রামায়ণ : লঙ্কাকাণ্ড – ইন্দ্রজিতের মরণে দেবগণের আনন্দ
যে ধরিলে ধনুর্ব্বাণ, ইন্দ্র সদা কম্পমান,
বীরদাপে বসুমতী ফাটে।
ত্রিভুবনে যত বীর, যার রণে নহে স্থির,
যক্ষ রক্ষ না যায় নিকটে।।
হেন বীর মৈল রণে, জয় জয় ত্রিভুবনে,
মুনিগণ করে বেদধ্বনি।
পুলকিত চরাচর, গন্ধর্ব্ব কিন্নর নর,
জয় জয় শব্দ মাত্র শুনি।।
রণে মৈল ইন্দ্রজিৎ, সকলেতে আনন্দিত,
ধন্য বীর ঠাকুর লক্ষ্মণ।
সুরাসুর ঋষি যতি, লক্ষ্মণেরে করে স্তুতি,
সবে কৈলা পুষ্প বরিষণ।।
ইন্দ্রজিতের মরণে, হরষিত দেবগণে,
বাল বৃদ্ধ সবে আনন্দিত।
কহেন লক্ষ্মণ প্রতি, করিলে যে অব্যাহতি,
ত্রিভুবনে ঘুচাইলে ভীত।।
হইল অপার সুখ, খণ্ডিল মনের দুঃখ,
নিশ্চিন্ত সকলে কুতূহল।
যত স্বর্গ-বিদ্যাধরী, পাদ্য অর্ঘ্য হাতে করি,
সুরপুরে করে সুমঙ্গল।।
যতেক অমরা-সতী, জ্বালিয়া ঘৃতের বাতি,
সুখে ক্রীড়া করে সুরপতি।
বেদ পড়ে বৃহস্পতি, সকলের অব্যাহতি,
নাচে দেব হরষিত অতি।।
ত্রিভুবন পরাজয়, যার অস্ত্র নাহি সয়,
নানা শিক্ষা যাহার ধনুকে।
রথখান সুশোভন, বিপক্ষে যেন শমন,
ভয়ে কেহ না যায় সম্মুখে।।
করি রথে আরোহণ, আইলেন দেবগণ,
শ্রীরামেরে কহে যোড়হাত।
বিনাশিয়া লঙ্কেশ্বর, ঘুচাহ দেবের ডর,
উদ্ধার করহ রঘুনাথ।।
রাবণ হউক ক্ষয়, রামের হউক জয়,
দূরে যাক দেবের তরাস।।
দীন জনে কর দয়া, দেহ রাম পদছায়া,
নাচাড়ী গাহিল কৃত্তিবাস।।