রাত কত হয়েছে কে জানে
রাত কত হয়েছে কে জানে?
শোবার সময় হাতে ঘড়ি পরে শুই নি বলে বলতে পারছি না। অবশ্যি ঘড়ি থাকলেও ঘড়ি দেখা যেত না। আমি ঘুমের ভান করে পড়ে আছি। ঘুমের ভান যে করছে সে নিশ্চয়ই চট করে এক ফাঁকে ঘড়ি দেখবে না।
মা আমার গা ঘেষে শুয়েছেন। জালালের মার খাটটা ফাকা। তাকে আলাদা ঘর দেয়া হয়েছে। ব্যবস্থাটা সোহরাব চাচার করা। তিনি সম্ভবত বুঝতে পেরেছেন। জালালের মাকে এই ঘরে রাখা ঠিক হচ্ছে না। আমি মনে মনে তাকে ধন্যবাদ দিয়েছি। এই ঘরের দুটা খাট এখন আমার জন্যে আর মার জন্যে। মা কখনো আমাকে একা রেখে শোবেন না। দুজন চাপাচাপি করে শুয়ে আছি। তার ঘুম আসছে না। ঘুম আসছে না বলেই ঘরে বাতি জ্বলছে। মার অভ্যাস হচ্ছে ঘুমে যখন তার চোখ বন্ধ হয়ে আসবে তখন তিনি বাতি নিভিয়ে এলোমেলো করে পা ফেলে বিছানায় আসবেন। তিনি খুব নড়াচড়া করছেন। এরমধ্যে দুবার পানি খেলেন। একবার গেলেন বাথরুমে। ডাকবাংলোয় আমাদের ঘরের বাথরুমটার দরজা ভেতর থেকে বন্ধ হয় না। যে ভেতরে যায় সে খুব অস্বস্তি বোধ করে। সারাক্ষণই খুট খাট শব্দ করে তার উপস্থিতি জানান দেয়। সোহরাব চাচাকে বললেই তিনি ঠিক করে দেবেন। তাঁকে বলা হচ্ছে না। বাথরুম থেকে একবার বের হলে দরজা বন্ধের সমস্যা কারোর মনে থাকছে না। আমরা বোধ হয় সমস্যার স্থায়ী সমাধানের চেয়ে সাময়িক সমাধানকেই বেশি গুরুত্ব দি। একটা। সমস্যা হয়েছে সমস্যাকে পাশ কাটাতে পারলেই হল। আর কিচ্ছু লাগবে না।
শুয়ে শুয়ে শিয়ালের ডাক শুনছি। শিয়ালের ডাকে ভয় ধরানো ভাব থাকে–মনে হয় এই শিয়ালের পালে একবার পড়লে এরা ছিড়ে খুঁড়ে খেয়ে নেবে। আমরা যখন আজিমপুরের নয়া পল্টনে থাকতাম তখনো গভীর রাতে শিয়ালের ডাক শুনতাম। আজিমপুর কবরস্থানে শিয়াল থাকতো। শিয়াল প্রহর গুনে ডাকে—আজিমপুর কবরস্থানের শিয়াল যখন তখন ডেকে উঠত। শহরে থেকে থেকে এরা বোধ হয় শহুরে হয়ে গেছে। পুরানো নিয়ম কানুন ভুলে গেছে।
আমি কুন্ডুলী পাকিয়ে শুয়ে আছি। আমার গায়ে ভারী কম্বল। তারপরেও শীত মানছে না। দিনে এমন গরম পড়েছিল, রাতে ঝপ করে শীত নেমে গেল। পাহাড়ী অঞ্চলের এই নাকি নিয়ম। রোদ উঠলে প্রচন্ড গরম। বোদ নিভে গেলেই হাড় কাঁপুনি শীত। মোটা কম্বলটাতেও শীত মানছে না। এই কম্বলটা মার খুব প্রিয়। তিনি যেখানে যাবেন কম্বলটা সঙ্গে থাকবে। চৈত্র মাসের প্রচন্ড গরমের সময়ও দেখা যাবে তিনি কোথাও যাবার আগে কম্বল প্যাক করছেন। সেই প্যাকিংএরও অনেক কায়দা। প্রথমে কলটা ভরা হবে পলিথিনের একটা ব্যাগে। তারপর সেই পলিথিনের ব্যাগ ঢুকানো হবে মার নিজের বানানো মার্কিন কাপড়ের থলিতে। কম্বলের মাপে মাপে এই থলি বানানো। সেই থলি ঢুকানো হবে হবে স্যুটকেসে।
মার এই প্রিয় কম্বলের একটা ছোট্ট ইতিহাস আছে। তিনি একবার বাবার সঙ্গে নিউমার্কেটে গিয়েছিলেন বিছানার চাদর কিনতে। চাদর কিনতে গিয়ে কোন চাদরই তার পছন্দ হল না, এই কম্বলটা তার খুব পছন্দ হল। দাম চার হাজার টাকা। দাম শুনে বাবা-মা দুজনেরই আক্কেল গুড়ুম। মা চাদর না কিনে ফিরে এলেন। তার মন পরে রইল কম্বলে। কথায় কথায় বলেন-কী মোলায়েম কম্বল। কী সুন্দর ডিজাইন—হালকা সবুজ রঙ। দেখেই মনে হয় ওম ওম গরম। তার মাস চারেক পরের কথা। মার বিবাহ বার্ষিকীতে বাবা বিরাট একটা প্যাকেট এনে মার হাতে দিলেন। প্যাকেটের গায়ে লেখা
খুকুকে
শুভ বিবাহ বার্ষিকী
মা প্যাকেট দেখে খুব বিরক্ত হলেন। আঁঝাল গলায় বললেন, কী এনেছ তুমি বলতো? উপহার তোমাকে কে আনতে বলেছে? আমাদের বিয়েটা এমন কিছু না যে উৎসব করে পোলাও-কোরমা খেতে হবে, উপহার টুপহার দিতে হবে, আমি খুবই রাগ করছি। কী আছে এর মধ্যে?
বাবা হাসিমুখে বললেন, খুলে দেখ।
মা বললেন, আমি খুলতে পারব না। বকু, খুলে দেখতো।
আমি বললাম, মা তুমিই খোল। তোমার জিনিস।
মা বললেন, হ্যাঁ আমার জিনিস। আমার জিনিস নিয়ে আমি স্বর্গে যাব।
বলতে বলতে উপহারের প্যাকেট খোলা হল এবং মা যে কী খুশি হলেন! দেখতে দেখতে মার চোখে পানি এস গেল। তিনি এই হাসেন, এই কাদেন। সামান্য একটা কম্বলে মানুষ এত খুশি হয়। মে মাসের তীব্র গরমে মা সেই কম্বল গায়ে দিয়ে ঘুমুলেন।
মার সঙ্গে এইখানেই আমার তফাৎ। আমি হলে বাবা যেদিন আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন সেদিনই কম্বল ছিড়ে কুটি কুটি করে — আগুন জ্বালিয়ে ছাই করে দিতাম। সিন্দাবাদের ভূতের মত ঘাড়ে চাপিয়ে রাখতাম না। মাকে সেই কথা বলেছিলাম–মা অবাক হয়ে বললেন, তোর বাবার সঙ্গে এই কম্বলের সম্পর্ক কী? সে যেখানে গেছে যাক। ধুমসীকে নিয়ে নাচাকুদা যা ইচ্ছা করুক আমার তাতে কী? যখন সে কম্বলটা দিয়েছিল ভালবেসে দিয়েছিল। মানুষটা নষ্ট হয়ে গেছে, তার ভালবাসা নষ্ট হবে কেন?
আমি রাগি গলায় বললাম, মা তোমার ধারণা ভালবাসা নষ্ট হয় না?
ভালবাসা কি কোন খাবার যে রাখলে নষ্ট হয়ে যাবে?
ভালবাসাটা তাহলে কী মা?
এক সময় নিজেই জানতে পারবি—আমাকে জিজ্ঞেস করে জানতে হবে না।
সময় হোক, সময় হলে জানবি।
ভালবাসা কি চার হাজার টাকা দামের কম্বল?
ফাজলামি করবি না। চুপ কর।
আমি চুপ করে গেলাম। তবে চুপ করে গেলেও আমি এইসব নিয়ে ভাবি। খুব ভাবি। অন্য মেয়েরা এত ভাবে কি-না জানি না। হয়ত ভাবে না। তাদের এত সময় কোথায়? তাদের খেলাধুলা আছে, বন্ধু বান্ধব আছে। পিকনিক আছে, জন্মদিন আছে। আমার কী আছে? কিছুই নেই। শুধু মা আছেন। বাসায় আমরা দুজন যতক্ষণ থাকি——ম অনবরত কথা বলেন। আমি বেশির ভাগ সময়ই কিছু শুনি না। মার দিকে তাকিয়ে থাকি তবে মা কী বলছেন তা আমার কানে ঢোকে না। মা মাঝে মাঝে বলেন— কী-রে তুই এমন অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে আছিস কেন? আমি বলি মা আমার চোখ দুটাতো অদ্ভুত কাজেই অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে আছি।
আমার সঙ্গে ফাজিলের মত কথা বলবি না বকু।
ফাজিলের কী হল–আমার চোখ অদ্ভুত না?
বকু তুই দিন দিন অসহ্য হচ্ছিস।
মা তুমিও দিন দিন অসহ্য হচ্ছ।
আমি অসহ্য হচ্ছি?
হুঁ। এবং যতই দিন যাচ্ছে ততই আমার বাবার জন্যে সহানুভূতি হচ্ছে। মনে হচ্ছে বাবা তোমাকে ছেড়ে গিয়ে খুব ভুল করে নি। আমি বাবা হলে অনেক আগেই তোমাকে ছেড়ে চলে যেতাম।
কথাবার্তা এই পর্যায়ে চলে এলে যা করেন তাকে পুরোপুরি কিশোরী সুলভ আচরণ বলা যেতে পারে। তিনি শোবার ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেন। খাওয়া বন্ধ। ভাত-রাগ। ভাত খাবেন না। মাঝে মাঝে শোনা যায় বন্ধ দরজার ওপাশ থেকে তিনি কাঁদছেন–ও বাবু। বাবু। তুমি কই বাবু। বাবু তুমি আমাকে একটু আদর করে দিয়ে যাও।
বাবু হলেন আমাদের নানাজান। মার বয়স যখন সাত তখন তিনি মারা যান। মা তার বাবাকে বাবা বা আল্লু ডাকতেন না। ডাকতেন— বাবু।
আমার পানির পিপাসা হচ্ছে। পানি খাবার জন্যে উঠে বসলে সর্বনাশ হয়ে যাবে, মা আমাকে ধরে বসবেন। বাকি রাত মার বক্তৃতা শুনে কাটাতে হবে। সকালে আমার শুটিং। রাত জাগলে তার ছাপ পড়বে চেহারায়। সিনেমার শক্তিশালী ক্যামেরাকে ফাঁকি দেয়া যাবে না। ক্যামেরা সব ধরে ফেলবে।
কাল সকালের সিকোয়েন্সটা খুব সুন্দর। আমি পানির তৃষ্ণা ভুলে থাকার জন্যে আমার সিকোয়েন্স নিয়ে চিন্তা করতে শুরু করলাম। দৃশ্যটা এ রকম—
দিলু শখ করে শাড়ি পরেছে। কপালে টিপ দিয়ে নিজের মত করে সেজেছে। দিলুর বাবা ডাকবাংলোর বারান্দায় বসে গল্পের বই পড়ছিলেন। দিলু তাঁকে বলল, বাবা আমাকে কেমন দেখাচ্ছে? তিনি বই থেকে চোখ না তুলেই বললেন—খুব সুন্দর লাগছেরে মা। বিউটিফুল। তোর মাকে বলতো চা দিতে। দিলুর মনটা খারাপ হল। বাবা একবার তাকিয়ে তার রূপবতী কন্যাকে দেখলেনও না? সে তার মাকে চা দেবার কথা না বলে ডাকবাংলো থেকে বের হল। তার দেখা হল জামিলের সঙ্গে। জামিল বলল, পরী সেজে কোথায় যাচ্ছিস? দিলু লজ্জিত গলায় বলল-জামিল ভাই আমাকে সত্যি সুন্দর লাগছে?
জামিল বললেন, সুন্দর লাগছে মানে–তোকেতো কুইন অব শেবার মত লাগছে। কপালের টিপটা ঠিকমত দিতে পারিস নি। একপেশে হয়ে গেছে। যা কলম নিয়ে আয় আমি টিপ একে দিচ্ছি।
এই কথায় দিলু খুব লজ্জা পেয়ে গেল। সে চোখ মুখ লাল করে বলল—থাক আপনাকে টিপ আঁকতে হবে না। এই বলেই সে ছুটে বের হয়ে গেল। সে থামল পুকুরের কাছে গিয়ে। পুকুরের জলে নিজের ছায়া দেখল। সেই ছায়া দেখে তার লজ্জা আরো যেন বেড়ে গেল। একটা ঢিল ছুঁড়ে পুকুরের ছায়াটা ভেঙ্গে দিল। তারপর লজ্জায় শাড়ির আঁচলে নিজের মুখ ঢেকে ফেলল। এইখানেই প্রথম প্রকাশ পেল মেয়েটি জামিল নামের মানুষটিকে পাগলের মত ভালবাসে।
কাল কোন অংশটি হবে ডিরেক্টর সাহেব আমাকে বলেন নি। আমার ধারণা পুকুরের অংশটা হবে। কোন শাড়ি পরব—তাও ঠিক হয় নি। তবে শাড়ি নিয়ে আমাকে চিন্তা করতে হবে না! এই সব ব্যবস্থা ডিরেক্টর সাহেব করে রেখেছেন। প্রতিটি পোষাক দুসেট করে কেনা আছে। একটা সেট আলাদা করা। ছবি রিলিজ না হওয়া পর্যন্ত সেই সেটে হাত দেয়া হবে না। যদি হঠাৎ কোন প্যাচ ওয়ার্কের প্রয়োজন হয়। এইসব ব্যাপারে ডিরেক্টর সাহেবের কাজ কর্ম নিখুঁত।
পুকুরের পারে আমি কী ভাবে বসব? চিত্রনাট্যে বসার কথা থাকলেও আমার ধারণা আমাকে বসতে হবে না। একটা মেয়ে দৌড়ে এসে পুকুর পারে হঠাৎ করে বসে যেতে পারে না। তা ছাড়া সুন্দর করে বসতে হলে হাঁটু গেড়ে বসতে হয়। শাড়ি নষ্ট করে কোন মেয়ে কি হাঁটু গেড়ে বসবে? সবচে ভাল হয়। পুকুরের যদি শান বাঁধানো ঘাট থাকে। আমি শুনেছি যে পুকুরে শুটিং হবে সেখানে বাঁধানো ঘাট নেই। জংলী ধরনের পুকুর। চারদিক গাছপালা ঝোপঝাড় গজিয়ে জঙ্গলা হয়ে আছে। অবশ্যি জংলী পুকুরেরও আলাদা সৌন্দর্য আছে। গাছপালায় ঢাকা ছায়াময় একটা পুকুর। সেই পুকুরের শান্ত নিস্তরঙ্গ টলটলে জল। পুকুরের জলের কথা ভেবে ভেবে আমার পানির পিপাসা আরো বাড়ল। আমি কম্বল ফেলে দিয়ে উঠে বসলাম। মা সঙ্গে সঙ্গে বললেন, কী হয়েছে-রে বকু?
আমি বললাম, খুব পেট ব্যথা করছে মা।
পেট ব্যথার কথা বললাম যাতে মা আমাকে বিরক্ত না করেন। যদি বলতাম—তৃষ্ণা পেয়েছে পানি খাব তাহলে মা বাকি রাতটা কথা বলে বলে আমাকে বিরক্ত করে মারবেন। পেটে ব্যথা শুনলে অসুস্থ মেয়েকে হয়ত ততটা বিরক্ত করবেন না। শুয়ে থাকতে বলে মাথায় হাত বুলিয়ে দেবেন।
হঠাৎ পেট ব্যথা করছে কেন?
আমি কী করে বলব কেন? ব্যথায় মরে যাচ্ছি। দেখি মা, একগ্লাস পানি দাওতো।
বাথরুমে যাবি?
না।
বাথরুম করলে পেট ব্যথা কমবে।
বললামতো বাথরুম পায় নি।
আয় আমি নিয়ে যাচ্ছি।
কী অদ্ভুত কথা তুমি যে মা বল! বাথরুম পায় নি তারপরেও তুমি আমাকে জোর করে বাথরুমে নিয়ে যাবে। তারপর কী করবে কমোড়ে বসিয়ে রাখবে? পানি চাচ্ছি পানি দাও।
মা পানি এনে দিলেন। আমি পানি খেয়ে সঙ্গে সঙ্গে শুয়ে পড়লাম। মা বললেন, বকু ব্যথা কি বেশি?
আমি বললাম, হুঁ।
পেটে তেল মালিশ করে দেব?
কিছু মালিশ করতে হবে না।
পেটের নীচে বালিশ দিয়ে উপুর হয়ে শুয়ে থাক।
ডাক্তারী ফলিও না মা।
তুই আমার সঙ্গে এত বিশ্রী ব্যবহার করছিস কেন?
বিশ্রী ব্যবহার কী করলাম?
তোর স্বভাব চরিত্র বদলে যাচ্ছে বকু।
দয়া করে চুপ করে থাকবে মা। পেটের ব্যথায় বাঁচি না। তোমার বকবকানি এখন অসহ্য লাগছে।
মাথায় হাত বুলিয়ে দেব?
আমার যন্ত্রণা পেটে—তুমি মাথায় হাত বুলাবে কেন?
ডাইনিং রুমে তুই ঐ ফাজিলটার সঙ্গে এত কী কথা বলছিলি?
কার কথা বলছ, সেলিম ভাই?
আদুরে গলায় সেলিম ভাই বলবি নাতো–রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে।
সেলিম ভাই না বলে যদি শুধু সেলিম বলি তাহলে কি তুমি খুশি হবে?
ফাজিল ধরনের এইসব ছেলের সঙ্গে তোর এত কথা বলার দরকারটাই বা?
আচ্ছা যাও আর কথা বলব না। পেটের ব্যথায় মরে যাচ্ছি তুমি এর মধ্যেও প্যাচাল শুরু করলে? দয়া করে চুপ কর।
ব্যথা খুব বেশি?
হুঁ।
মঈন ভাইয়াকে খবর দেব?
মঈন ভাইয়াকে খবর দেব মানে? উনাকে কেন খবর দেবে? উনি কি ডাক্তার?
ডাক্তার না হোক দলের মাথা। বিপদ আপদ হলে তাকেইতো সবার আগে জানাতে হবে, প্রয়োজন হলে ডাক্তারের ব্যবস্থা করবে। তুইতো ফেলনা না। তুই এই ছবির সেকেন্ড নায়িকা।
তোমার ধারণা নায়িকার পেট ব্যথা শুনে উনি ছুটে এসে নায়িকার পেটে হাত দিয়ে বসে থাকবেন?
তুই কী ধরনের কথা বলছিস! নোংরা ধরনের কথা শিখলি কোথায়?
তোমার কাছ থেকে শিখেছি।
আমার কাছ থেকে শিখেছিস? আমি নোংরা কথা বলি?
অবশ্যই বল। তুমি আর জালালের মা— তোমরা কর কী? সময় পেলেই গুজগুজ গুজগুজ। তোমরা কি ধর্মীয় আলাপ কর? তোমার কি ধারণা তোমাদের গল্প আমার কানে যায় না?
জালালের মা গল্প বলে আমি শুধু শুনে যাই।
গল্পগুলি কী রকম? কোন নায়িকা কী নষ্টামী করল কাকে রাতে কার ঘরে পাওয়া গেল।
একজন কেউ আগ্রহ করে গল্প করলে আমিতো তার মুখ চাপা দিতে পারি না।
না পারলে নাই। তুমি ঘুমুতে এসোতো মা। আর কথা না। তুমি নিজে ঘুমাও আমাকেও ঘুমুতে দাও।
মা সঙ্গে সঙ্গে মশারীর ভেতর ঢুকলেন। মাঝে মাঝে মা আমাকে ভয় পান। এই মুহূর্তে তিনি আমাকে ভয় পাচ্ছেন। মা আমার ভয়ে ভীত, এই দৃশ্যটা দেখতে ভাল লাগে।
বকু তোর পেট ব্যথাটা কমেছে?
হ্যাঁ।
মঈন ভাইয়ার কাছে তোর ব্যাপারে নালিশ করতে হবে।
আদুরে গলায় মঈন ভাইয়া মঈন ভাইয়া বলবে নাতো মা। বিশ্রী লাগে। মনে হয় তুমি উনার প্রেমে পড়ে গেছ।
আমি প্রেমে পড়ে গেছি মানে?
চুপ করে ঘুমাওতো মা। আমার আবার পেট ব্যথা করছে। মনে হয় এপেনডিসাইটিস।
মা আর কথা বললেন না। আমি ঘুমুবার চেষ্টা করছি। মনে হচ্ছে আজ রাতটা নিষ্ঠুম কাটবে। হয়ত সকালে দেখা যাবে চোখের নীচে কালি পড়েছে। সেই কালি ঢাকতে মেকাপম্যানের কষ্ট হবে।
মা। জেগে আছ?
হুঁ।
সেলিম ভাইয়ের ব্যাপারে তুমি কি আপসেট?
মা জবাব দিলেন না। আমি হালকা গলায় বললাম, আপসেট হয়ো না। সেলিম ভাই কিন্তু সহজ মানুষ না। ভ্যাবলার মত ঘুরে বেড়ালেও তিনি মোটেই ভ্যাবলা না।
তোকে সে যা বুঝিয়েছে তুই তাই বুঝেছিস।
সেলিম ভাই একজন বিখ্যাত অভিনেতা। তিনি এই ছবির প্রধান চরিত্রে অভিনয় করছেন। ফরহাদ সাহেবের যে চরিত্রটা করার কথা সেটা উনি করছেন।
পাগলের মত কথা বলবি না বকু।
মোটেই পাগলের মত কথা বলছি না। পুরো ব্যাপারটা সিক্রেট। কাল যখন সেলিম ভাইয়ের উপর ক্যামেরা ওপেন হবে তখনই জানতে পারবে, তার অভিনয় দেখেও তোমাদের আক্কেল গুড়ুম হয়ে যাবে। তোমাদের সময়কার হিট নায়ক উত্তমকুমারকে তিনি কেঁৎ করে গিলে ফেলতে পারেন।
মা কম্বল ফেলে উঠে বসলেন। কিশোরীদের মত কৌতূহলী গলায় বললেন–সত্যি?
সত্যিতো বটেই। তিনি যে সে লোক না। তিনি হলেন— সেলিমকুমার।
অদ্ভুত শব্দে একটা পাখি ডাকছে। কেমন ভয় ধরানো গলার স্বর। আমি পাখির ডাক শুনছি। কী পাখি ডাকছে মাকে জিজ্ঞেস করে জানা যাবে না। মা এইসব জানেন না। সেলিম ভাইকে জিজ্ঞেস করলে জানা যেত।
মা!
কিরে ব্যথা আবার বেড়েছে?
উহুঁ। ঘুম আসছে না, একটা গল্প বলতো মা। ভুতের গল্প।
ভূতের গল্প আমি জানি নাকি?
ছোটবেলায় কিংবা বড় বেলায় ভূত টুত কিছু দেখ নি?
মা হালকা নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, ভূত একটাই দেখেছি–তোর বাবাকে। বেশতো বাবা-ভূতের গল্পই বল।
মা চুপ করে গেলেন। আমি বললাম, ভূতের সঙ্গে তোমার বিয়ের গল্পটা বলতো মা।
নিজের বাবাকে ভূত বলছিস লজ্জা লাগছে না?
তুমি বলছ বলেই আমি বলছি।
আমার কথা ভিন্ন।
ভিন্ন হবে কেন? তুমিও যা, আমিও তা–বল মা, তোমাদের গল্প শুনি। প্রেম করে বিয়ে হয়েছিল না বিয়ের পর প্রেম?
প্রেম ফ্রেম আমাদের জীবনে ছিল না।
শুরুতে নিশ্চয়ই ছিল— সেটা বল।
আচ্ছা শোন–একটা ভূতের গল্প শোন, মনে পড়েছে। আমার মায়ের কাছ থেকে শুনেছি–আমার মায়ের বাড়ি ছিল কলসহাটি। মা তখন খুব ছোট, তিন চার মাস বয়স। হয়েছে কী তাঁকে তেল মাখিয়ে রোদে শুইয়ে রাখা হয়েছে। আমার নানি গিয়েছেন পাকঘরে কী একটা আনতে। ফিরে এসে দেখেন মেয়ে নেই। নেই তো নেই। কোথাও নেই। চারদিকে কান্নাকাটি পড়ে গেল। কেউ বলল শিয়ালে নিয়ে গেছে, কেউ বলল বাঘডাসায় নিয়ে গেছে।
আসলে কি ভূতে নিয়ে গেছে?
হুঁ।
দিনে দুপুরে ভূত এসে তোমার মাকে নিয়ে গেল? এই গল্প শুনব না মা। থুকু তোমার সঙ্গে খেলব না।
তুই এমন অদ্ভুত ভাবে কথা বলিস কেন? থুক্কু তোমার সাথে খেলব না। তুই কি আমার সঙ্গে খেলছিস?
খেলছিতো বটেই। আমরা সবাই সবার সঙ্গে খেলি। কারো খেলা ভাল হয়। কারো খেলা ভাল হয় না। খেলার মধ্যে ঝগড়া হয়। খামচা খামচি হয়। কেউ খেলা ফেলে রাগ করে উঠে চলে যায়।
পাগলের মত কথা বলবি নাতো বকু। তোর পাগলের মত কথা শুনতে অসহ্য লাগছে।
আচ্ছা কথা বলব না। তুমি কি আমার কাছ থেকে একটা ভূতের গল্প শুনতে চাও?
তোর কাছ থেকে ভূতের গল্প শুনব? তুই ভূতের গল্প জানিস না-কি?
হ্যাঁ জানি। শোন–অনেককাল আগে আমাদের দেশের ধনবান মানুষরা তাদের ধনরত্ন কী করতেন জান? ধনরত্নের একটা অংশ মাটির নীচে গর্ত করে রেখে দিতেন, যেন দুঃসময়ে ব্যবহার করা যায়। কিংবা তাদের মুত্যুর পর তাদের সন্তান সন্ততিরা ব্যবহার করতে পারে। তখনতো আর ব্যাংক ছিল না। মাটির নীচের গুপ্ত ঘরই হল ব্যাংক।
কী হাবিজাবি শুরু করলি? ঘুমোতো।
আহা শোন না–ঐ সব ধনরত্ন টাকা পয়সা পাহারা দেয়ার জন্যে থাকতো 731
যখ কী?
যখ হচ্ছে যক্ষ। শোন নি — যক্ষের ধন? যখ বানানো হত কী ভাবে জান মা? যখ বানানোর প্রক্রিয়াটা মজার। নয় থেকে দশ বছর বয়সের একটা ছেলেকে যখ বানানো হতো। তাকে গোসল করিয়ে নতুন জামা-কাপড় পরিয়ে সাজানো হত। চোখে সুরমা দিয়ে চুল আচড়ে দেয়া হত। কোলে বসিয়ে দুধ ভাত খাওয়ানো হত। তারপর নিয়ে যাওয়া হত গুপ্ত ঘরে। সেখানকার ধনরত্ন তার সামনে রাখা হত। একজন পুরোহিত মন্ত্র পড়তে পড়তে ধনরত্ন তার হাতে জিম্মা করে দিতেন। পুরোহিত বলতেন–হে যখ, তোমার হাতে এইসব রত্ন-রাজি তুলে দিলাম। তোমার দায়িত্ব হল এর রক্ষণাবেক্ষণ করা। আইনানুগ উত্তরাধিকারী ছাড়া তুমি এই ধনরত্ন কখনো হস্তান্তর করবে না। যে ছেলেটা যখ হবে সে সারাদিনের পরিশ্রমে ক্লান্ত হয়ে একসময় কোলেই ঘুমিয়ে পড়ত। তখন তাকে সেখানে শুইয়ে সবাই চুপি চুপি উঠে আসত। গুপ্ত ঘরে জ্বলতো একটা ঘিয়ের প্রদীপ। তারা উপরে উঠে এসেই ঘরের মেঝের গুপ্ত কুঠুরি চিরদিনের মত বন্ধ করে দিত। এক সময় ছেলেটির ঘুম ভাঙ্গতো। আতংকে অস্থির হয়ে সে ছোটাছুটি করত। মাকে ডাকতো, বাবাকে ডাকত। তার কান্না তার আর্ত চিৎকার কেউ শুনতে পেত না। ছেলেটার মৃত্যু হত সেই ধনরত্নপূর্ণ গুপ্ত কুঠুরিতে।
আমি থামলাম। মা হতভম্ব হয়ে বললেন–এই ভয়ংকর গল্প তুই কোথায় শুনলি!
আমি বললাম, এটা কোন ভয়ংকর গল্প না মা। পুরানো ভারতের সাধারণ একটা গল্প। ভারতবর্ষের যেখানেই মাটির নীচে ধনরত্ন পাওয়া গেছে সেখানেই ছোট বালকের কংকাল পাওয়া গেছে।
কে বলেছে তোকে?
ঘুমাও মা। আমার ঘুম পাচ্ছে।
এইসব আজে বাজে গল্প কখনো বলবি না।
আচ্ছা আর বলব না।
এই গল্পটা তোকে কে বলেছে?
আমি জবাব দিলাম না। ঘুমের ভান করলাম। মা আরো কয়েকবার এই বকু, এই বকু বলে আমার গায়ে ধাক্কা দিলেন। আমি চমৎকার ঘুমের অভিনয় করলাম। মা চুপ করে গেলেন।
আমার ঘুম আসছে না। আমি জেগে আছি। গল্পটা আমাকে বলেছেন আমাদের ডিরেক্টর মঈন সাহেব।
যখ বানানোর প্রক্রিয়া নিয়ে তাঁর ছবি বানানোর শখ। ছবিটি কেমন হবে তাই তিনি পাপিয়া ম্যাডামকে বুঝাচ্ছিলেন। আমি দূর থেকে শুনছিলাম। পাপিয়া ম্যাডাম বললেন, এই ছবি বানিয়ে লাভ কী?
ডিরেক্টর সাহেব বললেন, মানুষ যে কত ভয়ংকার হতে পারে তা দেখানো।
পাপিয়া ম্যাডাম বললেন, এখনতো আর কেউ যখ বানাচ্ছে না। সেই ভয়ংকার মানুষরাতো নেই।
ডিরেক্টর সাহেব বললেন, যারা যখ বানাতো তারা কিন্তু ভয়ংকর ছিলেন না। সাধারণ মানুষই ছিলেন। তাদের সংসার ছিল, ছেলেমেয়ে ছিল। তাঁরা ধর্ম-কর্ম করতেন, দান ধ্যান করতেন। তার পরেও ভয়ংকর ব্যাপারটা কোন না কোন ভাবে তাদের চরিত্রে ছিল। ছিল না?
হ্যাঁ ছিল।
যদি যখন থাকে তাহলে খনো আছে। মানুষ জন্মসূত্রে তার চরিত্রে এই ভয়ংকর ব্যাপারটি নিয়ে এসেছে। আমার ছবিটা মানুষের মনের ঐ দিকটাই দেখাবে।
ছবির নাম কী হবে?
নাম ঠিক করি নি।
ছবিটা কি সত্যি সত্যি বানানো হবে?
তাও জানি না। অনেক কিছু করতে ইচ্ছা করে। করতে পারি কোথায়? টাকা নেই। টাকা নেই।
আপনার স্ত্রী টাকা দেয়া বন্ধ করেছে? ডিরেক্টর সাহেব জবাব দিলেন না। হঠাৎ মাথা ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, বকুল যখের গল্পটা তোমার কাছে কেমন লাগল। প্রশ্নটা এমন আচমকা করা হল যে আমি হকচকিয়ে গেলাম। আমি যে গল্পটা এত আগ্রহের সঙ্গে শুনছি তা তিনি লক্ষ্য করবেন আমি ভাবি নি। এক পলকের জন্য আমার মনে হল আসলে গল্পটা তিনি আমাকেই শুনাতে চাচ্ছিলেন। পাপিয়া ম্যাডাম উপলক্ষ্য মাত্র। তার পরেই মনে হল–আরে না।
বিছানায় এপাশ ওপাশ করছি–ঘুম আসছে না। এক সময় আমার নিজেকেই যখের মত মনে হল। আমি যেন একটা যখ — পৃথিবীর সমস্ত সৌন্দর্য আমার কাছে গচ্ছিত রাখা হয়েছে। অথচ এই সৌন্দর্য আমি উপভোগ করতে পারছি না। আমি শুধু পাহারা দিচ্ছি।
আচ্ছা সব মানুষই কি খানিকটা যখের মত না? তাদের কাজ অন্যের ধনরত্ন পাহারা দেয়া। মা যেমন আমার ধনরত্ন পাহারা দিচ্ছেন, আমি অন্য একজনেরটা পাহারা দিচ্ছি। দূর পাগলের মত কী ভাবছি! আমার ঘুমিয়ে পড়া দরকার। মানুষের ইচ্ছা-ঘুমের ক্ষমতা থাকার খুব প্রয়োজন ছিল। ইচ্ছা করা মাত্র আনন্দময় ঘুম চোখে নামবে–আর কী শান্তি। তা-না ঘুমের জন্যে অন্য একজনের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। সেই অন্য একজন ঘুম পাড়িয়ে দিলে ঘুম আসবে। ঘুম পাড়াতে না চাইলে বিছানায় শুয়ে ছটফট করতে হবে। মওলানা মেরাজ মাস্টার সাহেবকে জিজ্ঞেস করতে হবে–ঘুম আসার কোন দোয়া তাঁর জানা আছে কি-না।
মা ঘুমিয়ে পড়েছেন। তাঁর ভারী নিঃশ্বাসের শব্দ পাচ্ছি। আজ তিনি বাতি জ্বালিয়েই ঘুমিয়ে পড়েছেন। উঠে গিয়ে বাতি নিভিয়ে আসব–না বাতি জ্বালানোই থাকবে? বুঝতে পারছি না। ডাইরি লেখা যেতে পারে। মাঝে মাঝে আমি যখন পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে যাই আর ঘুম আসবে না, তখন ডাইরি লিখতে বসি। আজ সারাদিনে লেখার মত অনেক কিছুই ঘটেছে। মনে মনে রাফ করে ফেললে কেমন হয়। রাফ করতে করতে এক সময় হয়ত ঘুম এসে যাবে। আমি মনে মনে ডাইরি লেখা শুরু করলাম।
হাতি ও পিঁপড়া সংবাদ
হাতি এবং পিঁপড়া বিষয়ক একটা গল্প ডিরেক্টর সাহেব আমাকে বলেছেন। গল্পটা আমি আগেও শুনেছি। তবে তিনি অনেক মজা করে বলেছেন। এই মানুষটার গল্প বলার ক্ষমতা ভাল। তবে তিনি যে খুব ভাল গল্প বলেন তা তিনি জানেন। একজন যখন জেনে ফেলে সে খুব ভাল গল্প করতে পারে তখন তার গল্প বলায় ওস্তাদী একটা ভাব এসে পড়ে। উনার মধ্যেও তা এসেছে। আমার মামাও খুব ভাল গল্প বলতে পারেন। তবে তিনি তাঁর এই ক্ষমতা সম্পর্কে জানেন না। জানেন না বলেই নিজের মনে মজা করে গল্প করেন। শুনতে অসম্ভব ভাল লাগে। হাতি এবং পিঁপড়ার এই গল্পটা মামাকে বললে–তিনি আরো অনেক বেশি মজা করে এই গল্প অন্যদের করবেন। তবে সমস্যা হচ্ছে কী, যারা খুব ভাল গল্প করতে পারে তারা শুধু নিজেরই গল্প করতে চায়। অন্যদের গল্প শুনতে চায় না। আমি নিজেও খুব ভাল গল্প করতে পারি। ডিরেক্টর সাহেবকে আমি একদিন আমার গল্প শুনাব। সেই একদিনটা কবে আমি জানি না। আজ উনাকে গল্প শুনাবার একটা সুযোগ আমার ছিল। আমি সেই সুযোগ গ্রহণ করি নি।
হাফিজ আলির স্ত্রী
হাফিজ আলির স্ত্রীর নাম, আমি এখনো জানি না। আমি কেন কেউই জানে না। এই মহিলা না-কি ভবিষ্যৎ বলতে পারেন। ইউনিটের সবাই এই মহিলার ব্যাপারে উৎসাহী। আমি উৎসাহী বোধ করছি না–তবে ভদ্রমহিলাকে আমার খুব দেখার শখ। একটা কাজ করলে কেমন হয়–একদিন চুপি চুপি দ্রমহিলার বাড়িতে গিয়ে উপস্থিত হয়ে যদি বলি, শুনুন আমার নাম রেশমী। আমি ভবিষ্যৎ বলতে পারি। আজ আমি এসেছি আপনার ভবিষ্যৎ বলতে। আপনি কি আপনার নিজের ভবিষ্যৎ জানতে চান? তাহলে ভদ্রমহিলার মুখের ভাব কেমন হবে? তিনি কি নিজের ভবিষ্যৎ জানতে আগ্রহী হবেন?
সেলিম ভাই
আমার ধারণা সেলিম ভাই খুব ভাল অভিনয় করবেন। তাকে ভাল অভিনয় করার ব্যাপারে আমি সাহায্য করতে পারি। তার ভেতরে আত্মবিশ্বাসের ভাব জাগিয়ে তুললেই হবে, আর কিছু লাগবে না। একজন যুবক ছেলের আত্মবিশ্বাস মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে তখনই যখন সে হঠাৎ দেখে একটা তরুণী রূপবতী মেয়ে তার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। তখন সমস্ত পৃথিবীটা মনে হয় তার হাতের মুঠোয়। আমি অনায়াসেই সেলিম ভাইয়ের প্রেমে হাবুডুবু খাবার অভিনয় করতে পারি। তবে এখন এই অভিনয় করলে লাভ হবে না। কারণ সেলিম ভাই নিজে আমার প্রেমে হাবুডুবু খেতে শুরু করেছেন। আমার দিকে তার তাকানোর ভঙ্গি, কথা বলার ভঙ্গি সবই পালটে গেছে। এখন আমি আর তাকে সাহায্য করতে পারব না।
মা ঘুমের মধ্যে বিড় বিড় করে বললেন, বাবু ও বাবু। বাৰু। তিনি তার বাবাকে ডাকছেন। আহা বেচারী। আমি মার গায়ে হাত রাখলাম, কোমল গলায় ডাকলাম, মা মা। মা ঘুমের মধ্যেই বললেন, হুঁ! আমি বললাম, তুমি আরাম করে ঘুমাও। আমি কখনো, কোনদিনও তোমাকে ছেড়ে যাব না। আমি তোমার সঙ্গে খুব খারাপ ব্যবহার করি, তোমাকে রাগিয়ে দেই, কাদাই। কিন্তু তোমাকে যে আমি কত ভালবাসি তা তুমি জান না। জানলে তোমার খুব ভাল লাগতো।
মা পাশ ফিরলেন। মনে হচ্ছে ঘুমের মধ্যেও তিনি আমার কথা শুনতে পেলেন।