পর্ব – ২
একদিন রীতা চ্যাটে টুটুলকে বলে সে এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করবে না। আগে জীবনটাকে চুটিয়ে উপভোগ করবে, তারপর ভাববে, সে বাপী ,মা,ড্যাডি,মামনির বাধ্য সন্তান, এমন কিছু করবে না যা ওদের মান সম্মান নষ্ট করার জন্য যথেষ্ট। মরে গেলেও প্রেম করবে না। টুটুল শোনে আর হুম – হাম – আচ্ছা – বুঝলাম লিখে পাঠায়। আরও একদিন রীতা বলে , টুটুল যেন তার স্বপ্ন না দেখে মিতাকে কনভিন্স করে। কারণ রীতা খবর পেয়েছে মিতা যে ছেলেটার সঙ্গে ঘোরে সে অত্যন্ত খারাপ চরিত্রের, মিতাকে ছেলেটা কোনদিনই বিয়ে করবে না। মিতা সহজ সরল একটা মিষ্টি মেয়ে তার ওপর টুটুলদের পাড়াতেই থাকে তাই টুটুল যেন মিতাকে বোঝায়। মিতা ঐ ছেলেটার বিশ্বাসঘাতকতা সহ্য করতে পারবে না। আবেগের বশে খারাপ কিছু না করে বসে। রীতা টুটুলকে মিনতি জানায় বাস্তববাদী হয়ে চলে মিতাকে যেন বাঁচায়। টুটুল সাফ সাফ জানিয়ে দেয় তার পক্ষে আর মিতার কাছে যাওয়া সম্ভব নয়। তার ঈপ্সিত চরিত্র ছাড়া সে আর অন্য কোনও চরিত্রের জন্য দৌড়বে না। তাকে পেলে ভালো, না পেলে সে অবিবাহিত হয়েই বাকি জীবন কাটিয়ে দেবে, এমন অনেকেই আছে যারা বিয়ে করে নি। হতাশার সুরে রীতা বলে টুটুলের সে চরিত্র যে কাল্পনিক, টুটুল তো তাকে কোনদিনই পাবে না। বুকভরা ব্যথা নিয়ে টুটুল হাসতে হাসতে বলে – ” জানি পাবো না , আমার দরকার ঐ সবুজ আলোটা, যা তোমার ভাষায় কোনদিনই নিভবে না, ওটাকে নিয়েই কাটাবো বাকি জীবন”। রীতা টুটুলকে বোঝাতে ব্যর্থ হয়। যদিও টুটুল একটা ক্ষীণ আশা বুকে জমা করে রেখেছে , যদি রীতা মত পরিবর্তন করে !
দত্ত সাহেব একদিন টুটুলকে ডেকে বললেন যে রীতা কয়েকদিন ছুটি নিয়েছে, টুটুল যেন ওর জন্য ফাইল না ফেলে রাখে , সব কাজ তাকেই করতে হবে যতদিন না রীতা জয়েন করে ছুটি কাটিয়ে। রাশভারী দত্ত সাহেবের কথা অমান্য করার ক্ষমতা টুটুলের নেই, নীরবে ঘাড় নাড়ে। যদিও কথাটা শুনে বুকটা ছ্যাঁৎ করে ওঠে , তবে কি রীতার বিয়ে ! রাতে চ্যাটে চ্যাটবক্সে টুটুল রীতার উদ্দেশ্যে লেখে – ‘ অভিনন্দন, নিমন্ত্রণ করবে তো’। রাত পেরিয়ে সকাল হলো, মেসেজটা আনসিন থাকলো। যা এর আগে কখনোই হয়নি।
একদিন – দু’দিন – এক সপ্তাহ – এক মাস, রীতা নিরুদ্দেশ। না অফিসে আসে না চ্যাটবক্সে। টুটুলের শেষ মেসেজটা ঐ আনসিন হয়েই আছে অথচ সবুজ আলো দিব্যি জ্বলছে। রীতার খবর পেতে টুটুল উঠেপড়ে লাগলো। দত্ত সাহেবকে জিজ্ঞেস করার সাহস নেই, তাই একদিন অফিস ছুটির পরে চিফ ম্যানেজার মিত্র দা’কে ধরলো টুটুল। বলল রীতার অবর্তমানে দু’জনের কাজ একা করে তার ঘাড় বেঁকে যাচ্ছে, রীতা কবে জয়েন করবে ! উত্তরে মিত্র দা বললেন তিনি কিছুই জানেন না , রীতা ছুটির দরখাস্তে অনুরোধ করেছিল বেতনহীন অনির্দিষ্ট সময়ের ছুটি মঞ্জুর যেন করা হয়। উনি দত্ত সাহেবকে দেখাতে জবাব পেয়েছিলেন মাইনে নেবে না বলেছে যখন ছুটি অ্যালাও করুন। তাছাড়া মালিকের শালীর মেয়ে, মিত্রর ঘাড়ে একটাই মাথা ছুটি দিতেই হতো। বিয়ে হচ্ছে বা হয়েছে কি না , টুটুলের এই প্রশ্নের জবাবে উনি তীব্র প্রতিবাদ করে বলেছিলেন – বিয়ে হলে গোটা অফিস নিমন্ত্রণ পাবে। ” তাহলে, এতদিন ছুটি, কি হতে পারে মিত্র দা “? টুটুল জানতে চায়। ওনার সোজা সাপটা উত্তর, বড়লোকদের ব্যাপার উনি নাক গলাতে রাজি ন’ন। হতাশ টুটুল বাকি ফেরার বাস ধরতে এগিয়ে যায়। তিনমাস কেটে গেল , রীতার খবর নেই। টুটুলের মেসেজ আনসিন , সবুজ আলো জ্বলছে , অফিসের আসছে না রীতা। টুটুল ধীরে ধীরে মনের অস্থিরতা কমাবার চেষ্টা করে। একদিন দত্ত সাহেবকে ফাইল দিতে গিয়ে দেখে উদ্বিগ্ন মুখে এবং গলায় মোবাইলে কথা বলছেন। টুটুলকে দেখে ইশারায় ফাইল টেবিলে রাখতে বলে বরাভয় মুদ্রা দেখান , মানে উনি পরে দেখবেন। টুটুল ওনার চেম্বার থেকে বেরিয়ে আসে। হপ্তা খানেক বাদে দত্ত সাহেব অফিসে অনিয়মিত ভাবে আসা যাওয়া শুরু করলেন। ফাইল জমতে শুরু করলো ওনার টেবিলে। দিন যায়, টুটুলের দৈনিক কাজের কোন পরিবর্তন হয় না। অফিসের পর বাড়ি , ফেসবুক, চ্যাটবক্স, সবুজ আলো, আনসিন মেসেজ দেখে দিন কাটায়।
একরাতে মায়ের ধুম জ্বর এলো। প্যারাসিটামল ট্যাবলেট খাইয়ে, মাথা ধুইয়ে দিয়ে কোনও রকমে রাত কাবার করে সকালেই মিত্র দা’কে ফোনে সব বলে ছুটি নিল টুটুল। ডাক্তার , বদ্যি , এই টেস্ট , ওই টেস্ট কেটে গেল তিন চার দিন। হোটেল থেকে খাবার এনে মা ব্যাটায় খায়। একদিন সাহস করে মিতার বাড়ি গিয়ে অনুরোধ করলো সে যেন টুটুলের অবস্থাটা দত্ত সাহেবকে বুঝিয়ে বলে। উত্তরে মিতা জানালো কোন এক পারিবারিক কাজে দত্ত সাহেব ব্যস্ত, কখন আসেন বা আদৌ আসবেন কি না বা কতক্ষণ অফিসে থাকবেন কেউ জানে না। তবে মিতা চেষ্টা করবে সুযোগ পেলেই বলে রাখবে। পাঁচদিন মাথায় টুটুল দেখলো মা অনেকটাই ঠিক আছে, অফিস যাবে ঠিক করলো। সব গুছিয়ে রেখে মা’কে বুঝিয়ে দিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হলো। সকাল ন’টার বাস পেল না টুটুল , পরের বাস আধঘন্টা পরে। ট্র্যাফিক জ্যাম কাটিয়ে টুটুল অফিসে এলো বারোটা নাগাদ।