Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

সমকামি – তেত্রিশতম পর্ব

আজ প্রায় পাঁচদিন অন্যন্যা নিখোঁজ। অনেক চেষ্টা করে ও ওর এখনও কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। রিনা দেবী প্রায় শয্যা নিয়েছেন বললেই চলে। কৃষ্ণেন্দু দুবেলা থানার চক্কর কাটছে। সাথে বিকাশ বাবু। তিয়াসার ঘর থেকে বেরোনো বন্ধ। রিনা দেবীর এক কথা তার কথা না শুনে এক মেয়ে আজ নিখোঁজ। আর একজনকে নিয়ে সে আর কোনো কথা শুনবে না। কৃষ্ণেন্দুকে রিনা দেবী একদম পছন্দ করেন না। বিকাশ বাবু তেমন কিছু না ভাবলেও তিয়াসাকে নিয়ে এই মুহুর্তে উনি ও কোনো রিস্ক নিতে চান না। অন্যন্যার ফোন ওর সাথেই ছিল আর তাতে লোকেশন ও অন থাকতো কিন্তু তাতে ও পুলিশ কোনো ভাবেই অন্যন্যাকে ট্রেস করতে পারছে না। হয়তো যারা বা যে ওকে তুলে নিয়ে গেছে তারা ফোনের সুইচ অফ করে দিয়েছে। বিকাশ বাবু আর কৃষ্ণেন্দুর কথায় পুলিশ গেছিলো অন্যন্যার শ্বশুরবাড়ি কিন্তু তাতে ও কোনো লাভ হয়নি। সার্চ ওয়ারেন্ট থাকা সত্ত্বেও ওরা বাড়ি সার্চ করতে পারেনি। কারণ ডক্টর চৌধুরী এই শহরের নাম করা ডক্টর মধ্যে একজন। অর্থ, প্রতিপত্তি, খ্যাতি কিংবা ক্ষমতা কোনোটাতেই তিনি কারোর থেকে পিছিয়ে ছিলেন না। নিজের সেই ক্ষমতা বিস্তার করেই তিনি সেটা আটকে দিয়েছেন। অয়নকে যখন বিকাশ বাবু বললেন সে যখন অন্যন্যাকে ফিরিয়ে নিয়েই আসতে চেয়েছিল তাহলে এখন তাদের সাহায্য করুক ওকে খুঁজে বের করতে। অয়ন বিকাশ বাবুকে মুখের উপর জবাব দেয়: মা, বাবার চাপে সে অন্যন্যাকে সব কিছু ছেড়ে ফিরিয়ে আনতে চেয়েছিল কিন্তু অন্যন্যা সেদিন রাজি হয়নি। এখন অন্যন্যার কি হলো না হলো তাতে তার কোনো মাথা ব্যাথা নেই। অন্যন্যাকে সে কোনোদিন ভালোবাসেনি কোনোদিন বাসবে ও না। কৃষ্ণেন্দুর প্রশাসনিক উচ্চ পর্যায়ে পরিচিতি থাকায় বিভিন্ন জায়গায় বিশেষ করে জাতীয় সড়কগুলোত প্রশাসনিক পাহাড়া বাড়ানো হয়। সব জায়গাতেই নিরাপত্তা বাড়ানো হয় যাতে অন্যন্যাকে কোনো ভাবেই ওরা শহরের বা দেশের বাইরে নিয়ে যেতে না পারে। কারণ প্রশাসনিক মহল কোনো সম্ভাবনাই উড়িয়ে দিতে পারছে না।

সেদিন সারাদিন থানা পুলিশ করে ক্লান্ত কৃষ্ণেন্দু বাড়ি ফিরে আসে। হঠাৎ তৃণা ওর ফোনে ফোন করে এবং কৃষ্ণেন্দুকে বলে সে একবার কৃষ্ণেন্দুর সাথে দেখা করতে চায়। এবং সেটা ওর বাড়িতে কোনো পাবলিক প্লেসে নয়। কৃষ্ণেন্দু তৃণাকে চলে আসতে বলে বাড়িতে। তৃণা এসে দেখে কৃষ্ণেন্দু ড্রিংকস নিয়ে বসেছে। তৃণা কৃষ্ণেন্দুকে দেখে বলে: কৃষ্ণেন্দু দা এই তো কটাদিন আগে এতো অসুস্থ হলে এখন এবার এসব নিয়ে বসেছো? কৃষ্ণেন্দু দুহাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে নীচু করে বলে: তৃণা ওকে পাবতো খুঁজে? আমি আমার সব থেকে প্রিয় মানুষগুলোকে সবসময় হারিয়ে ফেলেছি। এই সবকিছুর জন্য অন্যন্যার মা আমাকে দোষী মনে করে। কিন্তু আমি তো বলেছিলাম বলো হুটহাট না বেরোতে কোথাও। একজন অপরিচিত লোক এসে কি বললো তার উপর ভিত্তি করে কিছু না ভেবে না বুঝে ও কেনো বেরিয়ে গেলো? কোথায় আছে? কি ভাবে আছে? আমি কিছু ভাবতে পারছি না। কান্নায় ভেঙে পড়ে কৃষ্ণেন্দু। তৃণা কৃষ্ণেন্দুকে শান্ত হতে বলে। তারপর ও কৃষ্ণেন্দুকে বলে: কৃষ্ণেন্দু দা আমার কিন্তু মনে হয় না এটা অন্য কেউ করেছে বলে!! এই কাজ অয়নের পরিবারের। আর আমার মনে হয় তৃণা ওই বাড়িতেই আছে। ওকে ওরা অন্য কোথাও নেয়নি। আচ্ছা কৃষ্ণেন্দু দা ডক্টর চৌধুরীর একটা হসপিটাল আছে না? আচ্ছা ওখানে একবার তো খুঁজে দেখলে হয়। জানো তো আমার কিন্তু মনে হচ্ছে আমরা ওখানে খোঁজ করলে একটা খবর নিশ্চয়ই পাবো। তুমি ব্যাবস্থা করতে পারো না? একবার চেষ্টা করে দেখো না প্লিজ।

এই সাধারণ একটা কথা আমাদের করো মাথায় আসেনি। তুমি কথাটা ভুল বলোনি। কিন্তু তৃণা সেটা কি ডক্টর চৌধুরী হতে দেবেন। ওনার বাড়ি সার্চ করার ওয়ারেন্ট থাকা সত্ত্বেও উনি প্রভাব খাটিয়ে সেটা আটকে দেয়। তৃণা বলে: হ্যাঁ, সেটা তুমি ঠিকই বলেছ কিন্তু এসব ভেবে থেমে থাকলে তো হবে না আমাদের চেষ্টা তো করতে হবে। এখন তো অনেকটা দেরী হয়ে গেছে কাল সকালে একবার তোমার কমিশনার বন্ধুর কাছে চলো। এটলিস্ট চেষ্টা করতে হবে। ডক্টর চৌধুরী মানুষটা মোটেও ভালো মানুষ নন এটা আমি সিওর। কৃষ্ণেন্দু তৃনাকে বলে বেশ তাহলে তুমি বলো তুমি কোথায় অপেক্ষা করতে পারবে আমি সেখান থেকে তোকে পিক আপ করে নেবো।

পরেরদিন সকালে কৃষ্ণেন্দু আর তৃণা কমিশনারের অফিসে গেলে উনি বলেন: বস কৃষ্ণেন্দু আই অ্যাম রিয়েলি সরি রে এখনো পর্যন্ত অন্যন্যার কোনো খোঁজ পাওয়া সম্ভব হযনি। কিন্তু একটা মেয়ে কি ভাবে এভাবে উবে যেতে পারে শুধু মেলাতে পারছি না। ওর ফোনটা যদি ট্রাক করা যেতো তাহলে অনেকটাই সুবিধা হতো কিন্তু একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে কমিশনারের মুখ থেকে। কৃষ্ণেন্দু কমিশনারকে হসপিটাল সার্চ এর কথাটা বলে। তাতে উনি উত্তর দেয়: হসপিটালে এই ভাবে কিসের উপর ভিত্তি করে সার্চ করতে যাবো? ওরকম একটা রেপুটেড হসপিটাল যার কোনো পাস্ট রেকর্ডে খারাপ কিছু নেই সেখানে এই ভাবে সার্চ ওয়ারেন্ট পাওয়া ও যাবে না। দাঁড়া একটু বলে কমিশনার সাহেব একটা কল করে। দু মিনিটের মধ্যে একটা অল্প বয়সের ছেলে এসে হাজির হয়। কমিশনার সাহেব ওকে দেখে বলে এসো বিপ্লব। বসো। তোমার আমাকে একটা হেল্প করতে হবে, আনঅফিসিয়ালি। তুমি কি পারবে? বিপ্লব সাথে সাথে উত্তর দেয় আমি আপনার জন্য সব পারবো স্যার। আপনি বলে তো দেখুন। কমিশনার সাহেব বিপ্লবকে বলে : তুমি আজকেই একটা ফিফটিন ডেজের ছুটির অ্যাপ্লাই করো।তুমি বলো তোমার বাড়িতে মা বা বাবা অসুস্থ তুমি গ্রামের বাড়ি যাচ্ছো। তোমার ছুটির অ্যাপ্লিকেশন স্যাংশান আমি করে দেবো কোনো সমস্যা হবে না। ডিপার্টমেন্টের সবাই জানবে তুমি ছুটিতে আছো। আর ঠিক সেই ফাঁকে তোমার ডিউটি থাকবে বিখ্যাত ডক্টর, ডক্টর চৌধূরীর হসপিটাল। ওনার সমস্ত খবর আমার চাই কোথায় যাচ্ছে কখন যাচ্ছে কি করছে হস্টিপালের যাবতীয় সব খবর। আর হ্যাঁ যেহেতু তুমি ছুটিতে থাকছো কাজেই বুঝতেই পারছো তুমি ডিপার্টমেন্ট থেকে কোনো সাহায্য পাবে না। কারণ আমি প্রথমেই বললাম কাজটা পুরোটাই আনঅফিসিয়ালি করতে হবে। এবার বলো তুমি কি পারবে? ওনার প্রত্যেকটা স্টেপ আমার চাই? বিপ্লব খুব দৃঢ় ভাবে উত্তর দেয়: আমি পারবো স্যার। আপনি আমাকে ভরসা করতে পারেন। তারপর কমিশনার সাহেব কৃষ্ণেন্দুকে জিজ্ঞাসা করে: অন্যন্যার একটা ছবি ওকে দেখাতে পারবি? না, দাঁড়া তৃণা আপনার নম্বর থেকে ওকে একটা ম্যাসেজ করুন আপনি ওকে ছবিটা পাঠিয়ে দিন। ওকে বিপ্লব তাহলে তুমি গিয়ে ছুটির দরখাস্তটা দাও আর কাল থেকে তোমার ছুটি। আর তোমার ডিউটি থাকবে চৌধুরী হসপিটাল। বিপ্লব বেরিয়ে যেতে কমিশনার কৃষ্ণেন্দুকে বলে: আমার মনে হয় না আমরা অফিসিয়ালি অন্যন্যাকে এতো সহজে খুঁজে বের করতে পারবো বলে। যদি পারি ও তাতে ও অনেক দেরী হয়ে যাবে। আই হোপ এবার কিছু একটা হবে। কারণ ওনার পরিচিতি ও অনেক উপর মহল পর্যন্ত। এমনি কি নেতা মন্ত্রী ও তাতে বাদ নেই। আর তুই তো জানিস কৃষ্ণেন্দু আমরা হলাম শিক্ষিত ভেড়া এই অশিক্ষিত নেতাদের আঙুলের ইশারায় আমাদের এই উর্দি পর্যন্ত খুলে যেতে পারে। তবে ছেলেটা খুব এফিসিয়েন্ট অফিসিয়াল ভাবে যে খোঁজ খবর চলছে চলুক। পাশাপাশি এটাও চলুক। তুই চিন্তা করিস না। যদি ওই ডক্টরের কোনো কেরামতি এর মধ্যে থাকে তবে ধরা ও পড়বেই। তুই নিশ্চিত হয়ে বাড়ি যা। আর ফোনে এই সংক্রান্ত কোনো কথা বলবি না। কারণ তোর ফোন যে ট্র্যাপ হচ্ছে না সেটা কিন্তু সিওর হয়ে বলা যাচ্ছে না। ওকে এখন তোরা আয়। যা খবর হবে সব সময় মতো জানতে পারবি। চিন্তা করিস না। আমি তো আছি। তৃণা আর কৃষ্ণেন্দু বেরিয়ে আসে সেখান থেকে। তারপর তৃণা বলে কৃষ্ণেন্দু দা আমাকে একটু অন্যন্যার বাড়ির কাছে ড্রপ করে দেবে? একবার ওদের সাথে দেখা করা খুব দরকার। ওদের যে কি অবস্থা এখন কি জানি? কৃষ্ণেন্দু বলে: ইচ্ছে তো আমার ও করে কিন্তু অন্যন্যার মা আমাকে একদম সহ্য করতে পারছেন না। যদিও উনি আমাকে কোনোদিনই পছন্দ করেন না আর এখন তো। ঠিক আছে তুমি চলো। তোমাকে পৌঁছে দিয়ে আসছি। গাড়ি থেকে নেমে যাওয়ার সময় তৃণা কৃষ্ণেন্দুকে বলে: কৃষ্ণেন্দু দা দেখো কমিশনারের সন্দেহ যদি ঠিক হয় তাহলে তো তোমার নম্বরে ফোন করা আমার ও ঠিক না। আমার একটা নম্বর আছে যেই সিম টা ইউজলেস হয়ে পড়ে আছে আমি সিমটা চালু করে তোমাকে দিয়ে দিচ্ছি তুমি আমাকে ফোন ঐ নম্বের করবে আর আমিও তাই করবো। কৃষ্ণেন্দু এক কথায় রাজি হয়ে যায়।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress