জানা সত্যে ও যথেষ্ট সাক্ষীর অভাবে তাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হচ্ছিল না। আঞ্চলিক গ্রাম পঞ্চায়েত রাজুর হাতের পুতুলের মতো কাজ করতো। কিন্তু এই রাজুর ছেলে একদিন হঠাৎ খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে আর ওখানে রেখে তাঁর চিকিৎসা করা ও অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। আর ঠিক তখনই কমিশনারের সাহায্যে ওর ছেলের প্রপার ট্রিটমেন্ট হয় এবং ছেলেটি প্রাণে বাঁচে। রাজু তখন কমিশনারকে  বলে যে উনি ওর ছেলের প্রাণ বাঁচিয়ে রাজুকে সারা জীবনের মতো কিনে নিয়েছেন। কমিশনার যা বলবে ও তাই করবে। তখন কমিশনার ওকে বলে: তাহলে রাজু এই রাস্তা থেকে সরে আসুক ও এই অসামাজিক কাজ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিক। তাতে ওর সন্তানের ও ভালো হবে। ওর কাজের ব্যাবস্থা থেকে থাকা ওর ছেলের পড়াশুনা সব ব্যাবস্থা উনি করে দেবেন। ছেলের মুখের দিকে তাঁকিয়ে ও নিজেকে সরিয়ে নিক। রাজু কমিশনারের  কথা শুনে নিজেকে সরিয়ে নেয় সেই রাস্তা থেকে এখন রাজু পুলিশের খোচর হিসেবে কাজ করে। আর লোককে দেখানোর জন্য সবজির পাইকারি বিক্রেতা। এই হলো রাজুর পরিচয়। 

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *