বস্তিতেই আবির্ভাব,সংকীর্ণ বাথানে না হলেও
পুরানো টিনের ঘরে সময়ের সাথে
প্রথম সাক্ষাৎ তার। পড়শিরা কেউ কেউ খুশি
হয়েছিল দেখে ফুটফুটে শিশুটিকে।
ভিনদেশী প্রাজ্ঞজন আনেনি
উপঢৌকন সেদিন,
ওঠেনি দিগন্তে কোনো জ্বলজ্বলে তারা।
ঘর ছেড়ে বারান্দায়, একদিন উঠোনে,
পেয়ারা গাছের নিচে রঙিন বৃক্ষের দিকে, ফের
গ্রন্থের প্রান্তরে তীর্থযাত্রী। ক্রমশ মনের ঘাটে
স্মৃতির শ্যাওলা ভাসমান। বিস্মিত সবাই দেখে,
ললাটে নক্ষত্র জ্বলে তার।
অথচ নিজে সে
দেখে না তারার দীপ্তি। কেউ
সহজে ঘেঁষে না তার ত্রিসীমায়, যেন
প্লেগের বীজাণু বয়ে বেড়াচ্ছে সে, লাজুক তরুণ।
সর্বদা পেছনে তার ঘোরে ফেউ। কেউ
চকিতে লেলিয়ে দেয় ডালকুত্তা, কেউবা ক্ষুধার্ত
নেকড়ের পাল, কেউ কেউ
নিয়ে যেতে চায় মধ্যভূমিতে কেবলি। বোঝে না সে
কী যে তার অপরাধ। সর্বক্ষণ পালিয়ে বেড়ায়
বর্শা, ছোরা, রাইফেল থেকে দূরে দূরে।
যায় না হাওয়ার লোভে পার্কে, নদীতীরে
কিংবা মাঠে, ওঠে না ভুলেও বাসে, এড়িয়ে অজস্র
কৌতূহলী চোখ পথ চলে কোনো মতে, বিশেষত
অন্ধকারে। অথচ আঁধারেও
ললাটের নিভৃত নক্ষত্রটিকে তার
পারে না লুকোতে কিছুতেই।
ললাটস্থ নক্ষত্রের রক্তিম স্ফুলিঙ্গে
আলোকিত চিলেকোঠা, পথঘাট, নিস্তব্ধ উদ্যান
অথবা কোমল সরোবর। বিপ্লবেরই
নিরুপম অরুণিমা বুঝি চতুর্দিকে।
ঝাঁক ঝাঁক খাকি টুপি, দারুণ ইস্পাতি গন্ধ ভাসে
শহরে ও গ্রামে। গোলা বারুদের গাড়ির ঘর্ঘরে
নিষিদ্ধ রাতের ঘুম। রাইফেলধারী ওরা সব,
হুলিয়া ছাড়াই ধরে তাকে,
ললাটে নক্ষত্র ছিল ষার।
গুলির ধমকে হাত ভুলণ্ঠিত পতাকা যেনবা,
জানু দেহচ্যুত নিমেষেই, ঝাঁঝরা বুক।
মাটিতে গড়ায় ছিন্ন মাথা
মুকুটের মতো,
অথচ ললাট থেকে কিছুতেই নক্ষত্র খসে না।