শ্যামা এলো রে ঘরে
ছাব্বিশ বছরের “তারা “… দুটি বাবুর সাথে এক ঘন্টা করে সময় কাটিয়ে …উদভ্রান্তের মতো ছুটছে… কেননা তার মেয়ে “দীপাবলি” পোয়াতি ..আজ কালের মধ্যে …।
মা ও মেয়ের সংসার।”তারা “-রা মা হয় অসাবধানে।
হবে না কেন ?
ওরা যখন নষ্ট হয় তখন কমলের কুঁড়ি থাকে।একটা বাচ্চা হবার পর বুঝতে শেখে।না না আর বাচ্চা নয়।
তারা তাও প্রাথমিক ইস্কুলে তিন ক্লাস পাশ দিয়েছিল।শিক্ষিতা তো সবাই “তারা”দি বলে মান্যি করে।
চোখ খারাপ হওয়াতে এই সোনালী রঙের চশমা । চশমাটা পড়লে স্কুলের বড়দি নাকি লাগে ।
ঐ আর কি, পাড়ার বন্ধুরা বলে ।
কোন রকমে একটা কি দুটো খরিদ্দার পেলেই মা ও মেয়ের পেট ভরে খাবার জোটে।
মেয়েটা আবার এইসব পারে না। প্রাইমারি ইস্কুলে ছয় ক্লাসে পড়ে।এখন তো খাবার পাওয়া যায় ইস্কুলে। আমি তো লেখাপড়া শিখতে পারে নি …”দীপাবলি” যতটুকু পড়তে চাই পড়াব।
একটা কোচিং এ পড়তে যেত।ও মাষ্টার মশাইকে বলেছিল ওর বাবা নেই…মা খুব গরিব…কোচিং এ পড়তে চাই।টাকা দিতে পারব না।তবে কোচিং এ ঘর মুছে দেব রোজ।মাষ্টার তাতে রাজি হয়েছিল।”দীপাবলি “পড়তে না গেলেও ঘর মুছে দিয়ে আসত।ফিরত বেশ খুশি মনে।তা আমি তো বাইরে কাজ করি “দীপাবলি” যাতে আনন্দ পায় তাতেই আমার খুশি ছিল।
তারপর “দীপাবলি “হঠাৎ বমি করা শুরু করে…হায়রে তোর সর্বনাশ কে করল?
অনেক চাপ দিতে জানতে পারি ঐ বিনা বেতনে পড়ানোর মাষ্টার।তারপর মেয়ে নিয়ে ছুটে যায় কোচিং এ।কোথায় কোচিং??
বেশ কয়েক মাস হয়ে গেছে..তার মধ্যে অপুষ্ট।বাচ্চা নষ্ট করা একদম যাবে না।
তাই মেয়েটা আজ গর্ভবতী হয়েছে।
আমার মেয়েটা বলছিল …মা আজ কাজে যাসনে।
আমি মেয়েকে বলেছিলাম ..এই যাচ্ছি এই ফিরব….কাজে না গেলে মা ও বেটিতে খাব কি?
এদিকে মেয়েকে বলেছি ….মেয়ে হলে এক প্যাকেট বিরিয়ানি খাওয়াব।
আমিও তো বাপু বারো বছরে মা হয়েছি।
ঘরের কাছে যেতেই দেখি দাইমার কোলে বাচ্চা!
কিরে” তারা “দিদা হয়ে গেলি..”শ্যামা “এলো রে ঘরে।
দাইমা তুমি একটু দাঁড়াও বিরিয়ানিটা কিনে আনি!!
কিন্তু তোর মেয়ে “দীপাবলি” মরে গেছে রে!!
নাতনী হবার আনন্দে শেষের কথাগুলো তারার কানে গেল না।এবার “তারা” ছুটছে…হাঁপাতে হাঁপাতে বিরিয়ানির দোকানে যায়।
বিশাল লাইন….কেউ চিকেন চাপ,চিলি চিকেন,চাউমিন নিয়ে যাচ্ছে।লাইন আর এগোচ্ছে না।প্রায় এক ঘন্টা দাঁড়িয়ে লাইন এলো …দোকানদার বলল আজ বিরিয়ানি শেষ।দাদা হাড়ি তলায় একটুও হবে না।আসলে আমার অসুস্থ মেয়েটা খেতে চেয়েছিল।থাকলে তো দিতাম।অন্য দোকানে যান।এখন রাত হয়েছে কোথায় আর পাবো!!
হঠাৎ একজন বললেন মেয়েকে আজ অন্য কিছু খাওয়াও।যা চাইবে তা কিনে দিতে হবে।
আমার পরে যিনি এলেন…তার আগেই দশ প্যাকেট বিরিয়ানি অর্ডার করা ছিল।
সে হুঙ্কার দিয়ে বলল হয়েছে আমারটা?ওনার দুই হাত ভরে বিরিয়ানির প্যাকেট।
মনে হচ্ছিল একটা ছিনিয়ে নিতে।আপন মনে “তারা “হাঁটতে থাকে।ঠিক আছে ঘরে ভাত আছে একটা ডিম ভেজে দেব মেয়েটাকে।।
হঠাৎ মোটা গলা এই তারা…তাকিয়ে দেখে প্যাকেট ভর্তি বিরিয়ানি ….সেই লোকটি…যিনি দশ প্যাকেট অর্ডার করেছিলেন।
হ্যাঁ আমাকে বলছেন?চিনতে পারছিস না!
তারাকে বলে এই নে বিরিয়ানি প্যাকেট।
তারা সতৃষ্ণ নয়নে তাকিয়ে থাকে…
নে নে তোর মেয়ে মানে তো আমার মেয়ে।
আজ আমার মেয়ের দশ বছরের জন্মদিন বুঝলি।।
তারা হাসিমুখে বলে তোমার আরেক মেয়ে বারোবছরে পোয়াতি।না না “বিশু”দা তোমার
নাতনি হয়েছে!!
তারা ছুটছে—কত চেনা লোক—জিজ্ঞেস করছে…”তারা “ছুটছিস কেন?এখনো দশ মিনিট ছুটতে হবে।মেয়েকে বলব তোর বাবা কিনে দিয়েছে।
আচ্ছা মেয়ে খুব খুশি হবে তাহলে।
ইস নাতনী আসার আনন্দে আমার “দীপাবলি “কেমন আছে জিজ্ঞেস করতে ভুলে গেছি।
মেয়ের একটু তো রাগ হবে…তবে বাবা…বিরিয়ানি…শুনে গন্ধে লাফ দিয়ে বলবে …খুব ক্ষিদে পেয়েছে মা।
বাড়ির সামনে এত ভীড় কেন?
একজন বলল এই যে সৎকার করার ক্ষমতা আছে?
মেয়েকে নিয়ে যাচ্ছি…দেখে নাও।
কি মা!
মেয়ের মড়ার খবর পেয়ে পালালে।
পালাব কেন?”দীপাবলি”কে কথা দিয়েছিলাম…নাতনী হলে বিরিয়ানি খাওয়াব।আনতে গেছিলাম।
নাকি আবার কুকর্ম করতে গেছিলি।
দেখলাম চারদিকে আলো আর আলোর রোশনাই..আজ বাদে কাল শ্যামা পূজা.. দীপাবলি সমাজ কল্যান সেবার গাড়িতে চলে গেল।দীপাবলি তোর শ্যামাকে আমি কোনো হায়নার ছোবল খেতে দেব না