Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » শীতদুপুরে প্রথম দেখা || Shamsur Rahman

শীতদুপুরে প্রথম দেখা || Shamsur Rahman

শীতদুপুরে হঠাৎ
হৃদয় আমার লাফিয়ে উঠলো তরুণ মাছের মতো,
যখন তুমি সৌন্দর্যের আভা ছড়িয়ে
সাবলীল প্রবেশ করলে রেস্তোরাঁয়। নদীতীরে ভিড়লো
ময়ূরপঙ্খী। সেই মুহূর্তেই
আমার ভেতরে রূপান্তর। বছরের পর বছর
প্রাচীন অধীরতা নিয়ে
প্রতীক্ষায় ছিলাম যার, সে-ই কি তুমি?
আমার প্রৌঢ়ত্বের ধূসরতায়
এক রাশ শ্যামলিমা প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়ে ঝুলে রইলো।

বেশ কিছুক্ষণ, অথচ কী ক্ষণস্থায়ী সেই সময়,
আমরা বসেছিলাম মুখোমুখি। চারপাশের প্রতিটি বস্তু এবং
ব্যক্তিকে দৃষ্টি থেকে নিয়ে গেল আড়ালে
এক বেপরোয়া উদাসীন মনোভঙ্গী আর
আমার সকল একাগ্রতা শুধু তোমাকে ঘিরেই খেয়ালের আলাপ।
নেকড়ে রঙের পুলওভারের অন্তরালে মেষশাবকের মতো
তোমার উজ্জ্বল স্তনের ওঠানমা,
রঞ্জিত পবিত্র ঠোঁটে স্বপ্নঝালরের ঝিলিমিলি,
তোমার রহস্যঘন চোখের আধ্যাত্মিক ঘাট থেকে
যে নৌকো ছেড়ে গেল ঢউয়ের ওপর
নাচতে নাচতে, তার গলুইয়ে আমার আকাঙ্ক্ষা সওয়ার হয়ে চলেছে,
দেখতে পেলাম।

তুমি যখন আমার প্লেটে সাজিয়ে দিলে
ক্লাব স্যান্ডুইচ, তোমার আঙুল আমার দিকে
একজন ব্যালে নর্তকীকে এগিয়ে দিলো। যদি তাকে আচম্বিতে
চুমো খেতে পারতাম, তাহলে
কার সাধ্যি আমাকে বঞ্চিত করে
অমরতার আলিঙ্গন থেকে? পেয়ালায়
কফি ঢালতে ঢালতে
এভাবে চোখ রাখলে আমার চোখে, মনে হলো
তুমি লহমায় পাঠ করে নিয়েছো
আমার মনের দেয়ালের লিখন। তোমার চোখের
তারায় কি ফুটে উঠেছিল মৃদু তিরস্কার না কি
এক ধরনের পুষ্পল প্রশ্রয়? হয়তো কিছুই নয় আমি নিজেই
রঙিন কুয়াশা দিয়ে চটজলদি
তৈরি করে নিচ্ছিলাম এমন এক বাড়ি,
যার কোনো দেয়াল নেই, নেই ছাদ;
আছে শুধু রঙধনু-সিঁড়ি, অন্তহীন, নীলিমাভিসারী।

এ-ও এক বিস্ময়, তুমি তাকালে আমার দিকে, আমাকে
নাওয়ালে তোমার অপরূপ হাসির নিরিবিলি ঝর্ণাধারায়,
অথচ্চ আমার হৃৎস্পন্দন, থেমে গেল না,
হাড়, মাংস আর ত্বক ফুঁড়ে আমার হৃৎপিণ্ড
বেরিয়ে এসে ছিটকে পড়লো না টেবিলে। কেবলি
ঝংকৃত হচ্ছিলাম রেয়াজ-সিদ্ধ ওস্তাদের হাতের বাদ্যের মতো।

যা বলতে চেয়েছি, অকথিক থেকে গেল আর
তা নিয়েই সারাক্ষণ বাক্‌ বাকুম বাক্‌ বাকুম করে
কাটিয়ে দিলাম যার প্রায় ষোল আনাই অবান্তর।
এভাবেই হয়তো তুচ্ছের ভিড়ে
বিড়ম্বিত হয় অসামান্য। স্পল্পভাষী বলেই
আমি পরিচিত। আমার এই হঠাৎ
প্রগল্‌ভতার উৎস খুঁজতে যখন আমি ব্যস্ত,
তখন দ্বিপ্রাহরিক স্বপ্নকে খানিক সরিয়ে বললে তুমি,
‘এবার উঠতে হয়। সব ভালো জিনিষেরই
কখনো না কখনো শেষ হবার কথা,
মনে মনে আওড়ালাম। যখন তুমি টেবিল থেকে
হ্যান্ডব্যাগ কুড়িয়ে নিয়ে দাঁড়ালে,

ভাবলাম, এই তো সেই দ্যুতিময় কবিতা
যা এতকাল ধরে লিখতে চেয়েছি,
কিন্তু আজো লেখা হয়ে ওঠে নি। আমার
অব্যক্ত প্রশ্ন তোমার তরঙ্গিত
শরীরকে স্পর্শ করলো আলতো,-
কোনোদিন কি সেই না-লেখা কবিতাকে নিজস্ব করে পাবো?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *