Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » রাঘববাবুর বাড়ি || Shirshendu Mukhopadhyay » Page 4

রাঘববাবুর বাড়ি || Shirshendu Mukhopadhyay

অস্বস্তিটা যে কোথায় হচ্ছে

অস্বস্তিটা যে কোথায় হচ্ছে তা বুঝতে পারছিলেন না নন্দলাল। তবে হচ্ছে। কখনও মনে হচ্ছে মাথায়, কখনও ভাবছেন বুকে, কখনও বা পেটে। অস্বস্তিটা যেন একটা ডেলা পাকিয়ে শরীরের এখানে ওখানে ইচ্ছেমতো ঘুরে বেড়াচ্ছে। শুয়ে বসে কিছুতেই আরাম হচ্ছে না।

দুপুরে হরকালী কোবরেজের বাড়িতে হানা দিলেন।

হরকালী উঠোনে তাঁর ওষুধের বড়ি রোদে শুকোতে দিয়ে জলচৌকি পেতে বসে একটা লাঠি হাতে কাকপক্ষী তাড়াচ্ছেন। মাথায় ভাঁজ করা ভেজা গামছা।

“বলি, ওহে হরকালী!”

“নন্দলাল যে!”

“তোমার কোবরেজি বিদ্যের ওপর যদিও আমার আস্থা নেই, তবু নাড়িটা একটু দেখো তো! সকাল থেকে একটা অস্বস্তি হচ্ছে।”

“অস্বস্তি হচ্ছে! বলি ব্রাহ্মণভোজনের নেমন্তন্ন খেয়েছ নাকি কোথাও?”

“আরে না, আজকাল কি আর মানুষের দেবদ্বিজে সেরকম ভক্তি আছে?”

“বলি ফলারটলার সাঁটাওনি তো?”

“আরে না রে ভাই। সেসব নয়। সকালে মর্কটের মতো একটা লোকের মুখদর্শন করার পর থেকেই অস্বস্তিটা হচ্ছে বলে মনে হয়। তা তোমার আয়ুর্বেদে কী বলে হে? দর্শন শ্রবণ থেকেও কি মানুষের রোগভোগ হতে পারে?”

“তা হবে না কেন? খুব হয়। যত রোগের গোড়াই তো মন। বিকট গন্ধ শুকলে, ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখলে, বিদঘুঁটে শব্দ শুনলে নানারকম রোগভোগ হতে পারে। এসব হলে মন বিকল হয়ে যায় বলে শাস্ত্রে নানারকম প্রায়শ্চিত্তের বিধানও আছে। প্রায়শ্চিত্ত মানে পুনরায় চিত্তে গমন। তা মর্কটটা কে?”

“সেইটেই তো হয়েছে সমস্যা। মর্কটটাকে যে আমি কোথায় দেখেছি তা মনে করতে পারছি না। অথচ আমার স্মৃতিশক্তি তো দুর্বল নয়। আর সেইজন্যই সকাল থেকে অস্বস্তিটা হচ্ছে বলে মনে হয়।”

হরকালী খুব মন দিয়ে চোখ বুজে অনেকক্ষণ ধরে নন্দলালের নাড়ি দেখে বললেন, “এ তো উধ্ববায়ু বলে মনে হচ্ছে। বায়ু উধ্বগামী হলে অনেক সময়ে সাময়িক স্মৃতিভ্রংশের মতো হয়। গুরুতর কিছু নয়। তালুতে একটু মধ্যমনারায়ণ তেল ঠেসে পুকুরে ভাল করে ডুব দিয়ে স্নান করে ফেলো গে৷”

তাও করলেন নন্দলাল। কিন্তু তেমন স্বস্তি বোধ করলেন না। দুপুরে খেয়েদেয়ে উঠে নন্দলাল সবে একটু শুয়েছেন, অমনি নাতি এসে বায়না ধরল, “ও দাদু, আজ আমরা পুজো-পুজো খেলব যে, তোমার ভেঁড়া নামাবলীটা দাও।”

নন্দলাল বললেন, “পুজো-পুজো খেলবে বুঝি? তা বেশ তো! আজ কী পুজো হচ্ছে তোমাদের?”

“শ্মশানকালী।”

“ও বাবা! তা হলে তো গুরুতর ব্যাপার।”

নাতি গম্ভীর মুখে বলল, “বলিও হবে।”

“বলি! বাপ রে! তা কী বলি দেবে ভাই?”

“মানকচু। গোবিন্দ এই অ্যাত বড় দা এনেছে।”

মাথার ভিতর কী যেন একটা টিকটিক করছে নন্দলালের। অস্বস্তিটাও যেন দ্বিগুণ চৌগুণ হয়ে গেল। তাই তো! এরকম হচ্ছে কেন? নন্দলাল ফের বালিশে মাথা রাখতে গিয়ে ধড়মড় করে উঠে বসলেন।

মনে পড়ে গেছে! মনে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে অস্বস্তিটাও উধাও হয়ে গেল।

বছরখানেক আগে এক সকালে একটা লোক এসে হাজির। ভারী বিনয়ী ভাব। রোগা চেহারা, মুখোনা সরু, চোখে ধূর্তামি। নাকের নীচে একফালি সূক্ষ্ম গোঁফ আছে, মাথায় লম্বা চুল।

“পেন্নাম হই ঠাকুরমশাই। আমার নাম সুধীর বিশ্বাস। বড্ড ঠেকায় পড়ে এসেছি। কাজটা একটু উদ্ধার না করে দিলেই নয়।”

লোকটাকে দেখে নন্দলালের বিশেষ পছন্দ হল না। তবু মোলায়েম গলাতেই বললেন, “কী ব্যাপার বাপু?”

“আজ রাতে আমাদের শ্মশানকালী পুজোটা করে দিতে হবে ঠাকুরমশাই।”

“কোথায় পুজো?”

“আগে বিদ্যেধরী পেরোলেই নবগ্রাম। তার কাছেই। আজ্ঞে, আমরাই এসে নিয়ে যাব। প্রণামী দক্ষিণা যা চাইবেন সব দেওয়া হবে।”

“ওরে বাপু, ওঠ ছুঁড়ি তোর বিয়ে বলে হুড়ো দিলেই তো হবে না। আমারও পাঁচটা কাজ আছে।”

“দোহাই ঠাকুরমশাই, আমাকে ফিরিয়ে দেবেন না। সব আয়োজন পণ্ড হবে। বড় আশা নিয়ে এসেছি। যাঁর পুজো করার কথা ছিল কাল থেকে তাঁর ভেদবমি হচ্ছে। শীতলবাবু তো খুবই ভেঙে পড়েছেন।”

“শীতলবাবুটি কে?”

“আজ্ঞে সবাই তাঁকে ল্যাংড়া শীতল বলেই জানে। গোটা পরগনা একডাকে চেনে।”

“কই বাপু, নামটা শুনেছি বলে তো মনে পড়ছে না!”

“আজ্ঞে, বিদ্যেধরীর ওপারেই তাঁর কাজকারবার। এপারে তাঁর নামটা বিশেষ ছড়ায়নি। ভারী দরাজ হাতের মানুষ।”

“তা আমি ছাড়া কি আর পুরুত নেই হে!”

“কী যে বলেন ঠাকুরমশাই! পুরুতের অভাব কী? তবে সবাই একবাক্যে বলল, ওহে বাপু, পুরুতের মতো পুরুত না হলে কালীপুজো করাই উচিত নয়। শ্মশানকালী কাঁচাখেকো দেবতা। মুরুব্বিরা একবাক্যে আপনার কথাই বলছে যে! শীতলবাবু এই আড়াইশোটি টাকা অগ্রিম পাঠিয়েছেন। বাকিটা পুজোর পর।”

