Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » শোকগাথা : ১৬ আগস্ট ১৯৭৫ || Nirmalendu Goon

শোকগাথা : ১৬ আগস্ট ১৯৭৫ || Nirmalendu Goon

আজ সারাদিন আমার চতুর্দিকে বড় শোকাচ্ছন্ন নীরবতা ছিল।
একটি মৌমাছি আমার বুকে বসে আজ সারাদিন আমাকে তার
মধু-সংগ্রহের সংগ্রামী ইতিহাস শুনিয়েছে : কাছেই কোথাও জন্ম হবে
এক নতুন শিশুর, তার চিৎকার-করা মুখের জন্য চাই নীল পদ্মের মধু।
প্রহরী! প্রহরী! বলে আমি একবারও চেঁচিয়ে উঠিনি।
আমার প্রসারিত হাত থেকে খসে পড়েছে ক্লান্ত অনামিকা,
বুক থেকে পাঁজর-সহ হৃদপিন্ড ছিটকে পড়েছে দূরে কোথায়…।
আমি তবু ঐ অনাগত শিশুর লাল টুকটুকে জিহবার স্বপ্ন দেখে-দেখে
সারাদিন খুলে রেখেছিলাম আমার রক্তমধুভান্ডের মুখ।
আমার প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ছিল পরস্পরের ব্যথিত কফিন।
আজ সারাদিন আমার নিদ্রাহীন চোখ দুটো মগ্ন ছিল সম্পূর্ণ
নতুন এক নিদ্রার আস্বাদনে। খুব ক্লান্তি ছিল আজ সারাদিন।

সকালের সূর্য এসে ফিরে গেছে, আমি তাকে বসতে বলি নি।
কোথায় বসতে দেবো তাকে? রক্ত আর বারুদের ধূপগন্ধে
সারাদিন আঙিনায় ঝরেছে গোলাপ।
আমি তার অভিমান থামাতে পারিনি।
আমার হাতের ভাগ্যরেখা বেয়ে আজ সারাদিন
লাল পিঁপড়েরা দল বেঁধে উঠেছে পর্বতশৃঙ্গে; কখনো-বা
অভ্যাসবশত কামড় দিয়েছে চামড়ায়, যদি কিছু রক্ত মেলে।
আমি আমার হাতের মুঠো সারাদিন বন্ধ করিনি,
খুলে রেখেছিলাম সবার জন্য।
আমার মুখশ্রীকে আমি যতদূর সম্ভব অবিকৃত রেখেছিলাম
আমার সন্তানদের কথা ভেবে।
আমার মৃত-মুখশ্রীতে পিতা পিতা বলে
লুটিয়ে পড়েছিল আমিহীন শ্রাবণের প্রথম বিকেল।

তখন মুহূর্তের জন্য খঞ্জর রূপান্তরিত হলো চুম্বনে।
মনে হলো নারকেল গাছের পাতা ছুঁয়ে নেমে এসেছে সায়াহ্নের
শেষ আলো। নিস্তব্ধ ঝিলের জল থেকে উঠে আসা লাল
শাপলাগুলো গোধূলিবেলার ত্রস্ত কিশোরীর মতো আড়চোখে
আমাকে দেখলো শেষবার…. তারপর ডুব দিলো লেইকের
লেলিহান জলে। বিদায়ের শেষ-অস্তরাগে রাঙা হয়ে উঠলো
আমার চোখের পাতা।

সন্ধ্যায় সতর্ক প্রহরারত সৈনিকের বূহ্য ভেদ করে
আমার শয্যার পাশে এসে দাঁড়ালেন এক কবি,
যার কলম আপন ছায়ার মতো অনুসরন করতো আমাকে।
কবি এসে নত হলেন আমার ক্ষত-উৎকীর্ণ বুকের ওপর।
আমার নিশ্চল দেহে তিনি স্থাপন করলেন তাঁর উষ্ণ আলিঙ্গন,
স্পর্শ করলেন আমার উড়ে যাওয়া স্কন্ধের ভয়াল গহবর।
কী অদ্ভুত মমতায় মাখা সে স্পর্শ।

আমি প্রাণ নিয়ে জেগে উঠতে চাইলুম;
কিন্তু চোখ জাগলো না।
আমি তাকে আলিঙ্গনে জড়াতে চাইলুম,
হাত নিথর হয়ে থাকলো।
আমি চিৎকার করে কথা বলতে চাইলুম,
আমার স্বর মুক্ত হলো না।

আমার প্রিয় রবীন্দ্র-সংগীতগুলি গাইলেন না
কোনো শিল্পী, আমার রুহের মাগফেরাত
কামনা করলেন না কোনো শুভ্রশ্মশ্রু ইমাম,
আমার মুখ ঢেকে দেয়া হলো না কোনো সদ্যকেনা শুভ্র-কাফনে।
শুধু গোপন আঁখির জলে আমাকে ভিজিয়ে দিয়ে রাত্রির অন্ধকারে
সেই কবি আবে-জমজমের পবিত্র পানির মতো ঝরতে থাকলেন…;
যতক্ষণ-না দূরে, গ্রামের বাড়িতে, আমার জন্য প্রস্তুত হলো কবর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress