শাদা কাগজের হিমশূন্যতা অনেকক্ষণ তাকে
ভীষণ বিদ্রূপ করে। মনে হয় তার-
কে এক সফেদ প্রেত শব্দহীন বিকট হাসির তোড়ে ঘর
কাঁপিয়ে তুলছে ঘন ঘন; এই টেবিল চেয়ার খাটসুদ্ধ
সারা ঘর ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে যেন, প্রেত
নয়তো নিঃসঙ্গ, ওর সঙ্গে নন্দি-ভৃঙ্গি জুটে যায় যথারীতি।
ঘর ছেড়ে সে কি চলে যাবে এই ডামাডোল থেকে
দূরে অন্য কোনওখানে? যাবে কি গাছের কাছে যাবে ঘাসবনে?
অথবা লেকের ধারে শুয়ে আকাশের রূপ দেখে
জুড়োবে চোখের জ্বালা? প্রেতের পীড়ন থেকে বাঁচা যাবে তবে।
ঠাঁই-নাড়া হয় না সে। চেয়ারেই বসে থাকে অটল, অনড়;
অকস্মাৎ দৃষ্টিপথে ওর
আশ্চর্য আলোর নাচ প্রস্ফুটিত, এ যে ঘর জুড়ে ক্রমাগত
নেচে চলেছেন সুফী কবি রুমি। বিস্ময়-বিহ্বল দু’টি চোখে
সে কেবল চেয়ে থাকে নিষ্পন্দ, নির্বাক। বহু যুগ যুগান্তর,
মনে হ’ল তার, কেটে গেল চোখের পলকে; কবি
ওর কাঁধে হাত রেখে কী যে বললেন আলোর স্বরে, সে-ভাষার
কিছু বুঝল সে আর কিছুটা অবোধ্য রয়ে যায়।
সুফী কবি ঘূর্ণিনাচে মিশে গেলে পর সে সংবিৎ
ফিরে পায়, শাদা কাগজের বুক খুব কাছে ডাকে তাকে, সেই
আমন্ত্রণে যেন শুভ ইন্দ্রজাল ছিল,
মন্ত্রমুগ্ধ সে কলম তুলে নেয় হাতে আর প্রেত নন্দি-ভৃঙ্গিসহ
নীরবে পালিয়ে যায়। শাদা, শূন্য কাগজ ক্রমশ
ডালপালা, ফুল, পাতা, প্রজাপতি আর পাখি সমেত উদ্যান হয়ে ওঠে।