Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » রাত পরীদের রূপকথা || Manisha Palmal

রাত পরীদের রূপকথা || Manisha Palmal

রাত পরীদের রূপকথা

বৃষ্টিমুখর সন্ধ্যের রিমঝিম ধ্বনিতে ডুবে আছে মৌ। এটা ওর আসল নাম নয়। এসকর্ট সার্ভিসের খাতায় ও মৌ। ওর আসল নাম হিয়া মিত্র। কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ইংরেজি অনার্স। ভারী মিষ্টি দেখতে মেয়েটাকে। কথাবার্তা খুব সুন্দর। ইংরেজি হিন্দি বাংলা তিন ভাষাতেই সাবলীল। তাই ওর চাহিদাও খুব বেশি। মাসে চার দিন ও এই সার্ভিসে কাজ করে। যা রোজগার করে তার4oপার্সেন্ট সার্ভিসের লোকেরা কেটে নেয় বাকি সিক্সটি পার্সেন্ট ওর । এছাড়া কাস্টমাররা ভালোবেসে যে উপহার দেয় তার সবইওর। আজ ও যাকে সঙ্গ দিতে দীঘাতে এসেছে তিনি একজন শিল্পপতি নামশুনে তো অবাঙালী বলেই মনে হয়। হোটেলের রিসেপশনে বসে বসে বৃষ্টির রিমঝিম শব্দে র তালে ডুবে গেছিলো ও—- হঠাৎ চমক ভাংলো একটা গম্ভীর স্বরে—– হাই!তুমি কি মৌ? মুখ তুলে দেখাক মধ্য চল্লিশে সৌম্যদর্শন মানুষ দেখলে ব্যবসায়ী বলে মনে হয় না বরং অধ্যাপক বলে মনে হয়! মৌ উঠে হাতজোড় করে নমস্কার করে! মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে ভদ্রলোক বলেন —বা তোমার আপ্যায়ন টি তো বেশ!
মৌ ওকে নিয়ে তিন তলার সমুদ্রমূখী বারান্দায় গিয়ে বসে। ধীরে ধীরে আলাপচারিতায় দুজনে সাবলীল হতে চেষ্টা করে। ভদ্রলোক মৌকে বলেন—- তোমার আসল নাম যে এটা নয় জানি তুমি কি তোমার আসল নামটা আমায় বলবে? সার্ভিসের এথিক্স অনুযায়ী তা নিষেধ— এই বলে মৌ এডিয়ে যায়। ভদ্রলোক বলেন আমি সৌম্য। তুমি আমাকে বন্ধু ভাবতে পারো। মৌ নিজেকে খোলসের মধ্যে আরো গুছিয়ে নেয়। ওরএই রাত পরীর জীবন তিনটে অসুস্থ প্রাণকে বাঁচিয়ে রেখেছে। ওর দাদু ঠাকুমা ও মা তিনজনেই অসুস্থ। সুখী মধ্যবিত্ত পরিবার ছিল মিত্রদের। বাবা মা ছেলে বউ ওএকমাত্র নাতনী কে নিয়ে। বাবা বেসরকারি ফার্মে ভালো পোস্টে চাকরি করতেন। হঠাৎ চাকরি চলে যায়। মৌ তখন প্রথম বর্ষের ছাত্রী। নিজের জমা পুঁজি নিয়ে ব্যবসা করতে নামেন কিন্তু তাকেও লোকসান। ধীরে মাথার চুল পর্যন্ত ডুবে যায়। ঘুমের ওষুধের সাহায্যে এই বিপদ থেকে উদ্ধার পান তিনি। এই আঘাতে দাদু ঠাকুমা অর্ধমৃত হয়ে পড়েন। মৌএর মা ক্যান্সার পেশেন্ট। পুরো সংসারটা রদায় এসে পড়ে ছোট্ট মেয়েটার উপর—- যে পড়াশোনা ছাড়া আর কিছুই জানত না। এই অবস্থায় আত্মীয়-স্বজনরা যতটা সম্ভব ক্ষতি করার চেষ্টাও করেছিলেন। অসহায় মেয়েটা ভেবে পাচ্ছিল না কি করবে। এই সময় ই ওর আলাপ হয় আয়েশার সাথে। ওরই কলেজে পড়ে ওর থেকে এক ব্যাচ সিনিয়র। ও ই ওকে এই সার্ভিসের কথা বলে। ফাস্ট ইয়ার পাস কোন মেয়েকে চাকরি কেউ দেয় না। ও বোঝায় যে তুই ইংরেজিতে সাবলীল ।তোর ডিনান্ড খুব বেশি হবে তুই মাসের চারদিন কাজ কর ।দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে। সেই শুরু। আজ দুবছর হিয়া এই কাজ করছে। বাড়ির লোক জানে ও এনজিওতে কাজ করে।
সৌমের ডাকে সম্বিত ফেরে মৌয়ের।সৌমের সাথে সিবিচে ঘুরতে বেরোই দুজনে। ভদ্রলোকের অদ্ভুত সংযম— কোনো অশালীন ব্যবহার সে করে না।মৌএখন অনেক সহজ হয়েছে। ফ্রিভাবে সৌম্যর সাথে বেড়াতে বেড়াতে গল্প করতে থাকে। বাবা-মায়ের সাথে দিঘা বেড়ানোর গল্প— সৌম্যর সহানুভূতি ওকে খোলস থেকে বের হতে বাধ্য করে। রাতের খাওয়ার পর দুজনেই বারান্দায় বসে গল্প করতে থাকে। সৌম্য নিজের গল্প বলার মাঝে মাঝে প্রশ্ন করে করে মৌয়ের সব ইতিহাস জেনে নেন। মৌ জানতে চায় সৌম্য কেন এভাবে একা একা ঘুরে বেড়াচ্ছে পরিবার ছাড়া। সৌম্য বলে— নিজের ভুলেই আজ আমি একা। আমার স্ত্রী ও ছেলে আমাকে ছেড়ে চলে গেছে আজ 15 বছর।ওদের কোন খবরই আমি জানিনা। এই দিঘাতে ওদের সাথে আমার শেষ দেখা হয়েছিল। তাই ওদের খোঁজে বা বলতে পারো স্মৃতিচারণ করতেই আমি আসি এখানে। একা একা তো ঘুরা যায় না তাই এসকর্ট সার্ভিসের দেওয়া সঙ্গিনী নিয়ে ঘুরি। একাকীত্ব তাডাতে। মৌ এবার হিয়ামিত্র হয়েসৌম্য এর কাছে ধরা দেয়। সেই শুরু তাদের বন্ধুত্বের।
সৌম্য হিয়াকে এই সার্ভিস থেকে মুক্ত করেন। বলেন— আমার কলকাতার বান্ধবীতুমি! পড়াশুনা করো আমি যখনই আসব তোমার সাথে দেখা করব! মাসের পয়লা তোমার একাউন্টে তোমার রেমুনারেশন ঢুকে যাবে। এইটা আমি তোমাকে ধার হিসেবে দিচ্ছি। তোমার চাকরি হলে আমি সব ই সুদ সহ ফেরত নেব।
হিয়া এমএ পাস করেছে। আজ আবার দিঘায় এসেছে সৌম্যর সাথে দেখা করতে। মা দাদু ঠাকুমা আজ কেউ বেঁচে নেই। পিছুটান হীন হিয়া আজ নিজের ঋণ শোধ করবে। রিসেপশনে বসে অপেক্ষা করছে। সৌম্য র ডাকে চমকে উঠে হিয়া— দেখে সৌম্য ক্লান্ত চোখ দুটোয় অবসাদ– হিয়াকে দেখে তাতে আনন্দের আলো জ্বলে ওঠে। হাত বাড়িয়ে হাতটা ধরে হিয়া বলে—- চলো এবার এভাবেই শুরু হোক আমাদের নতুন করে পথ চলা!
দুই অসম বয়সী বন্ধুত্বের পথ চলা শুরু হয়!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *