রাশেদ আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে
রাশেদ আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে। তাঁর বাঁ পাশে ডিউটি ডাক্তারের চেয়ার টেবিল। দেয়ালে চারকোনা ঘড়ি। ঘড়ির সেকেন্ডের কাটা লাল। লাল কাটা লাফিয়ে লাফিয়ে যাচ্ছে। ঘড়িটাকে প্রাণশক্তিতে ভরপুর জীবন্ত প্রাণীর মতো লাগছে। সেই তুলনায় ডাক্তারকে সারা রাত জেগে থাকার কারণেই বোধহয় ক্লান্ত লাগছে। রাশেদ হাত উঁচু করল। ডাক্তার ছুটে এলেন। রাশেদের মনে হল ডাক্তারকে যতটা ক্লান্ত দেখাচ্ছিল তত ক্লান্ত তিনি না।
ডাক্তার রাশেদের পাশে এসে দাঁড়ালেন। রাশেদ বলল, আমি ভাল হয়ে গেছি। Good morning.
ডাক্তার কিছু না বলে রোগীর মাথার উপরের মনিটরের দিকে তাকালেন। তাঁকে খানিকটা বিস্মিত মনে হল। রাশেদ বলল, আমাকে অন্য কোনো ঘরে কি দেয়া যায়? যেখানে বড় জানালা আছে।
ডাক্তার জবাব না দিয়ে রোগীর পালস দেখলেন। তার প্রয়োজন ছিল। মনিটরে পালস রেট উঠছে। তিনি প্রেসার মাপলেন। রাশেদ বলল, দুটা পূর্ণ সংখ্যা গুণ করে ৭ বানাতে পারবেন? আপনাকে প্রশ্নটা করলাম বোঝানোর জন্যে যে আমার মেন্টাল ফেকাল্টি এখন ঠিক আছে। পূর্ণ সংখ্যা একটা হল ১ অন্যটা ৭, ১X ৭ = ৭।
এক ঘণ্টা আগেও তো আপনার ভয়ংকর খারাপ অবস্থা ছিল। সাড়ে দশটার দিকে আপনাকে আর্টিফিসিয়াল রেসপিরেটারে দেবার কথা। আমি খুবই অবাক হচ্ছি। স্যারকে খবর দিচ্ছি। স্যার এসে আপনাকে দেখুক। ভাল বোধ করছেন?
হ্যাঁ।
নিঃশ্বাসের কষ্ট নাই?
না।
ক্ষুধা লেগেছে, কিছু খাবেন?
হ্যাঁ! ঝাল মাংস দিয়ে পরোটা খেতে ইচ্ছা করছে।
ডাক্তার বললেন, ভেরি সারপ্রাইজিং।
রাশেদ বলল, তিনটি পূর্ণ সংখ্যা যোগ করলে যা হবে গুণ করলেও তাই হবে। বলতে পারবেন?
না।
১, ২ এবং ৩, এক যোেগ দুই যোগ তিন সমান ৬, আবার ১ গুণন ২ গুণন ৩ সমান ৬।
প্রফেসর চলে এসেছেন। তিনি দ্বিতীয় দফা পরীক্ষা করলেন। আবারও পালস দেখা হল, আবারও প্রেসার মাপা হল। প্রফেসর বিড়বিড় করে বললেন, মিরাকুলাস রিকভারি।
রাশেদ বলল, ডাক্তার সাহেব! মিরাকল প্রায়ই আমাদের জীবনে ঘটে। আমরা বুঝতে পারি না। আমাকে কি কেবিনে পাঠানো যাবে?
প্রফেসর বললেন, যাবে। অবশ্যই যাবে।
এমন একটা কেবিন দিন যেখানে বড় জানালা আছে। তাকালেই আকাশ দেখা যায়।
আমাদের সব কেবিন থেকেই আকাশ দেখা যায়।
রাশেদ বলল, আমার আর হাসপাতালে থাকতে ভাল লাগছে না। যদি মনে করেন আমি মোটামুটির চেয়ে ভাল তাহলে আমাকে ছেড়ে দেবেন। প্লীজ।
রিপোর্টগুলি আগে আসুক।
সব রিপোর্ট ভাল পাবেন।
রাশেদকে কেবিনে ফেরত পাঠানো হয়েছে। নার্স এসে একগাদা রক্ত নিয়ে গেছে, ইউরিন নিয়ে গেছে। আপাতত রুগীকে ভাল মনে হচ্ছে। তবে শরীরের ভেতরের অবস্থাটা জানতে হবে। ইলেকট্রলাইট ব্যালেন্সের অবস্থা, রক্তে সুগারের অবস্থা কিডনি ফাংশান সব পরীক্ষা হবে।
রাশেদ শেভ করে শাওয়ার নিয়েছে। হট শাওয়ারের পর পরই তার মনে হল শরীরটা যতটা ভাল ছিল তারচেয়ে অনেকটা ভাল হয়েছে।
গোশত পরোটার ব্রেকফাস্ট হল না। তাকে হাসপাতালের ব্রেকফাস্ট করতে হল। দুধ, পাউরুটি, হাফবয়েলড ডিম, কলা।
হাসপাতালের বিছানার সামনে রঙিন টিভি। সেখানে নাটক হচ্ছে। রাশেদ আগ্রহ নিয়ে নাটক দেখছে। অন্ধ নায়িকা এবং নায়ক পার্কে বসে আছে। নায়ক জানে না যে মেয়েটি অন্ধ। নায়ক বলল, এশা! দেখেছ কি সুন্দর ডালিয়া ফুটেছে।
এশা বলল, হুঁ। আমাকে একটা ডালিয়া এনে দাও।
নায়ক বলল, কোন রঙ আনব? লাল না হলুদ?
