বিছানায় কুণ্ডুলী পাকিয়ে
আমি বিছানায় কুণ্ডুলী পাকিয়ে শুয়ে আছি। আমার চুল ভেজা অর্থাৎ মাথায় প্রচুর পানি দেয়া হয়েছে। মা পায়ে গরম তেল মালিশ করে দিচ্ছেন। অচেতন রুগীদের ক্ষেত্রে এই কাজটি করা হয়। যা চলছে তার নাম জ্ঞান আনানোর প্রক্রিয়া।
আমার জ্ঞান আছে। ভালই আছে। অনেকক্ষণ হল মটকা মেরে পড়ে আছি। ঘটনাটা কী বোঝার চেষ্টা করছি। দুর্বোধ্য কোন ঘটনা ঘটে নি। নানান ধরনের কথা বার্তা শুনে যে ছবিটি পাওয়া যাচ্ছে তা হচ্ছে–জলিলের মা ছুটে এসে খবর দেয়, বকুল আপা অজ্ঞান হয়ে লিচু গাছের নীচে পড়ে আছে। মুখ দিয়ে ফেনা বের হচ্ছে। সে অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে অজ্ঞান হবার আগের অংশ— সরবত অংশ বাদ দিয়ে যায়। আমাকে লিচু গাছের নীচ থেকে ধরাধরি করে আনা হয়। তখন সাময়িক ভাবে আমার জ্ঞান ফেরে এবং আমি ভূতে ধরা রুগীর মত কিছুক্ষণ হাসাহাসি করে প্রচুর বমি করতে থাকি। তখনই সরবত অংশ প্রকাশ হয়ে পড়ে।
এখন আমি বিছানায় শুয়ে আছি। ঘরে বাতি জ্বলছে, কাজেই রাত। কত রাত জানি না। একজন ডাক্তার এসে আমাকে দেখে গেছেন। ডাক্তার বলে গেছেন— ভয়ের কিছু নেই। ইউনিটের লোকজন আমাকে দেখতে আসছে। মা তাদেরকে অতি দ্রুত ঘর থেকে বের করে দিচ্ছেন। সেলিম ভাই যখন এলেন তখন আমি পুরোপুরি জেগে। সেলিম ভাই ক্ষীণ গলায় বললেন, এখন ওর অবস্থা কেমন? মা বললেন, অবস্থা ভাল, ঘুমুচ্ছে। তুমি এখন যাওতো কথা বার্তা শুনে ঘুম ভেঙ্গে গেলে অসুবিধা। ডাক্তার বলেছে প্রচুর ঘুম দরকার।
আমি বুঝতে পারছি সেলিম ভাই যাচ্ছেন না। দরজা ধরে দাঁড়িয়ে আছেন।
বকুলের হয়েছে কী? সারাদিন রোদে ঘোরাঘুরি করেছে। রোদ মাথায় চড়ে গিয়ে এই অবস্থা। ডাক্তার বলেছেন সর্দি গর্মি, যাই হোক এখন ভাল। তুমি যাওতো।
আমি বুঝতে পারছি সরবতের অংশ প্রকাশিত হলেও পুরোপুরি প্রকাশিত হয় নি। সবাই জানে না। আমার বুদ্ধিমতী মা ব্যাপারটা ধামাচাপা দিয়ে ফেলেছেন। তাঁর মেয়ে ভদকা খেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকবে এটা জীবন থাকতে তিনি প্রকাশিত হতে দেবেন না।
দরজায় টুক টুক শব্দ হল। মা যেভাবে আমাকে ছেড়ে লাফিয়ে উঠলেন তা থেকেই বুঝলাম ডিরেক্টর সাহেব এসেছেন। আমি এখন বিছানায় উঠে বসব কি-না বুঝতে পারছি না।
ডিরেক্টর সাহেব ঘরে ঢুকলেন। চেয়ার টেনে আমার মাথার কাছে বসলেন।
এখন অবস্থা কী?
মা কান্না কান্না গলায় বললেন, বুঝতে পারছি না।
জ্ঞান ফিরেছে?
জ্বি জ্ঞান ফিরেছে। ডাক্তার সাহেব ঘুমের ওষুধ দিয়েছেন। এখন ঘুমুচ্ছে।
জ্বর আছে?
একটু মনে হয় আছে।
তিনি হাত বাড়িয়ে আমার কপালে রাখলেন। সঙ্গে সঙ্গে ভয়াবহ একটা ব্যাপার হল আমার সমস্ত শরীর জমে গেল। মনে হল আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি না। আমার মাথার ভেতরটা হঠাৎ ফাঁকা হয়ে গেছে। কান্না আটকে রাখলে গলার কাছে শক্ত ডেলার মত জমে থাকে তেমনি কিছু একটা জমে আছে।
জ্বরতো নেই।
তিনি হাত সরিয়ে নিলেন। আমার শরীর স্বাভাবিক হল— শুধু গলার কাছে শক্ত ডেলাটা থেকে গেল। চিৎকার করে কিছুক্ষণ না কাঁদলে এটা মনে হয় যাবে
হয়েছিল কী?
মা কাঁদো কাঁদো গলায় বললেন, মঈন ভাই আমি কিছুই জানি না। জালালের মা হঠাৎ এসে বলল, লিচু গাছতলায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। শুনেই আমার হাত পা ঠাণ্ডা।
শুধু শুধু অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকবে কেন? ওর কি মৃগী রোগ আছে?
ছি! ছি! মঈন ভাই কী বলেন, মৃগী রোগ থাকবে কেন? রোদে সারাদিন রেছে …। মনে হয় রোদ মাথায় চড়ে কিছু একটা হয়েছে।
ঘুম ভাঙ্গলে আমাকে খবর দেবেন আমি কথা বলব।
জ্বি আচ্ছা।
আরেকটা কথা, ভয় পাবেন না। ভয়ের কিছু নেই। ডাক্তার যদি বলেন আমি সঙ্গে সঙ্গে ওকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে পাঠিয়ে দেব।
সেটা আমি জানি মঈন ভাই। আপনি আছেন বলেইতো আমি নিশ্চিত।
মা তাঁর বিখ্যাত তেলতেলানি হাসি হাসছেন। ডিরেক্টর সাহেব বের হয়ে গেলেন। আমি বুঝতে পারছি—আমার অজ্ঞান হবার খবর সবাই জানলেও সরবত বিষয়ক জটিলতার খবর জানে না। এই অংশটা ভালমতই গোপন করা হয়েছে। মা, জালালের মা, সোহরাব চাচা এবং সুবীরদা হয়ত জানেন। যখন বমি করছিলাম সুবীরদা পাশে ছিলেন। তিনি হতভম্ব গলায় বলেছিলেন— একী রক্ত বমি করছে নাকি? সোহরাব চাচা বললেন, রক্ত না। তরমুজের সরবত বের হয়ে আসছে। যত বের হয় ততই ভাল। তারপরই শুনলাম সোহরাব চাচা জালালের মাকে বলছেন, একে সরবত কে খাইয়েছে?
জালালের মা তীক্ষ গলায় বলল, আমারে জিগান ক্যান? কে খাওইছে আমি জানি না।
আচ্ছা ঠিক আছে। খাওয়াও নি ভাল করেছ। চেঁচিও না। চেঁচানোর কিছু হয় নি।
আমার দিকে এমন গরম চোখে চাইবেন না। জালালের মা গরম চোখের ধার ধারে না।
সোহরাব চাচার সঙ্গে জালালের মার কথাবার্তা এই পর্যন্তই আমার কানে গেছে তারপর হঠাৎ মাথা ঘুরে জগৎ অন্ধকার হয়ে গেল। সেই অনুভূতিটা খুব যে খারাপ ছিল তা না।
আমি বিছানায় উঠে বসে সহজ গলায় বললাম, মা পানি খাব। মা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছেন। তিনি সম্ভবত ভাবতেই পারেন নি আমি এত সহজে বিছানায় ওঠে বসে পানি খেতে চাইব। মা তাকিয়ে আছে আমার দিকে, দ্রুত ভাবছেন–মেয়ের উপর কঠিন আক্রমণ এখনই শুরু করবেন, না দেরি করবেন। আমি বললাম, মা দেখতো কটা বাজে।
নটা বাজে?
তোমাদের রাতের খাওয়া হয়ে গেছে?
না।
খাওয়ার ডাক পড়েছে?
না।
চল যাই খোঁজ নিয়ে আসি আমার খুব ক্ষিধে লেগেছে।
মা কঠিন গলায় বললেন, তুই সন্ধ্যাবেলা কী খেয়েছিলি?
আমি আগের মতই সহজ স্বাভাবিক গলায় বললাম, ভদকা খেয়েছিলাম। তরমুজের সরবতের সঙ্গে মেশানো ভদকা।
কেন খেয়েছিলি?
ওমা খাবার জিনিস খাব না? আমি হচ্ছি ছবির দুনম্বর নায়িকা। এক নম্বর নায়িকা খেতে পারলে দুনম্বর নায়িকা পারবে না কেন? কী ব্যাপার মা কতক্ষণ আগে তোমাকে পানি দিতে বললাম, এখনোতো দিচ্ছ না।
মা পানি আনতে গেলেন। তাঁর শুকনো মুখ দেখে আমারই মায়া লাগছে। তাকে দেখে মনে হচ্ছে তিনি কেঁদে ফেলবেন। আমার মনে হচ্ছে অনেকদিন তাঁকে কাঁদানো হয় না, আজ কাদিয়ে দিলে কেমন হয়?
বকু নে পানি নে।
পানির গ্লাস হাতে নিলাম। ইচ্ছা করছে মাতালের ভূমিকায় কিছুক্ষণ অভিনয় করি। উল্টো পাল্টা কথা বলি। মার আক্কেলগুড়ুম করে দেবার এটাই হবে সহজ বুদ্ধি। একটু টেনে টেনে কথা বলতে হবে। বেশির ভাগ কথাই হবে অর্থহীন তবে কথা যা বলা হবে তার সবটাই হতে হবে সত্যি। মাতালরা মিথ্যা কথা বলতে পারে না। মিথ্যা বলার জন্যে মস্তিষ্কের যে নিয়ন্ত্রণ দরকার মাতালের তা থাকে না। এটা আমার শোনা কথা। সোহরাব চাচার কাছ থেকে শুনেছি।
পানির গ্লাসে একটা চুমুক দিলাম। পানিটা খেলাম না। মুখের ভেতর রেখেই গার্গলের মত করে বললাম, কেমন আছ মা?
মা থমথমে গলায় বললেন, তুই মুখে পানি নিয়ে কথা বলছিস কেন?
গার্গল করতে করতে কথা বলছি। কথা বোঝা যাচ্ছে না?
পানি গিলে ফেলে স্বাভাবিক ভাবে কথা বল।
ডিরেক্টর সাহেবকে তুমি এখনো খবর দিচ্ছ না কেন? উনি না বলে গেলেন জ্ঞান ফিরলেই তাকে খবর দিতে হবে?
তুই জানলি কীভাবে?
আমিতো জেগেই ছিলাম মটকা মেরে পড়েছিলাম। তোমরা কে কী বলছ বই শুনতে পাচ্ছিলাম।
তোর সঙ্গে আমার কথা আছে বকু। কথাতো বলছি, কথা বলছি না?
তোর কাণ্ডকারখানা আমার একেবারেই ভাল লাগছে না। আমার মনে হচ্ছে তোর সর্বনাশ হয়ে যাচ্ছে।
সর্বনাশের সবে শুরু। তুমি শুরু দেখেই ঘাবড়ে গেলে? আসল যখন হবে তখন কী করবে?
আসল মানে?
এখনতো মদ খেয়েছি নির্জনে। পুকুর পাড়ে লিচু গাছের নীচে। তখন মদ খাব ডিরেক্টর সাহেবের ঘরে। দরজা থাকবে ভেজানো। ঘর আধো আলো, আধো
অন্ধকার।
আমি খিল খিল করে হাসছি এবং প্রতি মুহূর্তেই ভাবছি এই বুঝি মা আমার উপর ঝাপিয়ে পড়েন। মা তা করলেন না। তিনি তাকিয়েই আছেন। তার চোখে পানি জমছে, কিন্তু কেঁদে ফেলার স্তরে এখনো আসেন নি। হয়ত ভাবছেন তার আদরের কন্যা এখনো মাতাল।
বকু তুই শুয়ে থাক। সকালে কথা বলব।
ওমা ভাত টাত না খেয়ে শুয়ে পড়ব কেন? রাতে ভাত না খেলে এক চড়ুইয়ের রক্ত কমে যায়, তাছাড়া আমার মোটেই ঘুম পাচ্ছে না। আজ আমি সারা রাত জেগে থাকব।
বকু।
হুঁ।
তোর ছবিতে কাজ করার দরকার নেই। চল আমরা চলে যাই।
খুব ভাল কথা। চল তাই করি। তুমি যাও ডিরেক্টর সাহেবকে বুঝিয়ে বল— বুঝিয়ে বললে তিনি বুঝবেন। আর তুমি যদি বুঝিয়ে বলতে না পার, আমি বলছি।
আমি বিছানা থেকে নামার উপক্রম করতেই মা এসে আমাকে ধরে ফেললেন। অসম্ভব আদুরে গলায় বললেন, বকু শুয়ে থাক। আয় আমি তোর মাথায় হাত বুলিয়ে দি।
আমি শুয়ে পড়লাম। মা আমার মাথায় হাত বুলুচ্ছেন। চুলে বিলি কেটে দিচ্ছেন। মনে হচ্ছে দ্রুত আমার বয়স কমে যাচ্ছে। এই কাজটা আর কেউ পারে শুধু মায়েরা পারেন। সন্তানের বয়স আদর করে করে কমিয়ে দিতে পারেন। আমার এখন ইচ্ছে করছে গুটিশুটি মেরে মায়ের বুকের কাছে শুয়ে থাকি।
বকু!
হুঁ।
তোর মধ্যে একটা অস্থির ভাব চলে এসেছে। তুই একদন্ড স্থির থাকতে পারছিস না। কারণটা কী বলতো?
আমার মনে হয় আমি কারো প্রেমে পড়েছি।
মা হাসি মুখে বললেন, কার প্রেমে পড়েছিস?
ঠিক বুঝতে পারছি না, মনে হয় ডিরেক্টর সাহেবের।
মা হো হো করে হেসে ফেললেন। আমি মার সঙ্গে গলা মিলিয়ে হাসছি–যেন এমন হাস্যকর কথা এর আগে আমরা কেউ শুনি নি।
ডিরেক্টর সাহেবের প্রেমে কেন পড়েছি শুনতে চাও মা?
মা হাসি চাপতে চাপতে বললেন, কেন?
উনার জ্ঞানী ধরনের কথাবার্তা শুনে। হিরোশিমায় বোমা পড়েছিল আটই আগস্ট সকাল আটটা পনেরো মিনিটে এই জ্ঞানের কথা উনি না থাকলে আমি শুনতেই পেতাম না। উনাকে দেখলে কী মনে হয় জান মা?
কী মনে হয়?
মনে হয় জ্ঞান ঘামের মত টপ টপ করে পড়ছে।
মা হাসি চাপতে চাপতে বললেন, খবর্দার এইসব বাইরে আলোচনা করবি। উনার কানে গেলে উনি মনে কষ্ট পাবেন।
পাগল হয়েছ এইসব আমি আলোচনা করব? আমার ৪৬টা ক্রমোজমের ২৩টা আমি পেয়েছি তোমার কাছ থেকে। এই ২৩টা ক্রমোজম ভর্তি বুদ্ধি। সেই বুদ্ধি আমার আছে না? উনাকে দেখলে আমি কী করি জান? আমি হতাশ একটা ভাব ধরে এক দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকিয়ে থাকি। যাতে উনি মনে করেন আমি উনার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছি।
এ রকম করিস কেন?
মজা লাগে এই জন্যে করি।
মা আমাকে আরো কাছে টানলেন। তাঁর মুখে কেমন শান্তি শান্তি ভাব। মেয়ে সম্পর্কে তাঁর মনে যে দুঃশ্চিন্তা ছিল তা ঝড়ের মত উড়ে গেছে।
বকু!
বল মা।
ভদকা মেশানো সরবতটা তুই কী মনে করে খেলি বলতো মা?
রাগ করে খেয়েছি। সোহরাব চাচা পাপিয়া ম্যাডামকে এই সরবত দিলেন, মাকে দিলেন না, তখনই রাগ লাগছিল। তাছাড়া মাতাল হয়ে দেখতে ইচ্ছে করছিল কেমন লাগে।
আর কখনো এরকম করবি না।
আচ্ছা করব না। মা শোন, আমার ক্ষিধে লেগেছে।
আমাদের খাবার ঘরে দিয়ে যাবে।
ইউনিটের খাবার সবার সঙ্গে মিলে খেতে ইচ্ছা করে চল নীচে গিয়ে হৈ হৈ করে খেয়ে আসি।
সত্যি খেতে চাস?
হুঁ চাই।
তারপর সেখানে গিয়ে তুই যদি উল্টোপাল্টা কোন কথা বলিস?
কোন উল্টোপাল্টা কথা বলব না।
মা বিছানা থেকে নামলেন। তিনি চুল আঁচড়াবেন, শাড়ি পাল্টাবেন। হয়তোবা ঠোঁটে হালকা করে লিপস্টিকও দেবেন। আমরা মা-মেয়ে হাসি মুখে নীচে খেতে যাব। মা খেতে খেতেই জেনে নেবেন আজ সারাদিনে কোথায় ইন্টারেস্টিং কী ঘটনা ঘটল।
আমাদের খেতে যাওয়া হল না। সোহরাব চাচা দুজনের খাবার নিয়ে চলে এলেন। আমি আহ্লাদী গলায় বললাম, কী খবর সোহরাব চাচা?
সোহরাব চাচা হাসি মুখে বললেন, খবর খুবই ভাল। তুমি আছ কেমন?
আমি ভাল আছি।
তাতো দেখতেই পাচ্ছি। আগামীকাল শুটিং আছে। সকাল সকাল খেয়ে শুয়ে পড়। লম্বা একটা ঘুম দাও।
মা কৌতূহলী গলায় বললেন, আজকের শুটিং কেমন হয়েছে?
ভাল হয়েছে বলেইতো শুনেছি।
সেলিমকে কি রাখা হচ্ছে, নাকি ফরহাদ সাহেব অভিনয় করবেন?
এখনো জানি না। স্যার স্পষ্ট করে কিছু বলছেন না।
মা গম্ভীর মুখে বললেন, ছবি চলে স্টারদের নামের উপর। ফরহাদ সাহেবকে ছবির স্বার্থেই রাখা উচিত। আপনি মঈন ভাইকে ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলুন।
কিছু বলতে হবে না। এইসব ব্যাপার স্যার খুব ভাল জানেন।
রাতের খাবার আমি আরাম করেই খেলাম। মুরগীর গোশত, ভাজি, ডাল আর কালিজিরা ভর্তা। কয়লার মত কাল একটা বস্তু। ভাত মাখলেই কাল হয়ে যাচ্ছে। খেতেও ভাল না, তিতকুটে তিতকুটে ভাব।
মা বললেন, এই ভর্তাটা তোর বাবার খুব প্রিয়। তোর বাবা খুব আগ্রহ করে খেত। এখন আর খেতে পারে না।
আমি বললাম, এখনো নিশ্চয়ই খায়। নতুন মা বেঁধে বেঁধে যত্ন করে খাওয়ান।
মা বললেন, ঐ ধুমসী সেজেই কূল পায় না বেঁধে খাওয়াবে কী? তোর বাবার কী পছন্দ, কী অপছন্দ ঐ ধুমসী তার কিছুই জানে না।
তুমি জানলে কী করে?
একদিন ঐ বাসায় গিয়েছি ধুমসী নাস্তা দিয়েছে নুডলস। নুডলস তোর বাবার দুচক্ষের বিষ। তার কাছে না-কি দেখতে কৃমির মত লাগে। বাসায় আমি
কোনদিন এই কারণে নুডলস রান্না করি নি। ধুমসী সমানে রাধছে।
নতুন মার নুডলসই হয়ত এখন বাবার কাছে অমৃতের মত লাগছে। বাবা সোনামুখ করে খাচ্ছেন। বাটিরটা শেষ হয়ে গেলে বলছেন, ওগো কৃমি ভাজা আরেকটু দাও খেতে মজা হয়েছে।
মা কঠিন গলায় বললেন, তুই নতুন মা নতুন মা করছিস কেন?
আমি বললাম, বাবার স্ত্রীকে মা ডাকব না? তাছাড়া তিনি নতুনতো বটেই। তুমি পুরানো মা উনি নতুন মা।
মা থালা সরিয়ে উঠে পড়লেন। আমি সাধ্য সাধনা করলাম না, কারণ তাতে লাভ হবে না। মার ভাত-রাগ কঠিন রাগ। সহজে এই রাগ ভাঙ্গে না।
রাতে ঘুমুতে যাবার সময় বললেন, তুই দূরে সরে ঘুমো গায়ের উপর এসে পড়বি না। গরম লাগে।
আমি বললাম, গরম কোথায় তুমিতো কম্বল গায়ে দিচ্ছ।
সরে ঘুমুতে বললাম, সরে ঘুমো।
আমি সরে গেলাম। খুব ভাল করেই জানি আমাকে দূরে সরিয়ে মা বেশিক্ষণ থাকতে পারবেন না কিছুক্ষণের মধ্যে নিজেই আমার কাছে সরে আসবেন। আমি যেমন মায়ের গায়ের গন্ধ ছাড়া ঘুমুতে পারি না, মার বেলাতেও তাই। তিনিও আমার গায়ের গন্ধ ছাড়া ঘুমুতে পারেন না।
বকুল!
কী মা।
আমি একজন দুঃখী মহিলা। দুঃখী মহিলাকে কি আরো বেশি দুঃখ দিতে আছে?
দুঃখী মহিলা বলেইতো তোমাকে দুঃখ দি।
ও আচ্ছা।
মা ঘুম আসছে না। একটা গল্প বল। গল্প শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়ি।
আমি গল্প জনি না।
নিজের জীবনের গল্প বল। এইগুলি শুনতে আমার ভাল লাগে।
মা জবাব দিলেন না। ছোট্ট করে নিঃশ্বাস ফেললেন। আমি মার কাছে এগিয়ে এলাম। তার গায়ে একটা হাত তুলে দিলাম। মা ঝটকা মেরে সেই হাত সরিয়ে দিলেন না।
মা!
কী?
তোমার বিয়ের গল্প বলতো মা। এই গল্প আমি যতবার শুনি ততবার ভাল লাগে।
আজ থাক আরেকদিন বলব। আজ শরীরটা ভাল লাগছে না। মনে হয় জ্বর আসছে।
জ্বর নেই মা, তোমার গা ঠাণ্ডা। গল্পটা বল রিকশা থেকে ধুপ করে পড়ে গেলে সেখান থেকে শুরু কর। জায়গাটা যেন কোথায়? কাওরান বাজার না?
বকু, ঘুমো। আমার শরীরটা আসলেই ভাল লাগছে না।
অসাধারণ এই গল্পটা তুমি বলবে না?
মা আবারো নিঃশ্বাস ফেললেন। আজ আর গল্প হবে না। আমি ঘুমুবার আয়োজন করছি। আয়োজন মানে চোখ বন্ধ করে ফেলা। চোখ বন্ধ করে মজার মজার কিছু দৃশ্য কল্পনা করা।
বকু!
কী মা?
ঘটনাটা কাওরান বাজারে ঘটে নি। কাকরাইলে ঘটেছে। ট্রাফিক সিগন্যাল আছে না–ঐ জায়গায়।
তুমি যাচ্ছিলে রিক্সা করে তাইতো? সময় যেন কত?
দুপুর। নিউ মার্কেটে স্যান্ডেল কিনতে গিয়েছিলাম। কোনটাই পছন্দ হয় না। বলতে গেলে সব একই ডিজাইন। থোর বড়ি খাড়া খাড়া বড়ি থোর। সেখান থেকে গেলাম নিউ এলিফেন্ট রোড এই ভাবে দেরি হয়ে গেল।
তারপর?
একটা রিকশা নিলাম।
রিকশা নিলে কেন মা। তোমার উচিত ছিল বেবী টেক্সি নেয়া।
বেবী টেক্সিই নিয়েছিলাম। বেবী টেক্সিতে বসে আছিতো বসেই আছি–টেক্সি আর স্টার্ট নেয় না। শেষে বিরক্ত হয়ে নেমে পড়েছি। বেবী টেক্সি থেকে নেমে যেই রিকশায় উঠেছি— ওমি বেবী টেক্সিটা স্টার্ট নিল।
মা একেই বলে ভবিতব্য। তুমি ধৈর্য ধরে আর দুমিনিট অপেক্ষা করলে ঘটনাটা ঘটত না। তারপর কী হল বল।
মা গল্প থামিয়ে ক্লান্ত গলায় বললেন, শরীরটা আসলেই ভাল লাগছে না। ভালমত দেখতো জ্বর আছে নাকি।
আমি কপালে হাত দিলাম। হা জ্বর আসছে। দ্রুতই আসছে। কপাল গরম।
মার জ্বর রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে খুব বাড়ল। তিনি ছটফট করতে লাগলেন। কাল আমার শুটিং। শুটিং এর দৃশ্য মা দেখতে পাবেন না। জীবনের প্রথম তার কন্যা ছবিতে অভিনয় করবে। তিনি জ্বর গায়ে বিছানায় ছটফট করবেন।
মা মাথায় পানি ঢালব?
না।
মাথা টিপে দেব মা?
না। বাতিটা জ্বালিয়ে রাখ। কেমন জানি ভয় ভয় লাগছে।
কিসের ভয়?
জানি না কিসের ভয়। বাতি জ্বালাতে বললাম, বাতি জ্বালা।
আমি বাতি জ্বালিয়ে থার্মোমিটারে মার জ্বর মাপলাম। একশ তিন পয়েন্ট পাঁচ। তবে জ্বর মনে হয় কমছে। গা ঘামছে।
কাল তোর শুটিং আছে না?
হ্যাঁ।
আমি দেখতে পারব না।
তুমি খুব ভালই দেখতে পাবে। সকালের মধ্যে তোমার জ্বর সেরে যাবে। পানি খাবে মা? পানি এনে দি?
না।
ঘরের বাতি নিভিয়ে বাথরুমের বাতি জ্বেলে দি। আলো চোখে লাগছে।
না না, ভয় লাগে। তুই আমার আরো কাছে আয়।
আমি মার বুকের কাছে চলে এলাম। তার শরীরের গরমে মনে হয় সিদ্ধ হয়ে যাচ্ছি। আমি চোখ বন্ধ করে ঘুম আনানোর চেষ্টা করছি। কাল সারাদিন শুটিং হবে আমার ভাল ঘুম দরকার! চোখের নীচে যেন কালি না পড়ে। মা জ্বরে ছটফট করছেন। আমাকে ঘুমুতে হলে সুন্দর একটা স্বপ্ন তৈরি করতে হবে। এই অবস্থায় সুন্দর কোন স্বপ্ন তৈরি করা সম্ভব হবে কি? আচ্ছা চেষ্টা করা যাক।
নৌকায় করে আমরা যাচ্ছি। আমি, আমার স্বামী এবং আমাদের ছোট্ট বাবু। বাবুটার জ্বর উঠেছে। আমি তাকে কোলে নিয়ে বসে আছি। আকাশে খুব মেঘ করেছে। মনে হচ্ছে বৃষ্টি হবে। বাবুর গায়ে জ্বর না থাকলে আমরা বৃষ্টিতে ভিজতাম। আহা বেচারা হঠাৎ জ্বর এসে গেল। মুখ শুকিয়ে কী হয়েছে! ব্যাটা পানি খাবি?
উহুঁ। বাবার কোলে যাব। বাবার কোলে যাবি কী? তুই থাকবি আমার কোলে। গল্প বল না।
ওমা শখ কত! জুর গায়ে গল্প শুনতে চায়। কিসের গল্প শুনতে চাস?
ভূতের গল্প।
দিনে দুপুরে ভূতের গল্প কিরে বোকা ছেলে?
ভূতের গল্প বল।
কুণি ভূত আর বুনি ভূতের গল্প শুনবি?
হুঁ শুনব।
ঘরের কোণায় যে ভূত থাকে তাকে বলে কুণি ভূত। আর যে ভূত থাকে বনে তার নাম বুনি ভূত।
গল্প বলা হল না, বৃষ্টি এসে গেল। আমি বাবুকে নিয়ে নৌকার ছইয়ের নীচে চলে গেলাম। বাবুর বাবা এখনো নৌকার পাটাতনে বসে আছে। মনে হয় ভদ্রলোকের বৃষ্টিতে ভেজার ইচ্ছা।
রুমালী বাবুকে শুইয়ে চলে এসতো আমরা বৃষ্টিতে ভিজি।
একা বিছানায় শুইয়ে আমরা মজা করব! বৃষ্টিতে ভিজব! বৃষ্টিতো আর পালিয়ে যাচ্ছে না। সবে শ্রাবণ মাসের শুরু। সারা মাসতো পড়েই আছে।
কই রুমালী এসো।
উহুঁ। বাবুকে একা ফেলে কীভাবে আসব?
ওকে নিয়েই এসো। বৃষ্টিতে ভিজলে ওর জ্বর সেরে যাবে। একে বলে জল চিকিৎসা।
লাগবে না আমার জল চিকিৎসা।
বাবু কোলের ভেতর নড়ে চড়ে উঠল। ওর মতলব ভাল মনে হচ্ছে না। বাবার কথা কানে গেছে এখন কি আর আমার কথা শুনবে। এমন নিমকহারাম ছেলে। এত আদর করি— তারপরেও শুধু বাবা, বাবা, বাবা।
বাবু ঠোঁট ফুলিয়ে ডাকল, মা।
আমি গম্ভীর গলায় বললাম, কী হল আবার?
বৃষ্টিতে ভিজব মা।
অসম্ভব— এই বৃষ্টিতে ভিজলেই নিউমোনিয়া হবে।
হবে না।
তুই জানলি কী করে তুই কি ডাক্তার?
আমি ডাক্তার না হলেও বাবাতো ডাক্তার।
কল্পনার গল্প এইখানে থেমে গেল। হঠাৎ যেন ছন্দপতন হল— কারণ বাবুর বাবাতো ডাক্তার নন। বাবুর বাবা হলেন …..।
আশ্চর্য কল্পনাতেও মানুষটার কথা ভাবতে লজ্জা লাগছে কেন? এত লজ্জা করলেতো আমার চলবে না। কল্পনার এই গল্পটা আপাতত বাদ থক। আমি বরং অন্য কোন গল্প শুরু করি। যে গল্পে বাবুর বাবার সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় হবে। বাবুর বাবা প্রথম আমার হাত ধরে, বলবেন— ভালবাসি। তোমাকে ভালবাসি।
আচ্ছা জাহেদাকে জিজ্ঞেস করে একবার কি জেনে নেব আমার বর কী হবে, ডাক্তার না অন্য কেউ? ভবিষ্যৎ জানতে পারার সত্যি সত্যি কোন ব্যবস্থা থাকলে ভাল হত। বিশাল একটা যন্ত্র থাকবে। সেই যন্ত্রে কম্পিউটারের পর্দার মত পর্দা। টিকিট কেটে যন্ত্রটার কাছে যেতে হবে। ভবিষ্যতে কী হবে প্রশ্ন করা মাত্র যন্ত্রটা জবাব দিয়ে দেবে। প্রশ্ন উত্তরের ধরনটা কেমন হবে?
স্যার বলুনতো আজ আমি রিকশা করে নিউমার্কেটে যাব। যাওয়া এবং ফেরার পথে কোন ঘাতক ট্রাকের সঙ্গে কলিশন হবে?
না।
আজ রাতে আমি কী দিয়ে ভাত খাব?
এক পিস ইলিশ মাছ ভাজা, আলু ভর্তা আর ডাল।
কোন তরকারি থাকবে না?
থাকবে। তবে তুমি খাবে না।
খাব না কেন?
দুপুরে রান্না করা তরকারি। জ্বাল দেয়া হয় নি টকে গেছে এই জন্যে খাবে না।
থ্যাংক য়্যু স্যার।
ইউ আর ওয়েল কাম ইয়াং লেডি।
স্যার একটা শেষ প্রশ্ন।
বল।
একটা ভয়ংকর ব্যাপার আমার জীবনে ঘটে গেছে। আমি একজন বুড়ো মানুষের প্রেমে পড়ে গেছি। ব্যাপারটা কাউকে বলতে পারছি না। যতই দিন যাচ্ছে আমি ততই অস্বাভাবিক হয়ে পড়ছি। আমার মাথা কি কিছুদিনের মধ্যে সম্পূর্ণ খারাপ হয়ে যাবে?
না। তোমার ঘোর কেটে যাবে। অল্প দিনের ভেতর ঘোর কেটে যাবে। সেই অল্প দিন মানে কত দিন?
এক মাস।
মাত্র এক মাস?
ঘোর যত প্রবল হয়, তত দ্রুত কাটে।
ও আচ্ছা ধন্যবাদ।
তোমাকেও ধন্যবাদ এবং শুভরাত্রি।
আমি ঘুমুতে চেষ্টা করছি। ঘুম আসছে না। ভয়ংকর একটা খারাপ ইচ্ছা করছে। পৃথিবীর সবচে খারাপ মেয়েদের মনেই বোধ হয় এরকম ইচ্ছা হয়। মনে হচ্ছে আমি পৃথিবীর সবচে খারাপ একটা মেয়ে। আমার ইচ্ছা করছে–চুপিচুপি মায়ের পাশ থেকে উঠে একতলায় নেমে যেতে। তারপর ডিরেক্টর সাহেবের ঘরের দরজায় আলতো করে নক করতে। উনি জেগে উঠে ঘুম জড়ানো গলায় বলবেন, কে? আমি বলব–রুমালী।
হঠাৎ ঘুম ভাঙ্গলে মানুষের জগৎ এলোমেলো থাকে তাঁর জগতটাও তখন থাকবে এলোমেলো। রুমালী শব্দটার মানে তিনি ধরতে পারবেন না। তিনি বলবেন, রুমালী কে? আমি বলব, রুমালী হল মিস হ্যান্ডকারচিফি কিংবা মিস ন্যাপকিনি। তিনি অবাক হয়ে দরজা খুলে বলবেন, ও তুমি। এত রাতে কী ব্যাপার?
আমার জ্ঞান ফিরলে আপনাকে খবর দেয়ার কথা বলেছিলেন। খবর দেয়া হয় নি। এখন খবর দিতে এলাম।
ও আচ্ছা।
আমার ঘুম আসছে না। আমি যদি কিছুক্ষণ আপনার সঙ্গে গল্প করি তাহলে কি আপনি রাগ করবেন?
না রাগ করব না।
আমি তখন আহ্লাদী গলায় বলব, কেউ দেখে ফেললে খুব সমস্যা হবে। এত রাতে আপনার সঙ্গে গল্প করছি। দুষ্ট লোক নানান কথা ছড়াবে।
তাহলে কি গল্প করার পরিকল্পনা বাতিল?
না বাতিল না। আমরা বাতি নিভিয়ে গল্প করব। বাতি নেভানো থাকলে কেউ আমাদের দেখতে পাবে না।
তা ঠিক।
অবশ্যি কথা বলতে হবে ফিস ফিস করে।
হুঁ।
হুঁ বলে দরজা ধরে দাড়িয়ে আছেন কেন? দরজা ছেড়ে সরে দাঁড়ান। এবং দয়া করে বাতি নিভিয়ে দিন।
তিনি দরজা ছেড়ে সরে দাঁড়াবেন এবং বাতি নিভিয়ে ঘর অন্ধকার করে দেবেন।
ছিঃ আমি এসব কী ভাবছি? আমার মাথা কি সত্যি সত্যি খারাপ হয়ে গেছে? আমি বিছানায় উঠে বসলাম এবং মাকে ডেকে তুললাম। মা উঠে বসে ভয় ধরানো গলায় বললেন, কে? কে?
আমি বললাম, কেউ না মা। আমি। মিস ন্যাপকিনি।
কী হয়েছে?
গল্পটা শেষ কর মা?
কিসের গল্প?
ঐ যে কাকরাইল ট্রাফিক সিগন্যালের কাছে তুমি ধপাস করে রিক্সা থেকে পড়ে গেলে।
কী বলছিস তুই কিছুই বুঝতে পারছি না।
বাবার সঙ্গে তোমার প্রথম দেখা হবার বিখ্যাত গল্পটা। তুমি শুরু করেছিলে; শেষ কর নি। আমি শেষটা শুনতে চাই।
মায়ের চোখ থেকে ঘুম এখনো কাটে নি। তিনি অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।