Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

অরু তিতিরকে দু ‘বাহুর মধ্যে টেনে নিয়েছে । ওষ্ঠো ভিজিয়ে নিয়েছে তিতিরের ওষ্ঠে। তিতিরের কম্পিত শরীর পরম স্নেহে টেনে নেয় বুকে । চুম্বন এঁকে দেয় তার কপালে । বলে,
– ভয় নেই । অপেক্ষা করবে আমার জন্য। ফিরেই তোমাকে জাঁক করে নিয়ে আসবো ।

নিজের হাতের হীরের আংটি তিতিরের আঙুলে পড়িয়ে দেয়। তিতিরের দেরী দেখে অঘোর ভেতরে ঢুকতে যাবে ঠিক এমন সময় ওরা বেড়িয়ে এলো। দুজনের ভঙ্গি ই অঘোরের সম্পূর্ণ অচেনা ।

অরুদা, যেন কিছু ঢাকতে চাইছে । দিদির এমন সলজ্জ ভাব অঘোর কখনও দেখেনি।এটা কি অঘোরের দিদি?একে কি অঘোর চেনে?

বাড়িতে ঢোকার মুখে অঘোর তিতিরকে বলেছে ।
– অরুদা এটা ভালো করেনি। আমার সরলতার সুযোগ এভাবে নিয়েছে । তুই ব্যাপারটা একদম ভুলে যা দিদি। অরুদা লন্ডন চলে যাবে । তুই এখানে পড়ে থাকবি। তাই এই বিয়েকে সত্যি ভাবিস না ।

বাড়ি ফেরার পর দুই ভাই বোনের ভাব ভঙ্গী দেখে তিতিরের মা কিছু সন্দেহ করে থাকবেন । দাদারা মায়ের এই লাগাম ছাড়া ভাবে,সিনেমা দেখতে ছেড়ে দেওয়ায় ,মায়ের প্রতি রুষ্ট । দুজনের পিঠে মার পড়েনি ঠিকই কিন্তু কথার চাবুক পড়েছে অনেক । এরপর কলেজে ছাড়া বাইরে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেল । সে রাতে খেতে পারেনি দু-ভাই বোন । বাইরে খেয়েছে কিনা মায়ের জিজ্ঞাসা । দুজনেই চেপে গেছে সেই ভয়ঙ্কর ঘটনার কথা ।

বিদেশে যাওয়ার আগে অরু একবার এসেছিল । বিদেশে যাওয়ার খবর ও সঙ্গে মিষ্টি নিয়ে এসেছিল। তিতিরের মা খুশি হলেও অঘোর আগের মতো সহজ হতে পারে নি। হ্যাঁ না করে সটকে পড়েছে । কিন্তু তার মধ্যে ও দিদির উপচে পড়া সলজ্জ হাসি দেখে গা জ্বলেছে অঘোরের। আবার দুঃখ হয়েছে দিদির জন্য। অমর ঐ ব্যাপারটা জানেনা তাই আগের মতো হুটোপুটি করেছে অরুদার সাথে।

অরু দার যাওয়ার কথায় হাসি উবে গেছে দিদির, তাও খেয়াল করেছে অঘোর। ইচ্ছে হয়েছে এক ঘুষি মেরে অরুদার নাকটা ফাটিয়ে দিতে । অঘোরের থেকে দু ‘বছরের বড় তিতির। তাই এতো টান দু’জনের । অঘোরের গলার কাছে একটা কান্নার দলা আটকে আছে। তিতিরের মুখে কথা কম। দিদির যে অরুদাকে দেখে অন্য অনুভূতি হয় তা ছোট হয়ে ও বুঝতে পারে অঘোর । কিন্তু বিয়ের কথা বলেই খারাপ করেছে সে। দোষ টা তো তার নিজের। দিদির জন্য বিষাদে মনটা ছেয়ে গেছে । আর তখনই ঠিক করে নিয়েছে ,দিদির সব দায়িত্ব বহন করবে সে। তিতির অবশ্য বুঝতো যে অঘোর এ ঘটনার জন্য নিজেকেই দায়ী করেছে।

সেদিন থেকেই চুলের আড়ালে সিঁদূর পড়াটা অভ্যাস করেছিল তিতির। অরু চলে যাওয়ার পর প্রায় বছর খানেক কেটে গেল। তিতিরের সেকেন্ড ইয়ারের শেষের দিনের পরীক্ষা । তিতির মাকে প্রণাম করতে মাথা নিচু করতেই মা বলেন,” শণ ,তোর মাথায় কি লেগেছে”? বিপদ বুঝে অঘোর ঝাঁপিয়ে পড়েছে ।

বলে– মা ,এখন দেখতে হবে না । দেরী হয়ে যাবে। চলতো দিদি। বলে বেড়িয়ে পড়ে রাস্তায় । রাস্তায় ফেটে পড়েছে ।
– তুই ওর নামে সিঁদূর পড়িস? তোকে বলেছি না ওটা কোন বিয়ে না । এরপর থেকে সিঁদূর পড়লে দাদাদের বলে দেবো। শয়তানটা চলে যাওয়ার আগে একটা অন্যায় করে গেল । রাগে চিৎকার করছিল অঘোর । রাস্তার লোক জন বলে মান্যি করেনি। কলেজ থেকে ফিরে সবই বলতে বাধ্য হয়েছে মায়ের কাছে । তিতিরের মা মেরে ফেলবেন বলে ছুটে গিয়ে ছিলেন ।
চিৎকার চেঁচামেচি তে ঘরের গোপন কথা আর গোপন থাকে নি। কানা ঘুষো টা ছড়িয়েছে চার দিকে। এমন কি হিতাকাঙ্খী রা বাড়ি বিক্রী করে অন্যত্র গিয়ে লোক লজ্জার হাত থেকে বাঁচার উপদেশ বাড়ি বয়ে দিয়ে গেছেন।

তিতিরের বড়দার বিয়ের পর বৌদি আসার সাথে সাথে শুভাকাঙ্খীরা এসে কুলে কালি দেওয়া এমন ননদের সাথে ঘর না করতেই মন্ত্র দিলেন। কারণ তার ও তো সন্তানাদির বিয়ে দিতে হবে। তাছাড়া তারও তো আত্মসম্মান আছে!

পরশীদের মন্ত্রে কাজ হয়েছিল। এরপর ই দাদারা বাড়ি বিক্রির তোর জোর শুরু করল। চড়া দামেই বাড়ি বিক্রি হল। পি জি হসপিটাল এর কাছে বড়দা একটা ফ্ল্যাট কিনে ফেলল। কিন্তু স্থানাভাবে আরো একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নেওয়া হল সিঁথির বেদিয়া পাড়ায়। কেনা বাড়িতে দাদারা থাকবে।

নতুন সংসারের হাল ধরতে হলো তিতিরকে । চাকরি না পাওয়া অবধি টানা দু বছর গ্রুপ থিয়েটার এ কাজ করে সংসার চালাতে হয়েছে তিতিরকে । এরই মধ্যে পড়াশুনা । রবীন্দ্রভারতী থেকে হিস্ট্রি তে এম.এ করার সময় অনেক বার অ্যামেচার গোষ্ঠী তে নাটকে অভিনয় করেছে তিতির । সেই গোষ্ঠী তে নাটক করে সুনামও অর্জন করেছিল । সংসারের দুঃসময়ে হাল ধরতেই ওদের হেড্ অফ্ দা ডিপার্টমেন্ট প্রফেসর বিমল দের নাটকের গোষ্ঠীতে যোগ দিয়েছে। স্যারের পরিচিত বলেই সসম্মানে অভিনয় করে একটা ভদ্রস্থ আয়ের পথ খুঁজে নেয় । অঘোরকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে ব্যাঙ্গালোর এ পাঠায় । অমরকে উচ্চ মাধ্যমিকে দুজন টিউটরের ব্যাবস্থা করে দেয়।

গাড়ি টা হঠাৎ থেমে যেতে শণকার চিন্তাটা হোঁচট খেল জমজমাট বেহালার রাস্তায় । মানুষটা দরজা খুলে নামছে। কিছু না বলে হঠাৎই অদৃশ্য হয়ে গেল ভিড়ে।”প্রতি দিন হাজার টাকা “। প্রভাস বলেছে ,ডঃ চৌধুরী লোক ভালো । শুধুমাত্র দিদিমাকে ঠান্ডা রাখতেই এই ব্যবস্থা । শণকাকে দশ দিন থাকতে হবে। ডক্টর চৌধুরীর বৌ সেজে । অবশ্য এখন আর টাকার দরকার নেই । এখন সে উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের ইতিহাসের শিক্ষিকা । মাইনে ও ভালো । শুধু কৌতুহল বশতঃ এখানে আসা। ডক্টর অরিন্দম চৌধুরী, কেমন লোক সে?

মানুষটার চেহারাই বলে দেয়,কি ধরনের জীবনে এঁরা অভ্যস্ত। দুর থেকে শণকা দেখলো সে আসছে । বেশ নজর কাড়া চেহারা । এরকম একজন পুরুষ সব মেয়েরই কাম্য হতে পারে । বয়স আন্দাজে
একটু বেশি গাম্ভীর্য । দুহাতে তার মিষ্টির প্যাকেট । কোন কথা না বলে প্যাকেটগুলো পেছনের সিটে রেখে দিল। এবার চালকের আসনে বসে পড়লো ।

শণকা কি দুর্বল হয়ে পড়ছে? শুধু কৌতুহল দমন করতে আসা। এর বেশি কিছু না । নিজেকে শাসায় শণকা ,”ডোন্ট ফরগেট দিস ইজ মেয়ারলি আ কন্ট্রাক্ট”। আয়নায় চোখ পড়তেই চার চোখের মিলন হয় । শণকার শরীরে রিণরিণ অনুভূতি । কাজটা নিয়ে কি ভালো করেনি? আবার চোখে চোখ পড়তেই মনের কাঁপন ।

‘আবার স্মৃতিতে ফিরে গেল তিতির। সেসময় দাদারা একটা খবর ও নেয়নি । মাঝে মাঝে মাকে শুনিয়ে গেছে ,যে মেয়ে নাটক করে সংসার চালায় ,তাকে যাই বলা হোক ভদ্রলোকের সন্তান বলা যায় না । নিজের বোন বলে পরিচয় দিতে লজ্জা বোধ করে তারা। অঘোর ব্যাঙ্গালোরে পড়তে যাওয়ার সময় বলেছে ।।
—দিদি আমি চাকরি পেলে তোকে আর কাজ করতে দেবোনা। অঘোরের কথায় হেসেছে তিতির। কারো ওপরে তিতিরের কোন আশা নেই । সব আশা শেষ হয়ে গেছে যখন ছয়টা বছর পর আসবে বলে ও সেই মানুষ টা আসেনি। অবশ্য এলেও খুঁজে ও পাবে না। অঘোর ব্যাঙ্গালোরে পড়তে যাবার আগেই গিয়েছিল সেই মানুষটার দিদিমার কাছে । তার খবর নিতে। ,তাও প্রায় দু বছর হতে চললো। তিতিরের জীবন থেকে সে হারিয়ে গেছে । তবে মাঝে মাঝে সেই হীরের আংটির ঝলকে তিতিরের মনে আশার ঝলক পড়েছে ।

‘হারবারের ‘ পাশ দিয়ে গাড়ি ছুটে চলেছে । একটা বাঁক ঘুরে বিশাল সুদৃশ্য বাড়ির গেট্ এ গাড়ি দাঁড়ালো। দরওয়ান গেট্ খুলে দিতে গাড়ি ভেতরে ঢুকে গেল । ডক্টর চৌধুরী হাত ধরলেন শণকার । ঘরে নিয়ে গেলেন l চাকর বাকররা যে যার কাজে ব্যস্ত । একজন নার্স কে দেখা গেল ঘরের ভেতরে। পাশের মানুষটির প্রশ্নের উত্তরে নার্স জানাল।
– হ্যাঁ। ভালো আছে। ঘুমোচ্ছেন। ছয়টা নাগাদ জেগে যাবেন। শণকাকে সেই মানুষটা বললেন।
-আসুন। তারই পেছন পেছন শণকা লাল হলুদের মোজেকের সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে গেল। ঘরের ভেতর ঢুকেই সেই মানুষটি জিজ্ঞাসা করলেন।
– এখানে আপনার কি কাজ তা জানা আছে তো? উত্তরে মাথা নাড়ল শণকা।অর্থাৎ হ্যাঁ। জানা আছে। আবার বললেন।
ঙ–একটু ফ্রেস হয়ে নিন।ঠিক ছ’টা নাগাদ আমি এসে নিচে নিয়ে যাব।

দরজা ভিজিয়ে সে চলে যেতেই একটানে শাড়িটা খুলে ফেলে শণকা । এতোটা রাস্তা আসলেও বিশ্রাম নেওয়ার মতো অবস্থা হয় নি। এর থেকেও অনেক বেশি কষ্ট করে শণকাকে চলা ফেরা করতে হয়।

আয়নার কাছেদাঁড়াল শণকা। চেহারায় কোন ক্লান্তির ছাপ নেই । শাড়িটা শণকাকে আরো মহিমাময়ী করে তুলেছে । কে বলবে বেলা এগারোটায় শণকা ঘর থেকে বেড়িয়েছিল ! ঠোঁটের লিপস্টিক টা অবধি সেই রকম ই রয়েছে । শাড়িটা ও নিপাট।

দরজায় টোকা পড়তেই শণকা বলল।
– ভেতরে এস।

পরিচারিকা বলল- বৌদি মনি ,দাদাবাবু বললেন, ঠিক সাতটায় দাদাবাবু আসবেন আপনাকে নিতে। বিশ্রাম নিতে বলেছেন। নিশ্চন্তে ঘুমান, কেউ আসবে না এখানে।

পরিচারিকা চলে গেল । নরম একটা মন কাড়া বিশাল বিছানা ওকে টানছে । আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে এক টানে শাড়িটা খুলে ফেলল । চোলী কাটের ব্লাউজ ওর শরীরে এঁটে বসে আছে । বাথরুমে চলে গেল। টয়লেট থেকে ফিরে শুয়ে পড়ল বিছানায় । ভাবল শোয়ার থেকে উঠেই অন্য শাড়ি পড়ে নেবে।

কখন যে আরামে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়েছিল জানতে ও পারেনি । দরজা খোলার শব্দে জেগে গেল শণকা । চোখ মেলে চোখ পড়ল ঐ মানুষটার চোখে । সে চোখের থতমত দৃষ্টি । বুঝতে পেরেই পাশে পড়ে থাকা শাড়ি দিয়েই বে আব্রু শরীর ঢাকতে অসফল চেষ্টা কে শণকা । ঢাকাঢাকি করতে গিয়ে যেন আরও বে আব্রু হয়ে পড়ল । ছিঃ ছিঃ, কি লজ্জা । সেই মানুষটা ছুটে যায় পাশের ঘরে । কানে আসে তার গলা।
– তৈরী হয়ে নিন।

এক মিনিটের মধ্যেই শণকা ঐ শাড়িটা পড়ে তৈরি হয়ে নেয়। বাইরের ঘরে যেতেই ঐ মানুষটার বিরক্তির ভঙ্গী বলে দেয় যে শণকার এই সাজে সে তুষ্ট নয়। কিছু না বলেই শোবার ঘরে গটগট করে চলে আসে । কিছু না বুঝেই শণকা ও পিছুপিছু শোবার দাঁড়াল।

দেখল সেই মানুষ টা আলমারি খুলে বার করল একটা বটল গ্রীন-অফ হোয়াইট এর কম্বিনেশন করা বেনারসী শাড়ি, সঙ্গে ম্যাচিং ব্লাউজ । ওরই দিকে ছুঁড়ে দিল। পাশের ঘরে যাওয়ার সময় মন্তব্য করল।
– বিশেষ একজনের সামনেই ঐ পাতলা শাড়ি পড়বেন।

কথাটা কানে গেলেও আমল দিল না শণকা । খুব হালকা হাতে সেজে নিল । চুল আঁচড়ে চূড়ো করে একটা খোঁপা বেঁধে নিল । ভালোই মানিয়েছে ঐ শাড়িতে। দরজায় টোকা পড়তেই দেখল ঐ মানুষটির মুগ্ধ দৃষ্টি । এগিয়ে এসে হাতে দিল একটা নেকলেস আর ক’গাছা চুড়ি ।
বলল- এগুলো পড়ে নাও। ওর মুখের তুমি শুনে শণকার চোখে জলের উচ্ছাস।

Pages: 1 2 3 4

1 thought on “শণকা || Shipra Mukherjee”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress