Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » রাঘববাবুর বাড়ি || Shirshendu Mukhopadhyay » Page 3

রাঘববাবুর বাড়ি || Shirshendu Mukhopadhyay

রাঘববাবুর বাঁ কান কাঁপলে

রাঘববাবুর বাঁ কান কাঁপলেই বুঝতে হবে বিপদ আসছে। তেরো বছর আগে যখন প্রথমবার তাঁর বাঁ কান কেঁপেছিল সেবারই শ্বশুরবাড়িতে কাঁঠাল খেয়ে তাঁর কলেরা হয়। বছর দুই বাদে ফের একদিন বাঁ কান কেঁপে উঠেছিল, আর সেবারই হিমে ডাকাত হানা দিয়ে তাঁর টাকাপয়সা সোনাদানা সব চেঁছেছে নিয়ে তো যায়ই, উপরন্তু রাঘববাবুর খুড়োমশাই অবসরপ্রাপ্ত দেশনেতা মাধব চৌধুরী ডাকাতির সময় ডাকাতদের উদ্দেশ্যে দেশের নৈতিক অধঃপতন বিষয়ে একটা সময়োচিত নাতিদীর্ঘ বক্তৃতা দিচ্ছিলেন বলে তাঁর পেটে একটা বল্লমের খোঁচাও মেরে যায়। সেই খোঁচা থেকেই কিনা কে জানে, খুড়োমশাই বাকি জীবন অম্লশূলে ভুগেছেন। এই ঘটনার চার বছর বাদে ফের এক সকালে রাঘববাবুর বাঁ কান নেচে উঠল এবং সেবার বাড়ির উঠোনে ‘নদের নিমাই’ যাত্রার আসরে ঝাড়বাতি ভেঙে পড়ে শচীমাতার নাক ফেটে গিয়েছিল বলে তিনি মামলা করে রাঘববাবুর কাছ থেকে মোটা খেসারত আদায় করেছিলেন। কারণ নাক ফেটে যাওয়ায় তিনি নাকি আর নাকিসুরে বিলাপ করতে পারতেন না এবং নাকিসুরের বিলাপ ছাড়া শচীমাতার পার্টে আর থাকেটা কী? এই তো বছরতিনেক আগে ফের ঘুমন্ত বাঁ কান হঠাৎ জেগে উঠেনড়াচড়া করে উঠল। সেবার বেয়াই রামশরণ সমাদ্দারের সঙ্গে দাবা খেলার সময় একটা কাঠপিঁপড়ে কামড়ে দেওয়ায় আত্মবিস্মৃত হয়ে রাঘববাবু ভুল করে মন্ত্রীকে আড়াই ঘরের চালে চেলে ফেলেছিলেন। এবং তাতে রামশরণের একটা বিপদজ্জনক গজ মারা পড়ে। রামশরণ সেটা বুঝতেও পারেননি। কিন্তু তাঁর ফাজিল ভাগ্নে ফটিক ভারী নিরীহ গলায় বলেছিল, তালুইমশাইয়ের চালটা দেখলে মামা? মন্ত্রীকে যে ঘোড়ার চালেও চালানো যায় ক’টা লোকই বা তা জানে! ওঁর কাছে অনেক কিছু শেখার আছে কিন্তু। কথাটা শুনে রামশরণ সচকিত হয়ে চালটা দেখে রেগে কাঁই হয়ে জলগ্রহণ না করে রাঘববাবুর বাড়ি থেকে সেই যে চলে গেলেন আজ অবধি আর এ-মুখো হননি। বউমাকে পর্যন্ত বাপের বাড়িতে আসতে দেননি।

তাই আজ সকালবেলায় দুর্গানাম করার সময় যখন টিকটিকি ডেকে উঠল, দুধের বাটিতে মাছি পড়ল এবং মনের ভুলে যখন উলটো গেঞ্জি পরে ফেললেন, তখনও রাঘববাবু ঘাবড়াননি। তার পরে যে ঘটনাটা ঘটল, সেটাই মারাত্মক। এ বাড়িতে প্রায়ই একটা গুণ্ডা এবং হিংস্র হুলো বেড়াল হানা দেয়। কেঁদো বাঘের মতো ডোরাকাটা চেহারা, আকারে চিতাবাঘের কাছাকাছি। সে কাউকেই বড় একটা পরোয়া করে না। কিন্তু বাড়ির মালিক রাঘববাবুর প্রতি তার তাচ্ছিল্য আরও বেশি। রাঘববাবু তাকে বহুবার ঠ্যাঙা নিয়ে তাড়া করেছেন। কিন্তু হুলোর কেশাগ্রও স্পর্শ করতে পারেননি। বরং হুলো একটু নিরাপদ দূরত্বে থেকে নিজের ভাষায় রাঘববাবুকে নানারকম ব্যঙ্গবিদ্রূপও করে থাকে। আজও হুলো যথারীতি তার নানারকম চোরা পথে বাড়িতে ঢুকেছে এবং ঝি মোক্ষদাকে বিকট মুখভঙ্গি করে ভয় দেখিয়ে প্রায় তার হাত থেকেই প্রকাণ্ড দুটো কই মাছ ছিনতাই করে নিয়ে যাচ্ছিল। হইহই শুনে রাঘববাবু যথারীতি ঠ্যাঙা নিয়ে হুলোকে তাড়া করলেন। কিন্তু আজকের দিনটা হুলোর ছিল না। বুদ্ধিভ্রংশ না হলে সে চোরকুঠুরিতে ঢুকতে যাবেই বা কেন? একটামাত্র দরজা ছাড়া চোরকুঠুরি থেকে বেরনোর পথ নেই। হুলো সেই কুঠুরিতে ঢুকতেই রাঘববাবু তার পিছু পিছু ঢুকে দরজা সেঁটে দিয়েছিলেন। খুব ফাঁদে পড়ে গিয়েছিল হুলো। রাঘববাবু তার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ঠ্যাঙা আস্ফালন করে একটু হেসে বললেন, “এবার তোর কী হবে রে হুলো! ঘুঘু দেখেছিস, ফাঁদ দেখিসনি তো! এবার তোর জারিজুরি শেষ। ইষ্টনাম জপ রে ব্যাটা, ইষ্টনাম জপ।”

হুলো তার নিজস্ব ভাষায় যা বলল তা অনুবাদ করলে দাঁড়ায়, “কেন কর্তাবাবু, মিছিমিছি ঝামেলা করছেন? বেড়াল বলে কি আর মানুষ নই মশাই! ওই যে কতগুলো অপোগণ্ড নিষ্কর্মা দু’ পেয়ে জীবকে পুষছেন, কই তাদের তো কিছু বলেন না! আমি তো তবু খেটে খাই। একটা মাছ কি একটু দুধ জোগাড় করতে কত মেহনত বলুন তো, প্রাণের ঝুঁকিও কি কম? এবারটা না হয় মাফ করে দিন।”

কথাগুলো যে রাঘববাবু একেবারেই বুঝতে পারলেন না, তা নয়। কিন্তু বুঝেও তিনি অবিচল গলায় বললেন, “তা হয় না হুলো, লোকে আমাকে কাপুরুষ বলবে।”

‘মরতে যদি হয় তবে আমি বীরের মতোই মরব কর্তামশাই। তবে মরার আগে আপনাকে একটা কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। বেড়াল হল মা-ষষ্ঠীর বাহন। বেড়াল মারা মহাপাপ। মারলে প্রায়শ্চিত্ত করতে হয়, তার অনেক খরচ এবং ঝামেলা।”

বজ্রগম্ভীর স্বরে রাঘববাবু বললেন, “আমি কুসংস্কারে বিশ্বাসী নই রে হুলো। ওসব বলে আমাকে ভড়কে দিতে পারবি না।”

“ভাল করে ভেবে দেখুন কর্তামশাই, মাত্র দুটো কইমাছের জন্য আপনি নরকের পথ পরিষ্কার করবেন কিনা। দুটো কইমাছের দাম মাত্র দেড় টাকা। এই সামান্য টাকার জন্য মহাপাতকী হওয়া কি ভাল? মাত্র দেড় টাকায় নরকের টিকিট?”

রাঘববাবু হুঙ্কার দিয়ে বললেন, “কে বলেছে দেড় টাকা? তুই কি সত্যযুগে আছিস নাকি রে হুলো? আমার হিসেবমতো ও দুটো কই মাছের দাম সাড়ে ছয় টাকার নীচে নয়।”

“কর্তামশাই, এখন জো পেয়ে যা খুশি বললেই তো হবে না। ঠিক আছে, আপনিও একটু নামুন, আমিও একটু উঠি। মাঝামাঝি একটা রফা হয়ে যাক।”

“কত?”

“সাড়ে তিনা।”

“না, সাড়ে চার।”

“তা হলে চারই থাক। আর চাপাচাপি করবেন না। এখন ভেবে দেখুন বছরে যার হেসেখেলে পাঁচ-সাত লাখ টাকা আয়, যার গোয়ালে আটটা দুধেল গাই, বছরে দেড়শো মন ধান, তেজারতির রোজগারের লেখাজোখা নেই, সেই মানুষের কাছে চারটে টাকা কোনও টাকা হল কর্তামশাই? চার টাকায় যে এক পো ডালও হয় না!”

হাঃ হাঃ করে হেসে রাঘববাবু বললেন, “তুই আমাকে বাজার দর শেখাচ্ছিস নাকি রে হুলো? বাজারে আমি নিজে যাই না বটে, কিন্তু দরদাম সব আমার মুখস্থ।”

“কিছু মনে করবেন না কর্তাবাবু, ভাববেন হয়তো কুচ্ছো গাইছি, কিন্তু আপনার বাজার সরকার খগেন দফাদার কিন্তু বাজারের পয়সা থেকে চুরি করে। আর শুধু খগেনই বা কেন, ওই যে আপনার পেয়ারের চাকর পাঁচু, সে তো প্রায় রোজই দুপুরে আপনার গড়গড়ায় চুরি করে তামাক খায়। নবকৃষ্ণ পাটাতনের জঞ্জাল সাফ করতে গিয়ে তিন-তিনটে মোহর পেয়েছিল, সেগুলো কি আপনাকে দিয়েছে? ছোট মুখে বড় কথা হয়ে যাবে, তবু অন্তিমকাল ঘনিয়ে আসছে বলেই সাহস করে বলে যাই। স্বয়ং গিন্নিমা তারাসুন্দরী দেবী পর্যন্ত আপনাকে না জানিয়ে গোপনে মেয়ের বাড়িতে পেল্লায় ভেট পাঠিয়েছেন, কাজটা কি তাঁর ঠিক হয়েছে বলুন! কে না জানে দাবার চালে একটু ভুল হওয়ায় আপনার বেয়াই রামশরণ সমাদ্দার আপনাকে অপমান করে গিয়েছিল এবং আপনাদের এখন মুখ দেখাদেখি নেই!”

“দ্যাখ হুলো, ওইসব বলে আমাকে ভেজাতে পারবি না। আজ কিন্তু আমি বজ্ৰাদপি কঠোর।”

“তা জানি কর্তামশাই। দুঃখ কী জানেন, বেড়ালের জন্য তো আর পেনাল কোড নেই। তাই হুলো হননের জন্য আপনার ফাঁসি হবে। কিন্তু হয়তো একদিন এই হুলোর জন্য আপনাকে হায় হায় করতে হবে। হয়তো হুলোকে আপনি ভুলে যেতে পারবেন না। চোর হোক, গুণ্ডা হোক, তবু হুলো যে আপনার কতবড় বন্ধু ছিল, তা একদিন আপনি বুঝবেন।”

“বিপাকে পড়লে অমন ভাল ভাল কথা সবাই বলে। কিন্তু আর সময় নেই রে হুলো। মনে মনে তৈরি হ, স্থির হয়ে দাঁড়া। এই দ্যাখ আসিছে নামিয়া ন্যায়ের দণ্ড, রুদ্র দীপ্ত মূর্তিমান…”।

“কিন্তু আপনিও মনে রাখবেন, যত বড় হও, তুমি তো মৃত্যুর চেয়ে বড় নও। আমি মৃত্যুর চেয়ে বড়, এই কথা বলে যাব আমি চলে। গুডবাই কর্তামশাই।”

উদ্যত ঠ্যাঙার সামনে অসহায় হুলো। রাঘববাবুর চোখে জিঘাংসা, হুলোর মুখে আর্তি। ঠিক এই নাটকীয় মুহূর্তে হঠাৎ রাঘববাবুর বাঁ কানটা সুড়সুড় করে উঠল। তারপর ফিসফিস করতে লাগল। বিপদ! বিপদ! ফিসফিসের পর থিরথির। তারপর একেবারে থরথর করে কেঁপে উঠল রাঘববাবুর বাঁ কান। তিনি ফ্যাকাসে হয়ে গেলেন। লক্ষণটা যে তাঁর খুবই চেনা। তাঁর শিথিল হাত থেকে ঠাস করে ঠ্যাঙাটা খসে পড়ল। তিনি ধীর পায়ে দরজা খুলে বেরিয়ে এলেন।

হুলো দু’খানা মাছ মুখে নিয়ে এক লাফে বেরিয়ে এসে দোতলার বারান্দার রেলিং টপকে পাশের দেওয়ালের ওপর গিয়ে উঠে পড়ল এবং সেখান থেকে রাঘববাবুর উদ্দেশে নানারকম ব্যঙ্গবিদ্রূপ বর্ষণ করতে লাগল। কিন্তু আজ আর সেদিকে ভ্রুক্ষেপও করলেন না রাঘববাবু। সোজা বৈঠকখানায় এসে ধপ করে নিজের গদি-আঁটা চেয়ারখানায় বসে খুব গভীর চিন্তায় মগ্ন হলেন।

ভাবনারই কথা কিনা। দুনিয়ায় অনেক ওলটপালট হয়ে যেতে পারে। যেমন, হয়তো রাত্রে রোদ উঠল, আর দিনে জ্যোৎস্না। জলের মাছ আকাশে উড়তে লাগল, চড়াইপাখি গিয়ে বাসা বাঁধল পুকুরের জলে। এমনও হয়তো দেখা যাবে যে, গ্রীষ্মকালে দুর্গাপুজো, মাঘ মাসে রথ আর ফায়ূনে অম্বুবাচী হচ্ছে। কে জানে হয়তো জষ্টিমাসে লোকে লেপ গায়ে দেবে, পৌষমাসে হাতপাখা নেড়ে খাবে বরফজল। ডাঙায় এরোপ্লেন ঘুরে বেড়ালে, আর আকাশে গোরুর গাড়ি উড়লেও অবিশ্বাসের কিছু নেই। কিন্তু তা। বলে রাঘববাবুর বাঁ কানের কথা কিন্তু মিথ্যে হওয়ার নয়। বিপদ আসছে। তবে সেটা কোথা দিয়ে কী রূপ ধরে আসে, সেটাই চিন্তার কথা।

আনমনে হাত বাড়াতেই তামাকের নলটা তাঁর হাতে চলে এল।

কিছুক্ষণ খুব নিবিড়ভাবে তামাক খেলেন রাঘববাবু। তারপর আপনমনে বলে উঠলেন, “খুবই চিন্তার কথা!”

সঙ্গে-সঙ্গে একটা প্রতিধ্বনি হল, “খুবই চিন্তার কথা।”

প্রতিধ্বনি শুনে একটু অবাক হলেন রাঘববাবু। কোথাও কোথাও প্রতিধ্বনি হয়, একথা তিনি জানেন। তাতে আপত্তির কিছু নেই। কিন্তু তাঁর যতদূর মনে পড়ছে এই বৈঠকখানায় তিনি কখনও প্রতিধ্বনি শোনেননি। তবে কি এতকাল ব্যাপারটা খেয়াল করেননি তিনি! একটু অবাক হয়ে নিজের হাতের তামাকের নলটিও দেখলেন রাঘববাবু। যতদূর জানেন, নবকৃষ্ণ বাড়ির লেপলোশক রোদে দিতে ছাদে বহাল আছে। সুতরাং নবকৃষ্ণর পক্ষে তামাক সেজে দেওয়া সম্ভব নয়। আর নবকৃষ্ণ ছাড়া তাঁর তামাক সাজার হুকুম আর কারও ওপর নেই। অথচ তিনি দিব্যি তামাক খাচ্ছেন! আরও একটু অবাক হয়ে তিনি হাতের নলটার দিকে চেয়ে বলে উঠলেন, “আমি তামাক খাচ্ছি!”

“আজ্ঞে, তামাক বলেই তো মনে হচ্ছে। অম্বুরি তামাকের গন্ধটাও ছেড়েছে ভাল।”

এবার সচকিত হয়ে পিছনে তাকিয়ে তিনি লোকটাকে দেখতে পেলেন। হাঁ করে চেয়ে থেকে বললেন, “তুমি কে বলল তো!”

“আজ্ঞে, অধমের নাম গোলাপ রায়। আপনারই চরণাশ্রিত। কর্তা কি চিনতে পারছেন না আমাকে?”

রাঘববাবু মাথাটাথা চুলকে বললেন, “কী জানো, এত লোক আমার চরণাশ্রিত যে, তাদের সবাইকে মনে রাখা মুশকিল।”

“তা তো হতেই পারে। আমি হলুম গে মকরধ্বজের গোলাপ রায়। বেশি নয়, মাত্র আড়াই লক্ষ লাইট ইয়ার দূরের লোক।”

“ও হ্যাঁ, মনে পড়েছে। তা বাপু, এখানে তোমার কোনও অসুবিধে হচ্ছে না তো! সব ঠিক আছে তো!”

“যে আজ্ঞে, অসুবিধে যা আছে তা গায়ে না মাখলেই হল। ধরুন, মকরধ্বজে আমরা সকালে জিলিপি আর লুচির জলখাবার খেতুম, এখানে রুটি আর কুমড়োর ঘ্যাঁট। মকরধ্বজে দুপুরে পোলাও মাংস আর পায়েস বাঁধা ছিল, এখানে ডাল ভাত ঘ্যাঁট আর মাছের ঝোল। আরও শুনবেন কি কর্তামশাই?”

“তা শুনতে তো মন্দ লাগবে না, বলে ফেলো।”

“রাতের খাবারটা মকরধ্বজে একটু ভারী রকমেরই হয়। একেবারে মোগলাই। বিরিয়ানির সঙ্গে তন্দুরি মুর্গি, পাকা মাছের কালিয়া, রোগন জুস, রেজালা, আলুবখরার চাটনি আর ক্ষীর। ফাঁকে ফাঁকে ছোটখাটো পদও থাকে। তা সেগুলোর কথা বলে আর ছুঁচো মেরে হাত গন্ধ করব না। সে তুলনায় এখানে রাতের খাবারটা বেশ হালকা, পেঁপের ঝোল আর ভাত।”

“তা হলে তো তোমার এখানে বেশ অসুবিধেই হচ্ছে হে!”

“না, কর্তামশাই, অসুবিধে কীসের? কথায় আছে পড়েছ মোগলের হাতে, খানা খেতে হবে সাথে। যখন যেমন, তখন তেমন। গুরুভোজন বাদ যাওয়ায় পেটের বিশ্রামও তো হচ্ছে।”

“তা বটে। তবে বাপু, তোমার তামাক সাজার হাতটা বেশ ভাল, বলতে কী আমাদের নবকৃষ্ণও এত ভাল সাজতে পারে না।”

“ওকথা বলে আর লজ্জা দেবেন না। দুটো কাজের কথা কইতে এসে দেখি আপনি খুব ভাবনায় পড়েছেন। তাই ভাবলুম ভাবনাচিন্তা করার সময় তামাক খুব কাজ দেয়।”

“বাঃ বাঃ, তোমার মাথায় তো বেশ ভাল ভাল ভাবনা আসে!”

মুখোনা করুণ করে গোলাপ রায় বলল, “আজ্ঞে, ওইটেই হয়েছে মুশকিল, মাথাই যে আমার শত্তুর। ভাল ভাল ভাবনাচিন্তা, মাপজোক আসে বলে এ মাথার জন্য লোকে লাখো লাখো টাকা দাম দিতে চায় বটে, কিন্তু তাতে শত্রুপক্ষের তো খুশি হওয়ার কথা নয়।

তাই তারা চায় আমাকে নিকেশ করতে। কর্তামশাই, ভাল মাথার যেমন দাম আছে, তেমনি আবার গুনোগারও আছে।”

রাঘব অবাক হয়ে বললেন, “কেন হে, তোমাকে নিকেশ করতে চায় কেন?”

“তাদের দোষ নেই কর্তামশাই, কারও বাড়া ভাতে ছাই দিলে বা মুখের গ্রাস কেড়ে নিলে নিকেশ তো করতে চাইবেই। গোলাপ রায়

যে তাদের পথের কাঁটা!”

“কেন হে, তুমি করেছটা কী?”

“সেটা আর ভেঙে বলতে বলবেন না কর্তামশাই। আমার বড় বিপদ। দু-চারদিনের মধ্যেই একটা এসপার-ওসপার হয়ে যাবে।

আর সেইজন্যই আপনার কাছে আসা।”

“তা বাপু, বিপদ বুঝলে পুলিশের কাছে যাচ্ছ না কেন? আমাদের গিরিধারী দারোগা তো দাপটের লোক।”

একটু বিজ্ঞের হাসি হেসে গোলাপ বলল, “দারোগা পুলিশের কর্ম নয় কর্তামশাই। সাধারণ চোর-ডাকাত-খুনি হলে কি আর ভাবনা ছিল! আপনার আশীর্বাদে ওসব ছোটখাটো অপরাধী গোলাপ রায়ের হাতের ময়লা। কিন্তু এরা অনেক উঁচু থাকের লোক। মকরধ্বজের উলটো গ্রহই হল চ্যবনপ্রাশ, সেখানে গিজগিজ করছে সব প্রতিভাবান শয়তান। তাদের সঙ্গে এঁটে ওঠা দায়! ফলে যে গন্ধমাদনটি এসেছে তাকে লক্ষ করেছেন তো? দেখবেন ডান কানটা বাঁ কানের চেয়ে ছোট। ওটাই হল চ্যবনপ্রাশের লোকদের লক্ষণ। কালও বুঝতে পারিনি বটে, কিন্তু আজ সকালের আলোয় ভাল করে লক্ষ করেই বুঝলাম, আমার শমন এসে গেছে।”

“কদম কোঙারের কথা বলছ নাকি হে? কিন্তু সে তো একজন সামান্য লেঠেল।”

“তাই বলেছে বুঝি? তা অমন কত কথাই বলবে। আসল কথা হল, লোকটা এসে গেছে। এখন হয় ও মরবে, না হয় আমি। আর সেইজন্য আপনার কাছে আসা।”

“তাই তো! তুমি তো বেশ চিন্তায় ফেলে দিলে হে!”

“নিজের প্রাণটা হাতে নিয়ে লোফালুফি করেই তো আমাকে বেঁচে থাকতে হয় কর্তামশাই! তাই বলছিলুম, গোলাপ রায় মরেছে শুনলেও দুঃখ করবেন না। এরকম কত প্রতিভাই তো অকালে নষ্ট হয়ে যায়। সব কুঁড়িতেই কি ফুল ফোটে, না কি সব বৌলেই আম হয়। আপনাদের কোন কবি যেন বলেছেন, যে-নদী মরুপথে হারাল ধারা? এ হল সেই বৃত্তান্ত।”

“তা বাপু, এর কি কোনও বিহিত নেই? আমরা পাঁচজন থাকতে তোমাকে তো বেঘোরে মরতে দেওয়া যায় না।”

সবেগে মাথা নেড়ে গোলাপ বলল, “না কর্তামশাই, আমার প্রাণ বাঁচাতে গিয়ে আপনারা কেন বিপদ ডেকে আনবেন? ও কাজও করবেন না। ছাতা দিয়ে কি বজ্রাঘাত ঠেকানো যায় মশাই? শোলা দিয়ে তো আর লোহা কাটা যায় না! কখনও কি শুনেছেন ছুঁচ দিয়ে কেউ বাঘ মেরেছে?”

রাঘববাবু কাঁচুমাচু হয়ে বললেন, “তা অবশ্য শুনিনি।”

“তবে! চ্যবনপ্রাশের নামই দেওয়া হয়েছে গুণ্ডা গ্রহ। সেখানে গণ্ডায় গণ্ডায় গুণ্ডা ঘুরে বেড়াচ্ছে। সেখানে চার কদম হাঁটতে না হাঁটতেই চারটে খুন, সাতটা রাহাজানি, বারোটা ছিনতাই দেখতে পাবেন। আর গুণ্ডাদের চেহারাই বা কী, মনে হবে সাতটা মহিষাসুরকে চটকে মেখে নিয়ে এক-একটা গুণ্ডা তৈরি করা হয়েছে। তাদের তুলনায় কদম কোঙার তো নস্যি। তাকে চ্যবনপ্রাশের কুলাঙ্গারই বলতে পারেন। তবু তারই এলেমটা দেখুন। কাল রাতে সে ওই অতবড় লাশ হাবু দাসকে নেংটি ইঁদুরের মতো তুলে আছাড় মেরেছে। গুণেন গায়েনকে পিঁপড়ের মতো টোকা

মেরে উড়িয়ে দিয়েছে।”

“বলো কী? কই কেউ তো আমাকে এসব জানায়নি!”

“আজ্ঞে, কার ঘাড়ে ক’টা মাথা? আপনারও জানার দরকার নেই। মনে করে নিন, কথাটা আমি বলিনি, আপনিও শোনেননি।”

“তাই তো হে! আমার বিপদে তো দেখছি ঘরে ঢোকার আগে পাপোশে পা মুছছে।”

“যে আজ্ঞে। কড়া নাড়া দিতে আর দেরি নেই। আর সেইজন্যই গা-ঢাকা দিয়ে আপনার কাছে আসা। হাট গোবিন্দপুর থেকে তল্পিতল্পা গোটানোর আগে আপনার কাছে একটা জিনিস গচ্ছিত রেখে যেতে চাই।”

“কী জিনিস বলো তো!”

“এই যে!” বলে ট্যাঁক থেকে একটা কাগজের মোড়ক বের করল গোলাপ রায়। সাবধানে পুরিয়াটা খুলে জিনিসটা এগিয়ে দিয়ে বলল, “বড্ড দামি জিনিস কর্তামশাই। এই ছোট্ট জিনিসটার জন্যই এতদূর থেকে ধাওয়া করে এসেছে কদম কোঙার।”

রাঘববাবু দেখলেন, মোড়কের মধ্যে একটা ছোট পাথর। মটরদানা সাইজ। রংটা লালচে।

“এটা কী পাথর হে? চুনি নাকি?”

হেঃ হেঃ করে হেসে উঠল গোলাপ। বলল, “চুনি! কী যে বলেন কর্তামশাই। আমাদের মকরধ্বজে যে মোরামের রাস্তাগুলো আছে। সেগুলো তো চুনির গুঁড়ো দিয়েই তৈরি হয়। যদি হিরের কথা বলেন তা হলে বলি, মকরধ্বজের পথেঘাটে মাটির ঢেলার মতো হিরে পড়ে থাকে, বাচ্চারা কুড়িয়ে নিয়ে ঢিল মেরে মেরে আম পাড়ে। আর পান্না! আমাদের চার-চারটে পাহাড় আছে আগাগোড়া পান্না দিয়ে তৈরি। না কর্তামশাই, না। এ চুনিটুনি নয়। সারা বিশ্বজগতে চার-পাঁচখানার বেশিই নেই। এ যার দখলে থাকবে, সে কুবেরকে চাকর রাখতে পারবে।”

“বটে!”

“একটু সাবধানে রাখতে হবে কর্তামশাই, কেউ টের না পায়।”

রাঘব দোনোমোনো করে বললেন, “এত দামি জিনিস বলছ। তা এটা রাখা কি ঠিক হবে?”

“কর্তামশাই, একথা ঠিক যে, রাহুর পিছু পিছু কেতুও ঘুরে বেড়ায়। কাজেই এ জিনিসের পিছু পিছু যে বিপদও ঘুরে বেড়াবে তাতে আর সন্দেহ কী? তবে আমার তো চালচুলো নেই, তার ওপর কবে যে প্রাণবায়ু বেরিয়ে যায় তার ঠিক কী? তখন যে এই কুবেরের ধন বেওয়ারিশ পড়ে থাকবে, নইলে শত্রুপক্ষের হস্তগত হবে। আমি বলি কী, আপনার কাছেই থাক। যদি আমি পটল তুলি তা হলে এটা আপনারই হয়ে গেল, তবু ভাবব একজন সজ্জনের ভোগে লেগেছে।”

লজ্জা পেয়ে রাঘববাবু বললেন, “না, না, সেটা ধর্মত, ন্যায্যত ঠিক হবে না। তোমার জন্য তো আমি তেমন কিছু করিনি যে, এত দামি জিনিসটা তুমি আমাকে এমনি দিয়ে ফেলবে!”

চোখ বড় বড় করে গোলাপ বলল, “করেননি মানে? হোক ঘ্যাঁট, হোক জলের মতো পাতলা ডাল, হোক পেঁপের ঝোল, তবু তা খেয়ে তো আমার প্রাণরক্ষা হয়েছে মশাই, প্রাণের চেয়ে দামি জিনিস আর কী আছে বলুন! তবে হ্যাঁ, বিবেক দংশন বলেও একটা ব্যাপার আছে। বিবেক হল কাঠপিঁপড়ের মতো। নচ্ছারটা জামাকাপড়ের মধ্যে কোথায় ঢুকে লুকিয়ে থাকে কে জানে! তারপর সময়মতো এমন কামড়ায় যে, কহতব্য নয়। আপনার হয়তো তখন মনে হবে, আহা, গোলাপ বেচারাকে শুধু পেঁপের ঝোল আর ঘ্যাঁট আর ডাল খাইয়েই বিদেয় করলুম, আর সে আমার কত বড় উপকারটা করে গেল।”

রাঘববাবু সোৎসাহে বলে উঠলেন, “হ্যাঁ হ্যাঁ, ঠিক বলেছ তো! কাঠপিঁপড়ের কামড় আমি খুব চিনি।”

“তাই বলছিলুম কামশাই, ও জিনিসের দাম তো আর আপনার কাছ থেকে আমি নিতে পারি না! টাকাপয়সায় ওর দামও হয় না। তবু ওই বিবেক হতচ্ছাড়ার হাত থেকে বাঁচতে হলে দশ বিশ হাজার যা পারেন দিলেই চলবে। দামটাম নয়, নিতান্তই বিবেকের মুখ আটকে রাখা আর কী। একরকম বন্ধক রাখা বলেই মনে করুন। আপনার কাছে আমার পাথর বন্ধক রইল, আর আমার কাছে আপনার বিবেক।”

রাঘববাবু করুণ মুখ করে বললেন, “সবই তো বুঝলুম বাপু। মনে হচ্ছে তুমি ন্যায্য কথাই বলছ। কিন্তু বিধু স্যাকরাকে একবার পাথরটা না দেখিয়ে তো টাকাটা ফেলতে পারি না। একবার একটা লোক যে পোখরাজ বলে কাঁচ গছিয়ে গিয়েছিল।”

হাঃ হাঃ করে হেসে গোলাপ বলল, “বিধু স্যাঁকরা? কর্তামশাই, আমার অনেক দোষ থাকতে পারে, কিন্তু অকৃতজ্ঞ নই। আপনি অন্নদাতা, আশ্রয়দাতা। ও জিনিসের কোনও দাম আমি আপনার কাছ থেকে নিতে পারব না। ও আপনি এমনিই রেখে দিন। শুধু দয়া করে বিধু স্যাকরাকে ডেকে পাঁচ কান করবেন না। একটু সাবধানে রাখবেন এই অনুরোধ।”

রাঘববাবু ফের একটু দোনোমোনো করে বললেন, “সাবধানে রাখতে বলছ! কোথায় রাখা যায় তাই ভাবছি।”

“কেন কর্তামশাই, গোপন কুঠুরি বা চোরা সিন্দুক নেই?” লজ্জা পেয়ে রাঘববাবু বললেন, “তা আছে বটে।”

“তবে চলুন, আমিই দেখিয়ে দিচ্ছি ঠিক কোথায় রাখলে জিনিসটা নিরাপদ থাকবে।”

“বলছ! তবে চলো।”

অন্দরমহলের দরদালান পেরিয়ে বাঁ দিকে মস্ত ঠাকুরঘর। সেই ঘরে ঠাকুরের সিংহাসনের আড়ালে একটা ছোট্ট চৌখুপির মতো গুপ্ত দরজা। সেটা চাবি দিয়ে খুলে ভিতরে ঢুকলেন রাঘববাবু। হাতে টর্চ, পিছনে গোলাপ রায়।

গুপ্ত কক্ষের ভিতরে অন্তত সাতখানা সিন্দুক। পুরু ইস্পাতের তৈরি, মজবুত জিনিস।

দেখেশুনে গোলাপ বলল, “না, ব্যবস্থা খুব একটা খারাপ নয়।”

“খারাপ নয় বলছ!”

“মোটামুটি ভালই। এবার একে একে সিন্দুকগুলো খুলে একটু টর্চটা ফোকাস করে ধরুন দেখি। কোথায় রাখলে সুবিধে হয় একটু পরীক্ষা করে দেখি।”

তা খুললেন রাঘববাবু। প্রত্যেক সিন্দুকেই বিস্তর ছোট বাক্স। তাতে সোনাদানা, টাকাপয়সা, হিরে-জহরত।

দেখেশুনে বাঁ ধারের মাঝখানের সিন্দুকটাই পছন্দ হল গোলাপের। বলল, “এটা মন্দ নয় মনে হচ্ছে। ইস্পাতটা পুরু আছে, তা ছাড়া তিনটে চাবিতে খোলে। না কর্তামশাই, এটাতেই রাখুন।”

রাঘববাবু পাথরটা সাবধানে একটা বাক্সে রেখে সিন্দুক বন্ধ করে বললেন, “বলি ওহে গোলাপ!”

“বলুন কর্তামশাই।”

“বলছিলাম কী, সত্যিই যদি তুমি মরেটরে যাও, তা হলে তো পাথরটা আমারই হবে, না কি?”

“যে আজ্ঞে। গোলাপ রায়ের কথার কোনও নড়চড় হয় না।”

“কিন্তু বাপু, তা হলে যে আমি তোমার কাছে ঋণী হয়ে থাকব। সেটা কি ভাল দেখাবে?”

“তা কেন কর্তামশাই, আপনার কাছেও তো আমার কিছু ঋণ আছে। ধরুন খাওয়া থাকা বাবদ হিসেব করলে দিনে যদি সাড়ে তেরো টাকাও ধরেন তা হলে গত তেতাল্লিশ দিনে দাঁড়াচ্ছে একুনে পাঁচশো আশি টাকা পঞ্চাশ পয়সা। সেটা কি কম হল কর্তামশাই? তবে আপনার বিবেকের দায়িত্বটা আর আমার ওপর অর্শাচ্ছে না।”

একটু লাজুক মুখে রাঘব কয়েকখানা নোট নিয়ে বললেন, “নাও হে, একটা রাখো। দু’হাজার আছে।”

যেন ছ্যাঁকা খেয়ে হাতটা টেনে নিয়ে গোলাপ বলল, “করেন কী কর্তা! ও টাকা আপনি বরং কাঙাল ভিখিরিদের বিলিয়ে দেবেন। আমার অন্তিমকাল তো ধাঁ করে চলেই এল প্রায়। এখন আর টাকাপয়সা দিয়ে হবেই বা কী?”

“আহা, আচ্ছা না হয় পাঁচ হাজারই দিচ্ছি। নাও হে, এ দিয়ে ভাল মন্দ কিছু খেও।”

মাথা নেড়ে গোলাপ বলল, “আর লজ্জা দেবেন না কর্তা। তবে একটা কথা বলি।”

“কী বলবে হে?”

“গন্ধে গন্ধে কদম কোঙার ঠিক জায়গায় এসেছে বটে, কিন্তু এত জনের মধ্যে কোনটা আমি তা কিন্তু বুঝে উঠতে পারেনি। তবে বেশি দিন তো আর ছদ্মবেশ রাখা যাবে না। কিন্তু কতদিন আয়ু আছে তা

বুঝে খোরাকির টাকা নিই কী করে। ধরুন যদি আরও এক মাস বেঁচে থাকতে হয় তা হলে এ-বাজারে পাঁচ হাজারে কি ভালমন্দ খাওয়া চলবে?”

“আচ্ছা আচ্ছা, পুরো দশই দিচ্ছি। দয়া করে নাও ভাই।”

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে গোলাপ বলল, “আপনাকে দুঃখও দিতে পারি না কি না। দিচ্ছেন দিন। তবে যদি বেঁচে ফিরে আসি তা হলে এ-টাকার ডবল ফেরত দিয়ে পাথর নিয়ে যাব। ওটা এক মাসের সুদ বলে ধরবেন। দু’মাস হলে ত্রিশ হাজার, তিন মাস হলে চল্লিশ, এরকম রেটেই টাকা আপনার বাড়তে থাকবে।”

রাঘববাবু বিগলিত হয়ে বললেন, “বেশ তো! বেশ তো!”

“তা হলে আসি কর্তামশাই! আর যে ক’দিন এ বাড়িতে আছি মাঝে মাঝে এসে দেখা করে যাব।”

গোলাপ রায় চলে যাওয়ার পর চোরকুঠুরি থেকে বেরিয়ে কপালের ঘাম মুছলেন রাঘববাবু।

বৈঠকখানায় এসে নিজের চেয়ারে বসলেন। তারপর খুব ভাবতে লাগলেন।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress