Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » রূপা (২০১০) || Humayun Ahmed » Page 4

রূপা (২০১০) || Humayun Ahmed

রাশেদ বুঝতে পারছে না সে কোথায় আছে

রাশেদ বুঝতে পারছে না সে কোথায় আছে। তার গায়ে নীল রঙের কম্বল। কম্বল থেকে ওষুধের গন্ধ আসছে। ফরমালডিহাইডের গন্ধ। HCHO. সোডিয়ামের সঙ্গে ফরমালডিহাইড কি কোন বিক্রিয়া করে?

Na + HCHO

কি হয়? আচ্ছা হঠাৎ সোডিয়ামের কথা কেন মনে হল? প্রচুর সোডিয়াম আমরা লবণের কারণে খাচ্ছি। এই সোডিয়াম শরীর কীভাবে বের করে? হেভি মেটাল শরীর বের করতে পারে না। লেড পয়জনিং হয়। মারকারি পয়জনিং হয়, মারকারির ইংরেজি কুইক সিলভার। রাশেদের একটি মেয়ের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে তার নাম সিলভার। না না সিলভার না, অন্য কিছু, সেটাও সিলভার। তা কি করে হয়।

আপনি এখন কি একটু ভাল বোধ করছেন?

রাশেদ বলল, আমি কোথায়?

আপনি হাসপাতালে।

ও আচ্ছা হাসপাতাল। আপনি ডাক্তার?

জী।

রাশেদ বলল, সোডিয়াম অতি রিএ্যাকটিভ একটা ধাতু। আমাদের শরীর ভর্তি সোডিয়াম। এখন…

ডাক্তার বললেন, আপনি কথা বলবেন না। চুপ করে শুয়ে থাকুন। আপনার নিঃশ্বাসের কষ্ট কি কমেছে? অক্সিজেন মাস্ক কে খুলেছে, আপনি নিজেই খুলেছেন?

জানি না।

আপনার পরিচিত কেউ কি আছে যে আপনার টেক কেয়ার করবে। রাতে আপনার সঙ্গে থাকবে।

না।

ডাক্তার রাশেদের মুখে অক্সিজেন মাস্ক পরিয়ে দিলেন।

আপনি চোখ বন্ধ করুন। তাকিয়ে থাকবেন না।

রাশেদ চোখ বন্ধ করল। তারপরেও নানান ধরনের আলো সে দেখতে পাচ্ছে। অনেক দূরে তারার আলোর মতো আলো দেখা যায়। সেই আলো ছুটে কাছে আসছে। ব্যাপারটা কি? আলোর গতিবেগ আমরা জানি। সেকেণ্ডে কত যেন? আচ্ছা অন্ধকারের গতিবেগ কত? আলো হল ফোটন। একটা সোডিয়াম এটমের গায়ে যদি ফোটন এসে আঘাত করে তাহলে কি সোডিয়াম থেকে ইলেকট্রন ছুটে বের হবে?

ফটো ইলেকট্রিক এফেক্ট। যিনি প্রথম ফটো ইলেকট্রিক এফেক্টের ব্যাখ্যা দেন তিনি পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার পান। তার নাম কি বলতে হবে। সময় তিন সেকেন্ড। ওয়ান থাউজেন্ড ওয়ান, ওয়ান থাউজেন্ড টু, ওয়ান থাউজেন্ড থ্রি। তিন সেকেন্ড শেষ। নাম বলতে না পারার জন্যে শাস্তি। কানে ধরে উঠবস কর। তার নাম আইনস্টাইন। এখন বললে হবে না, তিন সেকেন্ড পার হয়ে গেছে। ভিসকোয়ালিফাইড। ইউ লস্ট দ গেম। সেকেন্ড চান্স। এখন বলতে হবে মানুষ ধর মানুষ ভজ গান যে করেছে তার বাবার নাম। হিন্টস দেয়া হবে। তার একটা চায়ের দোকান আছে। তার নামের প্রথম অক্ষর হল সা। এখন রাশেদের মাথায় গান হচ্ছে–

মানুষ ধর মানুষ ভজ শুন বলিরে পাগল মন
মানুষের ভিতর মানুষ করিতেছে বিরাজন।

দুটা লাইন ক্রমাগত বেজে যাচ্ছে। রাশেদ বলল, পানি খাব।

তার পাশে কেউ নেই। রাশেদ আবার বলল, পানি খাব।

এ্যাপ্রন পরা একজন মহিলা এসে দাঁড়িয়েছেন, নিশ্চয়ই ডাক্তার। তার চেহারার সঙ্গে কোথায় যেন পরিচিত একজনের চেহারার মিল আছে। পরিচিত জনের নাম মনে আসছে না। ভুল হয়েছে, পরিচিত জনের নকল নাম মনে আসছে আসল নাম মনে আসছে না।

ডাক্তার বললেন, কোন কিছুর প্রয়োজন হলে এই বোতামটা চাপবেন। আমি ছুটে আসব। আমি ডিউটি ডাক্তার। অক্সিজেন মাস্ক আবার আপনি খুলেছেন?

রাশেদ বলল, আপনার নাম কি?

রুবিনা।

আপনার চেহারার সঙ্গে একজনের চেহারার কোথায় যেন মিল আছে। তার নাম বলতে পারবেন? নাম বলতে পারলে পুরস্কার। বলতে না পারলে তিরস্কার। তিন সেকেন্ড সময়। ওকে স্টার্ট ওয়ান থাঊজেণ্ড ওয়ান, ওয়ান থাউজেন্ড টু, ওয়ান থাউজেন্ড থ্রী। পারলেন না। আপনি ডিসকোয়ালিফাইড। আর সুযোগ দেয়া হবে না। ফ্লাই উইথ দ্য উইন্ড।

রাশেদ চোখ বন্ধ করল। মনে হচ্ছে সে দ্রুত তলিয়ে যাচ্ছে।

আচ্ছা সে কি মারা যাচ্ছে? মৃত্যুর আগে নাকি যাপিত জীবন পুরোটা চোখের সামনে ভেসে যায়। যদি সত্যি হয় তাহলে মৃত্যুর এই অংশটা ভালো। দ্বিতীয়বার পুরো জীবনযাপন করা।

ঘরের ভেতর কে যেন সিগারেট ধরিয়েছে। সিগারেটের কড়া গন্ধ নাকে আসছে। রাশেদ বাঁ দিকে তাকালো। পায়ের উপর পা তুলে রূপা ব্যানার্জি বসে আছে। তার হাতে সিগারেট।

রাশেদ সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পারল ঘটনা সত্যি না। হাসপাতালের ঘরে সিগারেট খাওয়া যায় না। তার হেলুসিনেশন হচ্ছে।

রূপা ব্যানার্জি বলল, মারা যাচ্ছি না-কি?

রাশেদ বলল, জানি না।

জানি না বলার জন্যে তাকে ঠোঁট নাড়তে হল না। হেলুসিনেশনের পুরো ব্যাপারটা মাথার ভেতরে ঘটে। ঠোঁট না নেড়েও কথা বলা যায়। চোখ বন্ধ করেও দেখা যায়।

রূপা ব্যানার্জি বলল, আমার কাছ থেকে পালিয়ে এসেও তো রক্ষা পাও নি। আমি চলে এসেছি।

রাশেদ বলল, হুঁ।

আমাকে দেখে খুশি হয়েছ?

রাশেদ বলল, সিগারেট খেও না। গন্ধ নাকে লাগছে।

মরেই তো যাচ্ছ। সিগারেটের কড়া গন্ধ থাকুক কিছুক্ষণ। তাছাড়া সিগারেট আমি খাচ্ছি না। আমি খাচ্ছি চুরুট। হাভানা ব্র্যান্ড। একটান দিয়ে দেখবে?

না।

কিছু হবে না। একটা টান দাও।

না রূপা, না।

‘না রূপা না’ অনেক শুনেছি। এবার শুনব না।

রূপা ব্যানার্জি উঠে দাঁড়িয়েছে। রাশেদের মুখের উপর লাগানো অক্সিজেন মাস্ক টান দিয়ে খুলে সে চুরুট ঠোঁটের ভেতর খুঁজে দিল। রাশেদ তাকে আটকাতে পারল না। তার হাত-পা অনড় হয়ে গেছে।

টান দাও, জোড়ে টান দাও। তোমার নষ্ট ফুসফুস চুরুটের ধোঁয়ায় শুদ্ধ করে নাও। এটা শুদ্ধি প্রক্রিয়া। রাশেদের জগত অন্ধকার হয়ে গেল।

এক সময় সে চোখ মেলল। কত সময় সে পার করেছে তা বুঝতে পারছে না। দিন না রাত তা বুঝতে পারছে না। সে বাঁ দিকে তাকালো, রূপা ব্যানার্জি নেই। আধবুড়া একজন কে যেন দাঁড়িয়ে আছে। তার পাশে বাচ্চা একটা ছেলে। ছেলেটার চোখ বড় বড়। লোকটা কথা বলছে তবে কথা স্পষ্ট না। কিছু বুঝা যাচ্ছে, কিছু বুঝা যাচ্ছে না।

স্যার, আমাকে চিনেছেন? আমি সামছু। আমার দোকানে এক রাইত ছিলেন। আমার পুলাটারে নিয়া আসছি। এর নাম কেনতু।

রাশেদ বুঝার চেষ্টা করছে–এই দুটা চরিত্র কি বাস্তব। না তার মাথার কল্পনা। একটা বাচ্চা ছেলের নাম কিন্তু হবে না। কিন্তু কারো নাম হয় না। কাজেই এ দুজন আন রিয়েল। এখন সমস্যা What is reality? মানুষের পাঁচটি ইন্দ্রিয় যা ধরতে পারে তাই কি রিয়েলিটি।

স্যার, আপনের শইল খুবই খারাপ করল। একজন ডাক্তার ডাইকা আনলাম। উনি আপনেরে হাসপাতালে ভর্তি করাইছে। আমি স্যার প্রত্যেক দিন আপনেরে দেখতে আসি। কাইলও আসছি। আপনার কি ইয়াদ আছে? এখানের এক ডাক্তার সাব বলেছেন আমি আমার পুলারে নিয়া রাতে থাকতে পারি। স্যার আমি কি থাকব? মুখে কথা বলতে না পারলে মাথা নাড়েন।

রাশেদ কিছু না বুঝেই মাথা নাড়ল।

স্যার, আপনার চিন্তা নাই, আমরা বাপ-বেটা আপনের সাথে আছি। উপরে আল্লাহ আর নিচে আমরা দুই বাপ-বেটা।

রাশেদের খুব জানতে ইচ্ছা করছে লোকটা তার ছেলের নাম কিন্তু কেন রেখেছে। নিশ্চয়ই কারণ আছে। মানুষ কারণ ছাড়া কিছুই করে না। মানুষের জগত cause and effect এর জগত। কিন্তু নিয়ে শৈশবের একটা ছড়া মাথায় এসেছে

If যদি is হয়
But কিন্তু Not নয়
What মানে কি?

লোকটা হড়বড় করে কথাই বলছে। মানুষ এত কথা বলে কেন।

স্যার আপনার একটা চিকিৎসা আমি করব বলে ঠিক করেছি। কচি পান পাতার উপরে কালিজিরা তেল দিয়া সেই পান পাতা গরম কইরা আপনার পায়ের পাতায় ঘষব। সাথে সাথে বল পাইবেন। আধুনিক ডাক্তার এইসব চিকিৎসা জানে না। এইগুলো গেরাইম্যা চিকিৎসা। একটাই সমস্যা পান পাতা গরম করব কেমনে? ঠাণ্ডা পান পাতা ঘষলে হিতে হবে বিপরীত। দেখি কি করা যায়। একবার যখন পান পাতা ঘষার সিদ্ধান্ত নিয়েছি তখন ঘষব ইনশাল্লাহ। স্যারের মাথা আস্তে কইরা টিপ্যা দেই?

রাশেদ টের পেল তার কপালে হিমশীতল আঙুল। আঙুল কপালের উপর দিয়ে যাচ্ছে আর রাশেদের শরীর কেঁপে উঠছে। তার মাথার কাছে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটা বলল, ঐ কেনতু বাপধন! স্যারের পায়ের আঙ্গুল আস্তে কইরা ফুটা। স্যার আরাম পাই।

ছেলেটার নাম তাহলে কেন। কিন্তু না। কেনতু শব্দটার মানে কি? মাথার কাছে সব সময় দুটা ডিকশনারি রাখা দরকার। একটা বাংলা একটা ইংরেজি। ভুল হয়ে গেছে। বিরাট ভুল। Life is a bundle of mistakes. এটা কার কথা? জীবন হচ্ছে এক বান্ডেল ভুলের… 1 Bandle শব্দটার বাংলা কি? ডিকশনারি খুবই প্রয়োজন।

বোমা ফাটার মতো শব্দ হচ্ছে কোথায়? ও আচ্ছা কেনতু নামের ছেলেটা, আঙুল ফুটাচ্ছে। আঙুল ফুটানোর এত শব্দ। আশ্চর্য।

রাশেদ চোখ বন্ধ করে ফেললো। চুরুটের গন্ধ আবার নাকে আসছে। শরীর গুলাচ্ছে।

সামছু বলল, কেনতু বাপধন! স্যারের সাথে কিছুক্ষণ একলা থাকতে পারবি?

কেনতু বলল, হুঁ।

আমি বুদ্ধি পাইছি। ঘরে খবরের কাগজ জ্বালায় আগুন করব। সেই আগুনে পান গরম করব। আমি যাই, পান আর কালিজিরা তেলের জোগাড় দেখি।

রাত এগারোটায় বাপ-ছেলেকে হাসপাতাল থেকে বের করে দেয়া হল। সামছু হাসপাতালের দারোয়ানের চড়-থাপ্পড় খেলো। অপরাধ? বাপ-বেটা রুমে আগুন জ্বালিয়ে পান গরম করছিল।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress