এসেছে আবার বাইশে শ্রাবণ স্মৃতি ভারে রবিঠাকুর,
ধারাবর্ষণে বাজবে কবি ঠাকুরের বিদায়ী বেদনার সুর,
শ্রাবণের আকাশ ভরা কৃষ্ণ মেঘে বিভ্রান্তি ছড়ায় না বহুদূর,
প্রাণের আবেগে সকাল সাঁঝে গীত-গাঁথায় তৃপ্তি যে সুমধুর।
সবাই জানে বাইশে শ্রাবণ মানে তোমার পার্থিব দেহাবসান,
তবু প্রতি মুহূর্তে আছে দুঃখ,আছে মৃত্যু••আদির অভয়দান,
ভুলেও ভোলেনা কেউ গীতাঞ্জলির উপনিষদীয় অভিজ্ঞান;
জন্ম-মৃত্যু উভয়েই যে তোমার দর্শন ও অভিধানে সমান।
এই তুচ্ছ জীবনে জীবন-বোধের পাঠ নিয়েছি তোমার লেখনীতে,
উপনিষদের কঠিন তত্ত্ব সকল বুঝিয়েছ ‘গীতাঞ্জলি’র সরলতাতে।
হর্ষে,বিষাদে,প্রেমে-বিরহে এঁকেছি ছবি তোমার কাব্য-গীতিতে;
বিস্তীর্ণ তোমার সৃষ্টি ভূমি ছড়িয়েছে প্রান্ত থেকে প্রান্তরেতে।
সকাল হতেই প্রভাত রবির আঙিনায় ‘নির্ঝরের স্বপ্ন-ভঙ্গ’,
নামলে সাঁঝ তোমার ‘বীর পুরুষ’ নেয় আপন মায়ের সঙ্গ,
কাব্যে তোমার অনুভূত হয় বাংলার ঋতুবৈচিত্র্যের বিবিধ রঙ্গ;
সবাক দৃষ্টিতে খুঁজে পাই তোমার অপরূপ সৃষ্টির বিভঙ্গ।
ভর দুপুরে বিস্ময়ে দেখি রোদ-ছায়াতে লুকোচুরির খেলা,
আকাশ জুড়ে ভাসে অচেনা এক সাদা-মেঘের ভেলা,
ভরা যৌবনে তোমার গানে নব আনন্দে জাগার পালা;
জীবন প্রান্তেও স্বচ্ছন্দে সাজিয়ে গেছো বিদায়ের মালা।
সুন্দরী জননী জন্মভূমির দশে দিশে শুনি তোমার আবাহন,
বাংলার বাউল সুরে আজ মেতে আছে তোমার শান্তিনিকেতন,
কবি ঠাকুরকে নিয়ে জেলাভিত্তিক ভাষায় চলছে কাব্যরচন;
দিগন্ত বিস্তৃত মহিমায় উদ্ভাসিত আজ তোমার সৃষ্টি কথন।
কবিতা,গান নাটক, উপন্যাস ছাড়াও তোমার আবিস্কৃত ছোটগল্প,
এখনও সমান প্রাসঙ্গিক বঙ্গজীবনে তোমার সার্বিক সংকল্প,
আজও শ্রাবণের ধারায় গানে ও কবিতায় পাইনি বিকল্প;
সবাই তোমার স্মরণে গঙ্গাজলে গঙ্গাপূজো সারে হলেও অল্প।
সকাল থেকে সন্ধ্যে, কিংবা মিলন আবহ থেকে বিয়োগ ব্যথায়,
সবটুকু তুমি জুড়ে আছো ঠাকুর তোমার অগণিত গান ও কাব্যগাথায়,
তোমাকে ছেড়ে কাটে না প্রহর,খুঁজতে হয়না তুমি কোথায়!
কখন কে জানে চেতনে অবচেতনে তোমার প্রেম ভাসে শ্রাবণধারায়।।