শেষ পর্ব
অরিন্দম চৌধুরী হতবাক ও উত্তেজিত । এটা সেই বিশেষ হীরের আংটি । স্কুল ফাইনাল পরীক্ষায় পাশ করার পর দিদার কাছ থেকে পাওয়া । আরও বেশি উত্তেজিত হবার কারণ,এটা সেই আংটি যেটা কালীঘাটে তিতির কে বিয়ে করার পর তিতিরের আঙ্গুলে পড়িয়ে দিয়েছিল । ওদের বাড়ির আউট- হাউজ এ। উত্তেজিত অরিন্দম রিসিভার তুলে ডায়াল করলো ।
-হ্যালো,প্রভাস।আমি অরিন্দম দা বলছি । তুমি যে মেয়েটিকে পাঠিয়েছিলে তার কি অন্য কোনো নাম আছে? কি বলছো?শণকা ?ছদ্মনাম মন্চে অভিনয়ের জন্য? ভালো নাম তিতির? প্রভাসের প্রশ্নের উত্তরে বলে- সকালে কারোকে না বলে চলে গেছে । তিতিররা আগে কোথায় থাকতো?কি বললে,ডায়মন্ডহারবার? এখন কোথায় থাকে?পরিস্কার করে বলো।শুনতে পাচ্ছি না । দাঁড়াও কাগজে লিখে নেই ঠিকানাটা। রিসিভার নামিয়ে একটা লেখার প্যাড নিয়ে এলো । রিসিভার কানে দিয়ে বলল- ঠিকানা বলো। এখনকার ঠিকানা । বেদিয়াপাড়া,সাউথ সিঁথি? কি? আর .এন.ট্যগোর রোড?কত নম্বর? 17-A.।ঠিক আছে এখন ছাড়ো পরে বলবো ।
এতো ভোরে তিতিরকে দেখে চমকে উঠলেন ওর মা। কালই মেয়ে পুরী যাবে বেড়াতে বলে চলে গেল । অথচ এই সাত সকালে মেয়ের এ কি চেহারা!রাতে ই বা কোথায় ছিল? ছুটে গেলেন মেয়ের কাছে ।
– শণো,কি হয়েছে? কাল পুরী যাবি বলে বেড়িয়ে গেলি।কিন্তু এমন চেহারা কেন? শরীর টরির খারাপ হয়নি তো? হঠাৎ মেয়ের রকম সকম দেখে থেমে যান তিতিরের মা। হাতের পাতায় মুখ ঢেকে কাঁদছে মেয়ে । পাশে বসে পিঠে হাত দিতে ই মায়ের বুকে লুটিয়ে পড়ে কান্নায়।মাও বুকে জাপটে ধরেন।
– শণো,কি হয়েছে বল? মায়ের স্নেহের স্পর্শে মনের আগল খুলে গেছে । চোখের জলে বান ডেকেছে। সেই বানে ভাসতে ভাসতে সব বলেছে মাকে। এরই মধ্যে কখন যে অঘোর এসেছে জানেনা।
-দিদি তোকে আগেই বলেছি,ওটা কোন ওবিয়ে নয়। কেন সেটা ধরে বসে আছিস? অঘোরের কথায় কান না দিয়ে ভেতরে ওর ঘরে ঢুকে গেছে তিতির। গতরাতের গ্লানি কাটাতে স্নান সেরে নিলো।
এতক্ষণে ও বাড়িতে হয়তো হৈচৈ পড়ে গেছে । জানা জানি হয়ে গেছে । জীবনে আর ওঁর সাথে দেখা হবে না । নম্বর টা মিলিয়ে নিলো অরিন্দম । বারোটা বেজে গেছে । অসময় হলে ও অরিন্দম কে ভেতরে ঢুকতেই হবে । একতলা বাড়ি সামনে ফুলের বাগান । দরজায় বেল্ টিপতে ই বেড়িয়ে এলো একজন যুবক ।
– কাকে চান?
– আপনি,মানে তুমি অঘোর না?
– হ্যাঁ । কিন্তু আপনাকে তো চিনলাম না?
– আমি অরিন্দম চৌধুরী। তোমাদের অরুদা।
মুহূর্তে অঘোরের চোয়াল শক্ত হয়ে উঠলো । রুক্ষ ভাবে বললো- কি ব্যাপার? এখানে কেন? আপনার কি এক বিন্দু দয়া মায়া নেই?
– না না আমি তোমার দিদিকে-
– চলে যান এখান থেকে,নইলে লোক জড়ো হয়ে যাবে । অরিন্দমের চোখে মুখে কষ্টের ছাপ। তিতিরের মা বাইরে বেরিয়ে এলেন ।বলেন- কে রে?কার সাথে এমনভাবে কথা বলছিস?
– মাসিমা আমি অরু।
– ওমা অ রু? এসো বাবা ভেতরে এসে বসো ।
– মা,তুমি ওকে ঢুকতে দেবে না । চাব্ কে তোমার ছাল তুলে নেবো লোফার কোথাকার। আমাদের সরলতার সুযোগ নিয়েছো? সপাটে একটা চড় এসে গালে পড়তেই থমকে গেল অঘোর । চমকে তাকাল দিদির দিকে । কখন যে দিদি এসেছে টের পায়নি ।
– এতো বড় সাহস তোর কোত্থেকে হলো? বড়োদের মান্যি করতে শিখিসনি? রণচন্ডী মূর্তি তিতিরের । কিন্তু চড় মেরে ভীষণ কষ্ট হলো । কখনো ভাইয়ের গায়ে হাত তোলেনি যে তিতির,সে আজ এটা কি করলো? তিন জনের মুখের ওপর নজর বুলিয়ে ঢুকে গেছে ভেতরের ঘরে । ভেতর থেকেই বুঝতে পেরেছে কে এসেছে? শরীর কেঁপে উঠেছিল ।-মানুষটার গলায় আত্মসমর্পণের ও অনুশোচনার মন কাড়া সুর শুনে। ভেতরের ঘরের জানালা দিয়ে দেখেছে তার হেনস্থা হওয়া চোখ মুখের ছবি । মা তাকে ভেতরে ঢুকতে দেওয়ায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে । কিন্তু অঘোরের ‘চাবকে ছাল তুলে নেব’ কানে যেতেই কখন যেএ ঘরে ঢুকেছে তা নিজেই জানে না । বাইরের ঘরে বসে তিন জন। অঘোর মাথা নিচু করে চোখ ঢেকেছে। তিতিরের মা অরিন্দম কে বললেন,-বাবা মেয়েটার খুব কষ্ট ।
– আমি ওকে নিয়ে যেতে এসেছি মাসিমা । এসে থেকে আপনাদের অনেক খোঁজ করেছি । আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম একেবারে । কিন্তু প্রভাসের জন্যই ওকে খুঁজে পেলাম । আপনার আপত্তি না থাকলে আমি ওকে নিয়ে যেতে এসেছি। এতক্ষণে অঘোর মুখ তুললো। বলে- আপনি বিয়ে করেননি?
– কেউ দুবার বিয়ে করে? অন্তত আমি করিনি। অঘোরের চোখে জল,- -মা,অরুদাকে দিদির ঘরে নিয়ে যাই?
– যা। দিদির ঘরে যেতে যেতেই মাফ চেয়ে নিয়েছে অঘোর ।পিঠে হাত বুলিয়ে অরু ওরফে অরিন্দম বলেছে–যার জন্য তুমি আমার সঙ্গে এমন ব্যবহার করলে সে তো আমার ও আপন। অরিন্দম কে দিদির ঘরে ঢুকিয়ে দিয়ে অঘোর চলে গেছে । ঘরে ঢুকে অরিন্দম দেখছে তিতির ফুলে ফুলে কাঁদছে ।
– তিতির! কান্না র বেগ বেড়ে গেছে আরও । তবুও চোখ মুছেছে তিতির।
– বসুন।
– বলো,আমি তোমার কে?কাছে থেকে ও বলতে পারলে না আমাকে? জানি আমারই ভুল হয়েছে । কিন্তু বিশ্বাস করো এ ক’ বছর শুধু মাত্র তোমার কথা ভেবেছি। আমি জানতাম তুমি আমারই থাকবে । এখন বলো,তুমি আমায় ক্ষমা করেছো?
– আঃ,কি বলছো?
– তিতির বাড়ি চলো। মানুষটার চোখে জল । তাঁকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ও সুখ।
Khub bhalo laaglo