Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

সমকামি – ছাব্বিশতম পর্ব

সেদিন অন্যন্যা বেশকিছুটা তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরে। ঘরে ঢুকতেই রিনা দেবী জিজ্ঞাসা করে কিরে আজকে কি কাজ কম ছিল? সময় মতো ফিরে গেছিস। যা তুই ফ্রেশ হয়ে আয় আমি সবার জন্য কফি বানিয়ে নিয়ে আসছি। সবাই একসাথে বসে আজকে সন্ধ্যার কফি খাবো। অন্যন্যা কিছু অবাক হয়ে মাকে প্রশ্ন করে কফি? কিন্তু মা তুমি তো কফি খেতে পছন্দ করো না। তাহলে আজকে কি হলো? রিনা দেবী হেঁসে উত্তর দেয় আহা্, পছন্দ করি না তাতে কি একদিন তো সবার জন্য খাওয়াই যায়। তুই যা তাড়াতাড়ি, দেরী করিস না ফ্রেশ হয়ে আয়। তিয়াসা আর বিকাশ বাবু সেখানেই বসে ছিল। অন্যন্যা বাবার মুখের দিকে তাঁকালে ওর কেমন যেনো মনে হলো বিকাশ বাবুর মুখটা কেমন যেনো থমথমে চিন্তিত। তিয়াসা ও আজ যেনো একটু বেশী চুপচাপ। অন্যন্যা বুঝতে পারে কিছু একটা হয়েছে কিন্তু মার ব্যাবহার ভীষণ স্বাভাবিক বলতে গেলে অনেকদিন বাদে মাকে এতো ভালো মুডে ও দেখছে। তাই অন্যন্যা বুঝতে পারছে না আসলে ঠিক কি ব্যাপার। ও নিজের ঘরে গেলো ফ্রেশ হতে। ঘরে ঢুকে কৃষ্ণেন্দুকে ফোন করলো অন্যন্যা। ফোনের ওপার থেকে কৃষ্ণেন্দু প্রশ্ন করে: পৌঁছে গেছো বাড়িতে? এখন অনেক ভালো লাগছে বলো? সারাদিন অনেক জ্বালিয়েছি তোমাকে। অন্যন্যা উত্তরে বলে: কেনো আমি বুঝি তোমাকে সে কথা বলেছি? বাজে কথা না বলে বিশ্রাম নাও, তোমার দরকার। আমি রাতে ফোন করবো তার আগে খেয়ে নেবে। কালকে অফিসের পরে যাওয়ার চেষ্টা করবো। এখন রাখছি চেঞ্জ করবো। ফোন কেটে দেয় অন্যন্যা। তারপর ফ্রেশ হয়ে বসার ঘরে যায়। বসার ঘরে গিয়ে দেখে মা কফি স্নাক্স সব টেবিলে সাজিয়ে রেখেছে মাকে আজকে একটু বেশীই খুশী খুশী দেখাচ্ছে। অন্যন্যা কফি হাতে টিভি দেখছে অনেকদিন বাদে ও টিভির সামনে বসার সময় পেয়েছে। রিনা দেবী অন্যন্যার পাশে এসে বসে তারপর ওর কাঁধে হাত রেখে বলে: আজকাল অফিসে তোর অনেক পরিশ্রম হচ্ছে বল? আমি ও আজকাল বড্ড রাগারাগি করি বল? আসলে মা তো চিন্তা হয় যেদিন মা হবি সেদিন ঠিক বুঝতে পারবি দেখিস। অন্যন্যা অবাক হয়ে তাঁকিয়ে থাকে মার দিকে কি বলবে কিছু বুঝতে পারে না। শুধু জিজ্ঞাসা করে তুমি কি কিছু বলবে আমাকে মা? রিনা দেবী নির্দ্বিধায় উত্তর দেয়: হ্যাঁ, অনেক কথা আছে তুই শান্ত হয়ে শুনবি কথা দে আমাকে? অন্যন্যা অবাক হয়ে প্রশ্ন করে: কি এমন কথা মা যে তুমি এভাবে বলছো? রিনা দেবী উত্তর দেয়: আছে কথা আছে আগে তুই বল আগেই রাগারাগি করবি না। শান্ত হয়ে শুনবি আগে সবটা। অন্যন্যা উত্তর দেয় বেশ তাই হবে। তুমি বলো। তারপর রিনা দেবী বলতে শুরু করে: অন্যন্যা, অয়ন এসেছিলো। ও নিজের ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়েছে। ও তোকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চায়। ও বলেছে ও তোর কাছে ও অন্যায় স্বীকার করতে রাজি আছে। দেখ মা পুরুষমানুষের ওমন একটু আধটু দোষত্রুটি থাকে সেই নিয়ে এতো ভাববার কিছু নেই। নিজে এসে যখন ক্ষমা চাইছে তখন তুই আর রাগ করে থাকিস না মা। মিটিয়ে নে ঝামেলাটা। এতো বড়ো ঘর এতো নাম ডাক অনেক কপাল করে পাওয়া যায়। ভুল করে ফেলেছে স্বীকার তো করছে নিজের ভুল। ও বলেছে রবিবার দিন আবার আসবে তুই থাকবি তোর সাথে কথা বলবে। তুই কেসটা তুলে নে। ওরা এখনো কিছুই জানে না বলেই মনে হলো। কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলে চললো রিনা দেবী।

অন্যন্যা অবাক হয়ে ওর মার দিকে তাঁকালো আর বললো: ও আচ্ছা আচ্ছা তাহলে এই ব্যাপার সেই জন্যই তোমাকে আজ এতো খুশি দেখাচ্ছে। আমি ফিরে আসার পর থেকে তোমাকে এতো খুশি আমি কখনো দেখিনি। এমন কি সেদিন ঝড়ের রাতে যখন কৃষ্ণেন্দু বাবু আমাকে সেফলি বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে গেলো সেদিন ও না। উল্টে বার বার তুমি সেই নিয়ে নানা কথা নানা ভাবে আমাকে বলে গেছো। ও এলো ক্ষমা চাইলো আর তুমি সব বিশ্বাস করে নিলে? একবার মনে হলো না যে ও যে সত্যি বলছি তার প্রমাণ কোথায়? ওদের ক্ষমতা আছে অর্থ আছে থাকতেই পারে তার মানে কি এটাই দাঁড়ায় যে বুঝে না বুঝে আমাদের ঠকতে হবে? যারা এতো বড় সত্যি গোপন করে বিয়ে করতে পারে তারা এখন ক্ষমা চাওয়ার নাটক করছে আর তুমি তাতে সব কিছু ভুলে গেলে? সেই কোন ছোটো বেলা থেকে ওদের সম্পর্ক সেটা হাঠাৎ করেই ওর মনে হলো ভুল? আর সেটা আমাকে বিশ্বাস করে নিতে হবে?

রিনা দেবী উত্তেজিত হয়ে অন্যন্যাকে বলে মানুষ একবার ভুল করেছে বলেছে সে যে বার বার সেই ভুল করবে তার ও কোনো মানে নেই। একটা সুযোগ তোর সবারই পাওয়া উচিত। আমি চাই জামাই যখন চাইছে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে তুমি চলে যাও। একটা সুযোগ তো দিয়ে দেখো কি হয়? অন্যন্যা ঘুরিয়ে রিনা দেবীকে প্রশ্ন করে আর সেই সুযোগ দিতে গিয়ে আমার যদি কোনো বিপদ হয়? ওই কোর্টের নোটিশ পেয়েই যে অয়ন আসেনি সেটা তুমি কি করে সিওর হোচ্ছো? এটা তো জানাই ছিল নোটিশ পেলে ওরা সহজে কোর্টে যেতে চাইবে না। যে কোনো মূল্যে ওরা এটাকে উঠিয়ে নিতে চাইবে। আমাকে ক্ষমা করো মা আমার পক্ষে ওখানে ফিরে যাওয়া পসিবেল না। অয়ন যা বলে গেছে আমি তার একটা কথা ও বিশ্বাস করি না। আর যদি ও সত্যি বলে ও থাকে তাহলে ও ওকে বিশ্বাস করা উচিত না। কারণ যে সম্পর্কে ও ছোটো থেকে জড়ানো সেই সম্পর্ককে ও অস্বীকার করতে ও রাজি। ও যে আবার আমাকে ঠকাবে না আমাকে অস্বীকার করবে না তার নিশ্চয়তা কোথায়? রিনা দেবী উত্তেজিত হয়ে বলে: তাহলে তুই শুনবি না কোনো কথা এটাই তো? আমাদের কথা না হয় না ভাবলি ছোটো বোনটার কথা? কিছুই তোর ভাববার দরকার নেই নিজের ছাড়া। তোর ডিভোর্সটা হলে আত্মীয়স্বজন পাড়া প্রতিবেশী কি করে মুখ দেখাবো একবার ও চিন্তা করার দরকার নেই। অন্যন্যা অবাক হয়ে মাকে প্রশ্ন করে পাড়া প্রতিবেশী আত্মীয়স্বজন এরা তোমার কাছে আমার থেকেও বেশী আপন গুরুত্বপূর্ণ মা? আমার জীবনের থেকে ওদের কথার দাম তোমার কাছে বেশী? বিকাশ বাবুর দিকে তাঁকিয়ে অন্যন্যা জিজ্ঞাসা করে: বাবা তোমার ও ওই এক মত? বিকাশ বাবু উত্তর দিতে যাবে তার আগেই রিনা দেবী বলে: তোর বাবা আর আমার মত আলাদা হতে দেখছিস কখনো? আমি যা বলছি তোর বাবা ও সেই কথাই বলবে এতে আলাদা করে জিজ্ঞাসা করার কিছু নেই তো। তিয়াসা এতক্ষন চুপ করে ছিল কিন্তু এখন ও রিনা দেবীকে বলে: মা তুমি নিজের মুখের কথা কেনো সবার মুখে বসাতে চাইছো? বাবার যদি ওই একই কথা হয় তাহলে বাবাকেই সেটা বলতে দাও তুমি কেনো বলছো? রিনা দেবী তিয়াসাকে বলে: খুব সাহস বেড়ে গেছে না দিদিকে দেখে!? বড়দের মুখে মুখে কথা ও বলতে শিখে গেছো খুব ভালো শিক্ষা হচ্ছে তোমার? নিজের ঘরে যাও। এখানে তোমাকে কেউ ডাকেনি। তিয়াসা মাকে উদ্দেশ্য করে বলে: না মা আজকে আমি ঘরে যাবো না। কতদিন ছোটো ছোটো বলে চুপ করিয়ে রাখবে আমাকে? ওই লোকটা যে নাকি কোনোদিন দিদিয়ার দিকে ভালো করে তাঁকালো না সে হঠাৎ করে নিজের সব ভুল বুঝে গেলো? তোমার একটু ও অবাক লাগছে না মা? এরপর অন্যন্যা ওর মাকে উদ্দেশ্য করে বললো: যে নোংরা ছবি আর ভিডিও আমি দেখেছি তারপর আর আমার ওর সাথে ঘর করা তো দূরস্থ আমি ওর সাথে কোনো সম্পর্ক রাখতে নারাজ মা। আমাকে পক্ষে এটা সম্ভব না। এই কথা বলে অন্যন্যা নিজের ঘরে দিকে পা বাড়ালে রিনা দেবী পিছন থেকে বলে: হ্যাঁ, জানি জানি এখন ওই বুড়ো লোকটার প্রেমে যে তুই হাবুডুবু খাচ্ছিস আর সেই জন্যই তুই আর জামাইয়ের কাছে ফিরতে চাস না। উপকারের নামে যে ও তোর সুযোগ নেবে সেটা তুই বুঝতেও পারছিস না। চুলটা আমার এমনি পাকেনি বয়স আর অভিজ্ঞতায় পেকেছে সেটা তুই ভুলে যাচ্ছিস। অন্যন্যা পিছন ঘুরে মাকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই বিকাশ বাবু বলে: থামো থামো তুমি!!! এসব কি ধরনের কথা হচ্ছে। আমি তো ভাবতেও পারছিনা তুমি এমন ভাষা ব্যাবহার করতে পারবো। এটা আমি আজ কাকে দেখছি? এই মানুষটা আমার কাছে অচেনা। উফ্ আমার আর ভালো লাগছে না তোমরা চুপ করো। অন্যন্যা আর কোনো কথার প্রতিবাদ না করে নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ায়।

ঘরে ঢুকে ধপ করে বিছানার উপর বসে পড়ে অন্যন্যা। দুচোখ বেয়ে জলের ধারা নেমে আসে ওর। মা কেনো এমন করছে সেকথা কিছুতেই বুঝতে পারছে না ও। সেদিনের রাতের পর থেকে মার ব্যাবহার যেনো অনেক বেশী করে অন্যরকম লাগে অন্যন্যার। এই মাকে ও চেনে না। এই মাকে ও কোনোদিন দেখেনি বলে মনে হয় অন্যন্যার। হঠাৎ কাঁধের উপর করো হাতের স্পর্শ পেয়ে স্তম্ভিত ফেরে অন্যন্যার। ঘুরে তাঁকিয়ে দেখে বিকাশ বাবু ওর সামনে দাঁড়ানো। অন্যন্যা চোখের জল মুছে নেয় তাড়াতাড়ি। বিকাশ বাবু স্বস্নেহে মেয়ের মাথায় হাত রাখে। তারপর মেয়েকে বলে: কাঁদিস না মা। আমি জানি তুই তোর মার কথায় খুব কষ্ট পেয়েছিস আজকে । আমিও অবাক হচ্ছি ওর এই ব্যাবহারে। হ্যাঁ এ কথা ও খুব সত্যি যে তোর মা আর আমার কথা কোনোদিন আলাদা আলাদা হয়নি। কিন্তু তার মানে এই নয় সে ভুল বা অন্যায় বললে ও তার কথার সমর্থন করবো আমি। কিন্তু মা তো হয়তো কোনো অচেনা অজানা কারণে এরকম করছে ও। যা আমাদের কাউকে বলতে পারছে না বা বলতে চাইছে না। তবে কৃষ্ণেন্দু বাবুকে তোর মার যে পছন্দ না সেটা বোঝা যাচ্ছে। তবু আমি বলবো তোর জীবনটা তোর সেখানে একবার সিদ্ধান্ত নেবার অধিকার আমাদের আছে। কিন্তু বার বার নয়। যেটা তুই তোর জীবনের জন্য ঠিক মনে করবি তুই এবার সেটাই কর। আর কেউ না থাক আমি আছি তোর পাশে সবসময় তোর মাকে বোঝানোর দায়িত্ব আমার।

অন্যন্যা বাবার কথার কোনো উত্তর না দিয়ে জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ায় তারপর রাস্তার দিকে মুখ ঘুরিয়ে বলে আমি ও জানি না বুঝতে পারছি না মা এমন কেনো করছে!! তবে মা যদি এটা শুধু মাত্র কৃষ্ণেন্দু বাবুকে অপছন্দ করে বলে করছে তাহলে আমার সত্যি কিছু বলার নেই বাবা। কারণ ওনার সাথে এখনো পর্যন্ত আমার এমন কোনো সম্পর্ক তৈরী হয়নি যার উপর ভিত্তি করে এমন একটা সাংঘাতিক দোষারোপ করা যায়। তবে আমি মানুষটাকে খুব শ্রদ্ধা করি। মানুষটা সত্যি খুব একা বাবা। একটা মানুষকে শুধু তার দেখা বা বয়স দিয়ে বিচার করা যায় বলে আমি মনে করি না বাবা। তাই এতদিন পর্যন্ত সত্যি ভাবতাম কি এমন কারণ যে একটা মানুষকে শুধু কয়েক সেকেন্ডের দেখায় মা এতো অপছন্দ করে। কিন্তু বিশ্বাস করো বাবা আজ থেকে আমার আর জানার কোনো ইচ্ছে নেই কারণটা কি? করো উপকার কোনোদিন ভুলে যেতে নেই সেই শিক্ষা আমি তোমাদেরই কাছ থেকেই পেয়েছি বাবা।

মেয়ের কথা শুনে বিকাশ বাবু আর কোনো কথা না বাড়িয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। শুধু বেরোনোর সময় বলে যায়: জীবনটা তোর মা যাই সিন্ধন্ত নিবি ভালো করে ভেবে নিবি। করো কোথায় বা কারো চাপে পরে তোকে কিছু করতে হবে না। তবে নিজের নেওয়া সিদ্ধান্তের জন্য যাতে কোনোদিন আফসোস করতে না শুধু সেটা খেয়াল রাখিস মা। সারা জীবন তো আমরা পাশে থাকবো না। কথাগুলো বলে অন্যন্যার ঘর থেকে বেরিয়ে আসে বিকাশ বাবু।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *