Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » রাধানগর || Bani Basu » Page 10

রাধানগর || Bani Basu

কী রকম একটা অহঙ্কার হচ্ছিল। কীসের অহঙ্কার? আমি যেন রাস্তা দিয়ে চলছিলাম রাজার মত। রাজকুমারের মতো। কয়েক মাসের মধ্যে বিপুলা এ পৃথিবীর দুটো, অন্তত দুটো জায়গা —রাধানগর আর কলকাতা যেন চলে এসেছে আমলকীর মতো আমার হাতের মুঠোয়। আমি অনাথ-আতুর নই তো! আমার বাবা আছে, মা আছে, দিদিমা, বোন, এক মাসি … মারা গেছে তবু সে আমার আত্মীয়, ঠিক তেমনই আত্মীয় আমার দাদামশাই, দাদা, —আমার বড় জ্যাঠামশাই আছেন। এমন কী রাধামাধব, রাধামাধবের ওই মন্দির, ওই এস্টেট সে-ও আছে আমার। আর এত সব আপনজন থাকা সত্ত্বেও আমার এই আঠারো বছর বয়সে আমি এক অপরিচিত শহরে এসে নিজের তত্ত্বাবধানে নিজে থাকছি। না-খেয়ে, আধপেটা খেয়ে, প্রতিকূল পরিবেশে একজন প্রকৃত অনাথের মতো লড়াই করে বাঁচছি। এখন এই শহরের রাস্তাঘাট, এখানকার মিছিল ময়দান, এখানকার সমস্যা-সংবাদ সব নিজের উদ্যোগে, নিজের চেষ্টায় জানব, আবিষ্কার করব। বিপুল, বিরাট একটা জীবন, একটা পৃথিবী হাট হয়ে খুলে যাচ্ছে আমার সামনে। আগে যেমন মনে হত, এই পৃথিবীটাকে আমি জানি না। এই যে সব লোকে চারদিকে চলাফেরা করছে এদের আমি চিনি না, এখন সেই দেখাটাই এক মুহূর্তে যেন পাল্টে গেল। বুঝলাম—এদের না চিনলেও কোনও ক্ষতি নেই। পৃথিবীর অধিকাংশ জায়গা তো আমি চিনবই না, তাতে কী? এদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক-স্থাপন হয়ে গেছে। এরা আমার কিছু-না কিছু হয়।

ঘোরানো সিঁড়ি দিয়ে ঠিক লাফ দিয়ে দিয়ে ওঠা যায় না। কিন্তু উঠলাম খুব দ্রুত। দরজাটা আধ-ভেজানো। খুলে দেখি রাখালবাবু বিছানায় শুয়ে আছেন, একটা পায়ের ওপর আরেকটা পা, সিগারেট খাচ্ছেন। ঘরটা ধোঁয়ায় ভরে গেছে।

আমাকে দেখেই উঠে বসলেন, কর্কশ গলায় বললেন—কটা বেজেছে খেয়াল আছে?

আমি হাতঘড়ির দিকে চেয়ে দেখি সাড়ে আটটার ঘর ছাড়িয়ে যাচ্ছে কাঁটা।

—দোকান-টোকান তো এবার বন্ধ হয়ে যাবে?

আমি জিজ্ঞাসু চোখে ওঁর দিকে তাকাই, — কী বলতে চায় লোকটা?

—আমার খাবার-টাবারগুলো কখন আনবে?

আমি বললাম —আমি খেয়ে এসেছি। এখন আর বেরোব না। আপনি খেয়ে আসুন না।

—তার মানে? তুই আমার খাবার আনবি না? ছিলি ঢোঁড়া, শহরের জল পড়েই হয়েছিস খরিশ। রোয়াব দেখাচ্ছিস?

রাগ নয়, হঠাৎ কেমন করুণা হল লোকটার ওপর। শিশিরবাবুর কাছে শুনেছি লোকটার কেউ নেই। হাত বাড়িয়ে বললাম —পয়সা দিন। এনে দিচ্ছি।

—যাক, তবু সুবুদ্ধি হয়েছে। পকেট থেকে কয়েকটা টাকা বার করলেন উনি। গালিগালাজটা চালিয়ে যেতে পারলেন না বলে যেন একটু বিমর্ষ।

—রুটি আর পাঁঠা, —কাঁচা পেঁয়াজ বেশি করে দিতে বলবি।

আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল, আবার সেই মাংস আনতে হবে? তার মানে আজ বোতলও বেরোবে!

যাই হোক, এনে দিলাম। দিয়ে বললাম—দেখুন আমি জীবনে কখনও মাংস খাইনি, ধারে কাছে কখনও রান্না হতে পর্যন্ত দেখিনি, আমার কী বিশ্রী লাগে আপনি বোঝেন না? তখনই ওঁর কয়েক ঢোঁক মদ গেলা হয়ে গেছে। বোতলটার দিকে আঙুল দেখিয়ে বললাম—এ সব খাওয়ার তো জায়গা আছে, সেখানে গিয়ে খেয়ে এলেই তো পারেন! আমার মতো একজন ছাত্রের সামনে মদ খেয়ে মাতলামি করেন, লজ্জা নেই আপনার?

রাখালবাবু প্রথমটায় অবাক চোখে তাকিয়ে ছিলেন আমার দিকে, বোধ হয় বিশ্বাস করতে পারছিলেন না কথাগুলো আমিই বলেছি। তারপর হঠাৎ উনি উঠে এসে এক ধাক্কায় আমায় বিছানায় ফেলে দিলেন, আমার বুকের ওপর চড়ে বসে বললেন, লজ্জা? দেখাচ্ছি লজ্জা! তোর বাপের ঘরে থাকি? তোর বাপের টাকায় খাই? উনি উচ্চারণের অযোগ্য বিশ্রী-বিশ্রী কথা বলতে লাগলেন। তারপরে বললেন মাংস খাসনি কখনও? তো আজ খাবি, বলে ভাঁড় থেকে খানিকটা মাংসের ঝোল আমার মুখ ফাঁক করে ঢেলে দিলেন, বোতল থেকে খানিকটা তরল পদার্থও ঢাললেন।

আমার ডান হাতটা পিঠের তলায় চলে গেছে, প্রচণ্ড লাগছে, বাঁ হাতটা উনি নিজের বাঁ হাত দিয়ে ধরে আছেন। আমি সমস্ত শক্তি দিয়ে উল্টে গেলাম, আর সঙ্গে সঙ্গে বিছানা ভেসে গেল বমিতে।

লুঙ্গি পরা অশ্লীল চেহারার লোকটা — উল্টে পড়ে আমার বাপান্ত করতে লাগল। আমি মুখটুখ ধুতে আমার গামছা সাবান, পাজামা সব নিয়ে নীচের কলঘরে চলে গেলাম। শীতকাল বলেই বোধহয় চৌবাচ্চায় তলানি জল এখনও খানিকটা আছে, চান করে ওপরে উঠে দেখি, তক্তপোষের বিছানাটা গুটিয়ে পুঁটলি মতো করে এক দিকে সরানো, আমার বিছানাটা পেতে উনি শুয়ে পড়েছেন।

—আমার বিছানায় শুলেন যে বড়? —আমি চেঁচাই।

পুরো বোতলটা খেয়ে শেষ করেছে লোকটা, ভাঁড় থেকে মাংস ফাংস চেটেপুটে খেয়েছে, চারদিকে ছড়িয়েছে। বলল–শোন গেঁয়ো ভূত কোথাকার, এ ঘরে আর তোর জায়গা হবে না। ঠিক তিন দিন সময় দিচ্ছি। এর মধ্যে যা হয় ব্যবস্থা করবি।

আমার পক্ষেও এখানে এ ভাবে আর থাকা সম্ভব নয়।

সারারাত দেয়ালে ঠেস দিয়ে বসে কোনওমতে কাটিয়ে দিই।

পরের দিন কলেজ থেকে ফিরে এদের লেটার-বক্সে একটা চিঠি পেলাম। শিশিরদা লিখেছেন-

কল্যাণীয়েষু মন্দার,

অনেক দিন তোমার চিঠি পাই না। রাখাল অবশ্য নিয়মিত তোমার খবরাখবর দেয়। আশা করি কলেজের পড়াশোনা, আর শহরের গতিশীল জীবনযাত্রার সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছ। তোমার বয়সে একা থাকার অনেক বিপদ, চারদিকে প্রলোভন ছড়িয়ে আছে। অবশ্য মাঝে মাঝে মদ্যপান এমন কিছু দোষের নয়। কৌতূহলের বশে আমরাও ছাত্র-জীবনে একটু-আধটু চেখেছি। তবে, বুঝতেই পারছ জিনিসটা তোমার সহ্য হবে না। মেয়েদের থেকেও সাবধান। আর একটা কথা, রাখাল যেমন তোমাকে গাইড্যান্স দিচ্ছে, তুমিও যদি তেমন ওকে একটু আধটু সেবা করো, আমি সুখী হব। পরস্পরকে দেখাশোনার মধ্যে দিয়েই তো আমরা মানুষের সঙ্গে বোঝাপড়ায় পৌঁছই। আশীর্বাদ জেনো।

