Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » রামায়ণ : লঙ্কাকাণ্ড || কৃত্তিবাস ওঝা » Page 22

রামায়ণ : লঙ্কাকাণ্ড || কৃত্তিবাস ওঝা

অকম্পন-মৃত্যু শুনি চরের বদনে।
কিছু ভয় উপজিল রাবণের মনে।।
হৃদয়ে করিল বিবেচনা বহুতর।
যুদ্ধ বিনা হিত নাহি দেখিল অপার।।
তবে আগে দেখি বজ্রদংষ্ট্র নিশাচরে।
কহিতে লাগিল তারে অতি সমাদরে।।
বজ্রদংষ্ট্র তুমি হও সুপণ্ডিত রণে।
তোমার সবার বীর না দেখি ভুবনে।।
ধনুক ধরিয়া তুমি দাঁড়ালে সমরে।
নিজে ইন্দ্র সাক্ষাৎ হইতে নারে ডরে।।
তোমারে সহায় করি আমি দেবগণে।
পরাজয় করিয়াছি অক্লেশেতে রণে।।
অপর কি কব সর্ব্ব-নাশক শমনে।
তোমা সাহায্যে জিনিয়াছি অযতনে।।
তুমিও সমরে যাও সসৈন্য লইয়া।
সুগ্রীব লক্ষ্মণ রামে আইস বধিয়া।।
এত বাণী শুনি বজ্রদংষ্ট্র নিশাচর।
প্রণমিয়া কহিতেছে রাবণ গোচর।।
মহারাজ এই আমি চলিলাম রণে।
আপনি পরমানন্দে থাকুন ভবনে।।
বধিয়া তোমার শত্রু সেই দুই নরে।
সুগ্রীব মারুতি আর মুখ্য কপিবরে।।
আপনি মঙ্গল চিন্তা করিয়া আমার।
গৃহে থাকি সীতা লয়ে করহ বিহার।।
তবে বলাধ্যক্ষ করি সেনার সাজন।
দশানন-আগে আসি কৈল নিবেদন।।
তাহা শুনি প্রণাম করিয়া দশাননে।
বজ্রদ্রষ্ট্র বীর যাত্রা করিলেক রণে।।
করিল বিবিধ মতে মঙ্গলাচরণ।
বান্ধিলেক নিজ অঙ্গে অনেক রক্ষণ।।
পরিলেক অঙ্গে সানা মাথায় টোপর।
পৃষ্ঠেতে বান্ধিল তূণ পূরি তীক্ষ্ম শর।।
আর নানা অস্ত্র শস্ত্র করিয়া বন্ধন।
রথের উপরে গিয়া কৈল আরোহণ।।
কিবা তার রথ অতি মনোহর হয়।
অলঙ্কৃত দিব্য দিব্য ঘোটকে বহয়।।
তার রথ দুই দিকে যায় মনোরম।
দ্বিসহস্র সপ্ততি সংখ্যক তুরঙ্গম।।
ঘোড়ার পশ্চাতে দুই সহস্র সন্ত্রতি।
যাইতেছে মদমত্ত হাতী মন্দগতি।।
মধ্যেতে যাইছে বজ্রদংষ্ট্র দিব্য রথে।
এক লক্ষ ধনুর্দ্ধর যায় অগ্রপথে।।
আর মত ঢালি শূলী তোমরী খর্পরী।
যাইতেছে রথে ঘোটকেতে চড়ি।।
বাজিতেছে সহস্র সহস্র রণভেরী।
নিনাদ ছাড়িয়ে ঘোড়া হাতী বেরি বেরি।।
সেই সব শব্দে লঙ্কা করে দলমাল।
রণে যায় বজ্রদংষ্ট্র যেন মহাকাল।।
যাইতে যাইতে দেখে নানা অমঙ্গল।
অগ্রেতে পড়য়ে তার উল্কা ঝলমল।।
মুখ দিয়া অগ্নিশিখা করিয়া বমন।
শিবা সব করিতেছে অশিব নিঃস্বন।।
রথের ঘোড়ার নেত্রে পড়ে অশ্রুজল।
পুনঃ পুনঃ ত্যাগ করে তারা মূত্র মল।।
তাহা দেখিয়াও বজ্রদংষ্ট্র্ অশঙ্কিত।
কহিতেছে সৈন্যাদিকে অত্যন্ত গর্ব্বিত।।
অমঙ্গল দেখি কেহ না কর চিন্তন।
অতি মন্দ শুভকরী কহে সর্ব্বজন।।
আর শুন কি করিবে এই অমঙ্গলে।
সব অমঙ্গল বিনাশিব বাহুবলে।।
দেখিবি সকলে তোরা বিক্রম আমার।
বধিব সকল আমি শত্রুকে রাজার।।
আজি মোর বাণে হত কপির আমিষে।
নিশাচর পিণ্ড দিবে বান্ধবে হরিষে।।
আমিহ বধিয়া সুগ্রীবাদি কপিগণে।
ভক্ষণ করিব নিজে শ্রীরাম লক্ষ্মণে।।
বজ্রদংষ্ট্র নাম মোর বজ্র হেন দাড়।
চর্ব্বণ করিব আমি তাহাদের হাড়।।
তোরা সবে ভয় ত্যজি চলহ সমরে।
শত্রু বধ করি শীঘ্র ফিরি যাব ঘরে।।
এত কহি বজ্রদংষ্ট্র সৈন্য হুহুঙ্কারে।
উপনীত হৈল আসি উত্তরের দ্বারে।।

তবে, দেখি তাহারে, সেই মত দ্বারে,
প্লবঙ্গমগণ।
তারা, তরু-শিখরী, করেতে ধরি,
রহে সুখী মন।।
তাহা, নিরখি তারা, মেঘের ধারা,
হেন বর্ষে বাণ।
তাহে, বানরগণে, বিন্ধি সঘনে,
কৈলা খান খান।।
তবে, কুপিতমতি, বানর-ততি,
বৃক্ষ শিলা মারি।
করে, কুশিল-দন্ত, সেনার অন্ত,
গভীর হাঁকারি।।
তাহা, দেখি দুরন্ত, বজরদন্ত,
বরষিয়ে শরে।।
তার, বাণের তূণে, ধনুক গুণে,
কর্ণে বারে বারে।
কর, ভ্রমণ করে, কেহ তাহারে,
লক্ষিতে না পারে।।
তার, শর-নিকরে, যত বানরে,
জর্জ্জর করিল।
তাহে, রুধির ধারে, রণ ভিতরে,
তটিনী হইল।।
তাহে, প্রাণ ছাড়িয়া, যায় ভাগিয়া,
ভল্ল কপিগণ।
তাহে, কাক শৃগালী, টানিয়া তুলি,
করয়ে ভক্ষণ।।
সেই, বজরদন্ত, শরেতে শান্ত,
দেখি আত্মকুলে।
যত, বানরবৃন্দ, ত্যজিয়া দ্বন্দ্ব,
ভাগে সিন্ধুকূলে।।
তাহা, করিয়া দৃষ্ট, হইয়া রুষ্ট,
কপি-চূড়ামণি।
নিজে, চলিয়া রণে, করি সঘনে,
ঘোর সিংহধ্বনি।।
শুনি, সেই ত রব, কৌণপ সব,
মূর্চ্ছিত হইল।
কত, ঘোটক করী, ভূমিতে পড়ি,
চীৎকার করিল।।
পরে, তারে দেখিয়া, ত্রাস পাইয়া,
বজ্রদংষ্ট্র-সেনা।
তারা, পলায়ে যায়, পাছে না চায়,
বারণ শুনে না।।
তবে তাহা নিরখি, মনেতে রোখি,
বজ্রদংষ্ট্র বীর।
সেই, তপন-সুতে, অতি বেগেতে,
বিন্ধে বহু তীর।।
তাহে, কুপিত মতি, কপির পতি,
চাপড় প্রহারে।
তার বামে ডাহিনে, ঘোটকগণে,
নিলা যমদ্বারে।।
আর, দুই পাশেতে, সারি ক্রমেতে,
যত করী ছিল।
মারি, গাছের বাড়ি, যমের বাড়ী,
তাদিকে প্রেরিল।।
পরে, শাল উপাড়ি, ঘূর্ণিত করি,
তপন-কুমার।
সেই, বজ্রদশন, প্রতি ক্ষেপণ,
কৈলা স-হুঙ্কার।।
সেই, রজনীচর, ছাড়িয়া শর,
শত পরিমাণ।
সেই, শাল তরুরে, কাটিয়া পাড়ে,
করি খান খান।।
তাহা, নিরখি সূর্য্য, তনয় শৌর্য্য,
করি প্রকাশন।
এক, বৃহৎ শিলা, তুলিয়া নিলা,
পর্ব্বত যেমন।।
তাহে, বজরদন্ত, রথের অন্ত,
করিতে ছাড়িল।
তাহা, সেহ দেখিয়া, রথ ছাড়িয়া,
ভূমিতে নামিল।।
সেই, ঘোর পাষাণে, তাহার যানে,
সুগ্রীব ভাঙ্গিলা।
আর, ঘোটক সাতে, ধ্বজ সহিতে,
সারথি নাশিলা।।
পরে, এক তরুরে ধরিয়া করে,
করিয়া ঘূর্ণিত।
সেই, বজরদন্ত, সেনার অন্ত,
কৈল রাম মিত।।
তেঁহ, গিরির শৃঙ্গ, করিয়া ভঙ্গ,
ছাড়িয়া হুঙ্কার।
বজ্র-দশন বীরে, মারিতে পরে,
হৈল আগুসার।।
তাহা, নিরখি সেহ, বিকট দেহ,
গদা ঘুরাইয়া।
বীর, তপনসুতে, মারিলা মাথে,
গর্জ্জন করিয়া।।
কিবা, সুগ্রীব শিরে, ঠেকিয়া পরে,
সেই গদাদণ্ড।
একি, অশ্রুত কথা, কর্কটী যথা,
হৈল শত খণ্ড।।
তবে, কপি-ভূপতি, তাহার প্রতি,
সেই গিরিচূড়া।
নিজ, বাহুর জোরে, মারিয়া শিরে,
করিলেন গুঁড়া।।
তাহে, রুধিরধার, বদনে তার,
বহে অনিবার।
সেহ, পড়িল ভূমে, দেখিতে যমে,
গেল প্রাণ তার।।
তবে, বজ্রদশন, পাইল মরণ,
দেখি তার সেনা।
তারা, ত্রাসিত হয়ে, ধায় পলায়ে,
ফিরিয়া চাহে না।।
তবে, সমর জিতি, বানরপতি,
করি সিংহনাদ।
দিলা, আপন সখা, নিকটে দেখা,
মনেতে আহ্লাদ।।
শুনি, তাহার বাণী, শ্রীরঘুমণি,
করি প্রশংসন।
দিলা, বাহু পসারি, হৃদয় ভরি,
তারে আলিঙ্গন।।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82 83 84 85 86 87 88 89 90 91 92 93 94 95 96 97 98 99 100 101 102 103 104 105 106 107 108 109 110 111 112 113 114 115 116 117 118 119 120 121 122
Tags:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress