লাল কাশফুল
নীল আকাশে পেঁজা মেঘ—শিউলি ফুলের গন্ধ—নতুন জামা কেনার আনন্দ— কুঁড়েঘর থেকে অট্টালিকা— সকলের মুখে এককথা ঐ আসে শরৎ।।
শরতের কাশফুলের দোলায় মন দোলা দেয় আগমনীর আগমনের আনন্দে — কারোর দুঃখে।
সবার একটাই কথা —
এবার পূজোয় আগের মতই হবেতো! চারদিকে মারণমুখি রোগ নিশ্চিন্তে থাকতে দিচ্ছেনা।
মুনিয়ার মার মনে শরৎ মানে আনন্দ নয়—সাদা কাশফুলের দোলন নয়— রক্তাক্ত কাশফুল।কষ্টের আগমনীর স্মৃতিচারণ।
ছোট্ট মেয়ে মুনিয়ার বয়স সাত ।ওর পুজোয় পাঁচটা জামা হয়েছে।ওর মাষ্টারমশাই বলে তুমিতো এবার ভালো রেজাল্ট করেছো,তোমাকে আমিও দুটো জামা দেবো।
মুনিয়া বলে কি মজা!তাহলে সাতটা হবে।মাষ্টার বলেছে মাকে বলবিনা,তাহলে মা আমায় বকবে।আমার কিনে দেওয়া হয়ে গেলে আর কিছু বলবেনা।
পরদিন মাষ্টার পড়াতে আসে,কিন্তু খালি হাত।
মুনিয়া কাশফুলের ছবি আঁকছিল।
কি আঁকছ দেখি?
বাহ সুন্দর হয়েছে।
পড়াশোনার পর বাড়ির পিছনে কাশবনে গিয়ে দেখে নিস,কেমন করে দোলা দেয়।মাষ্টারের কাছে পড়ছিল মুনিয়া,তাই ওর মা গানের চর্চা করছিল। পড়া শেষে মাষ্টার বলে জামা নিবিতো ঐ কাশবন অবধি চল তোকে দিচ্ছি।
তুমি কি করে আনবে জামা?
ম্যাজিক করে!!
তারপর কাশবনে দুজনে ।!!
শিশুবলি!!
মুনিয়া কাটাছেঁড়া হয়ে তিনদিন বাদে বাড়ি আসে।ও যেন বলছে মা– আমার নুতন জামাটা পরিয়ে দাও।শববাহি গাড়িতে যাবার সময় মাষ্টারমশাই বলবে মুনিয়া–নূতন জামা কই।
কাশবনে মুনিয়ার আর্তনাদ জামা
লাগবেনা।দুর্গা ঠাকুর রাক্ষসদের ধ্বংস করো।
বলতে পারো শরৎ —ঋতুর পর ঋতুর পরিবর্তন হয় –ঐ তুমি যে এলে –আমার মুনিয়া কেন আসে না???
আমার পাগলামি দিন দিন বাড়ছে, কি যে ইঞ্জেকশন দেই,সারাদিন ঘুম ঘুম পাই।
“শরৎ তোমার অরুণ আলোর অঞ্জলি”
ঐ গান আর আসে না।ঐ গান করছিলাম বলেই তো মুনিয়া ঐ কাশবনে পড়ে রইল।
আকাশের দিকে চাই –‘”সাদা মেঘের ভেলা””
আবার কখনো বা দেখি অভিমানী মেঘের ঘনঘটা।কত চেনা ও অচেনা পাখিদের সাথে হয় মিতালী।অপরূপ সাজে ঋতুরানী।
আগমনী মানে গোধূলি আকাশে রঙের খেলা,ভোরের আলোয় মিষ্টি সুরের হাতছানি,শিউলি বিছানো পথে শিশিরসিক্ত প্রকৃতির অনাবিল সৌন্দর্য।এই শরতে আছে ময়ূরকন্ঠী নীলাকাশে সাদা মেঘের খেলা।
আমি ঐ মেঘে ভাসছি ,হঠাৎ মেঘেদের মধ্যে রঙের খেলা শুরু হয়।সব মেঘ রঙীন কাগজে মোড়া।শরতের দুষ্টুমি শুরু হলো কি?লাল মেঘ হয়ে গেলো কেন?শরৎ তোমার মেঘেদেরকে এক একটি মুনিয়া দেখি।উফ কি লাল!!
আমি কাশবন সাদা দেখি না ,*কাশবন আজ রঙিন লাগে।মুনিয়ার রক্তে লাল হয়েছিল।ঐ মুনিয়া সুর করে আবৃত্তি শোনাচ্ছে মেঘদের।ওখানে মেঘেদের সভা বসেছে যে—নমস্কার আমি মুনিয়া,আমি–
কবি—আগমনী আবৃত্তি করে শোনাচ্ছি।
আগমনী
চক্ষুদানের পর মৃন্ময়ী মূর্তি লয় চিন্ময়ী রূপ
শরৎকালে গাছের তলায় শিউলি পড়ে টুপটুপ।
কাশবনে ঘুরে বেড়ায় অপু দুর্গার দল
শরৎ মেঘে রোদ করে ঝলমল।
মুনিরা মুনিয়া করে ধড়ফড়িয়ে উঠি।
শরৎ তুমি আসলে আমার বড্ড কষ্ট হয় ।তুমি আর এসো না গো।হে ঠাকুর ঐরকম আগমনীর আগমন কোনো পরিবারে না আসুক।