শোধ-প্রতিশোধ-অনুশোচনা
অনিন্দিতা ও অনীকের চার বছরের প্রেম—তারপর বিবাহ।
অনিন্দিতা গৃহবধূ— বরের চাকরিসূত্রে চেন্নাইয়ে থাকা।
অনিন্দিতার সময় কাটতে চাই না—ওদিকে অনীকের ইচ্ছে নেই তার বউ চাকরি করুক।
ভগবান মুখ তুলে চেয়েছেন—অনিন্দিতা ভাবছে কতক্ষণে বরকে সুসংবাদটা দেবে—-একা একা ঘরে সারাদিন কাটানো যে কি চাপের —–সেটা অনীক বুঝতে চায় না।
এবার শিশুটা জন্মালে কাজ করতে করতে নিশ্চয় সময় কেটে যাবে—-তাছাড়া শাশুড়ি মা ফোনে আবছা বলেছেন—এক বছর তো হল—
“এবার দু জন থেকে তিনজন হও”।
আমার মা ও শাশুড়ি মা খবরটা শুনে খুব খুশী হবেন।
কিন্তু বরকে যেই জানাই সুখবরটি—বর বলে এখন আমার প্রোমোশনের সময়—-তারপর কোথায় বদলি হব—তার ঠিক নেই—এখন এসবের কোন দরকার নেই —আমি জানতাম তুমি স্মার্ট মেয়ে— এখন দেখছি তুমি যে কি তা ভাষায় বুঝাতে পারব না!!
পরদিন হাসপাতালে গিয়ে ভ্রুণের হত্যা করে আসে।
“মা মেরো না ,বাবা মেরো না ,আমায়”।
কে শোনে?? কার কথা।
তোমরা পাপ করছ—
এর ফল পাবেই।
আজ আট বছর হল বরের প্রমোশনের পর প্রমোশন হয়েছে কিন্তু অনিন্দিতার সংসারে ডিমোশন হয়েছে।
ননদের ছেলের ষষ্ঠী পূজায় শাশুড়ি অনিন্দিতাকে কিছু ধরতে বারণ করেছেন—কারণ জিজ্ঞাসা করাতে বলেছেন তুমি বাজা তাই।
অনিন্দিতা চিৎকার করে বলে আমিও তো মা হয়েছিলাম—শাশুড়ি বলেন তা বাপু রাখতে তো পারো নি—- না মা আপনি ভুল ভাবছেন আমি তো সযত্নে রেখেছিলাম— কিন্তু আপনার ছেলেই রাখতে দেয় নি।
শাশুড়ি বলে তুমি কি কচি খুকি—বাবুর সব কথা যেন কত শোনো—তোমার বুদ্ধি নেই।
জানি “শরীর না ফিগার “কি বলে তা নষ্ট হয়ে যাবে—বুঝি বুঝি সব বুঝি।
অনিন্দিতা আজ সন্তানের জন্য পাগল। বরের কান্না ও চোখে পড়ে—-কিন্তু অনিন্দিতা নিরুত্তাপ।
“মা মেরো না আমায় “_শুধু কানে ভাসে।
ভগবান তোমাদের কড়ায় গন্ডায় শোধ দেবেন—- তা শোধ দিয়েছেন—-তাই তো অনিন্দিতা ও অনীকের জীবনে শুধু হাহাকার।।
প্রতিশোধ….
হাসপাতালে তুহীন ভর্তি —-ভেন্টিলেশনে আছে।
মায়ার চোখে জল নেই। মায়াকে দীর্ঘ পনের বছর মানসিক,শারীরিক অত্যাচারের ফল তুহীনের ভেন্টিলেশনে থাকা।
এত পাপ যাবে কোথায়??
মায়া র ইচ্ছা করছে সব নল টেনে খুলে দিতে— মায়া এদিক ওদিক তাকিয়ে বলে— মনে পরে আমাকে দিনের পর দিন মারার কথা।
দেখ ভগবান তোমার দুই হাত কেমন মুচরিয়ে দিয়েছে।
নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে তো —-আমাকে যখন গলা চিপে ধরে মারতে আমারো নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হত।
আরেকটা কথা শোনো ভগবান তোমায় প্রতিশোধ নেন নি—-আমার মত নিরীহ মহিলা— স্বামীর শত অত্যাচারে সুপারি কিলারের ও খোঁজ পায়।
অনুশোচনা….
সোমা ভেবেছিল বিয়ের পর থেকে শাশুড়ি যেভাবে দিনের পর দিন মানসিক নির্যাতন করেছেন—–সময়মত খেতে দেন নি।
সব কাজে ত্রুটি বার করতেন— মেয়ে ও বউ যে আলাদা সেটা প্রতি পদক্ষেপে বোঝাতেন—সেটা কবে যে বদলা নিতে পারবে— দিন তো আসবেই।
তবে দিন এসেছিল—ঐ শাশুড়ি প্রায় মর ়মর—সবাই ভাবছে প্রতিশোধ নিয়েছে বৌমা।
না তা করে নি —এমন সেবা করে শাশুড়িকে বাঁচিয়ে তুলেছিল—-যাতে বৌমার আন্তরিক সেবায় শাশুড়ি পূর্বে বৌমার সাথে কি ব্যবহার করতেন—-তাতেই নিজেই অনুশোচনায় দগ্ধ হবেন।
তাই প্রতিশোধ নয়—যদি কাউকে বিবেকের দংশন করানো যায়—অনুশোচনায় দগ্ধ করা যায়—সেটাই সবচাইতে ভালো।