Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » রাঘববাবুর বাড়ি || Shirshendu Mukhopadhyay » Page 7

রাঘববাবুর বাড়ি || Shirshendu Mukhopadhyay

পালকি চেপে জঙ্গলের ভিতরে

নদী পেরিয়ে আগেরবারের মতোই পালকি চেপে জঙ্গলের ভিতরে দীর্ঘ পথ পার হতে হল নন্দলালকে। জঙ্গলের মধ্যে সেই চাতালেই এসে পালকি নামল।

নন্দলাল নামলেন, চারদিকে যমদুতের মতো চেহারার লোকজন। বেদির ওপর কালীর বিরাট মূর্তি, পুজোর বিরাট আয়োজন চলছে।

নন্দলালের হাত-পা বশে নেই। আগেরবার কৌশলে রক্ষা পেয়েছিলেন। এবার আর তার উপায় দেখছেন না, তবে তার মাথা এখনও পরিষ্কার।

ল্যাংড়া শীতল আগেরবারের মতোই এসে পায়ের ধুলো নিয়ে বলল, “ঠাকুরমশাই, পুজোটা খুব জোর দিয়ে করবেন। আমার বড় খারাপ সময় যাচ্ছে।”

নন্দলাল স্খলিত কণ্ঠে বললেন, “পুজো না হয় করলুম বাবা, কিন্তু নরবলি-টলি যে আমার সয় না। শেষে যদি রক্তক্ত দেখে অজ্ঞান-টজ্ঞান হয়ে যাই তা হলে পুজোই পণ্ড।

শীতল কঁচুমাচু হয়ে বলল, “নরবলি কি আমিই চাই ঠাকুরমশাই? কিন্তু প্রাণায়াম শর্মা সাফ বলে দিয়েছে, নরবলি না হলে আমার রিষ্টি কাটবে না। দেখছেন তো, দিনদিন আমার শরীর শুকিয়ে যাচ্ছে। আজকাল হাত-পা কাঁপে, জোরে হাঁটলে বুকে হাফ ধরে যায়। আগে এক ঠাই বসে দু’সের মাংস খেতে পারতাম, আজকাল তিন পো-র বেশি পারি না। শরীর খারাপ হওয়ায় দলটাও নড়বড়ে হয়ে যাচ্ছে, রোজগার কমছে। প্রাণায়াম শর্মা বলেছেন, নরবলিটা হয়ে গেলেই সবদিক রক্ষে পাবে। মায়ের নাকি এখন পাঠা বা মোষে রুচি নেই। একটু নররক্ত খেতে চান। মায়ের ইচ্ছে হলে কী আর করব বলুন!”

“তা বলে মায়ের কোল খালি করা কি উচিত হচ্ছে বাপু? ওটাও যে ঘোরতর পাপ!”

“কিন্তু আমাকেও তো বাঁচতে হবে ঠাকুরমশাই। এতগুলো লোক আমার মুখপানেই চেয়ে আছে।”

নন্দলাল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।

একটু বাদেই পাঁচ-সাতটা লোক এসে ধড়াস ধড়াস করে দুটো মুখবাঁধা বাচ্চা ছেলেকে বেদির কাছাকাছি মাটিতে ফেলল। মশালের আলোয় নন্দলাল দৃশ্যটা দেখে শিহরিত হলেন। ছেলে দুটোকে ভারী চেনা-চেনা ঠেকছিল তার।

সুধীর বিশ্বাস এগিয়ে এসে ভারী আহ্লাদের গলায় বলল, “চিনতে পেরেছেন তো ঠাকুরমশাই?”

“কে বলো তো বাপু?”

“কেন, রাঘববাবুর দুই ছেলে রুইতন আর হরতন!”

নন্দলাল হঠাৎ বুকে প্রচণ্ড একটা ব্যথা টের পেয়ে চোখ বুজে ফেললেন। হার্ট ফেল হয়ে যাবে কিনা বুঝতে পারলেন না। গেলেই ভাল। এই পঙ্কিল পৃথিবীতে আর বেঁচে থাকার প্রয়োজনই বা কী?

খ্যাক খ্যাক করে একটু হেসে সুধীর বিশ্বাস বলল, “এবার এক ঢিলে দুই পাখি, বুঝলেন ঠাকুরমশাই?”

“না, বুঝলুম না।”

“নরবলিকে নরবলি, তার ওপর মুক্তিপণ বাবদ পাঁচ লাখ টাকা আদায়।”

“শিরে বজ্রাঘাত হবে যে হে!”

“বজ্রাঘাতের কমও হচ্ছে না ঠাকুরমশাই। ল্যাংড়া শীতলের রিষ্টির জন্য আমাদের যে হাঁড়ির হাল। আগে হেসেখেলে মাসে দশ বিশ হাজার টাকা আসত পকেটে। এখন দু-তিন হাজারের বেশি নয়। পাঁচ লাখ এলে খানিক সুসার হয়।”

ছেলে দুটোকে দেখে চোখ ফেটে জল আসছিল নন্দলালের। এদের জন্মাতে দেখেছেন। অসহায় বাচ্চা দুটো দীর্ঘ পথের শ্রমে ঘুমিয়ে পড়েছে।

“বাপু, সুধীর।”

“আজ্ঞে।”

“ওদের বদলে আমাকে বলি দিলে হয় না?”

“তা কি আর হয় না? কিন্তু তা হলে উচ্ছ্বঘ্ন করবে কে? ঠাকুরমশাই, মায়াদয়া কি আর আমাদের মধ্যেও নেই? তবে কিনা, চাচা, আপন প্রাণ বাঁচা। জন্ম-মৃত্যু কি আমাদের হাতে, বলুন!”

নন্দলাল বিড়বিড় করে বললেন, “তোমার মৃত্যুটা আমার হাতে থাকলে বড় ভাল হত।”

“কিছু বললেন ঠাকুরমশাই?”

“না হে। ইষ্টনাম জপ করছি।”

“হ্যাঁ, হ্যাঁ, কষে ইষ্টনাম করুন তো। দুনিয়াটা পাপে যে একেবারে ভরে উঠল ঠাকুরমশাই। ইষ্টনাম হচ্ছে বঁটার মতো, পাপ-তাপের জঞ্জাল সব ঝেটিয়ে সাফ করে দেয়। বেশ চেপে ইষ্টনামটা চালিয়ে যান।”

বকরাক্ষসের মতো নকুল সর্দার গাছতলায় বসে একটা শিরীষ কাগজে খাঁড়ার ধার তুলছে। মুখে একটা লোল হাসি। নরখাদকই বটে। মাঝে-মাঝে চোখ তুলে যখন এধার-ওধার তাকাচ্ছে তখন ওর চোখ থেকে যেন একটা ঝলকানি বেরিয়ে আসছে। কেন যে নকুল সর্দার নাম ভাঁড়িয়ে রাঘব চৌধুরীর বাড়িতে ঢুকেছিল তা এখন খানিকটা বুঝতে পারছেন নন্দলাল। এদের কাজ খুব পাকা। বাড়িতে লোক ঢুকিয়ে পাহারার ব্যবস্থা কেমন, লড়াই দিতে পারবে কি না, রাস্তা আছে কি না তা জেনে নিয়ে তবে কাজে নেমেছে। রাঘবের বাড়ি হল খোলা হাট, সেখান থেকে ছেলে চুরি করা কোনও কঠিন কাজ নয়।

একটা দানো এসে হাতজোড় করে বলল, “ঠাকুরমশাই, আর দেরি হলে যে লগ্ন পেরিয়ে যাবে।”

“এই যে বাপু, যাচ্ছি। হাতপায়ের কাঁপুনিই যে থামতে চাইছে না হে।”

‘ভয় পাবেন না ঠাকুরমশাই। পুজোটা হয়ে যাক, তারপর সারারাত বিশ্রাম করার সময় পাবেন। পুরু গদিওলা বিছানা করে রাখা হয়েছে আপনার জন্য।”

নন্দলাল জপ করতে করতে শান্ত হলেন। হাতমুখ ধুয়ে পুজোর আসনেও বসলেন। চারদিকে ঢাক ঢোল কাঁসি বাজছে। নন্দলাল মন্ত্র-ট ভুলে খুব তাড়াতাড়ি একটা মতলব আঁটছিলেন। কিন্তু জুতমতো কোনও মতলবও আসছে না মাথায়। দুঃখে ক্ষোভে বারবার চোখে জল আসছে।

“বলি ওহে নন্দ!”

নন্দলাল বোজা চোখ খুলে অবাক হয়ে চারদিকে তাকালেন। ঠিক তাঁর গা ঘেঁষে পিছনে একজন বুড়োমানুষ উবু হয়ে বসা। পরনে মোটা আটহাতি ধুতি, গায়ে বেনিয়ান, সাদা ছুঁড়ো গোঁফ, মাথায় কাঁচাপাকা চুল।

নন্দলাল অবাক হয়ে বললেন, “আপনি কে?”

“আমি হলুম পীতাম্বরমশাই। রাঘব চৌধুরীর ঊর্ধ্বতন ষষ্ঠ পুরুষ।”

নন্দলালের গায়ে কাঁটা দিল। “ঘাবড়ে যেও না। পুজোটা একটু সময় নিয়ে করো।”

“যে আজ্ঞে। বড় বিপদ যাচ্ছে পীতাম্বরমশাই।”

“বিপদ বলে বিপদ! তবে ভরসা রাখো৷ পুজোটা চালিয়ে যাও। ওরা তাড়া দিলে বোলো, এ বড় সাঙ্ঘাতিক পুজো। কোনও অঙ্গহানি হলে উলটো ফল ফলবে। আর কিছু ভয় না পাক, পুজোআচ্চাকে খুব ভয় পায়।”

“উপায় হবে বলছেন!”

“না হলে দেড়শো বছরের আলিস্যি ঝেড়ে কি এতদুর ছুটে আসতুম হে? দিব্যি শুয়েবসে সময় কাটছিল, ঝামেলা পাকিয়ে ওঠায় এই দৌড়ঝাঁপের মধ্যে পড়েছি।”

হঠাৎ একটা বাজখাঁই গলা বলে উঠল, “এই যে পুরুতমশাই, পুজো আর কতক্ষণ চলবে? বলিটা দিয়ে না ফেললে কোথায় আবার কী বাধা পড়ে কে জানে!”

পিছনপানে চেয়ে নকুল সর্দারের হাতে লকলকে খাঁড়াটা দেখে চোখ বুজে ফেললেন নন্দলাল। তারপর হঠাৎ বেশ রাগের গলায় বললেন, “দিলে তো মন্তরে একটা বাধা! আবার নতুন করে শুরু করতে হবে। বলি এ কি ছেলের হাতের মোয়া নাকি হে! কাঁচাখেগো দেবতা বলে কথা! একটু এদিক-ওদিক হলে রক্ষে আছে? যাও যাও, এখন আমাকে বিরক্ত কোরো না।”

নকুল একটু মিইয়ে গিয়ে বলল, “আহা, বলিটা আগেভাগেই হয়ে যাক না। তারপর সারারাত পুজো চালিয়ে যান, ক্ষতি নেই!”

“তা হলে বাপু, তুমিই বরং পুজোয় বোসস। আমি উঠছি।”

ল্যাংড়া শীতল একটু দূরে বসে ছিল। পেল্লায় একটা ধমক মেরে বলল, “অ্যাই নোকলো! তোর অত সর্দারির দরকার কী? পুজোআচ্চার কিছু বুঝিস?”

নকুল একটু দমে গিয়ে বলল, “এই পুরুতটা একটু খিটকেলে আছে।”

“না, না, এ ভাল পুরুত। সবাই বলে নন্দঠাকুর পুজো করলে ভগবান যেন কথা কয়।”

নকুল তার জায়গায় গিয়ে বসল। নন্দলাল হাঁফ ছাড়লেন।

কে একজন হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠল, “আকাশে ওটা কী উড়ছে বলে তো? শকুন নাকি?”

আর একজন বলল, “কখনও শুনেছিস রাতে শকুন ওড়ে। অন্ধকারে দেখলিই বা কী করে?”

“আমি যে অন্ধকারেও দেখতে পাই। না, পাখি-টাখি নয়, তার চেয়ে বড় জিনিস।”

সবাই উধ্বমুখে কিছু একটা দেখছে। নন্দলাল তাকালেন না। কে জানে কী। তবে যাই হোক, ভগবানের আশীর্বাদে একটা গণ্ডগোল পাকিয়ে উঠলে ভালই হয়।

আর একজন চেঁচিয়ে বলল, “আমিও দেখতে পাচ্ছি। ওটা বোধ হয় একটা এরোপ্লেন।”

“দুর গাধা। এরোপ্লেন হলে শব্দ হবে না?”

“তাও তো বটে!” একে একে সবাই দেখতে পেল। একটা গুঞ্জন আর চেঁচামেচিও ছড়িয়ে পড়তে লাগল।

“উরেব্বাস! এ যে লম্বা একটা জিনিস। তাতে কী যেন আছে। চক্কর মারছে।”

গভীর বিকট গলায় ল্যাংড়া শীতল হাঁক মেরে বলল, “সবাই অস্তর হাতে নে। খুব হুঁশিয়ার! একটা ষড়যন্ত্র আছে বলে মনে হচ্ছে।”

নন্দলাল হঠাৎ আর্তনাদ করে বললেন, “সর্বনাশ! ও কাজও কোরো না হে! পুজোর মন্ত্র দেবতাদের পায়ে পৌঁছলে তাঁরা সব পুষ্পক বিমানে যজ্ঞস্থলে এসে হাজির হন। অস্ত্র দেখলে কুপিত হবেন। ওসব লুকিয়ে ফেলো।”

দানবেরা মুহূর্তে স্থির হয়ে গেল। শীতল বলল, “কোনও বিপদ নয় তো ঠাকুরমশাই?”

“আরে না। আজ পুজো সার্থক হয়েছে। অস্ত্রশস্ত্র সব দূরে ফেলে দিয়ে হাতজোড় করে বসে আমার সঙ্গে সঙ্গে স্তব করতে থাকো। না হলে সব পণ্ড হবে।”

ডাকাতরা ফাঁপরে পড়ে গেল। ঠিক বিশ্বাসও করছে না, আবার দোটানাতেও পড়েছে।

শীতলই হুকুম দিল, “ঠাকুরমশাই যা বলছেন তাই কর রে তোরা।”

সবাই ঝপাঝপ অস্ত্রশস্ত্র ফেলে দিল। তারপর করজোড়ে স্তব করতেও বসে গেল। নন্দলাল তাদের তাণ্ডব স্ত্রোত্র পাঠ করাতে লাগলেন। যদি সত্যিই কেউ বা কিছু এসে থাকে, তবে তাদের নিরাপদে নেমে আসা দরকার। তাণ্ডব স্তোত্র লম্বা জিনিস। সময় লাগছিল।

ঠিক এই সময়ে সাঁই সাঁই শব্দ করে হলধরের উড়ুক্কু বঁটা তিন মূর্তিমানকে নিয়ে নেমে এল। হাবু দাস লাফ দিয়ে নেমেই চিৎকার করে উঠল, “কই, কোথায় সেই শয়তানটা?”

গোলাপ রায় অবাক হয়ে বলে, “এখানে শয়তানের অভাব কী গো হাবুদাদা? এ তো শয়তানের একেবারে হাট বসে গেছে! তুমি যাকে খুঁজছ সে ওই যে গাছতলায় খাঁড়া হাতে বসে আছে।”

হাবু দাস চোখের পলকে একটা ঘূর্ণিঝড়ের মতো গিয়ে নকুল সর্দারের ওপর পড়ল। নকুল বিস্ময়ে হাঁ করে ছিল। ওই হাঁ নিয়েই পর পর দুটো রদ্দা খেয়ে জমি ধরে নিল।

তারপর যে কাণ্ড হতে লাগল তা অবিশ্বাস্য। দানোরা কেউ হাত তোলারও সময় পেল না। হাবু-ঘূর্ণিতে তারা খড়কুটোর মতো উড়ে যেতে লাগল।

তারপর গদাম গদাম করে ছিটকে ছিটকে পড়তে লাগল এখানে সেখানে।

শীতল পালানোর চেষ্টায় ছিল। হাবু তার ঠ্যাং ধরে তুলে কয়েকবার ঘুরিয়ে পাক মেরে ছুঁড়ে ফেলে দিল মাটিতে। শীতল অজ্ঞান হয়ে লক্ষ্মী ছেলের মতো চুপটি করে পড়ে রইল।

লড়াই শেষ।

.

হলধরের উড়ুক্কু বঁটাকে কয়েকবার খেপ মারতে হল। প্রথম খেপে বাড়ি ফিরল রুইতন আর হরতন। একে একে ঠাকুরমশাই নন্দলাল, গোলাপ রায়, হাবু দাস। এবং সেইসঙ্গে অচেতন কদম কোঙার ওরফে নকুল সর্দারও।

নন্দলাল আতঙ্কিত হয়ে বললেন, “ওরে ওটাকে এনেছিস কেন? ও যে সব্বোনেশে লোক!”

হাবু বলল, “বহুকাল পরে লড়াই করে গায়ে হাতে বড্ড ব্যথা হয়েছে মশাই। তাই এটাকে নিয়ে এসেছি। হাত পা টিপে দেবে। ভয় পাবেন না। এর ওষুধ আমার জানা আছে।”

তা কথাটা মিথ্যেও নয়। দেখা গেল, নকুল সর্দার আর আগের মতো নেই। ভারী ভালমানুষ হয়ে গেছে সে। হাবুর গা-হাত-পা টিপে দেয়। তার কাছে কুস্তির প্যাঁচও শেখে, ফাঁইফরমাশ খাটে।

চোখের চাউনিটা একদম গরুর মতো ঠাণ্ডা হয়ে গেছে।

এ বাড়িতে এখন প্রায়ই আন্নাকালী দেব্যা, পীতাম্বরমশাই, আর পঞ্চা বিশ্বাসকে দেখা যায়। কেউ ভয় পায় না বটে, তবে আন্নাকালী দেব্যার শাসনে এখন আর অনাচার হওয়ার জো নেই। দু’বেলা গোবরছড়া গঙ্গাজল দিতে হয় বাড়িতে, তুলসীমঞ্চে প্রদীপ জ্বলে, শাঁখে ফুঁ।

হলধরের উড়ুক্কু ঝাঁটায় চেপে আজকাল রাঘব বিকেলে বেড়াতে বেরোন, নন্দলাল মাঝে মাঝে যজমান বাড়ি যান, রুইতন আর হরতন বন্ধুদের নিয়ে হইচই করে চড়ুইভাতি করতেও যায়।

লোকমুখে শোনা যায়, ল্যাংড়া শীতলের দল ভেঙে গেছে। শীতল সাধু হয়ে গেছে। দু-চারজন বৈষ্ণবমন্ত্রে দীক্ষা নিয়ে মাধুকরী করে বেড়ায়, কেউ চাষবাসে মন দিয়েছে, কেউ যাত্রার দলে নাম লিখিয়েছে।

তা সে যাই হোক, মোট কথা, হাট গোবিন্দপুরে এখন অখণ্ড শান্তি বিরাজ করছে।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7
Pages ( 7 of 7 ): « পূর্ববর্তী1 ... 56 7

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress