কী করে আরম্ভ হল এ জগৎ মনে নেই, তবে
একদিন আস্তে করে পরীক্ষামূলকভাবে আমি
তাকিয়েছিলাম আর দেখি ধীরে ধীরে সব ধরা
দিতে এল, ফুরফুরে কচুর পাতাকে কেন্দ্র করে
একটি মৌমাছি, তার সবচেয়ে লক্ষ করবার
মতো যে ব্যাপার, তার সে গুনগুন, আমাকে অবাক
করে দিল— এখানেই সমস্ত বিস্ময় দিয়ে দিলে
চলবে না— এই ভেবে আমি চোখ নিয়ে যাই দূরে
যেখানে একটি স্তব্ধ বারান্দা এবং তার শেষে
হাওয়ায় নড়ছে একটি বল সেটি লক্ষ করে
হামাগুড়ি দিচ্ছে একটি শিশু, এসময় যদি আর
এক ঝাপটা বাতাস লাগে যাবে বলটি গড়িয়ে
অসীমের মধ্যে, তবু শিশুটির মগ্ন হামাগুড়ি
এর ভেতর যে সংকট, গন্তব্য তা আমি নষ্ট
করতে চাই না, বল আর শিশুটিকে লক্ষ করি।
এই যে বারান্দা নিয়ে এতক্ষণ ধরে বলে গেলে
এটা সত্যি নয়, সব সময় কি ওটা স্তব্ধ ছিল?
মেয়েটি আশ্চর্যভাবে মুগ্ধ হয়ে দাঁড়াত যখন?
স্তব্ধতা কি বেড়ে যেত বলে মনে হয়, ওপারের
গাছ থেকে পাখি যেতে চাইত না বলে ধরে নেব?
এ বারান্দা আমাদের বাড়ি থেকে নিয়ে আসলে না?
তবে এর সঙ্গে যোগ করে নাও একটি টেবিল
টেবিলে চায়ের কাপ, ফ্লাক্স, শিশি, লবণের বাটি
টুল দু’-তিনটে, অল্প দূরে ইজি চেয়ারে গা এলিয়ে
দিয়েছেন এক ভদ্রলোক, সম্ভবত মেয়েটির
বাবা, ক’মিনিট আগে অফিসের থেকে ফিরেছেন
চুপচাপ, ওদিকের খুব ছোট একখানা ঘর
থেকে খুন্তি, কড়াইয়ের শব্দ আসছে, তা আসতে দাও
এই সব পরিবেশ করে তুলেছিল উচ্ছ্বসিত।
আজ এই এতদিন পরে সেই বারান্দায় এসে
দাঁড়াতেই থমকে গেলাম, টেবিলটি আর নেই
রান্নার আওয়াজ নেই, পড়ে আছে একখানা
বল, সেটি হাওয়ায় নড়ছে, যদি আর একটু জোরে
হাওয়া লাগে, গড়িয়ে পড়বে একেবারে নীচে
অসীমের মধ্যে, শোনো এরকম অবস্থায় আমি
এসে দাঁড়াতে চাইনি কখনওই, শিশুটি যখন
হামাগুড়ি দিয়ে বলটির দিকে এগিয়ে চলেছে।