শুভার্থী শিশিরদা।

ব্যাপারখানা কী? মদ্যপান? মেয়েদের থেকে সাবধান, রাখালবাবুকে সেবা … উনি নিয়মিত আমার খবরাখবর দিয়ে থাকেন? কী খবর দিয়েছেন? আমি মদ্যপান করছি? বাঃ।

বিরক্তিতে জ্বলতে জ্বলতে ওপরে উঠে দেখি ঘরটায় একটা নতুন শক্তপোক্ত তালা লাগানো। আমার চাবি তাতে লাগল না। নেমে এলাম, —উদ্দেশ্যহীনভাবে খানিকটা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরলাম। আজ মন্দাকিনী কলেজে আসেনি। আচ্ছা, কী ভাবে ওর সঙ্গে কলেজে কথা বলব? যদি বলি, এ আমার বোন, রথী কী ভাববে? একদিন আগেও আমি বোনকে চিনতাম না? তার ওপর যদি ওদের বাড়িতে থাকতে যাই, সে-ও তো রথী জানতে পারবেই। ব্যাপারটা ওদের কাছে দুর্বোধ্য হবে। এক হিসেবে আমার ওখানে না থাকাই ভাল। মন্দাকিনীকেও আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। ও বোধহয় খুব বিরক্ত হয়েছে। তারপরে যদি জানতে পারে আমিই আমার মায়ের আসল ছেলে, ওর বেশ জোরালো একটা ধাক্কা লাগবেই।

কলেজ রো চলে গেলাম। রাধাবল্লভি, ছোলার ডাল, আর সন্দেশ দিয়ে রাতের খাওয়া সেরে, সাড়ে আটটা নাগাদ বাড়ি-ফিরে দেখি তখনও তালা একই ভাবে ঝুলছে। বাইরের ছোট্ট চাতালটুকুতে বসে রইলাম। রাত সাড়ে এগারোটা বাজলে বুঝলাম রাখালবাবু আর আজকে ফিরবেন না। তালাটা উনি ইচ্ছে করেই লাগিয়ে গেছেন আমাকে জব্দ করতে। একবার নীচে গেলাম। দোতলায় তিনটে ঘরে, তিন জন ভদ্রলোক থাকেন, সব-দরজা বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়েছেন। আর এক তলাটা তো কাপড়ের গো-ডাউন। সারা রাত অতএব চাতালটাতে মশায় আর শীতে উস্তমখুস্তম হই। সকাল হতে আবার নীচে খোঁজ নিই। কেউই কিছু জানে না। ওই ঘরে আমার যথা-সর্বস্ব। টাকা-কড়ি আমি সঙ্গে নিয়ে বেরোই না। বই-পত্র, খাতা টাতা, সব নতুন কেনা, জামাকাপড় তো বটেই, কিন্তু সবচেয়ে মূল্যবান হল বড় জ্যাঠামশাইদের দেওয়া সেই মাদুলিসুদ্ধ সোনার হার। যদিও উনি ওটা আমায় গলায় পরে থাকতে বলেছিলেন, দু বার ওটা চুরি যেতে-যেতে বেঁচে যাওয়ায় এখানে আর পরে থাকতে সাহস পাইনি, কলেজ বেরোবার সময়ে খুলে সুটকেসে রেখে দিতাম, এসে আবার চুপিচুপি পরে নিতাম। সমস্ত কিছু ওই ঘরের মধ্যে রয়ে গেছে। ওয়ালেট খুলে দেখি তার মধ্যে তিন টাকা নব্বই পয়সা পড়ে আছে।

সকাল এগারোটা পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম। খালি মনে হচ্ছে আমি চলে গেলে যদি রাখালবাবু সেই ফাঁকে তালা খুলে ঢুকে পড়েন? তারপর যদি আবার তালা দিয়ে বেরিয়ে যান? কার সঙ্গে পরামর্শ করব? রথীদের বাড়ি যাব? তাই যাই। এন্টালির মোড়ে যখন পৌঁছলাম, সাড়ে এগারোটা বেজে গেছে, বাসে-ট্রামে অজস্র মানুষের ভিড়। এখন তো রথী কলেজে বেরিয়ে গেছে। ও না থাকলে ওদের বাড়ি গিয়ে লাভ? আবার হাঁটছি, হাঁটছি।

—মন্দার। কে পেছন থেকে ডাকল।

মুখ ফিরিয়ে দেখি মন্দাকিনী।

—এদিকে কোথায়? কলেজ যাবে না?

মন্দাকিনী না ডাকলে আমি দিদিমার বাড়ি যেতাম না। যদি সেদিন ওভাবে আমার সঙ্গে ওর দেখা হয়ে না যেত, তা হলে আমি হাঁটতে হাঁটতে আবার শেয়ালদায় ফিরে আসতাম। সন্ধে হলে আবার হাঁটতে হাঁটতে রথীদের বাড়ি আসতাম। তার পরে? হয়তো রথীর কাছ থেকে কিছু টাকা ধার করে রাধানগরে ফিরে যাওয়ার কথা ভাবতাম। কিন্তু কী করে বড় জ্যাঠামশাইকে বলতাম? আর শিশিরদা? কত দিন চেনেন উনি রাখাল সরকারকে? আমাকে তো আজ সাত বছর ধরে চিনছেন খেলার মাঠে, স্কুলের ঘরে, কী করে রাখালবাবুর কথা বিশ্বাস করে নিয়ে ওরকম একটা চিঠি দিলেন আমাকে? এই যাঁর বিচার-বিবেচনা, তাঁর কাছে বিপদে পরামর্শ চাইতে যাওয়ার কী-ই বা মানে?

সব কথা আদ্যোপান্ত যে ওকে খুলে বলতে পেরেছিলাম তা-ও না। মন্দাকিনী কলেজগামী ট্রামে উঠল না, বলল—চলো আমার সঙ্গে।

এন্টালি বাজার থেকে ও একটা তালা কিনল, তারপর ফ্রিস্কুল স্ট্রিটে গেল আমাকে নিয়ে। একটা দোকানের মধ্যে দিয়ে ভেতরে ঢুকে গেল। একটু পরে একটি অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান ছেলেকে নিয়ে কথা বলতে-বলতে বেরিয়ে এল। আমাকে বলল—মীট মাইকেল, মাই ফ্রেন্ড। —মাইকেলকে কিন্তু কিছুই বলল না আমার সম্বন্ধে। আমার হাতটা ঝাঁকিয়ে দিল মাইকেল। তার পর আরেকটা বাড়িতে গেল, রুডি, রুডি—চিৎকার করে ডাকতে লাগল মাইকেল। রুডি বলে ছেলেটি নেমে এল। এ ছেলেটি রীতিমতো ব্যায়ামবীর। ওকে একধারে ডেকে নিয়ে গিয়ে কথা বলল দুজনে। তারপরে মাইকেল একটা ট্যাক্সি ডাকল।

আমার একটু একটু ভয়-ভয় করছে। মারামারি করবে, না কি? শেয়ালদার বাসা আমি চিনিয়ে নিয়ে গেলাম। সদর দরজা যেমন খোলা থাকে খোলাই। নীচের একটা গুদাম-ঘর খোলা, সেখানে কাজ করছে দুজন লোক। মন্দাকিনী বলল— এদের চেনো?

আমি তো কোনওদিন গো-ডাউন খোলাও দেখিনি। দোতলার ঘরগুলো যথারীতি বন্ধ। তিনতলায় উঠে দেখি, তালাটা একভাবে ঝুলছে। ক্ষীণভাবে আশা করেছিলাম রাখালবাবু থাকবেন। মন্দাকিনী ওর কেনা তালাটা ওই তালার ওপরে লাগিয়ে দিল। আমাকে বলল—বাস, যদি ইতিমধ্যেই তোমার সুটকেস এই ঘরের মধ্যে থেকে হাওয়া হয়ে গিয়ে না থাকে, তা হলে আর যাবে না। — মাইকেল আর রুডি পালা করে পাহারা দেবে এখানে, তা হলেই তোমার ওই রাখাল না বাগালকে ধরে খোলা যাবে।

—আর যদি ইতিমধ্যেই সুটকেসটা গিয়ে থাকে? —এ সম্ভাবনাটার কথা আমার আদৌ মনে হয়নি। এখন মন্দাকিনী বলাতে মনে হল।

—তার ব্যবস্থাও হবে। এখন চলো।

—কোথায়?

—বাঃ, তোমার তো কাল থেকে চান-খাওয়া কিছুই হয়নি! ভাল কথা ওই লোকটা কোথায় কাজ করে যেন বলছিলে?

—ক্যালকাটা কর্পোরেশনে।

—ডিপার্টমেন্ট জানো?

—নাঃ।

—নেভার মাইন্ড।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress