Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » রূপার পালঙ্ক (১৯৯৯) || Humayun Ahmed » Page 9

রূপার পালঙ্ক (১৯৯৯) || Humayun Ahmed

ঢাকায় পৌঁছতে পৌঁছতে মোবারকের রাত

ঢাকায় পৌঁছতে পৌঁছতে মোবারকের রাত দশটা বেজে গেল। সে বলে গিয়েছিল রাতে ফিরবে। রাত দশটাও রাত, দুটাও রাত। কাজেই এক্ষুনী যে বড় সাহেবের রাজপ্রাসাদে বন্দি হতে হবে এমন কোনো কথা নেই। রাত দুটার দিকে গেলেই হবে। গেটে দারোয়ান থাকে। দারোয়ান নিশ্চয়ই গেট খুলে দিবে। এবং সে নিশ্চয়ই কৈফিয়ত তলব করবে না, গলার রগ ফুলিয়ে বলবে না— এত রাত হল কেন? যদি জিজ্ঞেস করেও বললেই হবে রাজেন্দ্রপুরের কাছে বাস এ্যাকসিডেন্ট হয়েছে। সে অল্পের জন্যে বেঁচেছে। একজন মারা গেছে, কয়েকজনের অবস্থা ক্রিটিক্যাল। সে নিজেও বুকে ব্যথা পেয়েছে। হাসপাতাল থেকে এক্সরে করিয়ে তারপর এসেছে। দেরী হবার এই কারণ। তবে জিজ্ঞেস করবে বলে মনে হয় না।

মোবারক কুদুসের চায়ের দোকানে চলে গেল। আজ একটু শীত পড়েছে। বড় সাহেবের বাড়ি থেকে আনা চাদরটা থাকলে ভাল হত। চাদরটা জহিরকে দিয়েছিল। জহির নিশ্চয়ই ইতিমধ্যে ব্যবস্থা করে ফেলেছে বিক্রি করে দিয়েছে।

জহিরের একটা খোঁজ নেয়া অত্যন্ত জরুরি। রক্তবমি বন্ধ হয়েছেতো বটেই। পাতলা পায়খানা অনেকদিন থাকে। রক্তবমির মত জটিল ব্যাধি অল্প সময় থাকে। জহিরের শরীর যদি ভাল থাকে আর বজলুকে যদি পাওয়া যায়— তিনজনের আসর বসাতে হবে। সে কিছু খাবে না। সে শুধু দেখবে। আসরে উপস্থিত থাকার আনন্দও কম না। বন্ধুদের কাছ থেকে সে অনেক কিছু গোপন করেছে— কিডনি বিক্রির ব্যাপারটা গোপন করা উচিত হয় নি। খুবই অন্যায়। হয়েছে। ওদেরকে বুঝিয়ে বলতে হবে।

সরুফার ব্যাপারটাও বলতে হবে। একটু অন্যভাবে বলতে হবে। দাদিজানের শেষ ইচ্ছা। কী আর করি। দাদিজানের কথা ফেলি কী করে? বাবা মা মারা গিয়েছিলেন আমি যখন কোলের শিশু। দাদিজানই আমাকে বড় করেছেন। দাদিজান সেই কারণে একই সঙ্গে আমার দাদি, আমার মা এবং আমার বাবা। একের ভেতর তিন। উনার শেষ ইচ্ছা অগ্রাহ্য করা অসম্ভব। কাজেই বাধ্য হয়ে স্বীকার করেছি। মেয়ের চেহারা ছবি মোটামুটি। বুদ্ধির সামান্য শর্ট। কী আর করা…। ইত্যাদি…।

চায়ের দোকানে বজলু বা জহির কেউ নেই। ছোট রফিক আছে। সে বসে আছে মোবারকের চেয়ারে। তার সামনে এক কাপ চা। কিন্তু সে চা খাচ্ছে না। তাকে দেখে মনে হচ্ছে সে কারো জন্যে অপেক্ষা করছে। সে রাস্তার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মোবারক চায়ের দোকানে ঢোকার পর সে কঠিন দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ মোবারকের দিকে তাকিয়ে থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিল।

মোবারককে দেখেই কুদ্দুস বলল, তুমি ছিলা কই? বজলু আধা পাগল হইয়া তোমারে খুঁজতেছে।

মোবারক বলল, কেন?

জহিরের খবর কিছু জান না? রক্তবমি করতেছে। চাইর ব্যাগ রক্ত দেওয়া হইছে। কোনো লাভ হয় নাই। এই যাত্রা বাঁচব বইল্যা মনে হয় না। আমি দেখতে গেছিলাম। আমারে চিনে নাই।

সে আছে কোথায়?

মেডিকেলে। দুই নম্বর ওয়ার্ড।

মোবারক জহিরের বিছানার কাছে দাঁড়িয়ে আছে। মোবারকের পাশে বজলু। বজলু ফিসফিস করে বলল, তোকে দেখে খুবই সাহস পাচ্ছি। মনটা ভেঙে গিয়েছিল বুঝলি। আজ সারাদিন ছয় কাপ চা ছাড়া কিছু খাইনি। তুই ছিলি কোথায়?

মোবারক জবাব দিল না। সে একদৃষ্টিতে জহিরের দিকে তাকিয়ে আছে। জহিরকে স্যালাইন দেয়া হচ্ছে। তাকে দেখে মনে হচ্ছে মানুষ না, মর্গের কোনো মৃতদেহ।

বজলু বলল, রক্ত বমিটা বন্ধ হয়েছে। তবে ডাক্তার বলেছে আশা খুবই কম।

মোবারক জহিরের মুখের কাছে মুখ নিয়ে ডাকল, এই জহির। জহির!

জহির চোখ মেলল।

মোবারক বলল, আমাদেরকে চিনতে পারছিস? চিনতে পারলে কথা বলার দরকার নেই। একটু চোখের পাতি নাড়া। তাহলেই বুঝব চিনতে পারছিস।

জহির চোখের পাতি নাড়ল এবং দুই বন্ধুকে অবাক করে দিয়ে সামান্য হাসল।

বজলু বিস্মিত হয়ে প্রায় চেঁচিয়ে উঠল— আরে ব্যাটা দেখি হাসে। ব্যাটাকেতো বিল্লি মে কাট দিয়া।

মোবারক বলল, দোস্ত ঝুলে থাক। খবরদার মরবি না। খবরদার না। কোনো চিন্তা নেই। আমি সব ব্যবস্থা করেছি। দোস্ত আমি কিডনি বেঁচে দিয়েছি। অনেক টাকা পাব। দেখবি এই টাকা দিয়ে আমি আমাদের ভাগ্য বদলে ফেলব— FRUITS AND FLOWERS. বিশ্বাস কর দোস্ত সত্যি কথা বলছি। সবই সত্যি। এক বর্ণ মিথ্যা না।

কথা বলতে বলতে মোবারকের চোখ ঝাপসা হয়ে গেল।

ঝাপসা চোখে তার হঠাৎ মনে হল জহির যে খাটে শুয়ে আছে সেটা সাধারণ খাট না। খাটটা রুপার তৈরি। রুপার পালঙ্ক।

পরিশিষ্ট

মোবারক তার কিডনি বিক্রি করতে পারে নি। তাদের বিদেশ যাত্রার আগের দিন বড় সাহেব হঠাৎ করে মারা যান। মোবারক ফিরে যায় আগের জীবনে। ছাতিম গাছের নিচে তিন বন্ধু বসে থাকে। মাঝে মাঝে তারা ভাবের জগতে চলে যায়, তখন সময়টা বড় আনন্দে কাটে। বজলু হঠাৎ বলে, জহির, তোর বিল্লির গল্পটা বলতো। বিল্লি মে কাট দিয়া।

জহির সঙ্গে সঙ্গে গল্প শুরু করে।

তিন বন্ধু প্রাণ খুলে হাসে।

শুধু পূর্ণিমার রাতে মোবারকের খুব কষ্ট হয়। আকাশ ভেঙে জোছনা নামে। মোবারকের মনে হয় সমস্ত পৃথিবীটাই বুঝি বিশাল এক রুপার পালঙ্ক। এত প্রকাণ্ড এক পালঙ্কে সে বসে আছে একা। অনেক দূরে দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে আছে লাজুক একটা মেয়ে। মেয়েটার দিকে তাকিয়ে একবার যদি বলা যায়, খুকি এসো। সে ছুটে চলে আসবে। কিন্তু মোবারক বলতে পারছে না। কারণ কথাগুলি বলার জন্যে তাকে রুপার পালঙ্ক থেকে নেমে মেয়েটার কাছে যেতে হবে। সে যেতে পারছে না। যে রুপার পালঙ্কে সে বসে আছে সেখান থেকে নামার ক্ষমতা তার নেই।

রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চাঁদের আলো তীব্র হয়। রুপার পালঙ্ক ঝকমক করতে থাকে।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9
Pages ( 9 of 9 ): « পূর্ববর্তী1 ... 78 9

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress