Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » সবুজ প্রেম || Rana Chatterjee

সবুজ প্রেম || Rana Chatterjee

সবুজ প্রেম

“…ও দাদু জানো,আজও ওই পাগলটা বাগানের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে! প্রায় দিন বেড়ার কাছ ঘেঁষে গাছ গুলোকে হাত বুলিয়ে এমন আদর করবে সত্যি ওটা একটা মস্ত পাগল”!বলতে গিয়ে ফিক করে হেসে ফেললো নাতি ভোম্বল।
খুব মন দিয়ে গাছের শুকনো পাতা গুলো কাঁচিতে কাটছিলেন এ তল্লাটে গাছ দাদু নামে পরিচিত বটুক বাবু। ঘাড় তুলে শাসন করার ভঙ্গিতে “ও আবার কি কথা,পাগল বলে কাউকে ডাকতে আছে নাকি, কাকু বলতে হয় না”-ধমকে ওঠেন।
“সে যাক গে,এদিকে চারাগাছ গুলো বিক্রির জন্য তৈরি করে রেখেছি, অল্প করে জল দিও কেমন দাদুভাই।”

গ্রামের একপ্রান্তে যে ডিংলা খাল বয়ে চলেছে,সেখানে গাছ পাগল বটুক বাবু বয়সের শেষে এসে মনের মত ছোট্ট চারাগাছের নার্সারি করেছেন।এমনিতেই জায়গাটা ছিল গাছপালা জঙ্গল পরিপূর্ণ।প্রতিবছর কতরকমের পরিযায়ী পাখিদের আগমনে আরও সুন্দর হয় ওদিকটা ।সেখানে যেটুকু চাষের জমি ছিল অর্ধেক অংশে ধান চাষ আর বাকিটায়  মনের মতো  বাগান বানানোর স্বপ্নে বিভোর হলেন বয়স্ক মানুষটি।এভাবেই দিব্যি কাটে তার অবসর জীবন। কয়েক বছরেই অক্লান্ত পরিশ্রমে গাছের চারা,বীজ সহ নানান ফলের গাছ,উন্নত প্রজাতির ফুল, দামি গাছপালাতে সমৃদ্ধ হয়ে উঠছে বটুক বাবুর সাধের বাগান।

একমাত্র কন্যাসন্তান চামেলীকে একটা ভালো সম্বন্ধ পেয়ে শহরে ভালো ঘরে বিয়ে দিয়েছিলেন কিন্তু দুর্ভাগ্য এমন ভাবে আছড়ে পড়বে কে ভেবেছিলো! ফুসফুসে চরম শ্বাসকষ্ট নিয়ে মেয়েটা নাজেহাল হলে বাঁচাতে পারেনি ডাক্তাররা। কলকাতা সহ বড়ো শহর গুলোতে যেভাবে পাল্লা দিয়ে দূষণ বাড়ছে আর রোগের আক্রমন, ভেবে কষ্ট হয় অকালে কন্যা হারানো বাবার।না জানি আগামীতে কি যে ভয়ংকর দিন আসছে যেখানে সামান্য অক্সিজেনের চরম আকালে সকলকে পিঠে না অক্সিজেন সিলিন্ডার বেঁধে ঘুরতে হয়!কষ্ট ভুলতে আরও বেশি বেশি গাছ নিয়ে বাঁচার ও আগামী প্রজন্মকে বাঁচানোর তাগিদ অনুভব করেন এই সকলের পরিচিত গাছ দাদু।

বছর ঘুরতে না ঘুরতেই শোককে বিদায় জানিয়ে জামাই নতুন বউ ঘরে তুললে বটুক বাবু সাধের নাতি ভোম্বলকে  নিজের কাছে গ্রামে নিয়ে আসেন ।থাকতে হবে না ওখানে,যেখানে অস্তিত্ব সংকট,যে পরিবেশ একমাত্র কন্যাকে শেষ করেছে কিভাবে বাঁচবে ছোট চারা গাছ শিশু নাতি!তখন থেকেই দাদুর আদরের নাতি ভোম্বল দাদুর সহকারি।

“ও দাদু  তুমি রাগ করছো আমার কথাতে কিন্তু কাকুটা সত্যি পাগল বুঝলে ! তুমি যখন গাছের যত্ন নাও হাঁ করে তাকিয়ে থাকে”।একদিন দাদুর আদেশে ভোম্বল ওকে ডাকতেই রীতিমতো ভয়ে দৌড়ে পা চালিয়ে লোকটা গায়েব!একদিন আড়াল থেকে খপ করে ওকে ধরে বটুক বাবু ঘাবড়ে দেন। কাঁচুমাচু হয়ে কেঁদে ফেলতেই ওকে থামিয়ে, দুটো ফলের গাছ দিতেই খুব খুশি সে। এরপরেও মাঝেমাঝে আসতো,দাদুর গাছ উপহার পেলে চোখ গুলো খুশিতে জ্বলজ্বল করত।কতবার ওকে বটুকবাবু বলেছে এখানে আমার সঙ্গে থেকে গাছেদের বড়ো করো,ওদের বন্ধু বানাও কিন্তু সে কি বুঝেছে কে জানে! ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আবার চলেও গেছে।এইভাবেই খেয়াল খুশি মতো আসে,বসে কখনো গাছ পেলে খুশিতে ডগমগ হয়,এভাবেই চলছিল।

“ও মা আমাদের ক্ষ্যাপার কান্ড দেখেছো এক এক করে গাছ কোথা থেকে আনছে আর পুরো উঠোন জুড়ে ইতিমধ্যে কত ফলের গাছ লাগিয়েছে”! মা মঞ্জুদেবী জানেন তার পাগল,বোবা ছেলেটার গাছের প্রতি ভালোবাসা আজ নতুন নয়।ছোট বয়েসে বাচ্চারা যখন কত কি খেলাধূলা করতো মায়ের কোলের ক্ষ্যাপা তখন থেকেই কোনো গাছ দেখলেই তাদের যত্নে লেগে পড়তো। বড়ো হওয়ার সাথে সাথে তার গাছের প্রতি টান ক্রমশ বাড়তেই থাকে।প্রতিবছর বিডিও অফিস থেকে কত যে গাছ এনে গ্রামের রাস্তার ধারে ধারে লাগিয়েছে বেচারা বোবা ছেলেটা! কোনো গাছ যদি কোনো কারণে শুকিয়ে বা মরে যেতো,দুঃখে বড্ড বেসামাল হয়ে পড়তো সকলের পরিচিত ক্ষ্যাপা। পরপর তিন বছর সবুজে ঘেরা এই গ্রাম”নির্মল – সবুজায়ন পুরস্কার” জিতেছে যার পেছনে এই ক্ষ্যাপার  যে কি বিশাল কৃতিত্ব তা মোটামুটি সবাই জানে।

কয়েক বছর হল গাছ দাদু মারা গেছেন।খাল সম্প্রসারণ হওয়ায় তার সাধের বাগানে কোপ পড়ায় সেটাও নেই। নাতি বিয়ে করে এখানে তবু অভাবে ধুঁকছে তার পরিবার! একমাত্র সম্বল ও ভরসা ছিল দাদু দিদা সহ আয়ের উৎস নার্সারি, সেটাও নেই! মা মরা ছেলেটার হতশ্রী দশা আজকাল! কোনরকমে ভিক্ষাবৃত্তি করে দিন কাটায়।রাস্তায় ক্ষ্যাপা সেদিনের ছোট্ট ভোম্বলকে দেখে ঠিক চিনতে পেরেছে !ওর দুর্ভাগ্য দেখে চোখ ভিজে যায় ক্ষ্যাপার! গাছ দাদুর দেওয়া গাছ গুলো এখনো ফলন সহ আলো করে আছে তাদের উঠান। হাতে নেড়ে বোবা ইশারায় দাঁড় করিয়ে ভিখারি ভোম্বলকে একটা ব্যাগ ধরিয়ে দিলো ক্ষ্যাপা।স্বার্থপর দুনিয়ায় যেখানে কেউ কাউকে দেখে না,দুর্দশা দেখলে এড়িয়ে চলে সেখানে পাকা আম, কাঁঠাল, পেয়ারা ভর্তি ব্যাগ পেয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে ভোম্বল! ক্ষ্যাপাও তার নিষ্পাপ চাহনিতে  বুঝিয়ে দিলো মানুষ তো নিমিত্ত মাত্র,গাছই হলো সেরা প্রকৃত বন্ধু,
মানবিকতার সেরা বন্ধন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *