Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

সমকামি – সপ্তদশ পর্ব

খেয়ে ঘরে গিয়ে ফোনটা হাতে নিতেই অন্যন্যা দেখলো কৃষ্ণেন্দু ফোন করেছিলো। অন্যন্যা মনে মনে ভাবলো কোনো দরকার ছাড়া এতো রাতে কৃষ্ণেন্দু ফোন তো করবে না অফিসের কোনো ইম্পর্ট্যান্ট কথা বলার ছিল কি? এসব চিন্তা করে ঘুরিয়ে ফোন করে অন্যন্যা। কৃষ্ণেন্দু ফোন তুলে বললো: সরি, ঘুমিয়ে পড়েছিলে মনে হয়। ফোন করে ডিস্টার্ব করলাম। অন্যন্যা ওপাশ থেকে উত্তর দিলো: না না ঘুমাইনি ডিনার করতে গেছিলাম। আসলে রাতে আমরা সবাই একসাথে খাওয়া দাওয়া করি। তাই আমি আসার পর সবাই একসাথে খাচ্ছিলাম আর ফোনে একদম চার্জ না থাকায় ওটা চার্জে ছিল শুনতে পায়নি। কৃষ্ণেন্দু বলে: কতো লাকি তুমি তোমার ঘরের লোক অপেক্ষা করে থাকে আর আমাকে দেখো কাজের দিদি রান্না করে রেখে চলে যায় খেয়েছি কিনা সেটা জানার ও কেউ নেই। বসে থাকা তো দূরের ব্যাপার। মা যতদিন ছিল আমি যতো রাতেই ফিরি মা অপেক্ষা করে থাকতো আমার জন্য।এখন মা ও নেই কেউ খোঁজ নেবার ও নেই। অন্যন্যা আসতে করে জানতে চায়: রাতে কি খাও তুমি? কৃষ্ণেন্দু বলে: আমি? এসে ফ্রেশ গিয়ে একটু ড্রিংক করি তারপর দুটো রুটি সবজি। অন্যন্যা একটু গম্ভীর হয়ে বলে: তুমি ড্রিংক করো? কৃষ্ণেন্দু বলে: হুমম, কি করবো ফাঁকা ঘরটা আমাকে রোজ গিলে খেতে আসে। সারাদিন কাজে ব্যাস্ততায় কেটে যায়। রাতে ঘরে এলে বুঝতে পারি কতো একা আমি। জানতো আগে যখন মা ছিলো সারাদিনের সব কথা মার সাথে এসে শেয়ার করতাম। সবকিছু বেশ ভালোই চলছিলো। হঠাৎ দুদিনের জ্বরে মা চলে গেলো। অনেক চেষ্টা করছিলাম পারিনি। আর এখন ঘরে এলে আমাকে সেই মুহুর্তগুলো তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায় আর সেই জন্যই এই অভ্যেস। যাক এসব কথা তুমি এতো ডিস্টার্ব ছিলে ঠিক মতো খেয়েছো কিনা সেই জন্যই ফোন করলাম। তুমি কিছু মাইন্ড করলে নাতো? অন্যন্যা একটু ইতস্তত হয়ে বললো: এমা না না রাগ কেনো করবো? কৃষ্ণেন্দু বলে: ভালো লাগলো। এবার শুয়ে পড়। কাল সকালে দেখা হচ্ছে।

পরেরদিন খুব ভোর ভোর অন্যন্যাকে ঘুম থেকে উঠতে দেখে বিকাশ বাবু প্রশ্ন করে!!! কিরে, এতো সকাল সকাল উঠলি যে? শরীর কি খারাপ ঘুম আসেনি রাতে? অন্যন্যা বাবার পাশে গিয়ে বসে উত্তর দেয়: না, বাবা আমি আজকে আটটার মধ্যে বেরোবো। খুব ইম্পর্ট্যান্ট একটা ফাইল কমপ্লিট করে আমাকে সেটা দশটার মধ্যে বসের টেবিলে দিতে হবে, একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, কালকে সেটা রেডি করতে গিয়েই ওতো দেরী হয়ে গেছিলো আর তাই এতো ঝামেলা। অন্যন্যার মা দু কাপ চা এনে মেয়ে আর বরের হতে দিয়ে মেয়ের উদ্দেশ্যে বললো: এতো তাড়াতাড়ি বেরোতে হবে বললে আমি আরো আগে উঠে সব রেডি করতাম। এখন কি করে এতো তাড়াতাড়ি সব করবো? আমার তো আবার কারো জন্য কিছু চিন্তা করাও দোষের। অন্যন্যা মাকে জড়িয়ে ধরে বললো: আমাকে ক্ষমা করে দাও মা। আমার ওই ভাবে কথাগুলো বলা ঠিক হয়নি আমি জানি। আমি কালকে খুব চাপে ছিলাম খুব প্রেসার গেছে কাজের আমি মাথা ঠিক রাখতে পারিনি। আমাকে ক্ষমা করে দাও। রিনা দেবী মুখ ঘুরিয়েই বললো: থাক্, আমি গেলাম রান্না ঘরে দেখি কি টিফিন করে দিতে পারি। অন্যন্যা মার হাত দুটো ধরে বললো: এখন তোমার টিফিন করতে হবে না মা আমার দেরী হয়ে যাবে আমার আজকে তাড়াতাড়ি ঢুকতেই হবে অফিসে। আমি ক্যান্টিন থেকে ঠিক কিছু খেয়ে নেব একটা দিনের তো ব্যাপার তুমি আমার এখনের খাবারটা রেডি করো। আমি স্নানটা সেরে আসছি। অন্যন্যা সেদিন একটা সাদা জিন্স আর একটা লাল টপ পড়েছিল চুলটা খোলা ডান হাতে ঘড়ি। খুব সাধারণ সাঁজে অসাধারণ লাগছিল অন্যন্যাকে। ব্রেকফাস্টের টেবিলে তিয়াসা অন্যন্যাকে দেখে বললো: আজকে তোকে ফাটাফাটি লাগছে রে দিদিভাই। আজকে তোকে যে দেখবে প্রেমে পড়ে যাবে বিশ্বাস কর। ইস্, আমি যদি তোর মতো একটু সুন্দর হতাম বাড়িতে ছেলের লাইন লাগিয়ে দিতাম। রিনা দেবী চোখ বড় করে তিয়াসার দিকে তাঁকাতেই তিয়াসা বললো: আরে মা রাগ কেনো করছো? আমি তো দিভাইয়ের মতো সুন্দর না তাই সেই ভয় ও নেই। তিয়াসার কথা শুনে সবাই হেঁসে ওঠে। অন্যন্যা ওর কান মুলে দিয়ে বলে: খুব পাকা হয়ে গেছো? তাই না। আরে লাগছে লাগছে দিভাই। আবার সবাই হেঁসে ওঠে। এরমধ্যেই অন্যন্যার ফোনটা বেজে ওঠে অন্যন্যা দেখলো কৃষ্ণেন্দু ফোন করছে। ফোনটা ধরে অন্যন্যা বললো: দু মিনিট আমি আসছি। বিকাশ বাবু জানতে চায়: কার ফোন রে মা? অন্যন্যা বলতে গিয়ে ভাবলো কৃষ্ণেন্দুর কথা বললে বাবা যদি কিছু ভাবে তাই কথা ঘুরিয়ে বললো: অফিসের বাবা। আমি আসছি। মা আমি আসছি। রিনা দেবী রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে এসে বললো: সাবধানে যাস আর দেরী হলে জানিয়ে দিস অন্তত ফোনটা ধরিস চিন্তায় থাকি। অন্যন্যা হেঁসে উত্তর দেয়: আচ্ছা মা, জানিয়ে দেবো আমি। আসছি তাহলে।

অন্যন্যা গিয়ে গাড়ি বসতেই কৃষ্ণেন্দু হাঁ করে তাঁকিয়ে থাকে অন্যন্যার দিকে। অন্যন্যা একটু লজ্জা পেয়ে বলে: কি হলো? চলো না মানে দেরী হয়ে যাবে তাই আর কি? কোনো উত্তর না দিয়ে গাড়ি স্টার্ট দেয় কৃষ্ণেন্দু। কিছুটা রাস্তা যাওয়ার পর কৃষ্ণেন্দু বলে: আজকে তোমাকে অসাধারণ দেখাচ্ছে। চোখ সরানো যাচ্ছে না। অন্যন্যা তাঁকিয়ে থাকে কৃষ্ণেন্দুর দিকে। কৃষ্ণেন্দু আবার বলে: আমি সত্যি বলছি খুব সুন্দর লাগছে আজ তোমাকে। মৃদু হাঁসে অন্যন্যা। কৃষ্ণেন্দু খুব সুন্দর আর রোমান্টিক গান চালিয়ে দেয় গাড়িতে এই ভাবে কখন যে রাস্তা শেষ হয়ে যায় বুঝতে পরে না ওরা। বাস স্ট্যান্ডের কাছে এসে কৃষ্ণেন্দু বলে : অন্যন্যা তুমি এখানে নেমে যাও। আর আমি একটু বাদে ঢুকছি। আচ্ছা বলে নেমে যায় অন্যন্যা।

অফিসে ঢুকেই কাজে মন দেয় অন্যন্যা। কৃষ্ণেন্দু অফিসে ঢুকে অন্যন্যাকে একটা টেক্সট করে সেন সাহেবের ঘরে যাওয়ার সময় ওকে জানাতে না জানিয়ে যেনো না যায় ও। তারপর সেন সাহেবকে আসতে দেখে অন্যন্যা কৃষ্ণেন্দুকে জানায়। তারপর ফাইল হতে সেন সাহেবের ঘরে যায়। দরজা নক করে জানতে চায়: মে আই কমিং স্যার? সেন সাহেব দরজার দিকে তাঁকিয়ে বলে: ইয়েস ইয়েস কম। অন্যন্যা ভিতরে ঢুকে ফাইলটা টেবিল এর উপর রাখতেই সেখানে কৃষ্ণেন্দু আসে আরো একটা ফাইল হাতে নিয়ে। অন্যন্যাকে দেখে বলে: অন্যন্যা দেখছি গুড এই তো টাইম মতো অফিসে চলে এসেছেন। স্যার যে ফাইলটা আপনাকে দিয়েছিল সেটা রেডী? অন্যন্যা বলে: ইয়েস স্যার রেডী। ভেরি গুড ঠিক আছে আপনি এখন যান। আমার ওনার সাথে ইম্পর্ট্যান্ট কিছু কথা আছে উনি ফাইলটা দেখে নিয়ে আপনাকে জানিয়ে দেবে। আর আপনার ডেস্কের উপর আজকের ফাইলটা রেখে এসেছি ওটা কমপ্লিট করে আমাকে দিন। ওকে স্যার, এই কথা বলে অন্যন্যা সেখান থেকে বেরিয়ে যায়। অন্যন্যা ফাইলটা খুলে দেখলো খুব হাল্কা কাজের একটা ফাইল কৃষ্ণেন্দু ওর ডেস্কের উপর রেখে গেছে যেটা ওর পক্ষে খুব বেশি চাপের না। অন্যন্যা এক কাপ কফি চেয়ে কাজে মন দেয়। প্রায় এক ঘন্টা বাদে পিয়ন এসে বলে: ম্যাডাম আপনাকে সেন সাহেব ডাকছেন। অন্যন্যা কিছু উত্তর না দিয়ে সেন সাহেবের কেবিনের দিকে যায়। দরজা নক করে বলে: মে আই কামিং স্যার? আরে অন্যন্যা আরে তোমাকে বার বার অনুমতি নিতে হবে না। তখন একটা ইম্পর্ট্যান্ট ডিসকাশন এর জন্য তোমাকে বলা হয়নি!!! ইউ আর লুকিং সো বিউটিফুল। অন্যন্যা গম্ভীর হয়ে উত্তর দেয়: থ্যাংস স্যার, আমার কাজটা ঠিকঠাক আছে তো? সেন সাহেব দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে বলে কাজে কোনো সমস্যা নেই একদম পারফেক্ট। বসো না বসো কফি বলি আমাদের জন্য। অন্যন্যা উঠে দাঁড়িয়ে বলে: না স্যার আমি বার বার কফি খাই না। স্যার আপনার কথা শেষ হলে আমি যেতে পারি? আসলে কৃষ্ণেন্দু স্যারের কাজটা শেষ করতে হবে। নাহলে উনি ও আবার বলে থেমে যায় অন্যন্যা। ওকে ওকে তুমি যাও তোমার কাজ শেষ করো। আমাদের কথা আবার পরে হবে এক অফিসে এই তো আছি। অন্যন্যা বেরিয়ে আসে সেন সাহেবের কেবিন থেকে।

দেখতে দেখতে প্রায় লাঞ্চ টাইম হাতের কাজ প্রায় কমপ্লিট অন্যন্যার। তাই টাইম মতো চলে গেলো ক্যান্টিনে। সেখানে বসে খাওয়ার অর্ডার করে ফোন করলো বাড়িতে মার সাথে কিছুক্ষন কথা বলে নিল। তারপর খেতে খেতে ফোন ঘাটছিল অন্যন্যা। হঠাৎ পিয়ালি সেখানে এসে বললো: বসতে পারি তোর টেবিলে? অন্যন্যা পিয়ালির দিকে তাঁকিয়ে বললো টেবিলটা আমার না। না তাও তুই বসে আছিস তাই পারমিশন নিলাম। তুই তো এখন অফিসের মধ্যমণি দুই স্যার যে ভাবে তোর জন্য পাগল হয়ে গেছে তোর উন্নতি আর কে আটকায়? যাই বল দারুন লাগছে তোকে যে কোনো পুরুষ মানুষের মাথা ঘুরে যাবে। অন্যন্যা খুব রেগে গিয়ে চিৎকার করে উত্তর দেয়: মাইন্ড ইউর ল্যাঙ্গুয়েজ পিয়ালি!!!! আমার এরকম উন্নতির দরকার থাকলে আজকে নয় অনেক আগেই সেটা করতে পারতাম আমি। সরি টু সে সবাইকে নিজের মতো করে ভাবা বন্ধ কর। পিয়ালি ও রাগ দেখিয়ে বললো: বলতে কি চাইলি? আমার মত মানে? অন্যন্যা ওর দিকে আঙুল তুলে বললো: আমি কি বলতে চেয়েছি সেটা তুই খুব ভালো বুঝতে পেরেছিস। তোর যদি কোনো কাজের কথা না থাকে তাহলে প্লিজ তুই আমার সাথে কথা বলবি না।

তারপর টেবিল থেকে উঠে যায় অন্যন্যা। পিছন থেকে পিয়ালি বলে: হুমম, কতো দেখলাম এরকম। অন্যন্যা পিছন ফিরে তাঁকাতেই চুপ করে যায় পিয়ালি। ক্যান্টিন থেকে বেরিয়ে আসে অন্যন্যা।
সমীর পুরো ঘটনাটা এতক্ষন দেখছিলো। অন্যন্যা বেরিয়ে আসতে ও বেরিয়ে আসলো ক্যান্টিন থেকে। অন্যন্যা নিজের ডেস্কে সামনে গিয়ে ধপ করে বসে পড়লো চেয়ারে। নিজে নিজে বলে উঠলো উফফ্, মাথাটাই ধরিয়ে দিল আমার। আজকাল একটু হলেই মাথা ধরে যাচ্ছে একটু ও স্ট্রেস নিতে পারছি না আমি। এর মধ্যে সমীর এসে দাঁড়ালো ওর ডেস্কের সামনে। সমীরকে দেখে অন্যন্যা বললো: কিছু বলবি সমীর? সমীর উত্তর দিলো হ্যাঁ অন্যন্যা দি। আজকে তুমি একদম ঠিক কাজ করেছ। বেশকিছু দিন ধরেই দেখছি তোমাকে খুব বিরক্ত করছে আজকে মোক্ষম উত্তর পেয়ে গেছে। তবে তোমাকে ও একটা কথা বলি অন্যন্যা দি। তুমি ঐ সেনের থেকে একটু সাবধানে থেকো লোকটা একদম ভালো লোক না। আমি যাই এখন সবাই এখনই ক্যান্টিন থেকে চলে আসবে।। অন্যন্যা বসে ভাবছিল একটু কফি খাবে মাথাটা খুব ব্যাথা করছে। কফিটা বলতে যাবে এমন সময় ডেস্কের ফোনটা বেজে উঠলো। আবার সেন সাহেব ফোন করেছে ভেবে খুব বিরক্ত হয়ে ফোনটা ধরলো অন্যন্যা। ফোনটা ধরতেই ওপার থেকে কৃষ্ণেন্দু বললো: অন্যন্যা প্লীজ একবার আমার কেবিন আসবেন।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress