সংসার সুখের হয় রমনীর গুণে
সোমালির তিলে তিলে গড়া সংসারে হঠাৎ কালবৈশাখী ঝড়।সারাদিন সংসার সামলিয়ে একঘেয়েমি জীবন হয়ে গেছিল সোমার।
সোমালি আর রজতাভর মধ্যে সামান্য কথা থেকে কথা কাটাকাটি হতে হতে দুজনেরই মুখ থেকে অবান্তর ,আজেবাজে কথা বেরিয়ে আসে।
সোমালির স্বামী কোলকাতায় একটা এন -জি- ও -র সিনিয়র অ্যাকাউন্ট অফিসার।
ওদের কুড়িবছরের সংসার…মধ্যবিত্ত পরিবার…. ছেলে_ মেয়ে কলকাতার নামী ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ে…..প্রচুর খরচ…. বেশিরভাগ সময়ই মাসের শেষটাএকটু ভেবেচিন্তে চালাতে হয়।
সোমালি বেশ মানিয়ে গুছিয়ে নিয়েছে।
বাচ্চারা ক্রমশঃ উচু ক্লাসে উঠছে…খরচ ও বাড়ছে।
সোমালির বর জামাইবাবুদের মত বড়লোক না হলেও… কর্মঠ মানুষ…
শানু আর বুবি, ওদের ছেলেমেয়ে… ওরা বাবা -মায়ের ঝগড়া শুনে কিছুটা অবাক!
বাবাতো খুব ঠাণ্ডা মানুষ ..তারা এমন চিৎকার কখনো শোনেনি।
মা সবসময় বাবার প্রতি অনুভূতি
পরায়ন…সংসারের জন্য খাটুনিটুকু… মা তার সংবেদনশীল মন নিয়েই দেখতো…. আজ দুজনের বাক্যবাণে দুজনই জর্জরিত হয়….হয়তো সাময়িক রাগের মাথায় বলা… তবুও ভীষণ মুষড়ে যায়। ওরাও জানে প্রাচুর্য না থাক, ওদের সংসারে আনন্দ আছে, সুখ আছে, আছে পরস্পরের প্রতি সম্মানবোধ।
সোমালি বাপের বাড়িতে বোনদের সবার
ছোট ।বোনদের সঙ্গে যোগাযোগ ঐ মোবাইলে।
মেজদিদি এসেছিলো চারবছর আগে… লন্ডন থেকে… সোমালির মধ্যবিত্তের সংসার… আপ্যায়ন ত্রুটি করেনি। কিন্তু দিদি ভীষণ খুশি হয়েছিল বোনের আন্তরিকতায়। দিদি বারবারই বলছিল তোর বাচ্চারা আজকালকের উশৃঙ্খল বাচ্চাদের মতো নয়।
সোমালি রাগ করে ঘরে শুয়ে শুয়ে ভাবে…
অনেক সংসার করেছি…. কটা দিন সংসারের বাইরে কাটিয়ে…. বরকে উচিৎ জবাব দেবো..বাছাধন বুঝবে কত ধানে কত চাল…অফিস,বাড়ি,বাচ্চাদের সামলাক।
আমি ভাবছি কটা দিন বড়দির বাড়ি কৃষ্ণনগর থেকে ঘুরে আসি… তাতে আমারও একটু মানসিক পরিবর্তন
আসবে… একঘেয়েমি কমবে…মেজাজ ও ঠান্ডা হবে।
তোরা কি বলিস?”
বাচ্চারা বলে….”হ্যাঁ মা যাও”। কোন সমস্যা নেই। আমরা ঠিক ম্যানেজ করে নেবো।
বিকাল ৫টায় কৃষ্ণনগরে দিদির বাড়ি পৌঁছায় সোমালি….শরীর ক্লান্তিতে ও ক্ষিদেতে অবসন্ন। গতরাতেতো ঘুমাতে পারেনি।
বাড়িতে ঢুকেই সোমালি দেখে প্রতিমা মানে দিদির মেয়ে সামনের ঘরে বসে আঙ্গুল তুলে মাকে শাসাচ্ছে …আমি গাড়ি ছাড়া কলেজ থেকে ফিরতে পারিনা…কোন মাসি আসবে… তার জন্যে স্টেশনে গাড়ি।
সে চোখে দেখেছে এমন গাড়ি।শুনেছিতো কোনরকমে সংসার চলে।
এরই মধ্যে বড়দি সোমালিকে দেখে থতমত খেয়ে মেয়েকে বকা দিয়ে বলে ভদ্রভাবে কথা বলো।ছোটবোনকে জড়িয়ে ধরে বলে কতোদিন পর দেখলাম বোন তোকে!!
রাতে খাবার পরই ক্লান্তিতে সোমালির দুচোখ বন্ধ হয়ে আসছিল। খেয়ে উঠতেই বড়দি বলে যা বোন তোর জামাইবাবুর আসতে অনেক দেরী ,ব্যবসাদার মানুষতো গভীর রাতে আসে।তুই প্রতিমার ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়। সকালে কথা হবে।
প্রতিমা মোবাইল থেকে চোখ না সরিয়ে গলা মোটা করে বলে শুয়ে পড়ুন। লাইটটা এখনই অফ করতে পারছিনা।আমি আমার এক বন্ধুর সাথে ভিডিও কলে কথা বলব।এরপর কানে হেডফোন লাগিয়ে বলতে লাগলো ,আরে কোথা থেকে ছোট মাসিকে ধরে এনে ঘর শেয়ার করতে বলছে…।
কি জানি কতদিন থাকবে!
সোমালি ভাবে বড়লোকের মেয়েরা এত অসভ্য হয়!
আরো কত কথা শুনতে শুনতে ক্লান্তির কারণে,সোমালি ঘুমিয়ে পড়ে।
হঠাৎই সোমালির মাঝ রাতে ঘুমটা ভেঙে যেতেই শোনে ….জামাইবাবু দিদিকে আকন্ঠ মদ গিলে গালাগালি করছে।
এতদিন সোমালি ভাবত …বড়দি ,মেজদি কত টাকা,কি সুখের জীবন সবার।।
পরদিন দিদির সাথে সারাদিন খুব গল্প হয়…
দিদিকে বলি কেন এসেছি ..দিদি বলে অভিমান করে ঝগড়ার মেয়াদ বাড়াস না।
সোমালি ভাবে বর একটিবারতো ফোন করতে পারত ।
সময়ের ধূসরতা ভালোবাসার গায়ে না লাগায় উচিত..জানিস বোন আমার ননদ – ননদাই এর মধ্যে সামান্য ঝগড়া..তারপর দীর্ঘ পনের বছর চোখের জল ফেলে একাকিত্বে কাটাচ্ছে ননদ।
এরমধ্যেই মোবাইলে মেসেজ এলো।
“তোমাকে রাগ করলে খুব মিষ্টি লাগে”
তারপরই আবার মেসেজ
“অডিটের কাজে নবদ্বীপে এসেছি,কাজ শেষ।
আধঘণ্টা পরেই তোমায় নিতে আসছি।সোনামনি তোমার ছেড়ে আমি কি থাকতে পারি!এতদিনের একটা অভ্যেস হয়ে গেছে।
তাছাড়া তোমার ছেলে -মেয়ে ,সংসারকে আগলে রাখা আমার পক্ষে সম্ভবপর নয়।এই মিষ্টি কথাগুলো যেন সোমালিকে সোনায় মুড়িয়ে দিল।
সোমালি ভাবে ও দিদিদের তুলনায় অনেক সুখী।হয়ত দিদিরা বড়লোক হতে পারে।জামাইবাবুর মাঝরাতে মদ খেয়ে
চিৎকার … ওরকম অসভ্য মেয়ে দিদির।ভদ্রতার লেশমাত্র নেই।নিজের বাড়ি অনেক সুখের।