এশা বলল, আমার কাছে লাল এবং হলুদের কোনো আলাদা Identity নেই। আমার কাছে লালও যা, হলুদও তা।
নায়ক টকটকে লাল রঙের ডালিয়া এনে দিল। নায়িকা সেই ফুল নাকের কাছে ধরে বলল, আহা কি গন্ধ! নায়কও সেই ফুলের গন্ধ শুকে মোহিত হয়ে বলল, ঠিক বলেছ, ভারি মিষ্টি গন্ধ।
রাশেদ খানিকটা ভড়কে গেছে। ডালিয়া ফুলের গন্ধ নেই। এরা গন্ধ পাচ্ছে কেন? না-কি এই ডালিয়া বিশেষ কোনো শংকর জাতের। হতেও পারে। ফুল নিয়ে নানান কর্মকাণ্ড হচ্ছে। জাপানি এক কোম্পানি নীল গোলাপ বের করেছে। এই কোম্পানির কিছু নীল গোলাপ পাওয়া গেলে সে রূপাকে দিত। রূপা গোলাপ দেখে চমকে উঠে বলত, নীল রঙের গোলাপ কোথায় পেলেন? সে বলতো…
আসব?
রাশেদ চমকে তাকালো। রূপা দাঁড়িয়ে আছে। বেশ সুন্দর লাগছে রূপাকে। রাশেদ আনন্দিত গলায় বলল, রূপা কেমন আছেন?
রূপা বলল, আমি ভাল আছি। আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে আপনিও ভাল আছেন। আমাকে বলা হয়েছিল আপনি মৃত্যুপথযাত্রী।
রাশেদ বলল, আমরা সবাই মৃত্যুপথযাত্রী। আপনি আসবেন আমি কল্পনাও করি নি। আপনাকে ডালিয়া ফুলের মতো লাগছে। হলুদ ডালিয়া। তবে এই ডালিয়ায় গন্ধ আছে। আপনি হলুদ শাড়ি পরেছেন এবং আপনার গায়ে হলুদ রোদ পড়েছে। মনে হয় এই কারণে ডালিয়া। আর একটা কথা, আপনি হয়ত রাগ করবেন। তাতে কিছু যায় আসে না। আমার মাথায় যে কথাটা এসেছে সেটা বলে ফেলব। কারণটা আগে স্পষ্ট করি, মরতে বসেছিলাম, সেখান থেকে ফিরেছি। পরের বার হয়ত ফিরতে পারব না। যে কথা বলতে চেয়েছি সেটা বলা হবে না।
রূপা বলল, হড়বড় করে এত কথা বলার কোনো প্রয়োজন নাই। যা বলতে চাচ্ছেন বলে ফেলুন।
ভুলে গেছি।
এত আগ্রহ করে একটা কথা বলতে চাচ্ছিলেন সেটা ভুলে গেছেন?
রাশেদ ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে বলল, কথাটা স্বপ্নের মতো মাথায় এসেছে। স্বপ্ন শর্টটাইম মেমোরি বলেই ভুলে গেছি। মানুষ জেগে থেকেও স্বপ্ন দেখে। খুব কম দেখে কিন্তু দেখে। আপনি দরজায় দাঁড়িয়ে থাকবেন, না ভেতরে আসবেন?
রূপা ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলল, টেলিভিশন বন্ধ করুন।
রাশেদ বলল, অল্প কিছু সময় আপনি এই চেয়ারে বসে থাকুন। আমি নাটকটা দেখে শেষ করি। ঐ যে মেয়েটা দেখছেন সে অন্ধ। নায়ক এখনো বুঝতে পারছে না। যখন বুঝবে তখন টিভি বন্ধ করব।
রূপা বলল, আপনাকে পুরো নাটকটা দেখতে হবে। আমার ধারণা শেষ দৃশ্যে বুঝতে পারবে, তার আগে না। তখন নয়িক তার একটা চোখ দান করবে। দুই কানী সুখের সংসার করবে।–
কানি বলবে কানা
কানা বলবে কানি
এই বলে দুইজনে
করবে কানাকানি॥
রাশেদ বলল, প্লিজ কথা বলবেন না।
রূপার মোবাইল ফোন বাজছে। সে ফোন নিয়ে বারান্দায় চলে গেল। শায়লা টেলিফোন করেছেন।
তুই কোথায়?
মা আমি হাসপাতালে। বলেছিলাম না এক মৃত্যুপথযাত্রীকে দেখতে এসেছি।
তার অবস্থা কি?
সে এখন জীবন পথযাত্রী। মহা উৎসাহে কানাকানির নাটক দেখছে।
তুই কি স্পষ্ট করে আমার কথার জবাব দিবি? লোকটা কে?
একবার তোমাকে বলেছি, আবারও বলছি। লোকটা কে আমি জানি না। তবে এখন জানব। নাড়ি নক্ষত্র বের করে ফেলব। তার সম্পর্কে একটা গুরুত্ত্বপূর্ণ তথ্য অবশ্য জানি। বলব?
বল।
তার ব্লাড গ্রুপ ০ পজেটিভ। বেডের সঙ্গে লাগানো মেডিকেল রিপোর্টে লেখা।
ব্লাড গ্রুপ ও পজেটিভ এটা গুরুত্বপূর্ণ হবে কেন?
মা! এরা ইউনিভার্সেল ডোনার। তোমার রক্তের প্রয়োজন হলে তার কাছ থেকে নিতে পারবে।
রূপা আমার সঙ্গে সিরিয়াসলি কথা বল। ঠাট্টা তামাশা কিছুক্ষণ বাদ রাখ। প্লিজ। লোকটা কে, কি ব্যাপার, ঘটনা কি আমাকে বল।
মা! রবীন্দ্রনাথের ভাষায় বলি–যদি জানতেম কি ঘটনা, তোমায় জানাতাম।
ইউ স্টুপিড গার্ল।
শায়লা টেলিফোন রেখে দিলেন। রূপা ঘরে ঢুকল না। নাটক শেষ হোক তারপর ঘরে ঢুকবে। বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকতে তার খারাপ লাগছে না। পৃথিবীর সবচে বড় বড় নাটকগুলি হাসপাতালের বারান্দায় ঘটে। রূপার বা দিকে বারান্দায় হেলান দিয়ে এক মধ্য বয়স্ক লোক দাঁড়িয়ে। তার হাতে অনেকগুলি কলা। সে এদিক ওদিক তাকিয়ে একটা কলা হাতে নিচ্ছে এবং অতি দ্রুত খাচ্ছে। মাথা বাইরের দিকে তাকিয়ে কলার খোসা নিচে ফেলে দ্রুত মাথা টেনে নিচ্ছে। আবার আরেকটা কলা খাচ্ছে। লোকটা সবদিকে তাকাচ্ছে শুধু রূপার দিকে তাকাচ্ছে না।
রাশেদ ভেতর থেকে ডাকল, নাটক শেষ। আসুন।
রূপা ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলল, শেষটা কি? আমি যা বলেছিলাম তাই?
না। মেয়েটা অন্ধ না। অন্ধের অভিনয় করছিল। নায়ক যখন জানবে মেয়েটা অন্ধ তখন কি করবে তাই জানতে চেয়েছিল।
জেনেছে?
হুঁ। নায়ক অন্ধ শুনে বলেছে, তুমি অন্ধ তাতে কিছু যায় আসে না। আজ থেকে আমার চোখই তোমার চোখ। এখন থেকে তুমি দেখবে আমার চোখে। তখন নায়িকা হাসতে হাসতে বলল, আমি অন্ধ না। ঠাট্টা করছিলাম।
নাটক দেখে আনন্দ পেয়েছেন?
আমি সবকিছুতেই আনন্দ পাই। আমার ধারণা আমার জন্মই হয়েছে আনন্দ পাবার জন্যে। সকালে শেভ করে আনন্দ পেয়েছি, গোসল করে আনন্দ পেয়েছি, ব্রেকফাস্ট করে আনন্দ পেয়েছি, আপনাকে দেখে আনন্দ পেয়েছি, নাটক দেখে আনন্দ পেয়েছি, এখন কথা বলে আনন্দ পাচ্ছি।
আপনাকে কি আজ ছেড়ে দেবে?
জানি না, তবে ছেড়ে দেয়া উচিত। আমি পুরোপুরি সুস্থ।
ছেড়ে দিলে কোথায় উঠবেন? হোটেলে?
হোটেলে আমার সেকেন্ড অপশন। ফাস্ট অপশন আপনাদের বাড়ি। যে কয়দিন থাকব পেইং গেস্ট হিসেবে থাকব।
পার ডে, কত করে দেবেন?
আপনি ঠিক করে দিন। পনেরো বিশ দিনের বেশি থাকব না।
ঐ বাড়িটা খুঁজে বের করবেন না?
কোন বাড়িটা?
যে বাড়িতে উঠতে যাচ্ছিলেন, ভুলে আমাদের বাড়িতে চলে এলেন। যে বাড়ির মেয়ের নাম রুনা। ভাল কথা রুনা কে?
আরেক দিন বলি?
কোনো অসুবিধা নেই, আরেকদিন বলবেন, আর বলতেই যে হবে তাও। শুধু একটা জিনিস এই মুহূর্তে জানতে চাচ্ছি। ঐ রাতে আপনার জন্যে খাবার সাজানো হচ্ছিল, আপনি কাউকে কিছু না বলে চলে গেলেন কেন?
রাগ করে চলে গেছি।
কার উপর রাগ? আমার উপর?
হ্যাঁ। আমাকে তুমি বলতে নিষেধ করেছিলাম এই জন্যে রাগ?
হ্যাঁ।
অন্যায় রাগ করেছিলেন।
হ্যাঁ, অন্যায় রাগ করেছিলাম, তার জন্যে শাস্তিও পেয়েছি।
কি শাস্তি পেয়েছিলেন?
বৃষ্টিতে ভিজে অসুখ বাধিয়েছি।
ডাক্তার রুবিনার কাছে শুনলাম আপনি মরতে বসেছিলেন।
হ্যাঁ। মানুষের হার্টে সমস্যা থাকে, আমার লাংসে সমস্যা।
ডাক্তার রুবিনাকে স্পেশাল থ্যাংকস দিতে ভুলবেন না। উনি আপনার জন্যে অনেক করেছেন।
সবার আগে আপনাকে ধন্যবাদ। আপনি ঘরে ঢুকেছেন হঠাৎ মনে হল ঘাতঘাত ঘরে এক খ রোদ ঢুকেছে। আপনাকে খুশি করার জন্যে বলছি না। সত্যি বলছি।
রাশেদকে বিকেলে হাসপাতাল থেকে রিলিজ করে দিল। রাশেদ আনন্দিত গলায় রূপাকে বলল, কি মনে হচ্ছে জানেন? মনে হচ্ছে প্রকৃতি আপনাকে পাঠিয়েছে আমাকে নিয়ে যাবার জন্যে। মনে হচ্ছে অনেকদিন পর বাড়ি যাচ্ছি।
রূপা একবার ভাবল বলে, আমি আপনাকে নিয়ে যাচ্ছি ঠিকই কিন্তু আমাদের বাড়িতে না। আমাদের বাড়ি ভুল বাড়ি। আপনি ভুল করে এসেছিলেন বলেই ভুল বাড়ি। আমি আপনাকে শুদ্ধ বাড়িতে নিয়ে যাব।
রাশেদ বলল, আচ্ছা আপনি কি গান জানেন?
রূপা বলল, না।
রাশেদ বলল, আমার মধ্যে একটা অদ্ভুত ব্যাপার আছে। কিছু কিছু মানুষকে দেখে আমার মনে হয় এই মানুষটা গান জানে। তাদের সবাইকেই আমি জিজ্ঞেস করেছি, আপনি কি গান জানেন? সবাই বলেছে, না। শুধু একজনকে দেখে আমার মনে হয়েছে সে আর যাই জানুক গীন জানে না। অথচ সে এত সুন্দর গান করে।
রূপা ব্যানার্জির কথা বলছেন?
রাশেদ জবাব দিল না। কিছুক্ষণের জন্যে অন্যমনস্ক হয়ে পড়ল। রূপা তাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে এল। রূপা জানে কাজটা ভুল হচ্ছে। মাঝে মাঝে ভুল কাজ করতে ইচ্ছা করে।
বাড়িতে ঢুকেই রাশেদ বলল, যে কথাটা আপনাকে বলতে গিয়ে ভুলে গেছি সেটা মনে পড়েছে। বলব?
বলুন।
আবার ভুলে গেছি।
রূপা বলল, এবার আপনি ভুলেন নি, আপনার মনে আছে। কিন্তু আপনি বলতে চাচ্ছেন না।
রাশেদ বলল, আপনার এত বুদ্ধি কেন? আমি একটা ব্যাপারে খুব অবাক হচ্ছি। আমি দেখেছি রূপা নামের মেয়েদের খুব বুদ্ধি হয়।