সংকট
ডিটেনশন ক্যাম্পের এককোনে চুপ করে বসে আছে হারু, হারাধন ঘোষ। গেছিলো মেদিনীপুরের অজ গাঁয়ে। জন্মভিটের টানে নয়! কোর্টের কিসব অর্ডার এসেছে, ভারতের লোক প্রমাণ দিতে হবে। প্রমাণ জোগাড় করতেই গেছিলো।
মেদিনীপুরের এক অজ গাঁয়ের চাষীবাসী ঘরের ছেলে ,লেখা- পড়া একেবারে জানে না এমন নয়।
পাশের বাড়ির দাসু-খুড়োর মেয়ে বিমলা কে হারুর মনে ধরলেও বিধবা বিমলাকে বিয়ে করা অসম্ভব ছিল। বিমলাকে নিয়ে ঘর , আত্মীয় পরিজন সব ছেড়ে এতদূরে আসামের কাগজকলের পাশের বস্তিতে সংসার পেতেছিল।
বছরখানেক আগে তিনদিনের জ্বরে বিমলা চলে যাবার পর থেকে বড়ো একা লাগে ।যে ইস্কুলে পড়েছিল সেখানের মাস্টার বললো ,তখনকার ইস্কুল কবে জলের তলায় চলে গেছে। মিথ্যে বলে নি ছোকরা,বানভাসি তো লেগেই আছে! গাঁয়ের কেউই প্রায় চিনতে পারলো না। তার বয়সী যারা বেশীর ভাগই বেঁচে নেই। বাকীরা কোথায় জানা গেল না।
ব্লক অফিসেও গেছিলো।একবার নয়,চারবার। দুবার তো লোক ছিল না বলে ফিরে এসেছে! তৃতীয় বার শুনলো অনেক দিন আগের কাগজপত্র সব উই ধরে নষ্ট হয়ে গেছে। বুড়োটার জন্য কে আর খাটতে চায়! আরো একদিন গেল ,পুরানো ফাইলপত্র একবার কেউ যদি দেখে দেয়! হতাশ হয়েই ফিরতে হলো। বড়ো অসহায় লাগছে। কি করবে, কোথায় যাবে! ক্যাম্পেই বা কতদিন থাকতে হবে! এই বুড়ো বয়সে কতটুকুই বা ক্ষমতা তার। ভালো লাগছে না।কেমন একটা অস্বস্তি হচ্ছে। বসে থাকতে পারছে না। শুয়ে পড়ে সে।
আরে ঐ তো বিমলা ডাকছে ! বিমলার হাত ধরার চেষ্টা করে, পারে না। বুকের উপর দশমণি বোঝার ভার, ঘামে ভেসে যাচ্ছে সারা শরীর !গোঙাতে থাকে । ওঃবড়ো কষ্ট! কিছু বলতে চায়। হঠাৎ করে গোঙানি থেমে যায়। বিস্ফারিত দুচোখ স্থির হয়ে ঘাড়টা কাত হয়ে হেলে পড়ে।