Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » সংঘর্ষ || Satyajit Chowdhury

সংঘর্ষ || Satyajit Chowdhury

সংঘর্ষ

পার্টি অফিস থেকে বেরোতে আজও দেরী হয়ে গেলো । সুমিত সাইকেলের প্যাডেল জোরে জোরে চালাতে থাকে । রাস্তার নিয়ন আলোতে হাতের কব্জি উল্টিয়ে ঘড়ি দেখে নেয় – প্রায় আটটা বাজে । আজ সকালে বেরোনোর সময় তিন বছরের মেয়ে মৌ বার বার বলছিলো- বাবা তাড়াতাড়ি আসবে কিন্তু । আমার জন্মদিনে কোয়ালিটির আইসক্রিম চাই । মিতা আজ সি.এল নিয়েছে । সুমিতকে বলেছিলো- একটা দিন না গেলেও পারতে । সুমিতের গলায় বিরক্তির সুর- রোজ রোজ এক কথা শুনতে ভালো লাগে না । যা সম্ভব নয়, তা জেনেও কেন মিথ্যে আবদার করো । ইদানিং মিতাও মাঝে মাঝে ফুঁসে উঠে । রাখো তোমার সাম্যবাদ, নিজে বাঁচলে বাপের নাম ।

আজকাল সুমিতের নিজেকে বড় অসহায় লাগে । মনে হয়, এই যুদ্ধ আর কতদিন একা একা চালিয়ে যাবে । অথচ এই মিতাই অমিতকে সামনে এগিয়ে দিতো । কলেজ ইলেকশনে সুমিতের সাফল্যের পিছনে মিতার উৎসাহ ছিল সবচেয়ে বেশি । মিতা কলেজ ছাড়ার পর একটি কমার্শিয়াল ব্যাংকে চাকরি পেলো, সুমিত হয়ে গেলো পার্টির হোল টাইম ওয়ার্কার । সুমিতের গলায় ব্যঙ্গ সুর – কোথায় গেলো শোষিত শ্রমিকের সংগ্রাম । একেবারে পুঁজিপতির দালাল হয়ে গেলে । মিতা হেসে উত্তর দিয়েছিলো- আমি পুঁজিপতির একটু ধন আহরণ করবো শোষিত শ্রমিকের জীবন বাঁচাবার জন্য । আর শ্রমিকশ্রেণী সংগ্রাম করবে, উৎপাদনের উপর তার অধিকার কায়েম করবে ।

তারপর দুজনে সাতপাকে বাঁধা পড়লো ও তাঁদের জীবনে মৌ আসলো । মিতা ধীরে ধীরে পিছু হটতে শুরু করলো । ইতিমধ্যে প্রমোশন পেলো । বাড়িতে ফ্রিজ, রঙ্গীন টেলিভশন, গোদরেজের ক্যাববোর্ড । সহকর্মীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে হালফ্যাশনের সোফা, ডাইনিং টেবিলও এলো । মাস দুয়েক হলো মিতা শহরতলিতে এক টুকরো জমির বায়না করেছে l এক সময়ের সংগ্রামী শ্রমিক নিজেকে ক্ষুদ্র পুঁজিপতি গড়ে তুলেছে ।

সুমিত নিজেকে ঠিক পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে তুলতে পারে না । পার্টি অফিসে জোর আলোচনা চলে – পূর্ব ইউরোপে কমিউনিস্ট শাসনের পতনের কারণ কি? ফাঁপা অর্থনীতি না শ্রমিকশ্রেণীর এক বিশেষ গোষ্ঠীর সুবিধাভোগ । সুমিত জীবনের সাথে আদর্শের খেই হারিয়ে ফেলে । নিজেকে তো সমাজ থেকে আলাদা করা যায় না । আর নিজেকে বাদ দিয়ে জগৎ বদলানো, অনেকটা জলে না নেমে সাঁতার শিখানোর মতো মূর্খামি ।

বাড়ি ঢোকার সামনে গলির দোকান থেকে সুমিত হাফডজন কোয়ালিটি আইসক্রিম আর এক কেজি ওজনের একটি কেক কিনে নিলো । দাম দিতে গিয়ে সুমিতের মনে হলো – ভারতবর্ষের দরিদ্ররেখার নিচে বাস করা একটি পরিবারের বার্ষিক আয়ের পরিমান যে কত ছিল । হিসেব করতে গিয়ে যেন গুল পাকিয়ে যায় ।

সাইকেলে উঠে মনে পড়ল – আজ টিভি রিচার্জ করার কথা ছিল । মৌ’র মিকিমাউস, টম এন্ড জেরি না দেখলে ঘুম আসে না । হটাৎ সাইকেলের সামনে কিছু পড়লো । ব্যালান্স হারিয়ে সুমিত রাস্তার ধারে গড়িয়ে পড়লো । খুব বেশি ব্যাথা লাগে নি । কান্নার শব্দে মুখ তুলে সুমিত দেখে, ময়লা কাপড় পরা মৌ’ এর বয়সী একটি ভিখারী মেয়ে বিপদজনকভাবে নালার উপরে ঝুকে কি যেন খুঁজছে । কান্না জড়ানো গলায় বলা কথা মনোযোগ দিয়ে শুনার পর সুমিত কিছু বুঝতে পারলো । খুব কষ্টে এক টুকরো রুটি জোগাড় করতে পেরেছিলো । সাইকেলের ধাক্কায় রুটির টুকরো নালায় পড়ে গেছে । রাতে খাওয়ার মতো কিছু নেই । সুমিতের মনে মৌ-এর মুখ ভেসে উঠলো । সাইকেলের ক্যরিয়ার থেকে সুমিত কেক-এর টুকরো এনে মেয়েটির হাতে দিয়ে বললো, এই মুহূর্তে স্থাপিত হোক সমস্ত উৎপাদন ব্যবস্থার উপর শোষিত শ্রমিকের সমবন্টনের অধিকার । কিছু বুঝতে না পেরে মেয়েটি কান্না থামিয়ে সুমিতের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress