Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » শ্বেত পাথরের থালা || Bani Basu » Page 9

শ্বেত পাথরের থালা || Bani Basu

বেলা গড়াচ্ছে। বিয়েবাড়ি সেজে উঠছে। বেজে উঠছে। ফুলের গন্ধ, সানাইয়ের আওয়াজ যে এমন অশান্তিকর হতে পারে বন্দনা যেন আগে বোঝেনি। কত সাজসজ্জা, শুধু মানুষ নয়, ঘর, দোর, দালান, ছাদ, উঠোন সব সেজে উঠেছে, নতুন রঙের গন্ধ চারিদিকে। কত অলঙ্কার, প্রসাধনের গন্ধ, রোশনাই। কোথাও নিজেকে লুকোবার এতটুকু ঠাঁই নেই। ছোট্ট ছোট্ট ধুতি পাঞ্জাবি পরিয়ে ছেলেকে পাঠিয়ে দিয়ে বন্দনা শুকনো মুখে তাড়াতাড়ি একটু ট্যালকম পাউডার ঘষে। গরদের কালোপেড়ে শাড়ি শাশুড়ি রেখে গেছেন। আজকের দিনে বহু আত্মীয়-কুটুম, বন্ধু-বান্ধব আসবে, রঙিন কাপড় পরা চলবে না। শাড়িটা পরে বন্দনা আর আয়নার দিকে ফিরে তাকাল না। কোনক্রমে একটা হাত খোঁপা করে নিয়ে ঘরের বাইরে পা বাড়াল। কেউ না বলে বড় বউ শুভদিনে গোমড়া মুখে নিজের ঘরে বসে সংসারের অকল্যাণ করছে। মহিলামহলের দিকে পা বাড়াতে সে যেন মরমে মরে যায়।

কলি ধরেছিল বউমণি তাকে সাজাবে। কাকিমা বলেছিলেন—‘বেশ তো, তাতে দোষ কিছু নেই।’ কলির মার কিন্তু মত হয়নি। তিনি নিজের ভাইয়ের বউকে কাজটা দিয়েছেন। বউটি খুব পয়া। আসতে না আসতে ভাইয়ের শেয়ার মার্কেটের পয়সা ফুলে উঠতে শুরু করেছে। ভাইয়ের ছেলের পদোন্নতি হয়েছে। দুটি নিখুঁত শিশুর জননীও হয়েছে বউটি। মেয়ের বিয়ের কোনও ব্যাপারে বিধবার ছোঁয়া থাকা তাঁর পছন্দ নয়। শুধু অপছন্দই নয়। আতঙ্ককর। গয়নাগুলো অবশ্য তার ছোঁয়া লাগাই, এবং সেই পরেই সালঙ্কারা কন্যা সম্প্রদান হবে। তবে তাতে কিছু এসে যায় না। অলঙ্কার, বিশেষত সোনা শুদ্ধ জিনিস। ওতে দোষ নেই।

বড়মাসিমা ক’দিন ধরেই আছেন। সন্ধেবেলায় তাঁর মেয়ে বউ এসেছে। দুজনেই পয়সা-অলা ঘরের বউ। কলির মেসোর জমিদারির পয়সা। আর তার মাসতুত দিদির শ্বশুরবাড়ি তিনপুরুষে সরকারি আমলা। তাদের ঠাট-বাটই আলাদা। মাসিমার পুত্রবধূ চন্দ্রার চড়া মেক-আপ। থিয়েটারের অভিনেত্রীর মতো, জমকালো। টিকলি থেকে চন্দ্রহার অবধি সবই পরেছে বউটি। ব্রোকেড শাড়ি। একটু মোটাসোটা সুন্দরী। চোখের কাজলে, ঠোঁটের লিপস্টিকে, গালের রুজে চন্দ্রা বিয়েবাড়ি জমজমাট করে রেখেছে। তার ননদ অর্থাৎ বড় মাসিমার মেয়ের দুটি ছেলে মেয়ে হয়ে গেছে। কিন্তু এখনও বেশ আঁটসাঁট। তার বিয়ে হয়েছে আলিপুরের দিকে। নামকরা ফ্যাশন-দুরস্ত পরিবার। পুরো কালো রঙের সাজগোজ তার। কালো পাথরের গয়না, কালোর ওপর সোনালি বুটির জরিদার রেশমি শাড়ি, কালো মিনের চুড়ি, লম্বা সীতাহার। মিনেকরা কাজ। চন্দ্রা আর এই মাসতুত ননদ কাজল দুদিক থেকে বন্দনাকে ঘিরে ধরল।

কাজল বলল—‘দ্যাখ বন্দনা, আমি তোর থেকে সাত বছরের বড়। আমি দু ছেলের মা হয়ে এমন চুটিয়ে সাজতে পেরেছি, আর তুই আমার চোখের সামনে এমনি পাগলির মতো ঘুরবি? তোর কি মার খাবার ইচ্ছে হয়েছে?

চন্দ্রা কোনও মন্তব্য করল না, খালি তার অজস্র গয়নার কিছু কিছু উল্টে-পাল্টে ঠিকঠাক করতে লাগল। হারের খামিগুলো বারে বারে উল্টে যায়। গয়নার ঝুল্লিগুলোও বড্ড শাড়ির জরিতে আটকে আটকে যায়। এইভাবে প্রত্যেক বিয়েবাড়িতে কিছু কিছু ঝুল্লি হারায়। আবার স্যাকরাকে ডাকো, আবার তাকে সারাও। কাজলদি কি বলতে চাইছে সে বুঝতে পারছে না। কি করবে বন্দনা? কি করতে পারে? সে বন্দনার উত্তরের জন্য অপেক্ষা করতে লাগল। বন্দনার সম্পর্কে তার তীব্র কৌতূহল। ক মাস আড়াআড়ি বিয়ে হয়েছিল দুজনের। চন্দ্রার আগে। বন্দনার বিয়েতে চন্দ্রা নতুন বউ। ঠিক এইরকম সাজের চূড়ান্ত করে গিয়েছিল। মাথায় সোনার মুকুট, পায়ে নূপুর। কিন্তু সে বরাবরই একটু মোটা, আলগা ধরনের। বন্দনা ছিমছাম। সিংহাসনের ওপর সোজা বসে থাকা নরম-ঢলঢলে মুখের জা’টিকে দেখে সেবার বেশ হিংসে হয় চন্দ্রার। সেই প্রথম ঈর্ষার অনুভূতি কোনদিন যায়নি। অভিমন্যুর মৃত্যুর খবরে সকলকারই মাথায় বজ্রাঘাত হয়েছিল। চন্দ্রারও খুব খারাপ লাগে। কিন্তু নিয়মভঙ্গের দিন সে লালপাড়, সোনালি জরির বুটি মাইসোর সিল্ক পরে খেতে এসেছিল, এক-গা সোনার গয়না, চওড়া সিঁদুর, লিপস্টিক, গায়ে সুগন্ধ। কাজল এল শ্বশুরবাড়ি থেকে। কালো কাজের সাদা ঢাকাই পরনে। চন্দ্রাকে দেখে তিরস্কারের সুরে বলল ‘কি করেছিস রে চন্দ্রা? আজকের দিনে কেউ এমনি সাজে?’ চন্দ্রার রাগ হয়ে গিয়েছিল, বলেছিল—‘আহা, সবাই তো সেজেছে, আজ এয়োস্ত্রীদের বিশেষ দিন, মা-ই তো বলছিল, নয়তো আমি আর জানছি কোত্থেকে? আমার সিঁদুরের ওপর মা-ই তো আরেক দফা সিঁদুর চড়িয়ে দিল। জানি না বাবা।’

কাজল আহত গলায় বলেছিল—‘মার আর বুদ্ধিশুদ্ধি কোনদিন হবে না।’

চন্দ্রা বাঁকা হেসে বলেছিল—‘তা দিদিভাই, তুমি কিন্তু আমার থেকে কিছু কম সাজোনি। লাল হয়ত পরোনি। সিঁদুরটাও তোমার হেয়ার-স্টাইল না কি বলে, তার চোটে একটু ঢাকা পড়ে গেছে, কিন্তু তোমার শাড়িটা আমারটার চেয়ে অনেক দামী। এটাই সেবার জামাইবাবু পূর্ব-পাকিস্তান থেকে বুনিয়ে আনলেন না? তোমার কানে হীরে, আঙুলে হীরে, লকেটেও হীরে। সবই আসল কমল হীরে। ওসবের দাম কত হতে পারে আমিও ব্যবসাদারের ঘরের মেয়ে ভাই। আমার জানা। তোমাদের মতো ভান-ভড়ং-এর মধ্যে আমি নেই। শ্রাদ্ধবাড়িই হোক আর যা-ই হোক, পাঁচটা মানুষ অসবে তো! ভদ্রলোকের সামনে বেরুবার মতো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হতে হবে তো অন্তত।’

কাজল গম্ভীর হয়ে বলেছিল—‘বন্দনাকে দেখতে যাওয়াটা আমাদের প্রথম কর্তব্য। আমি তো আবার আগের দুদিন আসতেই পারিনি। কিন্তু তোকে নিয়ে ওর কাছে যেতে আমার লজ্জা হচ্ছে।’

চন্দ্রা বলল—‘নাই বা নিয়ে গেলে!’

কাজল একাই চলে গেল রাগ করে। যেতে যেতে দালানের গোল আয়নার সামনে চট করে একবার দাঁড়িয়ে নিজের প্রতিবিম্বটা দেখে নিল। নাঃ, অত্যধিক উগ্র, অশোভন কিছু নেই। চন্দ্রা যা-ই বলুক। সবই সংযত, শোভন, অভিজাত। কিন্তু বন্দনার ঘরে কাজলের জন্য বেশ খানিকটা ধাক্কা অপেক্ষা করে ছিল।

আলনার ওপর একটা আধময়লা ঢাকা চাপা দেওয়া। আলমারি, ড্রেসিং-টেবিলের কাচ মলিন। জলচৌকির ওপর পর পর সুটকেস তার ওপর কেউ একটা ধোপার বাড়ির পাটভাঙা চাদর চাপা দিয়ে গেছে, কারণ তার ওপরেই অভিমন্যু আর বন্দনার যুগল ছবি। বিয়ের। তাতে মালা দেওয়া। সন্দেহ নেই, দুজনেই মৃত। টেবিলের ওপর পাতলা ধুলো। জোড়া খাট, তার একদম ওধারে, দেয়ালের ধার ঘেঁষে অবিশ্বাস্যরকমের শীর্ণ একটি শরীর। চুলগুলো বালিশের এপাশ-ওপাশ ছড়িয়ে পড়েছে পাগলিনীর মতো। চোখ বুজোনো। গাল বসে গেছে। রঙ পাণ্ডুর। ঠোঁট দুটো শুকিয়ে উঠেছে। গায়ের ওপর একটা গরম কালো চাদর বুক পর্যন্ত টানা। বন্দনা ওষুধ খেয়ে ঘুমোচ্ছে। এ কে? এ কি? কাজলের স্বামী ফরেন সার্ভিসে আছেন, স্বামীর সঙ্গে তাকে বহু জায়গায় ঘুরতে হয়। এসেছে মাত্র গতকাল। অভিমন্যুদার মৃত্যু সংবাদ পেয়ে একবারও আসতে পারেনি দেখা করতে। তার মনে হল জানা না থাকলে সে বন্দনাকে চিনতে পারত না। এখনও খুব কষ্টে চিনছে। নিজের গায়ে ফরাসী সেন্টের গন্ধ যেন তার দু গালে চড় মারছে। কাজলের মনে হল এই অনুষ্ঠানের মতো, এই অনুষ্ঠানে তার, চন্দ্রার এবং অন্য অনেকের উপস্থিতির মতো হৃদয়হীন, অশ্লীল ব্যাপার আর কিছু হতে পারে না। ভয় হল বন্দনার যদি হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায়! সে যদি দেখতে পেয়ে যায় তাকে, তার এই সযত্ন সংযত নিয়মভঙ্গের সাজখানাকে? তাড়াতাড়ি পালাতে গিয়ে কার সঙ্গে যেন ধাক্কা খেল। ফিরে দেখে চন্দ্রা। ফিসফিস করে চন্দ্রা বলল—‘ও সারাক্ষণ ওষুধ খেয়ে ঘুমোয় দিদিভাই, আধপাগল মতো হয়ে গেছে। ও আমাদের দেখতে পাবে না। দেখবার চোখই নেই। বুঝতে পারবে না কিছু। ওর চোখে আমার লালও যা তোমার কালোও তা।’

চন্দ্রার চোখ ছলছল করছে। দুজনে পা টিপে-টিপে বাইরে বেরিয়ে এল। কাজল রুমাল টানতে ভুলে গেছে, কোমর থেকে, শাড়ির আঁচলে চোখ মুছছে।

আজ কাজলের অনুযোগের জবাবে বন্দনা কি বলে শোনবার জন্য চন্দ্রার উদগ্র কৌতূহল। আজ তো বন্দনা রোগিণীও না, পাগলিনীও না। হঠাৎ শুধু চন্দ্রাদের জাত থেকে অন্য এক জাতে চলে গেছে। ধনী-দরিদ্রে যেমন দুস্তর পার্থক্য, নীল রক্তে আর লাল রক্তে যেমন, সধবা আর বিধবার মাঝখানেও সেইরকম এক দুর্লঙ্ঘ্য ব্যবধান। কি বলে ওই জাতের মানুষ?

বন্দনা শুধু বলল—‘কাপড়টা মা দিয়েছেন। কলির বিয়েতে এটাই আমি বাড়ি থেকে পেয়েছি।’

মিলি সামনে দিয়ে যাচ্ছিল। ভীষণ সেজেগুজে। চন্দ্রা বলল—‘বন্দনা, মিলির গায়ে ওটা তোমার ফুলশয্যের বেনারসীটা না?’ বন্দনা মাথা নাড়ল হ্যাঁ।

নিঃশ্বাস ফেলে কাজল বলল—‘চল বন্দনা, কনের ঘরে যাই।’

হঠাৎ সন্ত্রস্ত হয়ে বন্দনা বলল—‘আমি? না থাক। আমার যাওয়া চলবে তো!’

—‘সে আবার কি? যাওয়া চলবে না কেন?’

—‘কি জানি, কাজলদি সব নিয়ম তো আমার জানা নেই!’

কাজল বলল—‘কোনও নিয়ম নেই। তুই আয় তো। সকলকার সঙ্গে দেখা করবি তো!’

বন্দনা বিপন্ন মুখে বলল—‘আমি বরং নিচে যাই একবার। মা বলেছিলেন নিরামিষ ঘরে রান্না-বান্না, খাওয়ানো একটু দেখতে। সময়মতো না গেলে রাগ করবেন।’ বলে বন্দনা আর অপেক্ষা করল না। সিঁড়ির দিকে চলে গেল।

চন্দ্রার হৃদয়ে সমবেদনা। দুঃখ। সবই ঠিকঠাক আছে। তা সত্ত্বেও, সব ছাপিয়ে তার বুকের ভেতরটায় কিরকম একটা হালকা ভাব। আর কোনদিন কোনও আত্মীয় সমাবেশে তার মাসতুত জা বন্দনা তার প্রতিদ্বন্দিনী হয়ে উঠবে না। আগে আগে যত বিয়ে, অন্নপ্রাশন, সাধের নেমন্তন্নে দুজনে গেছে। সবার মুখে এক কথা। ফিস ফিস করে অবশ্য। ‘বড়মাসিমার বউটিও সুন্দরী, কিন্তু যাই বলো আর তা-ই বলো মেজমাসিমার বউটির যেন আলাদা একটা শ্ৰী আছে চোখে মুখে গড়নে।’ দেওররা, ভাসুররাও বন্দনা এলেই বেশি মনোযোগী হয়ে উঠত। ধারা পাল্টে যেত সবার। একটা যেন অতিরিক্ত সম্ভ্রম। তার নিজের স্বামী-ই তো বলত ‘বন্দনা ফ্যানটাসটিক’। এই সব কথাবার্তা চন্দ্রার কানে বিষ ঢালত, সে কোনদিন হাসিমুখে এই সব প্রসঙ্গে যোগ দিতে পারত না। স্বামীকে বলত ‘তোমার বুঝি অভিমন্যুদার ভাগ্যের জন্য হিংসে হয়!’ তার স্বামী বলত ‘অভিমন্যু? ওঃ ও তো লগন-চাঁদা ছেলে। হিংসে করে আর কি করব!’ ‘তা দেখে শুনে বন্দনার মতো বউ আনলেই তো পারতে!’ স্বামী হতভম্ব হয়ে বলত ‘যা ব্বাবা। আচ্ছা তো তোমরা মেয়েরা। কোথা থেকে কোথায় সড়াত করে চলে গেলে?’ এই সব অপ্রীতিকর প্রসঙ্গের আর পুনরাবৃত্তি হবে না।

কাজলের মনের ভাবটাও হল বড় বিচিত্র। বন্দনা যেন এক কথায় তাকে বুঝিয়ে দিল সে আর কাজলদের, চন্দ্রাদের কেউ নয়, সে অন্য জায়গায় বদলি হয়ে গেছে। ক্রমশ আরও যাবে। কাজেই চন্দ্রাদের সাজগোজ, কাজলদের অতি সযত্ন অতি সাবধান প্রসাধন, অলঙ্কার-নির্বাচন এসব আর বন্দনাকে স্পর্শ করে না। বন্দনার কিছু মনে করার প্রশ্ন নেই। কুকুর যদি মাংস খায়, গরু কি তাতে কিছু মনে করে? ওরা নিশ্চিন্তে সাজতে পারে। কাজল মাসিমার বড় ঘরে যেখানে কনে সেজে কলি বসে আছে, আর তার পাশে মিলি উপহার নিচ্ছে সেখানে চলে গেল। পেছন পেছন চন্দ্রা। কাজল অনেকক্ষণ চুপ করে দেখল, তারপর মনের মেঘ কাটাতে বলল—‘কলিকে ভারি মিষ্টি দেখাচ্ছে, না? এই রকম একটু বিষণ্ণ ভাবটা কনের মুখে খুব সুন্দর মানিয়ে যায়, দেখেছিস, চন্দ্রা? বেশি স্মার্ট, বেশি হাসি, অঙ্গভঙ্গি ভালো লাগে না।’

চন্দ্রা বলল—‘যা বলেছ। আজকালকার কনেগুলোকে দেখলে তো কনে বলে বোঝাই যায় না। তবে কলিকে যত ভালোই দেখাক আজকের দিনের শ্রেষ্ঠ সুন্দরীর প্রাইজ যদি কাউকে দিতেই হয় তো সে তোমাকে, তোমাকে, তোমাকে।’

কাজল বলল—‘দু ছেলে মেয়ের মা, বড়টা সিনিয়র কেমব্রিজ দিতে চলল, আমার আবার সাজগোজ, আমার আবার রূপ!’

চন্দ্রা বলল—‘বারবার দু ছেলে মেয়ের মা, দু ছেলে মেয়ের মা করো না তো! ওদের পেটে ধরা ছাড়া আর কিছু তোমাকে কোনদিন করতে হয়েছে?’

কাজলের কাঁধে দু হাত দিয়ে একটু বেঁকে দাঁড়িয়ে চন্দ্রা আবদেরে গলায় বলল—‘বলো না গো কি করে এমন ফিগার রাখলে? আমি রোজ রোজ বেঢপ হয়ে যাচ্ছি!’

এই সময়ে কলির চোখ পড়ল ওদের দিকে। ইশারায় ডেকে বলল—‘বউমণিকে দেখেছ।’

—‘বউমণি কে? ও, বন্দনা? দেখলাম তো!’

—‘ওকে এখানে একটু আসতে বলো না!’

—‘বলেছিলাম, এল না রে, নিচে চলে গেছে। কাজ আছে।’

কলির চোখ ছাপিয়ে আবার জল এল। বড় মাসিমা ঢুকে বললেন ‘চোখের কাজল ধেবড়ে গেলে কেমন করে শুভদৃষ্টি করবি মা? এই চন্দ্রা বউ, কাজলা ওকে কাঁদাচ্ছিস কেন রে?’

শাশুড়িকে আসতে দেখে চন্দ্রা ঘর থেকে টুক করে সরে গেল। মা কাজলকে বললেন—‘কাজলা, এক খিলি পান এনে দে তো কলিকে। গলাটাও শুকোবে না, ঠোঁট দুটিও টুকটুকে রসালো হয়ে থাকবে। সারা দিনের উপোস, আহা মুখখানা শুকিয়ে উঠেছে গো!’

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress