Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

অরিন্দম চৌধুরী হতবাক ও উত্তেজিত । এটা সেই বিশেষ হীরের আংটি । স্কুল ফাইনাল পরীক্ষায় পাশ করার পর দিদার কাছ থেকে পাওয়া । আরও বেশি উত্তেজিত হবার কারণ,এটা সেই আংটি যেটা কালীঘাটে তিতির কে বিয়ে করার পর তিতিরের আঙ্গুলে পড়িয়ে দিয়েছিল । ওদের বাড়ির আউট- হাউজ এ। উত্তেজিত অরিন্দম রিসিভার তুলে ডায়াল করলো ।
-হ্যালো,প্রভাস।আমি অরিন্দম দা বলছি । তুমি যে মেয়েটিকে পাঠিয়েছিলে তার কি অন্য কোনো নাম আছে? কি বলছো?শণকা ?ছদ্মনাম মন্চে অভিনয়ের জন্য? ভালো নাম তিতির? প্রভাসের প্রশ্নের উত্তরে বলে- সকালে কারোকে না বলে চলে গেছে । তিতিররা আগে কোথায় থাকতো?কি বললে,ডায়মন্ডহারবার? এখন কোথায় থাকে?পরিস্কার করে বলো।শুনতে পাচ্ছি না । দাঁড়াও কাগজে লিখে নেই ঠিকানাটা। রিসিভার নামিয়ে একটা লেখার প্যাড নিয়ে এলো । রিসিভার কানে দিয়ে বলল- ঠিকানা বলো। এখনকার ঠিকানা । বেদিয়াপাড়া,সাউথ সিঁথি? কি? আর .এন.ট্যগোর রোড?কত নম্বর? 17-A.।ঠিক আছে এখন ছাড়ো পরে বলবো ।

এতো ভোরে তিতিরকে দেখে চমকে উঠলেন ওর মা। কালই মেয়ে পুরী যাবে বেড়াতে বলে চলে গেল । অথচ এই সাত সকালে মেয়ের এ কি চেহারা!রাতে ই বা কোথায় ছিল? ছুটে গেলেন মেয়ের কাছে ।
– শণো,কি হয়েছে? কাল পুরী যাবি বলে বেড়িয়ে গেলি।কিন্তু এমন চেহারা কেন? শরীর টরির খারাপ হয়নি তো? হঠাৎ মেয়ের রকম সকম দেখে থেমে যান তিতিরের মা। হাতের পাতায় মুখ ঢেকে কাঁদছে মেয়ে । পাশে বসে পিঠে হাত দিতে ই মায়ের বুকে লুটিয়ে পড়ে কান্নায়।মাও বুকে জাপটে ধরেন।
– শণো,কি হয়েছে বল? মায়ের স্নেহের স্পর্শে মনের আগল খুলে গেছে । চোখের জলে বান ডেকেছে। সেই বানে ভাসতে ভাসতে সব বলেছে মাকে। এরই মধ্যে কখন যে অঘোর এসেছে জানেনা।
-দিদি তোকে আগেই বলেছি,ওটা কোন ওবিয়ে নয়। কেন সেটা ধরে বসে আছিস? অঘোরের কথায় কান না দিয়ে ভেতরে ওর ঘরে ঢুকে গেছে তিতির। গতরাতের গ্লানি কাটাতে স্নান সেরে নিলো।

এতক্ষণে ও বাড়িতে হয়তো হৈচৈ পড়ে গেছে । জানা জানি হয়ে গেছে । জীবনে আর ওঁর সাথে দেখা হবে না । নম্বর টা মিলিয়ে নিলো অরিন্দম । বারোটা বেজে গেছে । অসময় হলে ও অরিন্দম কে ভেতরে ঢুকতেই হবে । একতলা বাড়ি সামনে ফুলের বাগান । দরজায় বেল্ টিপতে ই বেড়িয়ে এলো একজন যুবক ।
– কাকে চান?
– আপনি,মানে তুমি অঘোর না?
– হ্যাঁ । কিন্তু আপনাকে তো চিনলাম না? 
– আমি অরিন্দম চৌধুরী। তোমাদের অরুদা।

মুহূর্তে অঘোরের চোয়াল শক্ত হয়ে উঠলো । রুক্ষ ভাবে বললো- কি ব্যাপার? এখানে কেন? আপনার কি এক বিন্দু দয়া মায়া নেই? 
– না না আমি তোমার দিদিকে-
– চলে যান এখান থেকে,নইলে লোক জড়ো হয়ে যাবে । অরিন্দমের চোখে মুখে কষ্টের ছাপ। তিতিরের মা বাইরে বেরিয়ে এলেন ।বলেন- কে রে?কার সাথে এমনভাবে কথা বলছিস?
– মাসিমা আমি অরু।
– ওমা অ রু? এসো বাবা ভেতরে এসে বসো ।
– মা,তুমি ওকে ঢুকতে দেবে না । চাব্ কে তোমার ছাল তুলে নেবো লোফার কোথাকার। আমাদের সরলতার সুযোগ নিয়েছো? সপাটে একটা চড় এসে গালে পড়তেই থমকে গেল অঘোর । চমকে তাকাল দিদির দিকে । কখন যে দিদি এসেছে টের পায়নি ।
– এতো বড় সাহস তোর কোত্থেকে হলো? বড়োদের মান্যি করতে শিখিসনি? রণচন্ডী মূর্তি তিতিরের । কিন্তু চড় মেরে ভীষণ কষ্ট হলো । কখনো ভাইয়ের গায়ে হাত তোলেনি যে তিতির,সে আজ এটা কি করলো? তিন জনের মুখের ওপর নজর বুলিয়ে ঢুকে গেছে ভেতরের ঘরে । ভেতর থেকেই বুঝতে পেরেছে কে এসেছে? শরীর কেঁপে উঠেছিল ।-মানুষটার গলায় আত্মসমর্পণের ও অনুশোচনার মন কাড়া সুর শুনে। ভেতরের ঘরের জানালা দিয়ে দেখেছে তার হেনস্থা হওয়া চোখ মুখের ছবি । মা তাকে ভেতরে ঢুকতে দেওয়ায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে । কিন্তু অঘোরের ‘চাবকে ছাল তুলে নেব’ কানে যেতেই কখন যেএ ঘরে ঢুকেছে তা নিজেই জানে না । বাইরের ঘরে বসে তিন জন। অঘোর মাথা নিচু করে চোখ ঢেকেছে। তিতিরের মা অরিন্দম কে বললেন,-বাবা মেয়েটার খুব কষ্ট ।
– আমি ওকে নিয়ে যেতে এসেছি মাসিমা । এসে থেকে আপনাদের অনেক খোঁজ করেছি । আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম একেবারে । কিন্তু প্রভাসের জন্যই ওকে খুঁজে পেলাম । আপনার আপত্তি না থাকলে আমি ওকে নিয়ে যেতে এসেছি। এতক্ষণে অঘোর মুখ তুললো। বলে- আপনি বিয়ে করেননি?
– কেউ দুবার বিয়ে করে? অন্তত আমি করিনি। অঘোরের চোখে জল,- -মা,অরুদাকে দিদির ঘরে নিয়ে যাই?
– যা। দিদির ঘরে যেতে যেতেই মাফ চেয়ে নিয়েছে অঘোর ।পিঠে হাত বুলিয়ে অরু ওরফে অরিন্দম বলেছে–যার জন্য তুমি আমার সঙ্গে এমন ব্যবহার করলে সে তো আমার ও আপন। অরিন্দম কে দিদির ঘরে ঢুকিয়ে দিয়ে অঘোর চলে গেছে । ঘরে ঢুকে অরিন্দম দেখছে তিতির ফুলে ফুলে কাঁদছে ।
– তিতির! কান্না র বেগ বেড়ে গেছে আরও । তবুও চোখ মুছেছে তিতির।
– বসুন।
– বলো,আমি তোমার কে?কাছে থেকে ও বলতে পারলে না আমাকে? জানি আমারই ভুল হয়েছে । কিন্তু বিশ্বাস করো এ ক’ বছর শুধু মাত্র তোমার কথা ভেবেছি। আমি জানতাম তুমি আমারই থাকবে । এখন বলো,তুমি আমায় ক্ষমা করেছো?
– আঃ,কি বলছো?
– তিতির বাড়ি চলো। মানুষটার চোখে জল । তাঁকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ও সুখ।

Pages: 1 2 3 4

1 thought on “শণকা || Shipra Mukherjee”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress