শক্তির আলো
গ্রামের নাম ছিল শক্তিনগর। এটি ছিল একটি ছোট্ট গ্রাম, যেখানে মানুষ প্রকৃতি আর পরম্পরার মাঝে নিজেদের জীবন কাটাত। এই গ্রামের মানুষগুলো যেমন সরল, তেমনই ছিল তাদের জীবনযাত্রা। কিন্তু একটা বিষয় তাদের মধ্যে সবসময় আলোড়ন তুলত—জীবনের প্রকৃত অর্থ।
গ্রামের প্রাচীন বটগাছের তলায় প্রায়ই জমায়েত হত গ্রামের যুবক-যুবতীরা। সেখানে তারা আলোচনা করত জীবন নিয়ে, নিজের অস্তিত্ব নিয়ে। একদিন গ্রামের সবচেয়ে প্রজ্ঞাবান বৃদ্ধ, দীনানাথ কাকা, তাদের সামনে হাজির হলেন। তিনি একটি ছোট গল্প শোনালেন।
তিনি বললেন, “একবার এক ছেলে আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিল, আমি কে? আমি তাকে বললাম, আমরা সবাই প্রকৃতি আর শক্তির অংশ। আমাদের জন্ম হয় সেই শক্তি থেকে, যা আমাদের জীবনে আনে কাম, ক্রোধ, লোভ আর মায়ার মতো আবেগ। আমরা সেই আবেগে চালিত হয়ে কাজ করি, জীবন গড়ে তুলি। কিন্তু একদিন সেই শক্তি আমাদের ছেড়ে যায়, তখন আমরা শুধু স্মৃতি হয়ে থাকি।”
এই কথাগুলো শুনে তরুণদের মধ্যে অনেকেই ভাবনায় পড়ে গেল। তারা বুঝতে পারল, তাদের জীবনের আবেগ, দায়িত্ব আর কষ্টগুলো আসলে জীবনেরই অংশ। শক্তি তাদের মধ্যে যে আবেগের জন্ম দেয়, সেই আবেগেই লুকিয়ে আছে জীবন গড়ার রসদ।
তাদের মধ্যে ছিল রবি, গ্রামের এক কৃষকের ছেলে। তার জীবন ছিল চাষাবাদে ব্যস্ত, কিন্তু সে সবসময় স্বপ্ন দেখত গ্রামের উন্নতি করার। দীনানাথ কাকার কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে সে সিদ্ধান্ত নিল, সে তার জীবনকে এমনভাবে পরিচালিত করবে, যাতে শক্তি আর প্রকৃতির মধ্যে সেতুবন্ধন রচিত হয়।
সে গ্রামে জল সংরক্ষণ প্রকল্প শুরু করল। প্রথমে সবাই সন্দেহের চোখে দেখলেও ধীরে ধীরে পুরো গ্রাম তার সঙ্গে হাত মেলাল। তার কাজ শুধু গ্রামের উন্নতি করল না, বরং গ্রামের মানুষদের নতুনভাবে ভাবতে শেখাল—তাদের জীবন শুধু ব্যক্তিগত চাহিদার জন্য নয়, বরং সমাজের জন্যও।
রবির উদ্যোগ ধীরে ধীরে সফল হল। গ্রামে জলের অভাব দূর হল, নতুন গাছপালা রোপিত হল, আর মানুষের মধ্যে একতার বীজ বোনা হল। শক্তিনগর সত্যিই হয়ে উঠল প্রকৃতি আর শক্তির এক অপূর্ব উদাহরণ।
দীনানাথ কাকা একদিন রবিকে বললেন, “তুই প্রমাণ করেছিস, জীবন কেবল শক্তির থেকে পাওয়া নয়, শক্তিকে সঠিক পথে কাজে লাগানোর নামই জীবন।”
রবি হেসে বলল, “আমরা সবাই শক্তি আর প্রকৃতির সন্তান, কাকা। আমাদের জীবন তাদেরই গল্প।”