Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » রোজনামচা || Samarpita Raha

রোজনামচা || Samarpita Raha

রোজনামচা

মা ও ঠাকুমার একে অপরের প্রতি উচ্চারিত শব্দ গুলো যত শুনছিলাম তত’ই খারাপ লাগছিল। আমি ও ভাই আড়াল থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে সব শুনছিলাম।যদিও আমরা খুব খারাপ কাজ করছিলাম। বড়দের কথা আড়াল থেকে শোনা উচিত নয়। তবুও কান পেতে শুনছিলাম। ঠাম্মা মাকে বলছিলেন চেয়ারের উপর দশটা শাড়ি ছিল পাঁচ টা নেই কেন! রান্না ঘরে সাতটি পরোটা ছিল সব খেয়ে নিলে ! না জানলা দিয়ে ভাইকে ডেকে পরোটাগুলো দিয়ে দিলে! মা রেগে গিয়ে বললেন আরে কি বলছেন ! আমার বাবা এত উঁচু পোস্টে কাজ করতেন তারা কিনা মেয়ের বাড়ির খাবার খাবেন! মা বলে এপাড়া -ওপাড়া বলে মেয়ের বাড়িতে এসে কোনদিন এক কাপ চা ও খান নি। ঠাম্মা বলছে তা খাবেন কি করে, মেয়ের বাড়িতে মিষ্টি নিয়ে ও আসেন না! মা তখন বলছে সে তো আমি বারণ করেছিলাম।বলেছি শাশুড়ির সুগার আছে ,আর মিষ্টি এনো না। মিষ্টি আনলে গপগপ করে খেয়ে ফেলেন। উফ থামে না আর ঝগড়া!!!

এবার মা বলে আমার আলমারি থেকে বেশ কটি শাড়ি পাচ্ছি না।এবার বলুন তো শাড়ি গুলো ননদের বাড়ি পাঠিয়ে দেন নি তো! ঠাম্মা ধপাস করে মাটিতে পড়ে কাঁদতে থাকে। ও মা গো কি হলো গো! আমার বৌ শেষ পর্যন্ত চোর বলছে। পাড়া দিয়ে দিদা যাচ্ছিলেন।কান্না শুনে দিদা ছুটে আসেন। সব শুনে দিদা পরিস্থিতি সামলাতে মাকে টেনে এক চড় মারলেন। এবার ঠাম্মা উঠে দাঁড়িয়ে দিদাকে কি বকা! আপনার এত বড়ো সাহস আমার বৌয়ের গায়ে হাত তোলেন। আমি ও ওকে যা তা বলেছিলাম,তাই বৌমা ও আমাকে যা তা বলেছে। তখন বেগতিক কাণ্ড দেখে আমাদের দিদা কাজ আছে বলে দৌড় দেন। কিছুক্ষণ বাদে দাদু ও দিদা ফিরে আসেন। মা ও ঠাকুমা তখন যে যার ঘরে কাজ করছিলেন। দাদু বলে এটা তো ঠিক দিদির শাড়িগুলো কোথায় যায়! আর তোর শাড়ি কোথায় যায়! নিশ্চয় তোদের কাজের মাসী দিনের মধ্যে তিনবার আসে। সে চুরি করছে না তো!!!

এবার আমি আর ভাই ভয়ে ভয়ে কাছে এসে দাঁড়ায়। কাজের মাসী রাতের রান্না করতে চলে এসেছে। মাসী রান্না ও করে ,বাসন মাজে, জামাকাপড় কাচে,ঘর মোছে। এমনকি বাজার ও করে দেয়। সবাই দেখি মাসীকে কিছু বলবে বলবে করছে,এমন সময় বাবা অফিস থেকে ফেরে। মাসীর সবদিকে চিন্তা।কর্তাবাবু এসে গেছে। মাসী মাকে বলে আপনাদের কথা পড়ে শুনচি। আমি আর ভাই কি করি ভাবছি! তারপর বাবার গলা জড়িয়ে সব সত্যি বলি। চা খেতে খেতে আড্ডা চলছে।মা, ঠাকুমা কাজের মাসীকে ডেকে বলছেন এই ফুলমনি আজ বাইরের চেয়ারে দশটা শাড়ি ছিল পরে এসে দেখি পাঁচটা শাড়ি !! কোথায় জানো তুমি? সোজাসুজি চোর বলতে পারছেন ও না। মাসী না রেগে হঠাৎ বলে বসে তোমরা দুপুরে কি ঘুমাও? মা ও ঠাকুমা চুপ করে যান।মনে মনে ভাবছেন এতো চোর নয় ডাকাত দেখছি। আমাদের উল্টে প্রশ্ন করছে!! তারপর বলে সোমা বেটিয়া ও বাবলু বাবা দুপুরে আমাদের বস্তিতে কেন গেছিল জানো?? তখন বাবা বলে হ্যাঁ জানি তো।যদিও বাবাকে কিছুক্ষণ আগে বলেছি।তারপর বলেছি আর কোনো দিন এরকম কাজ করব না। বাবা মাসীকে বলে যাও ফুলমনি আরেক কাপ চা আনো তো! তারপর বাবা ঠাম্মা,মা,দিদা, দাদুকে বলে এই দুজন পুচকি ও পুচকা খাবার, শাড়ি গরিবদের গিয়ে দিয়ে এসেছে। এনারা গরমের ছুটি ও পুজোর ছুটিতে বাড়িতে আসলে চুপিচুপি এই সব কাজ করে।তবে এরপর না জানিয়ে কোনো কাজ করবে না ।আসলে ওদের যুক্তি জানিয়ে করলে তোমরা অনুমতি দেবে না। সবাই বলে হোস্টেলে দিয়ে এই অধঃপতন। বাবা চিৎকার করে বলে কিসের অধঃপতন বলতে পারেন! ওরা গরীবদের দান করে আসে।একজন বারো একজন দশ।ওরা আপনাদের কাছে চাইলে দিতেন! বাবা রেগে গেলে সব সময় আপনি করে কথা বলেন। সবাই বুঝতে পেরেছে ‘অমল ‘রেগে গেছে। ফুলমণি তখন আরেক কাপ চা নিয়ে এসে বলে আমাদের বস্তিতে আপনাদের বাচ্চা কে বারাংবুরু বলে ডাকে। সাঁওতাল দের ভগবান বলে। এতদিন শুনেছি কোন দুজন বাচ্চা মাঝে মাঝে আসে খাবার, শাড়ি সব দিয়ে যায়।আজ দেখি আপনাদের বাচ্চা। দাদু ও দিদা আজ বহুদিন বাদে রাতের খাবার খেয়ে যাবে। বাড়িতে একটা খুশির জোয়ার । বাবা বলছে আমার ছেলে মেয়ে দাতার শরীর।ওরা বাবার রক্ত পেয়েছে।এই ধরুন আপনার মেয়েকে বিয়ে করেছি বলেই আপনাদের মেয়ে উদ্ধার হয়েছে। এবার দাদু ও দিদা ,মা ও বাবার কচকচানি শুনে দৌড় লাগান। এমনি করে দিন যাক না!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress