Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » শিব মহাপুরাণ || Prithviraj Sen » Page 5

শিব মহাপুরাণ || Prithviraj Sen

দেবতারা প্রত্যেকে খুব সুন্দর দেখতে, কিন্তু গণেশ হলেন গজানন। তাঁর হাতির মতো মুখ। তাই কার্তিকের থেকে এই পুত্রের প্রতি মা বাবার স্নেহ একটু বেশি। গণেশও চেষ্টা করেন তাঁর বাবা মাকে খুশি করতে। কার্তিকও মা-বাবার সেবায় সততই নিয়োজিত থাকে।

দেবী হৈমবতী শঙ্করকে বললেন, ছেলেরা যুবক হয়ে উঠেছে, এখন তাদের বিয়ে দেওয়া উচিত।

শিব বললেন, তুমি ঠিক বলেছো, দুই পুত্রই আমাদের কাছে সমান প্রিয়। তাহলে কার আগে বিয়ে দেব?

কার্তিক গণেশের চেয়ে বড়ো তাহলে কার্তিকেরই আগে বিয়ে দেওয়া উচিত। হরপার্বতী দুজনে মিলে একটা যুক্তি করলেন, এবং সেই মতো তাদের দুই ছেলেকে ডেকে পাঠালেন। ছেলেরা দুজনেই হাজির হলেন তাদের সামনে এবং প্রণাম জানালেন।

মহেশ্বর পুত্রদের বললেন–তোমরা দুজনেই আমাদের কাছে সমান। আমরা ঠিক করেছি যে আগে পৃথিবী পরিক্রমা করে আসবে, তার আগে বিয়ে হবে।

বাবার কথা শুনে কার্তিক খুব আনন্দিত হলেন। তার ময়ূর বাহন আছে, তিনি চড়ে বসলেন ময়ুরের পিঠের উপর। উড়ে চলল ময়ূর। মনে তার বিশ্বাস ছিল যে তিনি এই পরীক্ষায় জয়ী হবেন। গণেশ এই পরীক্ষায় জয়ী হতে পারবেন না, কারণ তার বাহন মুষিক গণেশের ভার বহন করতে পারবে না, তো তাকে বয়ে নিয়ে যাবে কি করে? আর নিয়ে গেলেও কতটুকু নিয়ে যাবে?

গণেশ চিন্তিত হয়ে পড়লেন, ভাবলেন বাবা-মার এই নিয়মে দাদারই জয় হবে। আমার-দ্বারা এই কাজ সম্ভব নয়। দাদাই জয়ী হবে তোক দাদার আগে বিয়ে আমি না হয় পরে বিয়ে করব। আমার বাহন

তো আমাকে নিয়ে চলতেই পারবে না; আর যদি হেঁটে যেতে যাই তাহলে তো হাঁপিয়ে পড়ব।

গণেশ এইসব ভেবে বিষণ্ণ হয়ে পড়লেন। তারপরে তার মনে পড়ল শাস্ত্রের কথা। পিতা-মাতার চরণ পূজা করে প্রদক্ষিণ করলে সমগ্র পৃথিবী প্রদক্ষিণের ফল লাভ হয়।

এই কথা ভেবে তিনি মনে মনে প্রফুল্লিত হলেন। যথাবিধি স্নান করে পিতা-মাতাকে একটি পবিত্র আসনে বসিয়ে ভক্তিভরে আনন্দের সঙ্গে পূজা করলেন। তারপরে সাতবার প্রদক্ষিণ করলেন। জোড়হাতে তাদের সামনে এসে দাঁড়ালেন।

পুত্রের কীর্তি দেখে হর-পার্বতী খুব খুশি হলেন।

তারপরে গণেশ বললেন, হে পিতঃ, হে মাতঃ, আপনারা বলেছিলেন, যে আগে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করবে তার আগে বিয়ে দেবেন। তাহলে আমার বিয়ের ব্যবস্থা করুন।

শঙ্কর গণেশের সব কথা শুনলেন। বললেন, তুমি তো নিয়ম পালন করোনি। তাহলে কি করে তোমায় আগে বিয়ে দেবো? তুমি আগে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করে এসো। কার্তিক চলে গেল সেই উদ্দেশ্যে আর তুমি তো শুরুই করলে না।

পিতার কথা শুনে গজানন বললেন, আমি তো সাতবার পৃথিবী প্রদক্ষিণ করলাম। এই যে আমি আপনাদের চরণ পূজা করে সাতবার প্রদক্ষিণ করলাম এতে কি আমার পৃথিবী প্রদক্ষিণ হল না? আর যে পিতা-মাতার পূজা না করে পুণ্যের আশায় তীর্থে তীর্থে ভ্রমণ করে তার কি পৃথিবী প্রদক্ষিণ হয়? পুত্রের প্রধান তীর্থ পিতা-মাতার পাদপদ্ম। তেমনি স্বামীই পত্নীর পরম তীর্থক্ষেত্র। এখন আমি আপনাদের প্রদক্ষিণ করলাম। এতো পৃথিবী পরিক্রমা হল আর যদি না হয়ে থাকে তাহলে বেদবাক্যকে মিথ্যা বলতে হয়।

শিব-দুর্গা–গণেশের কথা শুনে অতীব বিস্মিত হলেন। তারা বললেন, গজানন তুমি ঠিক বলেছো, বেদবাক্য কখনও মিথ্যা হয় না।

শিব বিশ্বরূপের দুই কন্যা সিদ্ধি আর বুদ্ধির সঙ্গে গণেশের বিয়ে দিলেন। তারা দুজনেই ছিলেন সর্বসুলক্ষণা, মনোরমা, সুবদনী। শিব বিশ্বকর্মাকে ডেকে পাঠালেন। বিশ্বকর্মা এলেন, এবং শিবের ইচ্ছায় বিচিত্র রকমের ফুল, লতা-পাতা আর অলঙ্কার দিয়ে একটি সুন্দর সভাগৃহ সাজানো হল। সেই বিয়েতে এলেন দেবতা, গন্ধর্ব, যক্ষ, ঋষিগণ।

তারপরে সেখানে সিদ্ধি ও বুদ্ধিকে আনা হল শুভক্ষণে। সকল অতিথিরা আনন্দিত হলেন, গণেশও খুব খুশি হলেন। কিছুদিন পরে সিদ্ধির গর্ভে জন্ম নিল লক্ষ, এবং বুদ্ধির গর্ভে জন্ম নিল লাভ নামে পুত্র। গণেশের দুই পুত্রের জন্ম হল।

এইভাবে গজাননের সংসার-জীবন মহানন্দে কাটতে লাগলো। এদিকে সারা পৃথিবী ঘুরে কার্তিক এলেন কৈলাসে। কার্তিককে ডেকে নারদ জানালেন যে, গণেশের বিয়ে হয়ে গেছে। তোমাকে পৃথিবী প্রদক্ষিণের ছলে দূরে পাঠিয়ে দিয়ে তোমার বাবা মা তাদের প্রিয় পুত্র গণেশের বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। বিশ্বরূপের দুই কন্যাকে গণেশ বিয়ে করে খুব সুখে আছে। বর্তমানে তার দুটি সন্তানও হয়েছে। আর তুমি এতো কষ্ট করে পৃথিবী ঘুরে এলে! বাবা মা অন্যায় করলে কি করবে নিজের? অন্যের কথা আর কি বলব, মা যদি ছেলের মুখে বিষ তুলে দেয়, বাবা যদি ছেলেকে বিক্রি করে আর রাজা যদি সব, চুরি করে নেয়, তাহলে কার কাছে গিয়ে প্রতিবাদ করবে?

দেখ ষড়ানন! যারা তোমার সঙ্গে এমন ব্যবহার করেছে তাদের মুখ দেখা উচিত নয়। আমি তোমাকে সব বললাম, এবার তোমার যা ইচ্ছা তাই করো।

নারদের কথা শুনে কার্তিক খুব দুঃখ পেলেন। তারপরে রেগে গিয়ে হর-পার্বতীকে প্রণাম করলেন এবং চলে গেলেন ক্রৌঞ্চ পর্বতের কাছে।

হর-গৌরী ছেলেকে চলে যেতে দেখে তারা ডাকতে লাগলেন, তুমি এইমাত্র পৃথিবী প্রদক্ষিণ করে এসেছ, এখন তোমার বিবাহ দেবো। কিন্তু তুমি আমাদের কিছু না বলে চলে যাচ্ছ কেন?

তখন কার্তিক রেগে গিয়ে বললেন, আমাকে আপনারা ছল করে পৃথিবী পরিক্রমা করতে পাঠিয়ে দিয়ে গণেশের বিয়ে দিয়ে দিলেন।

এই কথা বলেই কার্তিক চলে গেলেন ক্রৌঞ্চ পর্বতে। সেখানেই রয়ে গেলেন। পিতা-মাতার উপর রাগ করে আর বিয়েই করলেন না। সেইজন্য তার আর এক নাম হলো ‘কুমার।

শাস্ত্রে আছে–কার্তিকী পূর্ণিমার কৃত্তিকা নক্ষত্রে কুমারকে দর্শন করলে সর্বপাপ নষ্ট হয় আর সকল অভীষ্ট সিদ্ধ হয়।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *