সমকামি – ষষ্ঠদশ পর্ব
কিছুটা রাস্তা আসার পর কৃষ্ণেন্দু বলে: অন্যন্যা প্লিজ আমাকে ভুল বুঝো না। আজকে আমার সত্যি কিছু করার ছিল না। ফাইলটা নিয়ে সেন সাহেব এতোটা বাড়াবাড়ি করবে বুজলে আমি আগেই তোমাকে জানিয়ে দিতাম। সরাসরি তোমাকে সাপোর্ট করাটা হয়তো তোমার জন্যই ঠিক হতো না। অন্যন্যা গম্ভীর হয়ে উত্তর দেয়: আমি কাজটা সময় মতো করতে পারিনি আমাকে অপমানিত হতে হয়েছে তার জন্য কোনো এক্সপ্লানেশন আমার করো থেকে দরকার নেই। অন্যন্যা তুমি আবার কেনো ভুল ভাবছো উত্তর দেয় কৃষ্ণেন্দু। আমি বাধ্য হয়েই তোমাকে ওনার সামনে কথাগুলো বলেছি। অন্যন্যা এবার একটু ঘুরে বসে কৃষ্ণেন্দুর দিকে তাঁকিয়ে বলে: ফোনে ওই ভাবে কথাগুলো ও কি বাধ্য হয়েই বলেছিলেন? কৃষ্ণেন্দু বলে: হ্যাঁ একদম তাই। তুমি বিশ্বাস করো আমি যখন তোমাকে ফোনটা করি সেন সাহেব তখন ও আমার কেবিনেই ছিল। উনি সাধারণত তোমার আসার পরেই অফিসে ঢোকেন কিন্তু আজ তুমি এত লেট করলে যে আমার হাতে আর কিছুই ছিল না। কিন্তু আমি এটা সত্যি বুজলাম না ফাইলটা নিয়ে এতটা বাড়াবাড়ি উনি কেনো করলেন? জানি না এর পিছনে অন্য করো কোনো ষড়যন্ত্র আছে কিনা? আমি তোমাকে প্রোটেক্ট করার চেষ্টা করিনি তা নয় কিন্তু আমার কোনো কথা উনি বুঝতেই রাজি ছিলেন না। অন্যন্যা কথাগুলো চুপ করে শুনছিল কোনো উত্তর দিলো না। কৃষ্ণেন্দু আবার বললো এখনও কি আমার উপর রেগে থাকবে? আই অ্যাম সরি অন্যন্যা প্লিজ। আচ্ছা আজকের ফাইলটা কমপ্লিট? নাহলে আবার!!!!! অন্যন্যা এবার মৌনতা ভেঙ্গে উত্তর দেয়: হুমম, ফিনিশিং টাচটা বাকি। আশা করি এটা নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। কৃষ্ণেন্দু বলে: গুড। তোমাকে একটা কথা বলা দরকার। তুমি তোমার সিস্টেমটা পাসওয়ার্ড দিয়ে লক করে দাও তো? আর তোমার ড্রয়ার ওটা লক করা থাকে তো? অন্যন্যা বিস্ময় নিয়ে জিজ্ঞাসা করে হঠাৎ এই প্রশ্ন? কারণ আছে তুমি বলো না উত্তর দেয় কৃষ্ণেন্দু। অন্যন্যা বলে আগে দিতাম না কিন্তু আজকে কি মনে হয়েছে জানি না এই দুটোই আমি করে এসেছি চাবিটা ও নিয়ে এসেছি। পিয়ালির অ্যাটিটিউড ভালো লাগছে না আমার। আর সেই কারণেই। কৃষ্ণেন্দু হেঁসে বলে গুড জব। যাক্, তোমাকে যতোটা বোকা ভাবছিলাম তুমি ততোটা বোকা নও। অন্যন্যা রেগে উত্তর দেয়: কি আমি বোকা? কৃষ্ণেন্দু আরো হেঁসে বলে বোকা নও? কিছু না বুঝেই আমার উপর রেগে গেলে। বাব্বা, কি রাগ একটা ম্যাসেজের উত্তর নেই দেখতে পারছি সিন হচ্ছে কিন্তু নো রিপ্লাই। শুধু ভাবছিলাম কখন বেরোব অফিস থেকে আর ম্যাডামের রাগ ভাঙ্গাবো? অন্যন্যা ব্যাঙ্গের সুরে বলে: কেনো আমার রাগ ভাঙ্গানোর কি আছে। আর তাছাড়া আমি রেগে থাকি আর যাই থাকি তাতে আপনার কি ক্ষতি হতো? আপনি আমাকে নামিয়ে দিন আমি এখান থেকে ক্যাব নিয়ে নিচ্ছি। কৃষ্ণেন্দু এবার জোরে হেঁসে উঠলো: রাগ এখনও ভাঙ্গেনি এখনও আপনি ডাকছো হুমম আজ রাতটা সময় লাগবে দেখছি রাগ ভাঙ্গতে। অন্যন্যা গম্ভীর হয়ে থাকে। এবার কৃষ্ণেন্দু একটু সিরিয়াস হয়ে বলে আচ্ছা শোনো কাজের কথা বলি কাল সকালে ঠিক সাড়ে আটটায় আমি তোমার বাড়ির কাছে ওই জায়গাটাই ওয়েট করবো তুমি চলে আসবে দেরী করবে না। অন্যন্যা কিছু বলতে যাবে তার আগে কৃষ্ণেন্দু থামিয়ে দিয়ে বললো: প্লিজ যেটা বলি সেটা শোনো কালকে ও কিন্তু তোমাকে হেনস্থা করতে সেন সাহেব সময়ের আগেই অফিসে ঢুকবেন। উনি চাইবেন তুমি ফাইলটা যাতে ওনার আসার আগে ওনার টেবিলে দিতে না পারো। তুমি তাড়াতাড়ি ঢুকে ফিনিশিং টাচটা দিয়ে উনি ঢোকার পর ওনার সামনে দিয়ে আসবে। আজকের ঘটনাটার জন্য আমি নিজে ও তৈরী ছিলাম না। কিন্তু কালকের ব্যাপারটা নিয়ে আমি তোমাকে পিছন থেকে হেপ্ল করতেই পারি। অন্যন্যা আর কোনো উত্তর দেয় না।
এদিকে অন্যন্যার ফোনটা ভাইব্রেট করছে দেখে কৃষ্ণেন্দু বললো: আমার উপর রাগে ফোনটা ও সাইলেন্ট করে রেখেছ। তোমার ফোনটা অনেকক্ষণ থেকে ভাইব্রেট করছে হয়তো তোমার বাড়ি থেকে ফোন করছে ফোনটা ধরো। অন্যন্যা ফোন হাতে নিয়ে দেখে প্রায় আট থেকে দশটা ফোন ওর বাড়ি থেকে। ও সাথে সাথে ঘুরিয়ে ফোন করে অন্যন্যার বাবা ফোনটা তোলে। অন্যন্যা!! বাবা আমি অন্যন্যা বলছি। উৎকন্ঠিত হয়ে ওর বাবা জানতে চায়: তুই কোথায়, এতক্ষন ফোন কেনো ধরছিলি না? তুই জানিস আমরা বাড়িতে সবাই কতো দুশ্চিন্তা করছিলাম। বাবা আই অ্যাম সো সরি। ফোনটা সাইলেন্ট হয়ে গেছিলো আমি বুঝতে পারিনি। আমি চলে এসেছি তোমরা চিন্তা করো না। আমি এসে সব বলছি। ফোনটা কেটে দেয় অন্যন্যা। কৃষ্ণেন্দু ওর দিকে তাঁকিয়ে বলে: আমার জন্য আজকে তোমার বাড়ির লোক এতো চিন্তায় পড়ে গেছিলো? অন্যন্যা প্রশ্ন করে আপনার না মানে তোমার জন্য? বুজলাম না। যাক্, রাগ তাহলে একটু একটু ভাঙছে। হ্যাঁ, তা আমার জন্য না? আমার উপর রাগ করেই তো ফোনটা সাইলেন্ট করে দিয়েছিলে। সে তুমি যতো খুশি রাগ করো কিন্তু কালকে কিন্তু দেরী করা যাবে না। আমি ঠিক সময় মতো এসে অপেক্ষা করবো। আর ওই বাস স্ট্যান্ডে কাছে তোমায় নামিয়ে দেবো ওই টুকু কষ্ট করে চলে যেও তুমি। অন্যন্যা চুপ করে তাঁকিয়ে ছিল কৃষ্ণেন্দুর দিকে। কৃষ্ণেন্দু প্রশ্ন করে: কি হলো ওমন হাঁ করে তাঁকিয়ে রইল যে ? কিছু বলবে? অন্যন্যা মাথা নাড়িয়ে বললো না, কিছু না। কৃষ্ণেন্দু হেঁসে বললো: বুজলাম। এসে গেছি আমরা তুমি এসো বাড়িতে সবাই চিন্তা করছে। অন্যন্যা গাড়িতে থেকে নামবে এমন সময় কৃষ্ণেন্দু বললো: সরি, আজকের জন্য। অন্যন্যা বললো আমিও সরি। আসি। বলে এগিয়ে যায় অন্যন্যা। কৃষ্ণেন্দু তাঁকিয়ে থাকে অন্যন্যা যাওয়ার দিকে।
বাড়ির বেল বাজতেই তিয়াসা ছুটে এসে দরজা খোলে। তিয়াসাকে দেখে অন্যন্যা প্রশ্ন করে: কিরে তুই দরজা খুললি যে? মা বা বাবাই তো খোলে রোজ। দিভাই মা খুব রেগে আছে তোর জন্য টেনশনে বাবা একটু অসুস্থবোধ করছিল তোর ফোনটা আসার পরেই ঘরে গিয়ে শুয়েছে। অন্যন্যা কিছু উত্তর করলো না শুধু তিয়াসার মুখের দিকে তাঁকালো। তিয়াসা আবার বললো: দিভাই মা মনে হয় তোর অফিস যাওয়াই বন্ধ করে দেবে এতো রেগে যেতে কখনো দেখিনি মাকে। অন্যন্যা বললো হুমম, চল এখন ঘরে ঢুকি। অন্যন্যা ভিতরে ঢুকে নিজের ঘরের দিকে যেতে গেলে রিনা দেবী পিছন থেকে বলে: দাঁড়া, কোথাও যাবি না এখন কথা আছে তোর সাথে। অন্যন্যা কিছু বলতে যাবে রিনা দেবী থামিয়ে দিয়ে আবার বলতে শুরু করলো!!! স্বাধীনতা দিয়েছি মানে এই নয় যে সময় জ্ঞান থাকবে না। রাত দশটা বাজে। একটা ফোন করলে ফোনে পাওয়া যায় না। বাড়ির লোকগুলো ও যে চিন্তা করে সে কথা ভেবে দেখার কোনো প্রয়োজন তোমার থাকতে নাই পারে কিন্তু আরো একটা মেয়ে ঘরে আছে সে ও এগুলোই শিখছে এটা আমি হতে দিতে পারি না। অন্যন্যা আবার শান্ত গলায় বলে: মা প্লিজ আগে তুমি আমার সব কথা শোনো তারপর বলো আমি সব মেনে নেবো কিন্তু আমার কথাটা ও তো শোনো আগে। রিনা দেবী এবার চেঁচিয়ে বলে ওঠে: তোমার কোনো কথা আর শোনার নেই। আমি বলে দিয়েছি তোমার আর অফিস যাওয়া হবে না করতে হবে না কোনো চাকরি আজকের পর ঘর থেকে বেরোনো বন্ধ তোমার। কথাগুলো শুনে অন্যন্যা ও মাথা ঠিক রাখতে পারেনি।
সারাদিনের কাজের প্রেসারে ঠিক মতো খাওয়া ও হয়নি ওর কোনো রকমে লাঞ্চ সেরেছিল। তারপর অফিসের সব ঘটনায় খুব আপসেট হয়েছিল অন্যন্যা। আজকে সেন সাহেব যা করেছে এর আগে অন্যন্যার সাথে এমনটা কেউ করেনি করার দরকার ও পড়েনি। কিন্তু আজ!!!! তারপর ঘরে ঢুকতেই মার ওমন কথা অন্যন্যা আর মাথা ঠিক রাখতে পারেনি। অন্যন্যা বলে: আমি কি এমন করছি যাতে বনু খারাপ হয়ে যেতে পারে? কিসের ভয়ে আমি ঘর বন্দি হয়ে থাকবো? আমার দোষটা কোথায়? বিয়েটা কি আমি নিজে করছিলাম!!! যখন বলেছিলাম এতো বড়লোক ঘরে সম্মন্ধ করো না শুনেছিলে আমার কথা? আর এখন আমি সব ছেড়ে ঘরে বসে থাকবো? কেনো মা? তাহলে তোমরা সবাই তাই করবে কারণ ভুল আমার না তোমাদের ছিল। আরে অফিসে কাজের চাপে খেয়াল করিনি আমি ফোনটা সাইলেন্ট হয়ে গেছিল আমি বুঝতে পারিনি। শোনো মা চাকরি আমি করবোই দরকার হলে এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়ে করবো। তোমাদের ভুলের খেসারত আমি এই দিতে পারবো না দেবো না। তোমার কাছে ক্লিয়ার মা? পাগল হয়ে যাচ্ছি আমি সারাক্ষন। আমি কোনো বাচ্চা মেয়ে নই যে এখনও সবকিছু তোমরা ঠিক করে দেবে এবার থেকে আমি ঠিক করবো আমি কি করবো। রিনা দেবী আর কিছু বলতে পারলেন না চুপ করে অন্যন্যার দিকে তাঁকিয়ে থাকলেন। অন্যন্যা ও আর কথা না বাড়িয়ে নিজের ঘরে চলে গেলো।
ভীষন ক্লান্ত লাগতে থাকে অন্যন্যার। সোজা ওয়াশরুমে চলে যায় ও তারপর সাওয়ার চালিয়ে তার নীচে দাঁড়িয়ে থাকে। এই ভাবে কতক্ষন দাঁড়ানো অন্যন্যার নিজের ও খেয়াল নেই। হঠাৎ অন্যন্যার কানে আসে তিয়াসা ওকে ডাকছে দিভাই কিরে তোর হয়নি এখনো? খাবার টেবিলে সবাই তোর অপেক্ষা করছে। বেরিয়ে এসে অন্যন্যা বলে: তোরা খেয়েনে ক্ষিদে নেই আজকে আমার। খুব টায়ার্ড লাগছে। দিভাই!! প্লিজ তিয়াসা তুই যা খেয়ে নে। তিয়াসা আর কথা না বাড়িয়ে চলে যায় সেখান থেকে। অন্যন্যা ধপ করে বসে পড়ে খাটের ওপর সত্যি খুব ক্লান্ত লাগছে ওর। মনে মনে ভাবতে থাকে কালকে টাইম মতো রেডি হতে হবে। কৃষ্ণেন্দু এসে দাঁড়িয়ে থাকবে। এসব ভাবতে ভাবতেই বিকাশ বাবু ঘরে এসে ঢোকে!! আসবো অনু? ঘোর ভাঙ্গে অন্যন্যার। বাবা তুমি? এভাবে জিজ্ঞাসা কেনো করছো? এসো না এসো। ভিতরে ঢোকে বিকাশ বাবু। তারপর মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে: খুব ক্লান্ত লাগছে তোকে আজ। খুব কাজের চাপ ছিল তাই না? তাই রাগ হয়ে গেছে আজ মার কথায়!!! আসলে খুব ভয়ে আর চিন্তায় থাকে সেই জন্যই জানি ভুলটা আমাদের সত্যি তো এতে তোর কোনো দোষ নেই রে মা!!! বাবা প্লিজ আমি কথাগুলো রাগের মাথায় বলে ফেলেছি বিশ্বাস করো এগুলো আমার মনের কথা নয়। মা কোনো কথাই শুনছিল না। আমি বুঝতে পারছি মা উত্তর দেয় বিকাশ বাবু। কিন্তু মার উপর রাগ করে না খেয়ে শুয়ে থাকলে শরীর খারাপ করবে না? তাছাড়া তোর মা ও কি খেতে পারবে মা বল? সন্ধ্যার পর থেকে কি দুশ্চিন্তায় ছিল সেটা আমি আর তোর বোন দেখেছি। তুই আর রাগ করে থাকিস না চল খেয়ে নিবি চল। আর কথা না বাড়িয়ে বাবার সাথে খেতে চলে গেলো অন্যন্যা।