সমকামি – ঊনবিংশ পর্ব
বাড়িতে ঢুকে একটু ফ্রেশ হয়ে অন্যন্যা তৃনাকে ফোন করে আর বলে স্যাটারডের ছুটিটা ও হয়তো পেয়ে যাবে কোনো সমস্যা হবে না কিন্তু ওদের লাঞ্চ টাইমে বেরিয়ে যেতে হবে। কেনো বেরোতে হবে কি কারণে বেরোতে হবে সবটাই বললো অন্যন্যা তৃনাকে। সব শুনে তৃণা বললো: ওকে ডিয়ার নো প্রব্লেম বেরিয়ে যাবো। অনেকদিন বাদে দুই বান্ধবী একটু একসাথে কাটাবো কতদিন দেখা হয় না। আচ্ছা শোন আমি এখন রাখছি তাহলে স্যাটারডে দেখা হচ্ছে সাবধানে থাকিস। তারপর ফোন কেটে দেয় তৃণা। ওদিকে রিনা দেবী রাতের খাবারের জন্য সবাইকে ডাকতে থাকতে। অন্যন্যা নিজের বিছানা ছেড়ে উঠে খেতে যাবে হঠাৎ কৃষ্ণেন্দুর কথা মনে হলো ওর। ওর বলা কথাগুলো মনে আসতে খুব খারাপ লাগে অন্যন্যার তাই ফোনটা হাতে নিয়ে কিছুটা নিজের অজান্তে কিছুটা অনিচ্ছায় হলে ও একটা টেক্সট করলো:” আজকে আর বেশী ড্রিংক করার দরকার নেই। গিয়ে খেয়ে নাও। আমিও খেতে গেলাম আশা করি আমার কথা রাখবে”। টেক্সটা সেন্ড করে নিজের মনেই অন্যন্যা ভাবতে থাকে কেনো কি কারণে কৃষ্ণেন্দুর প্রতি ও দুর্বল হয়ে পড়ছে ওর কথা ভাবতে না চেয়ে ও নিজের অজান্তে ওর কথাই ভাবছে? এটা কি শুধুই ওর প্রতি কৃজ্ঞতা নাকি ও নিজের অজান্তেই জড়িয়ে পড়ছে? এই সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে তিয়াসা এসে ওকে ডাক দেয়!!! “কি রে দিদিয়া মা এতবার ডাকছে খেতে খুব রেগে যাচ্ছে কিন্তু”। তিয়াসার ডাকে ঘোর ভাঙ্গে অন্যন্যার। তাড়াতাড়ি করে উঠে দাঁড়িয়ে বলে হ্য্যঁ, হ্যাঁ চল আসলে একটা কাজ মনে পড়ে গেলো তাই। তারপর তাড়াতাড়ি খাবার টেবিলে গিয়ে বসলো। সবাই একসাথে খাচ্ছে আর নানান কথাবার্তা চলছে তার মধ্যে বিকাশ বাবু খেয়াল করলো অন্যন্যা যেনো একটু অন্যমনস্ক হয়ে আছে। বিকাশ বাবু মেয়েকে জিজ্ঞাসা করলো: ” কি রে মা, অফিসে কি আবার কোনো সমস্যা হয়েছে তোকে আজ এত অন্যমনস্ক লাগছে কেনো? সবাই কথা বলছে তুই কেমন চুপ করে আছিস। কি হয়েছে রে মা? আমাদের বল দেখবি মন হাল্কা লাগছে। অন্যন্যা হেঁসে উত্তর দেয়: না, না বাবা তেমন কিছু হয়নি। কালকে অফিসের কাজগুলোই মনে মনে ভাবছিলাম। চিন্তার কিছু নেই। তারপর সবাই খেয়ে উঠে যে যার ঘরে চলে গেলো। বেশ কিছুক্ষণ বাদে অন্যন্যা ওর মা বাবার ঘরের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো তারপর আস্তে করে জিজ্ঞাসা করলো: মা, বাবা তোমরা কি ঘুমিয়ে পড়েছো? আমি কি একটু আসবো ভিতরে? রিনা দেবী ভীতর থেকে উত্তর দেয়: দরজার কাছে দাঁড়িয়ে কেনো আছিস ভীতরে আয়। এই ঘরে আসার জন্য তোদের আবার অনুমতির দরকার কবে থেকে পড়লো? বিকাশ বাবু তাড়াতাড়ি মুখের সিগারেটটা ফেলে দেয় উনি মেয়েদের সামনে কখনো সিগারেট খান না। অন্যন্যা ঘরের ভিতরে যায়: মা , বাবা আমার তোমাদের সাথে একটু কথা ছিল। বিকাশ বাবু মেয়েকে বলে: হ্যাঁ, বল না মা কি হয়েছে। অন্যন্যা উকিলের কথা সব বললো। রিনা দেবী অস্থির হয়ে বললো: এই সব ঝামেলায় কি না গেলেই না? আমার খুব ভয় করছে। আমরা খুব সাধারণ ওরা বড়লোক টাকা, ক্ষমতা কোনটারই অভাব নেই ওদের যদি কোনো ক্ষতি করে দেয়, তখন কি করবো আমরা? উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে রিনা দেবী। বিকাশ বাবু রিনা দেবীর হাত টেনে খাটের উপর বসতে বলেন!!! তারপর বলেন: আমি তোমার চিন্তা তোমার কষ্ট সব বুঝতে পারি আমিও তো ওদের বাবা। কিন্তু একটা কথা তো বুঝতে হবে যে আমাদের ভুলের দায় কি মেয়েটা সারাটা জীবন বয়ে বেড়াবে? এটা ছাড়া তো অন্য কোনো পথ নেই এর থেকে বেরিয়ে আসার। ওরা তো মিউচুয়াল করে ব্যাপারটাকে মিটিয়ে নেবে না। ওরা ওদের মিথ্যে অহংকার আর আভিজাত্যকে রক্ষা করার জন্য এতে কোনোদিন রাজি হবে না। তুমি আর অমত কোনো না রিনা। এরপর আরো অনেক বেশী দেরী হয়ে যাবে তাছাড়া যেটা করার সেটা তো করতেই হবে শুধু শুধু দেরী করে কি লাভ? চুপ করে থাকে রিনা দেবী। বিকাশ বাবু অন্যন্যাকে প্রশ্ন করে: তুই কি শনিবার একাই যাবি সেখানে? না তেমন হলে আমি না হয় চলে যেতাম তোর সাথে। অন্যন্যা উত্তর দেয়: না বাবা একা যাবো না তৃণা থাকবে সাথে আর যদি দরকার পড়ে তাহলে আমি তোমাকে ফোন করে ডেকে নেবো। ঠিক আছে বলে মাথা নাড়ায় বিকাশ বাবু। অন্যন্যা মাথা নীচু করে বসে থাকে। রিনা দেবী মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো: যা মা আর এতো চিন্তা করিস না গিয়ে শুয়ে পড় কাল আবার তো বেরোতে হবে। যাই কর আমরা আছি তোর পাশে। অন্যন্যা মাকে জড়িয়ে ধরে বলে জানি তো মা আর সেই জন্যই তো সাহস করে এগিয়ে যেতে পেরেছি। তোমরা ও শুয়ে পড়ো চিন্তা করো না। ঘর থেকে বেরিয়ে আসে অন্যন্যা। রিনা দেবী বিকাশ বাবুর দিকে তাঁকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে জানি না কি আছে কপালে কি ভাবলাম আর কি হয়ে গেলো সব।
অন্যন্যা নিজের ঘরে গিয়ে দরজা দেয়। তারপর ফোন হাতে নিয়ে দেখে কৃষ্ণেন্দু ফোন করেছিলো চারটে মিস কল হয়ে পড়ে আছে। অন্যন্যা ভাবলো এতো রাতে আর ফোন না করাই ভালো কিছু মনে করতে পারেন। অথবা ঘুমিয়ে ও পড়তে পারেন। তাই একটা টেক্সট করলো: ফোন করেছিলে দেখলাম। আসলে বাবা মার সাথে কথা বলছিলাম মা লইয়ারের ব্যাপারটা কিছুই জানতো না ওটা মাকে এবার জানানো খুব দরকার ছিল। ফোনটা আমার ঘরে থাকায় আমি শুনতে পাইনি। কাল অফিসে দেখা হবে। গুড নাইট। টেক্সটা করার সাথে সাথে ফোনটা বেজে ওঠে। অন্যন্যা দেখে কৃষ্ণেন্দু ফোন করছে। ফোনটা ধরে অন্যন্যা। অন্যন্যা ফোন ধরে বলে: এখনও ঘুমওনি? কৃষ্ণেন্দু হেঁসে উত্তর দেয় তুমি ও তো জেগে আছো। অন্যন্যা একটু গম্ভীর হয়ে বলে: হ্যাঁ তোমাকে তো বললাম মা বাবার সাথে কথা বলছিলাম। কৃষ্ণেন্দু এবার বলে: আমি ঠিক নটা নাগাদ চলে যাবো তুমি তৈরী হয়ে বেরিয়ে এসো। অন্যন্যা: না, না কৃষ্ণেন্দু প্লীজ রোজ রোজ এসবের কোনো দরকার নেই। আমি ঠিক সময় অফিসে পৌঁছে যাবো একটুও দেরী হবে না। আমি এখন ফোন রাখছি গুড নাইট। বলে তাড়াতাড়ি ফোন কেটে দেয় অন্যন্যা। কৃষ্ণেন্দু ও আর ঘুরিয়ে ফোন করার সাহস পায়নি এরপর ফোন করলে হয়তো ওকে ভুল ভাববে অন্যন্যা সেই কথা ভেবে।
পরেরদিন একদম সময় মতো অফিসে পৌঁছে যায় অন্যন্যা। হাতের কাজগুলো সেরে নিয়ে শনিবারের মেলটা করে দেয় যাতে ওর ছুটি পেতে কোনো অসুবিধা না হয়। তখন বাজে প্রায় বারোটা। কৃষ্ণেন্দুর কাছে মেইলটা গেলে ও ছুটির অ্যাপ্রুভাল দিয়ে তার রিপ্লাই করে। অন্যন্যা মেল পেয়ে বেশ নিশ্চিন্ত হয়। তারপর হঠাৎ করেই ওর মাথায় আসে আজকে সকাল থেকে কৃষ্ণেন্দু একবার ও ওকে নিজের কেবিনে ডাকে নি। কালকের ব্যাবহারে রাগ হয়েছে হয়তো। কিন্তু এটাই ঠিক আছে এর থেকে বেশী কিছু থাক অন্যন্যা সেটা চায় না। পুরুষ জাতটার প্রতি না চাইতেও একটা ভীষণ অবিশ্বাস কাজ করে ওর। লাঞ্চ টাইমের পর কৃষ্ণেন্দুর দেওয়া ফাইলগুলো হাতে নিয়ে ওর কেবিনে যায় অন্যন্যা।
” স্যার ভীতরে আসবো”? কৃষ্ণেন্দু মাথা তুলে একবার অন্যন্যার দিকে তাঁকিয়ে বলে: হুমম, আসুন। অন্যন্যা ভীতরে গিয়ে স্যার দুটো ফাইল রেডী হয়ে গেছে। সেটাই দিতে এসেছিলাম। কৃষ্ণেন্দু মাথা নীচু করে উত্তর দেয়: ঠিক আছে টেবিলে রেখে যান আমি দেখে নেবো। তারপর আবার নিজের কাজে মন দেয়। অন্যন্যা ও কোনো কথা আর না বাড়িয়ে বেড়িয়ে যায় কেবিন থেকে। কৃষ্ণেন্দু তাঁকিয়ে থাকে অন্যন্যার চলে যাবার দিকে। অফিস ছুটির সময় হলে একদিকে অন্যন্যা অপেক্ষা করে থাকে কৃষ্ণেন্দুর টেক্সট এর অপেক্ষায় অন্যদিকে কৃষ্ণেন্দু অপেক্ষা করে থাকে অন্যন্যার একটা টেক্সট এর অপেক্ষায়, অন্যন্যা হয়তো লিখবে আমি বাস স্ট্যান্ডে অপেক্ষা করে থাকবো। কিন্তু সেদিন আর কারো অপেক্ষাই শেষ হলো না। কৃষ্ণেন্দু দেখলো অন্যন্যা বেরিয়ে গেছে অফিস থেকে। রাগে অভিমানে ও আর বাস স্ট্যান্ডে গেলো না অন্যন্যা সেখানে আছে কিনা দেখতে। দুজনেই দুজনার মতো করে ফিরে গেলো। অন্যন্যা বাড়ি ফিরে ও খুব রাগ হতে থাকলো ওর কৃষ্ণেন্দুর উপর। মনে মনে ভাবতে লাগলো: এতো রাগ এতো অহংকার? আমি কেনো না করলাম সেটা একবার ভেবে দেখারও দরকার মনে করলো না? একবার জানতে ও চাইলো না আমি ঠিক করে পৌঁছলাম কিনা? ঠিক আছে নিতে হবে না। আমি ও আর কিছু লিখবো না কোনোদিন না কোনো দরকারে ও না। সেদিন কেউ করো সাথে কোনো কথা বললো না।
পরের দিন ও অন্যন্যা সময় মতো পৌঁছে যায় অফিসে। তারপর তাড়াতাড়ি করে সব কাজ সেরে ফাইল হাতে যায় কৃষ্ণেন্দুর কেবিনের দিকে। ফাইলগুলো টেবিলের উপর রেখে বলে: স্যার আর একটা ফাইল আমার কাছে আছে। ওটা আমি মানডে দিয়ে দিতে পারবো আশা করি। কৃষ্ণেন্দু একবার তাঁকায় অন্যন্যার দিকে তারপর বলে: ঠিক আছে নো প্রবলেম আপনি আসুন। অন্যন্যা ও আর কথা না বাড়িয়ে বেড়িয়ে আসে কেবিন থেকে। নিজের ডেস্কে এসে তাড়াতাড়ি করে বেরোনোর উদ্যোগ করে। হঠাৎ পিয়ন এসে খবর দেয়: সেন সাহেব আপনাকে ডাকছে ম্যাডাম। খুব বিরক্ত লাগে অন্যন্যার মনে মনে বলতে থাকে এই বাজে লোকটার এখনই আমাকে ডাকতে হলো? তারপর পিয়নকে বললো: ঠিক আছে তুমি যাও আমি যাচ্ছি। তারপর ব্যাগ গুছিয়ে সব ভালো করে লক করে ব্যাগ কাঁধে নিয়েই সেন সাহেবের কেবিনে গেলো অন্যন্যা। ” আসবো স্যার”? নক করে অনুমতি চায় অন্যন্যা। আরে ম্যাডাম যে আসুন আসুন একি ব্যাগ হাতে বেরিয়ে যাচ্ছেন নাকি অফিসে থেকে? চোখ গোল গোল করে প্রশ্ন করে সেন সাহেব। অন্যন্যা উত্তর দেয়: হ্যাঁ, মানে একটু জরুরি কাজ আছে। আমি থ্রাসডে মেল করছিলাম কৃষ্ণেন্দু স্যারকে। উনি আমাকে এপ্রুভাল দিয়েছেন। কৃষ্ণেন্দু? আবার প্রশ্ন করে সেন সাহেব। অন্যন্যা দৃঢ় ভাবে উত্তর দেয়: হ্যাঁ, কারণ উনি আমার রিপোর্টিং বস। আর কোনো কথা বাড়ায় না সেন সাহেব। তারপর বলে: আসলে একটা ইম্পর্ট্যান্ট ফাইল আমি তোমাকেই দিতে চাইছিলাম। অন্যন্যা বলে: স্যার কৃষ্ণেন্দু স্যারের দেয়া অনেকগুলো কাজ অলরেডী আমার হাতে তাই আপনার যদি তাড়া তাহলে একটু সমস্যা আছে। আর না হলে আমি করে দিতে পারবো কোনো সমস্যা হবে না। সেন সাহেব এবার একটু বিরক্ত হয়ে বলে হুমম বুঝতে পেরেছি। আসলে কি অন্যন্যা ম্যাডাম শুধু কৃষ্ণেন্দু স্যারের কাজ করলে তো হবে না অফিসে যেই বস যেই কাজ দিক না কেন সবটাই আপনাকে করতে হবে। অন্যন্যা আবার ও বলে: স্যার কাজ করবো না তো বলিনি। শুধু বললাম একটু দেরী হবে তাতে আপনার কোনো সমস্যা হবে না তো? ঠিক আছে আপনার দেরী হচ্ছে আপনি এখন যান আমি সোমবার দেখছি কি করা যায়? অন্যন্যা মৃদু হেঁসে বেরিয়ে আসে সেন সাহেবের কেবিন থেকে।