গাঁ-গঞ্জের পক্ষে টাকাটা বেশ ভালই। একটু দোনোমোনো করে নন্দলাল রাজি হয়ে গেলেন।

লোকটা বলল, “বেলা তিনটে নাগাদ গোরুর গাড়ি চলে আসবে ঠাকুরমশাই। বিদ্যেধরীতে নৌকো তৈরি থাকবে। কোনও চিন্তা করবেন না। পুজো হয়ে গেলেই আবার ফিরিয়ে দিয়ে যাব। শীতলবাবুর কথার নড়চড় হয় না।”

তা নড়চড় হল না ঠিকই, বেলা তিনটে তো ঠিক তিনটের সময়েই দিব্যি ঝকঝকে গোরুর গাড়ি এসে হাজির। নতুন ছই লাগানো। ভিতরে পুরু খড় বিছিয়ে তার ওপর তোশক পেতে এবং তারও ওপর ফরসা চাঁদর বিছিয়ে বেশ ভাল ব্যবস্থা করা হয়েছে। সুধীর বিশ্বাস সারাক্ষণ নানারকম বিনয় বচন আওড়াতে লাগল।

বিদ্যেধরীতে বেশ বড় একখানা নৌকো বাঁধা ছিল। তাতেও আরামের ব্যবস্থা। নন্দলাল খুশিই হয়েছিলেন। আজকাল ব্রাহ্মণ বা পুরোহিতের মান মর্যাদা ক’জনাই বা বোঝে?

নবগ্রামের ঘাটে নামার পর পালকির ব্যবস্থা। সেটাও কিন্তু অস্বাভাবিক লাগেনি নন্দলালের কাছে। কিন্তু পালকিতে যেতে যেতে ক্রমে বুঝতে পারছিলেন যে, পথ আর ফুরোচ্ছে না এবং তাঁকে বেশ গভীর জঙ্গলে নিয়ে আসা হয়েছে।

“ওহে সুধীর, এ যে জঙ্গল!”

“যে আজ্ঞে। এখানেই শীতলবাবুর আস্তানা কিনা।” নন্দলাল ভয়ে আর প্রশ্ন করতে সাহস পেলেন না। অজ্ঞাতকুলশীলের কথায় রাজি হওয়া যে ঠিক হয়নি তাও বুঝলেন। কিন্তু বসে বসে ইষ্টনাম জপ করা ছাড়া আর কীই বা করবেন?

লোকগুলো গভীর জঙ্গলের মধ্যে একটা চাতালের মতো জায়গায় তাঁকে নিয়ে এল। সেখানেই পুজোর আয়োজন হয়েছে। চারদিকে মশালের আলো। পালকি থামতেই বিশ-পঁচিশজন ষণ্ডামাকা লোক এসে ঘিরে ফেলল। নন্দলাল অভিজ্ঞ লোক। বুঝলেন এরা মানুষ সুবিধের নয়। তবে তারা নন্দলালকে খুবই খাতির করতে লাগল। ষণ্ডাদের মধ্যেও যার চেহারা আরও ভয়ঙ্কর সেই লোকটা যখন লেংচে লেংচে এসে তাঁকে প্রণাম করল, তখন নন্দলাল বুঝলেন, এই হল ল্যাংড়া শীতল।

শীতল গম্ভীর মানুষ। গলার স্বর বাজের মতো। বলল, “ঠাকুরমশাই, আজ পুজোটা প্রাণ দিয়ে করবেন। আমার একটা রিষ্টি আছে।”

নন্দলালের একটা গুণ হল, বিপদে পড়লে মাথাটা ঠাণ্ডা হয়। তিনি ঘাবড়ালেন না। কালীপুজো মেলাই করেছেন, কাজেই ও নিয়ে চিন্তা নেই। পুজোর আয়োজনে বসে গেলেন। কিন্তু একটা সন্দেহজনক ফিসফাস কানে আসছিল। প্রথমটায় ভাবলেন ভুল শুনেছেন। কিন্তু বারবার কথাটা কানে আসছিল বলে হঠাৎ সচকিত হলেন। আজ নরবলি হবে! আজ নরবলি হবে!’ শুনে তাঁর মেরুদণ্ড বেয়ে হিমশীতল স্রোত নেমে গেল। সর্বনাশ! এ কাদের পাল্লায় পড়লেন তিনি! তাঁর শরীরে কাঁপুনি উঠে যাচ্ছিল।”

সুধীর বিশ্বাস এক ফাঁকে এসে কানে কানে বলল, “ঠাকুরমশাই, আপনাকে আগে বলা হয়নি। বললে হয়তো আসতে সঙ্কোচ বোধ করতেন।”

“কী কথা বাপু?”

“এই আজ্ঞে, আমাদের শীতলবাবুর রিষ্টি আছে তো! খুব নাকি খারাপ ফাঁড়া। তাই এক জ্যোতিষী নিদান দিয়েছে, নরবলি দিলে রিষ্টি কেটে যাবে।”

নন্দলাল কাঁপতে কাঁপতে বললেন, “বাপু, সে আমার দ্বারা হওয়ার নয়।”

“না ঠাকুরমশাই, বলি তো আর আপনাকে দিতে হবে না। আপনি শুধু উচ্ছ্বগ্নটা করে দেবেন। আমাদের বলি দেওয়ার ভাল লোক আছে। ওই যে দেখুন না, শিমুল গাছের তলায় বসে আছে, ওর নাম হল নকুল সর্দার। খুব ডাকাবুকো লোক। শীতলবাবুর ডান হাত। মাথাটা একটু গরম, তা ছাড়া আর কোনও গণ্ডগোল নেই।”

নকুল সর্দারকে দেখে নন্দলালের মনে হয়েছিল, এরকম হৃদয়হীন লোক তিনি জীবনে দেখেননি। যেমন সাঙ্ঘাতিক ঠাণ্ডা চোখ, তেমনি দশাসই চেহারা। হাতে একখানা মস্ত খাঁড়া নিয়ে বসে আছে। স্থির, পাথরের মতো। নন্দলাল নকুলের দিকে একবারের বেশি দু’বার তাকাতে পারেননি।

পুজো সেদিন তাঁর মাথায় উঠেছিল। অং বং করে কী মন্ত্র পড়েছিলেন কে জানে। তারপর যখন বলি দেওয়ার জন্য হাত-পা বাঁধা একটা বছর পনেরো-ষোলো বয়সের ছেলেকে এনে ধড়াস করে হাড়িকাঠের সামনে ফেলা হল, তখন নন্দলাল যে ভয়ে অজ্ঞান হয়ে যাননি সেটাই ভাগ্যের কথা।

কিন্তু নন্দলাল নিজেকে সামলে নিলেন। মনটাকে শক্ত করলেন, ভেবে দেখলেন, এই পরিস্থিতিতে বুদ্ধি ঠিক না থাকলে সর্বনাশ!

মনে মনে বুদ্ধি আঁটতে আঁটতে পুজোটা সেরে নিলেন কোনওক্রমে। তারপর বলি উৎসর্গ করার সময়ে বেশ শান্তভাবেই হাত-পা বাঁধা ছেলেটার কপালে সিঁদুর পরালেন। বললেন, “ওহে, নিখুঁত কিনা দেখে এনেছে তো! খুঁত থাকলে কিন্তু বলি হয় না।”

সুধীর বিশ্বাস তাড়াতাড়ি এগিয়ে এসে বলল, “আজ্ঞে ঠাকুরমশাই, দেখেশুনেই এনেছি। কোনও খুঁত নেই। হাত-পা সব ঠিকঠাক আছে।”

নন্দলাল গম্ভীর হয়ে বললেন, “তবু ভাল করে পরখ করে নেওয়া ভাল। খুঁত থাকলে বলির উদ্দেশ্য তো সিদ্ধ হবেই না, উলটে অভিশাপ লেগে যাবে। ওহে বাপু, কেউ একটা মশাল এনে তুলে ধরো দেখি!”

তাড়াতাড়ি চার-পাঁচটা মশাল এগিয়ে এল। উবু হয়ে বসে নন্দলাল ছেলেটার অসহায় মুখটা দেখতে দেখতে হঠাৎ দ্রুকুটি করে বলে উঠলেন, “কী সর্বনাশ! এর যে কষের একটা দাঁত নেই!”

কথাটা ডাহা বানানো। কষের দাঁত আছে কি নেই তা নন্দলাল দেখতেই পাননি। আন্দাজে একটা ঢিল ছুড়লেন মাত্র।

সঙ্গে সঙ্গে চারদিকে একটা গর্জন উঠল, “অ্যাঁ! কী সর্বনাশ! দাঁত নেই?”

নন্দলাল দুঃখিতভাবে মাথা নেড়ে বললেন, “না হে, এ বলি দিলে মহাপাতক হয়ে যাবে।”

চারদিকে একটা শোরগোল উঠল। কেউ আর ছেলেটার দাঁত পরীক্ষা করার ঝামেলায় গেল না। নকুল সর্দার একটা হুঙ্কার দিয়ে উঠে এসে সুধীর বিশ্বাসের ঘাড়ে একটা বিশাল থাবা মেরে বলল, “আজ এই শয়তানটাকেও তা হলে বলি দেব।”

চারদিক থেকে সুধীর বিশ্বাসের ওপরেই আক্রোশটা এসে পড়ল। বেশ কয়েকটা চড়থাপ্পড় খেয়ে পিছু হটতে হল তাকে।

শীতল বলল, “তা হলে কী হবে ঠাকুরমশাই? পুজো কি পণ্ড হয়ে গেল?”

নন্দলাল মিষ্টি হেসে বললেন, “ওরে বাবা, পঞ্চাশ বছর ধরে পুজো করে আসছি, আমার পুজো কি পণ্ড হয়?”

“কিন্তু বলি হল না যে!”

“তারও ব্যবস্থা আছে। রোসো বাপু, পুঁথি খুলে দেখিয়ে দিচ্ছি।”

এই বলে পুরোহিত সংহিতাখানা খুলে যে শ্লোকটা বেরোল সেটাই খানিকটা পড়ে বললেন, “বুঝলে তো! নরবলি স্থলে ছাগ ও মহিষ বলি স্বচ্ছন্দে চলতে পারে। ফল একই হবে।”

“কিন্তু জ্যোতিষী যে বলল, নরবলি ছাড়া হবে না!”

“পূজা-পাঠ-হোম-যজ্ঞের জটিল পদ্ধতি ও নিয়ম তো জ্যোতিষীর জানার কথা নয় বাবা। জ্যোতিষশাস্ত্র পার হয়ে তবে তো সংহিতার রাজ্য। জ্যোতিষীরা নিদান দেয়, কিন্তু সেটা কার্যকর তো করে পুরোহিতরা। পুর বা জনগণের হিত বা মঙ্গল যারা করে তারাই তো পুরোহিত।”

“তা হলে দোষ হবে না বলছেন?”

“কিছু না, কিছু না। দোষ হলে আমি দায়ী থাকব। ও ছোঁড়াটাকে আটকে রেখে আর কর্মফল খারাপ কোরো না। ওকে বাড়ি পৌঁছে দাও, আর একটা পাঁঠা নিয়ে এসো।”

তাই হল। ছেলেটার বাঁধন খুলে দুটো ভীমাকৃতি লোক টানতে টানতে নিয়ে চলে গেল। নিখুঁত পাঁঠা জোগাড় করতে না পেরে কাছাকাছি বাথান থেকে একটা মোষ নিয়ে আসা হল। বলির সময় নন্দলাল চোখ বুজে রইলেন। মনে মনে ভাবলেন, এতবুমন্দের ভাল।

এক রাতে এক ঝলক দেখা, তাও অনেক লোকের মধ্যে; তবু নকুল সর্দারকে ভুলে যাননি নন্দলাল। এতদিন বাদে দেখে হঠাৎ চিনতে পারেননি ঠিকই, কিন্তু এখন আর সন্দেহ নেই। রাঘববাবুর বাড়িতে কদম কোঙার নামে যাকে দেখেছেন, সে আসলে নকুল সর্দার।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress